বায়োস্কোপের বাক্স ৩: বাক্যালাপ, অন্য নারীদের সাথে

মূলত পাঠক এর ছবি
লিখেছেন মূলত পাঠক (তারিখ: রবি, ২২/০৩/২০০৯ - ১১:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

Conversations with Other Women (2006)

ছবিটা দেখলে বোঝা যায় এটা পরিচালকের প্রথম সৃষ্টি, নবোদ্গত শিং পুরোপুরি লুকোতে পারেন নি তিনি। তবে সেটা বড় কথা নয়, আসল কথা হল এটা একটা চমৎকার সিনেমা। মূল অভিনেতা দুজন আমার ঘোর পছন্দের, অ্যারন একহার্ট আর হেলেনা বনহ্যাম কার্টার। এঁদেরকে আমরা নামহীন পুরুষ ও নারী হিসেবেই জানবো এ ছবিতে। ছোট্ট একটু কাহিনীসূত্রও আছে এবং সেখান থেকে শুরু করে তারপর আছে বিস্তারিত সংলাপমা...Conversations with Other Women (2006)

ছবিটা দেখলে বোঝা যায় এটা পরিচালকের প্রথম সৃষ্টি, নবোদ্গত শিং পুরোপুরি লুকোতে পারেন নি তিনি। তবে সেটা বড় কথা নয়, আসল কথা হল এটা একটা চমৎকার সিনেমা। মূল অভিনেতা দুজন আমার ঘোর পছন্দের, অ্যারন একহার্ট আর হেলেনা বনহ্যাম কার্টার। এঁদেরকে আমরা নামহীন পুরুষ ও নারী হিসেবেই জানবো এ ছবিতে। ছোট্ট একটু কাহিনীসূত্রও আছে এবং সেখান থেকে শুরু করে তারপর আছে বিস্তারিত সংলাপমালা। নিউ ইয়র্কে হচ্ছে নায়কের বোনের বিবাহবাসর, যেখানে এই নারী হল ব্রাইডস-মেইড (এর বাংলা কী হবে, নিত-কনে?)। এদের দুজনের এক যুগ আগের একটা অতীত সম্পর্ক আছে যার ব্যাপারে অন্যেরা অবহিত নয়। অনুষ্ঠানশেষে তারা যায় এক গোপন অভিসারে এক হোটেল রুমে, যেখানে উন্মোচিত হয় সুপ্ত স্মৃতি, হারানো অতীত, এবং গভীর অনুভূতিরা যারা মনের গোপনে ওৎ পেতে ছিলো এক যুগ ধরে। কৌতূহলী পাঠক, এইবার বুঝলেন তো, কেন "বিফোর সানসেট"-এর পরেই এই গল্প লিখতে বসলাম? তবে ভুল আশা রাখবেন না, এই সিনেমাটা কিন্তু কমেডি, হাহা-হাসির উচ্চকিত কমেডি না হলেও খুব সিরিয়াস কোনো ভঙ্গী দেখবেন না এতে। একটা ছোট্ট বাক্যালাপ তুলে দি:

Man: Well, may be I'm a self-hating lawyer.
Woman (nonchalantly): Are you?
Man (shrugs): Is there any other kind?

তারা বলে না একে অপরকে কত মিস করেছে, কিন্তু বিবাহ অনুষ্ঠানে যখন তারা নাচতে নাচতে গল্প করে, তখন Split Screen-এর ব্যবহারে স্মৃতি, অতীত ও বর্তমান এক সাথে ঘাই মারে ছবির ফ্রেমে। কীভাবে ছেলেটি রাস্তায় ছুটে গেছে কোনো পথচারিনীকে দূর থেকে দেখে, এই ভেবে যে সে তার চেনা এই নারী। অতীতের কথা শোনা যায় না, সাউন্ডট্র্যাকে আমরা শুনি মৃদু হাস্য আর গেলাসের ঠুংঠাং, কিন্তু অতীত ভেসে আসে Split Screen-এর অন্য ভাগে। কী বস্তু এটা? আমরা আগে দেখেছি সিনেমায় এর ব্যবহার, যেমন ধরুন দুই বন্ধু টেলিফোনে কথা বলছে, সেখানে একইসাথে দুজনকে দেখাতে গেলে এটা কাজে আসে, ছবিটা দু ভাগ করে দুজনকে দেখানো যায়। এই সিনেমাটায় কিন্তু এর ব্যবহার অনেক বেশি মাত্রায়। কখনো একসাথে চলতে থাকে দুটি আলাদা দৃশ্য, যেমনটা দেখা যায় কোনো কোনো ছবিতে ফ্লাশব্যাক দেখাতে, বা বাস্তব জীবনেও হয় আমাদের সাথে যখন আমরা একঘর লোকের মাঝে থেকেও মনে মনে চলে যাই অন্য কোথাও। আবার কখনো একটাই দৃশ্য দু খন্ডে প্রবাহিত হয় পাশাপাশি, রেললাইনের মতো, যারা মেলে না কখনো। এরকম খন্ডিত কথোপকথন কি আমরা সিনেমার বাইরেও দেখি না? আমি নিজে তো এর দুরকম উদাহরণ ভেবে পেলাম, আরো আছে নিশ্চয়ই। কখনো আমি আমার মতো কথা বলে যাই, তুমি তোমার মতো, সেই সাইমন গারফাঙ্কেলের চেনা গানে আছে যার কথা:

People talking without speaking
People hearing without listening
People writing songs that voices never shared

অথবা অন্যরকম খন্ডিত কথোপকথন, যখন তোমার কথা আমি বুঝি না, আমার কথা তুমি। অথচ কথার লেনদেন হয়। সেই সব কথামালায় গাঁথা এই ছবি। অযথা কাব্যি করার কোনো প্রবণতা নেই, সংলাপ সারাক্ষণ উইটের হাত ধরে থাকে, কীভাবে সিরিয়াস কথা ঠাট্টার ছলে বলা যায় তার গাইডবুক লেখা হচ্ছে যেন।

হেলেনা বনহ্যাম কার্টারকে সিরিয়াস সিনেমার জগতে সকলে একডাকে চেনেন। আর আছেন অ্যারন একহার্ট। "ইন দ্য কম্পানি অফ মেন" আর "ইওর ফ্রেন্ডস অ্যান্ড নেইবার্স" ছবিতে তাঁর প্রতিভার পরিচয় মিলেছে, আর সবাই এখন চিনে গেছেন ডার্ক নাইট-এর পর। ইন্ডি ছবিতে আজকাল আর দেখি না বিশেষ। যাঁরা এঁর "থ্যাংক য়ু ফর স্মোকিং" দেখেন নি, অবশ্যই অবশ্যই দেখে নিন, যিশুর ভাষায় বলতে পারি নির্দ্বিধায়, আপনি জানেন না আপনি কী ভুল করেছেন এটা এখনো না দেখে।

যাক, আর কথা বাড়াবো না। ভালো ছবি, দেখতে পারেন, হতাশ হবেন না। যদি একটু প্রিভিউ দেখতে চান তো এখানে রইলো।

--------------------------------------------------------------------------------
Conversations with Other Women (2005)
Dir: Hans Canosa
Cast: Helena Bonham Carter, Aaron Eckhart


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমার প্রচন্ড পছন্দের একটি মুভি। সবাইকে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

নজমুল আলবাব এর ছবি

ভাই আপ্নে কি শুরু করছেন এইসব? সময় গমোয় নাই। কিন্তু সিনেমা দেখার চুলকানি ঠিকি জাগতেছে। এখন এই সিনেমা কেমনে দেখি।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মূলত পাঠক এর ছবি

আরে মশয় আমার হাতে এখন অনেক সময়, ঢিলাঢালা সেমিস্টার। তাই একটু চুলকানির বন্দোবস্ত।

যদি আম্রিকায় থাকেন আর নেটফ্লিক্সের মেম্বার হন তো অনলাইন ভরসা। দেশে ক্যাম্নে দ্যাখবেন জানা নাই। অনেক ডাউনলোড সাইট আছে কিন্তু আমার জ্ঞান খুবই কম। একান্তই না দেখতে পারলে লিস্টি বানায়া রাখেন ভবিষ্যতের ভরসায়। আরো আসতেছে লেখা।

আচ্ছা সেই নজরুল সাহেব কই? টিভি-সিনেমার লোক, বিশেষজ্ঞের মতামত শুনতে ইচ্ছা হয়।

কীর্তিনাশা এর ছবি

দেখতে হবে হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অ্যারন একহার্টের প্রথম যে সিনেমাটা আমি দেখেছিলাম, সেটা পজেশন। আমার বেশ পছন্দের একজন অভিনেত্রী গিনেথ প্যালট্রো ছিল সিনেমাটাতে। এরপর অ্যারনের আরো দেখেছি "এরিন ব্রোকোভিচ", "দ্য মিসিং", "মীট বিল", "ডার্ক নাইট", ... ইত্যাদি, এবং বেশ ভক্তও হয়ে গেছি ওর। "থ্যাংক য়্যু ফর স্মোকিং" দেখার ইচ্ছা আছে। ডিভিডিটাও কাছেই ছিল। কিন্তু এখন দেখছি নেই। নিশ্চয়ই কেউ নিজের মনে করে রেখে দিয়েছে। আপনার কথা শুনে সিনেমাটা খুব দেখতে ইচ্ছে করছে এখন। আর হেলেনা বনহ্যাম কার্টারকে টিম বার্টনের বেশ কয়েকটা সিনেমাতে (এবং এর বাইরেও) পেয়েছি, আমার কাছে বেশ ভাল লাগে একে। আপনার আলোচনাটা ভাল লেগেছে। সিনেমাটা অবশ্যই দেখব। ইশতিও দেখলাম বেশ জোরালোভাবে রিকমেন্ড করেছে উপরে। আমার সিনেমার প্রতি বেশ নেশা আছে। এক কালে প্রচুউউর সিনেমা দেখেছি, এখনও দেখি মোটামুটি। তাই সিনেমা সম্পর্কিত পোস্ট পড়তে আলাদা মজা লাগে (যদি না পোস্টে না-দেখা সিনেমার কাহিনী বেশি করে লিখে মজা নষ্ট করে দেয়া হয়)। আপনার পছন্দের সিনেমাগুলো নিয়ে নিয়মিত লিখুন। পড়ব অবশ্যই।

বিঃ দ্রঃ আইএমডিবি বলছে কনভার্সেশনস উইথ আদার উইমেন সিনেমাটা ২০০৫ সালের।

মূলত পাঠক এর ছবি

মাই ব্যাড, সালটা কী করে ভুল দিলাম তাই ভাবছি।

"থ্যাঙ্ক য়ু..." অবশ্যই দেখে নিন। এ ছবিটার উইট ইত্যাদি অনবদ্য, তবে যে প্রসঙ্গে আমি প্রথমবার দেখতে বসে চিন্তিত ছিলাম তা হল এর নীতির দিকটা। ধূমপানকে তো কোনো ভাবেই সমর্থন করতে পারবেন না পরিচালক, তবে কি শেষে পৌছে জ্ঞানের বাণী শোনাবেন? তাইলে তো সব ভন্ডুল! কিন্তু সুকৌশলে তিনি শ্যাম আর কুল দুই-ই রাখলেন, কোনো পক্ষ নিলেন না, এটাকে স্রেফ যুক্তির লড়াই হিসেবে দেখলেন ও দেখালেন। এরকম বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা না করে পারা যায়?

আপনি দেখলাম অ্যারন একহার্টের মূলধারার ছবিই বেশি দেখেছেন। ওঁর কিছু ইন্ডি ছবি দেখে ফেলুন, ভক্তি আরো বৃদ্ধি পাবে। In The Company of Men, Your Friends and Neighbors, এ দুটো আমি দেখেছি, প্রথমটা ভালো লাগবে আবার হিপোক্রিসি দেখে বিরক্তও হবেন, তবে সেটাই বোধ হয় পরিচালকের কাঙ্খিত। দ্বিতীয়টা একটু radical চিন্তার ছবি, যৌনতা ও প্রেম-সংক্রান্ত নীতিগুলো বড় ঢিলেঢালা, তাতে অসুবিধা না থাকলে ভালো লাগারই কথা।

ইন্ডি ছবির (Independent Films) বাজেট যেহেতু কম হয়, আমাদের বড় বাজেটে অভ্যস্ত চোখ ও নন্দন বোধ / aesthetics-এ তাতে একটু সমস্যা হয়। তবে একবার অভ্যেস হলে তারপর ভালোই লাগে, অনেক নতুন তাজা চিন্তার খোরাক মেলে যা বড় স্টুডিও মুভির পরিশীলিত চত্বরে দুর্লভ। আশার কথা এই যে বড় স্টুডিওরাও একটা করে ইন্ডি-মুভি কোম্পানি খুলেছে, যার ফলে এই জাতীয় ছবির জন্য ভদ্রস্থ বাজেট জুটে যাচ্ছে। অনেকটা আমাদের মাল্টিপ্লেক্স সিনেমার বর্তমান গল্পের মতোই।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

'থ্যাংক য়্যু ফর স্মোকিং', 'ইন দ্য কম্পানি অভ মেন', 'ইয়োর ফ্রেন্ডস অ্যান্ড নেইবারস' - সবগুলোই সময় করে দেখে ফেলব।

মূলত পাঠক এর ছবি

প্রথমটাই কিন্তু রেকমেন্ড করেছি, বাকি দুটো সেই রকম ভালো নয়। তবে দেখতে পারেন।

খেকশিয়াল এর ছবি

অ্যারন একহার্ট আর হেলেনা বনহ্যাম কার্টার আমারও অনেক পছন্দের। দেখবো মুভিটা।

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

আরিন এর ছবি

হেলেনা বনহ্যাম কার্টার এর "দা লাইফ অফ মি" আমার অনেক পছন্দের একটা মুভি। এটা নিয়েও একটা রিভিঊ লেখেন।

মূলত পাঠক এর ছবি

দেখিনি তো এই সিনেমাটা। IMDB-তেও খুঁজে পেলাম না। একটা লিঙ্ক পাঠান না, আরিন?

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

উনি সম্ভবত দ্য হার্ট অভ মি বুঝিয়েছেন।

মূলত পাঠক এর ছবি

এটাও দেখিনি মন খারাপ

 আরিন  এর ছবি

ঠিক তাই। ধন্যবাদ প্রহরী।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।