উল্টোস্রোতের কুল-ঠিকানা, প্রসঙ্গ- লিটল ম্যাগাজিন...[০১]

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: বুধ, ৩০/০৭/২০০৮ - ১০:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই, তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’

--- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস
(৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)

নান্দীপাঠ

দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে কলেবর বাড়িয়ে দিলেই যেমন ‘বড় কাগজ’ হয় না, তেমনি তা কমিয়ে দিলেও ‘ছোট কাগজ’ হয়ে যায় না। নতুন স্বর ও সাহসী উচ্চারণে যা নাকি সত্যনিষ্ঠ তীক্ষ্ণধার ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে এস্টাব্লিশম্যান্ট বা প্রাতিষ্ঠানিকতার গড্ডালিকাময় অসারতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে, সেটাই ‘ছোট কাগজ’। এই যে দেখিয়ে দেয়ার কাজ, সেটা দু’ভাবে হতে পারে। এক, প্রাতিষ্ঠানিকতার লেবেল মারা চলমান ধারাটা যে সৃজনশীলতার সক্ষমতা হারিয়ে বয়ান পুনর্বয়ানের বর্জ্য ঘেটে ঘেটে একঘেয়েমীর রুচিহীন বরাহস্বভাবে উপনীত হয়েছে, তা চিহ্নিত করে পাঠকরুচিকে পুনর্মূল্যায়নে যৌক্তিক আহ্বান জানানো। দুই, প্রথাবিরোধী নতুন স্বরযোজনার মধ্য দিয়ে পুরনো ধারাকে ইঙ্গিতময় অবসরে ঠেলে দিয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক শক্তি অর্জনে পাঠকচিত্তকে নিজের দিকে আকর্ষণ করা। উভয়ক্ষেত্রেই এর প্রধান কাজটি হলো পুরনোকে অস্বীকার করা। স্পষ্ট উচ্চারণে জানিয়ে দেয়া, ব্যাক-ডেটেড ধারণার দিন শেষ, এবার আপ-টু-ডেট নতুনের পালা। কিন্তু এই অস্বীকারের কাজটি তো আর এমনি এমনি হয় না। এ জন্যে যে নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সৃজনশীল উন্মেষ ঘটাতে হয়, তা পারে কেবল তরুণেরাই। আরো স্পষ্ট করে বললে- তারুণ্য। নবীন বযেসীদেরকেই সাধারণত তরুণ বলা হলেও তারুণ্য কিন্তু বয়সনির্ভর নয়। তারুণ্য একটি বহমান সত্তা। সৃজনশীল অগ্রযাত্রাই তারুণ্যের আসল মাপকাঠি। অতএব, লিটল ম্যাগাজিন মানেই তারুণ্যের পতাকা। সৃষ্টির নেশায় মত্ত তারুণ্যের অবিচল ঝাণ্ডা। এই অবিচলতার প্রোথিত জমিনটাকে ফলনযোগ্য উর্বরতায় সমৃদ্ধ করতে চাই নবীন কোন দর্শন বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রায়োগিক উজ্জ্বলতাও। এ আয়োজনেও পিছিয়ে থাকে না লিটল ম্যাগাজিন। তাই লিটল ম্যাগাজিন হলো সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যবাহী, সাহিত্যমননে এস্টাব্লিশম্যান্ট বিরোধী সৎ ও রুচিশীল তারুণ্যের সৃজনশীল সাহিত্যপত্র। এখানেই সংকলনপত্রের সাথে লিটল ম্যাগাজিনের মৌলিক পার্থক্য। অন্তত লিটল ম্যাগাজিনের ইতিহাস আমাদেরকে তাই শেখায়।

জন্মস্বরে ডেকে ওঠে আজন্মের ক্রোধ

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে লিটল ম্যাগাজিনের প্রচার ও প্রসার ঘটলেও এর জন্মকোষ্ঠী খুঁজতে গেলে আমাদের চলে যেতে হবে উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সেই The Dail (Boston,1840-1844) পত্রিকাটির কাছে। Ralph Waldo Emerson ও Margaret Fuller সম্পাদিত এ পত্রিকাটিকেই এ অঙ্গনের চিন্তকেরা লিটল ম্যাগাজিনের আদিরূপ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আসছেন। এলিয়টের বিশ্বনন্দিত ‘ওয়েস্টল্যাণ্ড’ এই ‘ডায়াল’-এ প্রথম ছাপা হয়। তবে পত্রিকা শব্দটি কীভাবে ‘ম্যাগাজিন’ শব্দরূপ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়ে গেলো তা জানতে হলে আমাদেরকে আরো পিছনে যেতে হয়। ১৭৩১ সালে এডওয়ার্ড কেভ সম্পাদিত `Gentleman's Magazine’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে ম্যাগাজিন শব্দটি চালু হয়। Magazine অর্থ- বারুদশালা। বারুদ ঠাসার মতোই শব্দ-অক্ষরের মাল-মশলা মজুদের আধার হিসেবে ম্যাগাজিন শব্দের এই প্রতীকী ব্যবহারই পরবর্তীতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শুধুমাত্র বাঁধানো পত্র পত্রিকার ক্ষেত্রেই ‘ম্যাগাজিন’ শব্দটি ব্যবহার হতো। তবে ‘লিটল ম্যাগাজিন’ নামের এই যুগ্ম শব্দের ব্যবহার আঠারো শতকের শেষ দশকে বা উনিশ শতকের প্রথম দশকে ইউরোপে শুরু হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়। বিগ বাজেটের পণ্যসর্বস্ব সাহিত্যের বিপরীতে নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নব-সাহিত্য প্রেরণা হিসেবে এক বিশেষ রীতির পত্রিকাকেই ‘লিটল ম্যাগাজিন’ অভিধায় চিহ্নিত করা হয়। এ ক্ষেত্রে Margaret Anderson সম্পাদিত The Little Review (Chicago, San Francisco, New York, Paris, 1914-1929) কেই সর্বাগ্রে বহুল ব্যবহৃত দৃষ্টান্ত হিসেবে আনা হয়ে থাকে। জেমস জয়েসের বিখ্যাত উপন্যাস ‘ইউলিলিস’ এর প্রথম এগার অধ্যায় ছাপা হয় এ পত্রিকায়। সে সময়কালের চেতনাপ্রবাহী অন্যান্য লিটল ম্যাগাজিনের মধ্যে রয়েছে- Poetry (1912), The Egoist (London, 1914-1919), New Masses (1926-1948), The Anvil (1933-1939), Blast (1933-1934), New Verse (London, 1933-1939), Criterion (London, 1922-1939) ইত্যাদি। এজরা পাউণ্ড, টি.এস.এলিয়ট, জেমস জয়েস, হেমিংওয়ে- সহ সমকালীন লেখকরা এসব পত্রিকার মধ্য দিয়েই সৃষ্টিশীলতার বিচিত্রমুখী প্রবাহ ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর বাংলাসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শন (১৮৭২)-কে গননায় আনা হলেও সত্যিকারার্থে প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত সবুজপত্রকেই (১৯১৪) আধুনিক লিটল ম্যাগাজিনের আদিরূপ বলা হয়ে থাকে।

প্রকৃত অর্থে লিটল ম্যাগাজিনের চরিত্রই হচ্ছে প্রতিবাদী ও তথাকথিত প্রতিষ্ঠান বিরোধী। আর তাই প্রথাবিরোধী মেধাবী সৃষ্টিশীলদের সাহিত্যচর্চার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে এই লিটল ম্যাগাজিন। এর মাধ্যমেই সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি, তরুণ লিখিয়েদের আনকোরা উপস্থাপন ও সাহিত্যের নানামুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে। আর আমাদের বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে লিটল ম্যাগাজিনের সম্পর্ক তো এক কথায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো। তাই লিটল ম্যাগাজিনের আলোচনা আসলেই বাংলাভাষার অন্যতম খ্যাতিমান লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক বুদ্ধদেব বসু’র নামটিও অবিচ্ছেদ্যভাবেই চলে আসে। চারিত্র্য বিশ্লেষণে লিটল ম্যাগাজিনের স্বরূপ কী হবে এ ব্যাপারে তাঁর ব্যাখ্যাকেই মোটামুটি সর্বজনগ্রাহ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ‘দেশ’ পত্রিকার মে ১৯৫৩ সংখ্যায় ‘সাহিত্যপত্র’ প্রবন্ধে বুদ্ধদেব বসু লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লেখেন-

“এক রকমের পত্রিকা আছে যা আমরা রেলগাড়িতে সময় কাটাবার জন্য কিনি, আর গন্তব্য স্টেশনে নামার সময় ইচ্ছে করে গাড়িতে ফেলে যাই- যদি না কোনো সতর্ক সহযাত্রী সেটি আবার আমাদের হাতে তুলে দিয়ে বাধিত এবং বিব্রত করেন আমাদের। আর এক রকমের পত্রিকা আছে যা স্টেশনে পাওয়া যায় না, ফুটপাতে কিনতে হলেও বিস্তর ঘুরতে হয়, কিন্তু যা একবার হাতে এলে আমরা চোখ বুলিয়ে সরিয়ে রাখি না, চেয়ে-চেয়ে আস্তে আস্তে পড়ি, আর পড়া হয়ে গেলে গরম কাপড়ের ভাঁজের মধ্যে ন্যাপথলিন-গন্ধী তোরঙ্গে তুলে রাখি- জল, পোকা, আর অপহারকের আক্রমণ থেকে বাঁচবার জন্য। যে সব পত্রিকা এই দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্গত হতে চায়- কৃতিত্ব যেইটুকুই হোক, অন্ততপে নজরটা যাদের উঁচুর দিকে, তাদের জন্য নতুন একটা নাম বেরিয়েছে মার্কিন দেশে; চলতি কালের ইংরেজি বুলিতে এদের বলা হয়ে থাকে লিটল ম্যাগাজিন।”

“লিটল কেন? আকারে ছোট বলে? প্রচারে ক্ষুদ্র বলে? না কি বেশি দিন বাঁচে না বলে? সব কটাই সত্য, কিন্তু এগুলোই সব কথা নয়; ঐ ‘ছোট’ বিশেষণটাতে আরো অনেকখানি অর্থ পোরা আছে। প্রথমত, কথাটা একটা প্রতিবাদ: এক জোড়া মলাটের মধ্যে সব কিছুর আমদানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বহুলতম প্রচারের ব্যাপকতম মাধ্যমিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। লিটল ম্যাগাজিন বললেই বোঝা গেলো যে জনপ্রিয়তার কলঙ্ক একে কখনো ছোঁবে না, নগদ মূল্যে বড়োবাজারে বিকোবে না কোনোদিন, কিন্তু- হয়তো কোনো একদিন এর একটি পুরোনো সংখ্যার জন্য গুণীসমাজে উৎসুকবার্তা জেগে উঠবে। সেটা সম্ভব হবে এই জন্যেই যে, এটি কখনো মন যোগাতে চায়নি, মনকে জাগাতে চেয়েছিলো। চেয়েছিলো নতুন সুরে কথা বলতে। কোনো এক সন্ধিক্ষণে, যখন গতানুগতিকতা থেকে অব্যাহতির পথ দেখা যাচ্ছে না, তখন সাহিত্যের ক্লান্ত শিরায় তরুণ রক্ত বইয়ে দিয়েছিলো- নিন্দা, নির্যাতন বা ধনক্ষয়ে প্রতিহত না হয়ে। এই সাহস, নিষ্ঠা, গতির একমুখিতা, সময়ের সেবা না করে সময়কে সৃষ্টি করার চেষ্টা- এইটেই লিটল ম্যাগাজিনের কুলধর্ম। এর এটুকু বললেই অন্যসব কথা বলে হয়ে যায়, কেননা এই ধর্ম পালন করতে গেলে চেষ্টা করেও কাটতি বাড়ানো যাবে না, টিকে থাকা শক্ত হবে, আকারেও মোটাসোটা হবার সম্ভাবনা কম। অবশ্য পরিপুষ্ট লিটল ম্যাগাজিন দেখা গেছে- যদিও সে সময়ে ও-কথাটার উদ্ভব হয়নি- যেমন এলিয়টের ‘ক্রাইটেরিয়ন’ বা আদিকালের ‘পরিচয়’। কিন্তু মনে রাখতে হবে তারা ত্রৈমাসিক ছিলো; সমসাময়িক গণসেব্য মাসিক পত্রের তুলনায় তারা যে ওজনে কত হালকা তা অল্প একটু পাটিগণিতেই ধরা পড়বে। ভালো লেখা বেশি জন্মায় না, সত্যিকার নতুন লেখা আরো বিরল; আর শুধু দুর্লভের সন্ধানী হলে পৃষ্ঠা এবং পাঠক সংখ্যা স্বতঃই কমে আসে। অর্থাৎ আমরা যাকে বলি সাহিত্যপত্র, খাঁটি সাহিত্যের পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন তারই আরো ছিপছিপে এবং ব্যঞ্জনাবহ নতুন নাম।”

“সাহিত্যের পত্রিকা- তার মানে সৃষ্টিশীল, কল্পনাপ্রবণ সাহিত্যের। যে সব পত্রিকা সাহিত্য বিষয়ক জ্ঞানের পরিবাহক, ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব বা পাঠমূলক গবেষণায় লিপ্ত, দৃশ্যত কিছু মিল থাকলেও সাহিত্যপত্রের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। তারা বিশেষজ্ঞের পত্রিকা, জ্ঞানের একটি বিশেষ বিভাগে আবদ্ধ, আপন সম্প্রদায়ের বাইরে তাদের আনাগোনার রাস্তা নেই। কিন্তু সাহিত্যপত্রের দরজা খোলা থাকে সকলেরই জন্য, কেননা সাহিত্য যেখানে সৃষ্টি করে সেখানে তার আহ্বানে কোনো গণ্ডি নেই, যদিও সে আহ্বান শুনতে পায় কখনোবা পনেরো জন কখনো পনেরো লক্ষ মানুষ। আজকের দিনে যাদের কণ্ঠ লোকের কানে পৌঁছাচ্ছে না, যারা পাঠকের পুরনো অভ্যাসের তলায় প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে, তাদের এগিয়ে আনা, ব্যক্ত করে তোলাই সাহিত্যপত্রের কাজ। এর উল্টোপিঠে আছে যাকে বলে অম্নিবাস ম্যাগাজিন, সর্বসহ পত্রিকা; তাদের আয়তন বিপুল, বিস্তার বিরাট, সব রকম পাঠকের সব রকম চাহিদা মেটাবার জন্য ভুরি পরিমাণ আয়োজন সেখানে মাসে মাসে জমে ওঠে। বাছাই করা পণ্যের সাজানো গুছানো দোকান নয়, পাঁচমিশেলি গুদোম-ঘর যেন; সেখানে রসজ্ঞের কাম্যসামগ্রি কিছু হয়তো কোথাও লুকিয়ে আছে, কিন্তু বিজ্ঞাপনের গোলমাল পেরিয়ে বর্জাইস অরের অলিগলি বেয়ে সেই সুখধামে পৌঁছানো অনেক সময়ই সম্ভব হয় না- পাতা ওল্টাতেই শ্রান্ত হয়ে পড়তে হয়।

এসব পত্রিকা তাদেরই জন্য যারা নির্বিচারে পড়ে, শুধু সময় কাটাবার জন্য পড়ে- আর সংখ্যায় গরিষ্ঠতম তারাই। এদের মধ্যে উৎকৃষ্ট লেখাও থাকে না তা নয়, কিন্তু দৈবাৎ থাকে, কিংবা নেহাৎই লেখক বিখ্যাত বলেই থাকে; সেটা প্রকাশ নয় প্রচার মাত্র; তার পেছনে কোনো সচেতন সাহিত্যিক অভিপ্রায় থাকে না। এসব পত্রিকা শুধু সমাবেশ ঘটায়, সামঞ্জস্য সাধন করে না, যা সংগ্রহ করে তার ভেতর দিয়ে কিছু রচনা করে তোলার চেষ্টা এদের নেই; শুধু কালস্রোতে ভেসে চলা এদের কাজ; কোনো নতুন তরঙ্গ তোলা নয়।”

বুদ্ধদেব বসু’র এই ব্যাখ্যা থেকেই লিটল ম্যাগাজিন কী, কেন এবং গড়পরতা সাহিত্য-সংকলনপত্রের সাথে এর পার্থক্য কোথায় কীভাবে, তার একটা মোটামুটি রেখাচিত্র অংকিত হয়ে যায়।....

চলবে...


মন্তব্য

মুজিব মেহদী এর ছবি

ভালো উদ্যোগ।
চলুক, পরে কথা বলা যাবে।
................................................................
জেতা মৎস্য গিলে বকে মনুষ্য খায় বাঘ-ভালুকে
রহস্য বোঝে না লোকে কেবল বলে জয়।
(দীন দ্বিজদাস)

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি
"...এদের মধ্যে উৎকৃষ্ট লেখাও থাকে না তা নয়, কিন্তু দৈবাৎ থাকে, কিংবা নেহাৎই লেখক বিখ্যাত বলেই থাকে; সেটা প্রকাশ নয় প্রচার মাত্র; তার পেছনে কোনো সচেতন সাহিত্যিক অভিপ্রায় থাকে না। এসব পত্রিকা শুধু সমাবেশ ঘটায়, সামঞ্জস্য সাধন করে না, যা সংগ্রহ করে তার ভেতর দিয়ে কিছু রচনা করে তোলার চেষ্টা এদের নেই; শুধু কালস্রোতে ভেসে চলা এদের কাজ; কোনো নতুন তরঙ্গ তোলা নয়।”

এই দেখতে দেখতেই চুলগুলো সব পাকলো!

তবে বসু, আজকাল অনেক লেখককেই দেখতে পাই নিজের হাতে মাইক নিয়ে সরব হতে। তাদের মতে তারাই লিখিয়ে আর অন্যরা তাদের মুগ্ধ পাঠক।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

রণদীপম বসু এর ছবি

জুলিয়ান ভাই, মাইক নিয়ে যে যতোই ফাটাফাটি করুক, সময় বড় নির্মম। টাইম ইজ দা বেস্ট টিচার ! আর পাঠকের দরবার বড় শক্ত জায়গা। নিজের প্রভাবিত জীবনকালের রাজত্ব তো শেষ কথা নয়। তারপরেও কথা থেকে যায়...। ওটাই আসল কথা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

গৌতম এর ছবি

বেশ কিছু লিটল ম্যাগ দেখছিলাম। অনেকের লেখাই ভালো লেগেছে। সেদিন নতুন একটি লিটল ম্যাগ বেরুলো- দ্রষ্টব্য। অনেকগুলো লেখাই চিন্তাউদ্রেককারী।

এরকম মানের লিটল ম্যাগের সংখ্যা মাঝখানে পড়ে গেলেও এখন বোধহয় সেই বন্ধ্যা সময়টা কাটিয়ে উঠছেন লিটল ম্যাগের কর্মীরা। কিন্তু বেশ কিছু লিটল ম্যাগের লেখা পড়লে মনে হয়- বাংলায় যে বানান বলে একটা বিষয় আছে, তারা সেটা নিয়ে পুরোপুরি অজ্ঞ। না, আমি বানানের স্টাইল নিয়ে কথা বলছি না। কেউ একজন বানান নিয়ে নীরিক্ষা করতেই পারেন। কিন্তু সেখানেও যুক্তি থাকবে, কনসিসটেন্সি থাকবে। একই লেখক যদি একই লেখায় একই বানান ভিন্ন ভিন্নভাবে লিখেন, তাহলে তাঁর বানান জ্ঞান নিয়ে যেমন প্রশ্ন তোলা যায়, তেমনি লেখক হিসেবে তাঁর ইনকনসিসটেন্সিও প্রকাশ পায়।

বেশ কয়েকবছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমার কেন যেন মনে হয়- লিটল ম্যাগের লেখকরা বানানকে পাত্তা দিতে চান না। কিন্তু তারা নতুন বানান সৃষ্টিতেও আগ্রহী না। ভাষার ক্ষেত্রে এটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে কি-না কে জানে?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রণদীপম বসু এর ছবি

আগেও দ্রষ্টব্য নামে একটা লিটল ম্যাগ বেরুতো। মাঝখানে নীরব হয়ে গেলো। আপনার উল্লেখিত দ্রষ্টব্য সেটারই গা ঝাড়া দিয়ে ওঠা কি না কে জানে। আমার হাতে এখনো আসেনি। তবে শীঘ্রই সংগ্রহ করবো।

বানানের যে বিষয়টা উল্লেখ করলেন, ওটা নিয়ে চিন্তিত আমি নই। কেননা সময় ঠিকই আসলকে বাছাই করে নিতে জানে। আন্দোলন এক জিনিস, আর স্বেচ্ছাচার ভিন্ন। স্বেচ্ছাচারিতায় কোন দর্শন থাকে না, আন্দোলন একটি দার্শনিক পরিক্রমা। দার্শনিক ভিত্তি না থাকলে বানানো জিনিস কখনো নতুন সৃষ্টি হয়ে ওঠতে পারে না। পরিত্যাজ্যই হয়।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

আগ্রহ নিয়ে পড়ছি।

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বেশ তথ্যবহুল লেখা। ভালো লাগলো। আগামী পর্বের প্রতীক্ষায় রইলাম।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ। সব প্রতীক্ষারই শেষ থাকে এবং শেষ আছে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সুমন সুপান্থ এর ছবি

এইরকম একটা লেখা খুব প্রয়োজন ছিলো , আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ । বলবার কিছু ছিলো, বলবো না হয় পরে । পরের পর্ব গুলো পড়ি আগে ।

---------------------------------------------------------

আমার কোন ঘর নেই !
আছে শুধু ঘরের দিকে যাওয়া

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

জিফরান খালেদ এর ছবি

লিটল ম্যাগ এর ইতিহাসে মনে হয় পোয়েট্রি ম্যাগাজিন সর্বোচ্চ উল্লেখের দাবীদার।

পোয়ট্রিই ইলিয়টের প্রথম কবিতাখানি ছাপে। রবীন্দ্রনাথের ছয়টি কবিতা টানা ছাপিয়েছিল এই পত্রিকা। এশবেরি, করসো, ইলিয়ট, ইয়েটস, পাউন্ড প্রমুখ এই পত্রিকাতে এক্কেবারে নিয়মিত ছিলেন। ইংরেজী সাহিত্যের বাঘা বাঘা সাহিত্যিক কবিদের বেশিরভাগেরই শুরু ছিল এই পত্রিকায়। এবং, এই পত্রিকাটিই এখনো দোর্দণ্ড প্রতাপে টিঁকে আছে।

ইলিয়ট বলেছিলেন, পোয়েট্রি শুধু একটা পত্রিকা নয়, একটি প্রতিষ্ঠান। তীব্র অর্থনৈতিক কষ্ট সত্ত্বেও এ পত্রিকা চালু ছিল এবং বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য তরুণ কবিদের সরাসরি অর্থনৈতিক সাহায্য করেছিল কবিদের দীর্ণ দশায়।

আপনার লিখা চলুক...

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার তথ্যসমৃদ্ধ মন্তব্যের জন্য। পরের পর্বটা এখানে

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।