Warning: Creating default object from empty value in theme_img_assist_inline() (line 1488 of /var/www/sachalayatan/s6/sites/all/modules/img_assist/img_assist.module).

| একটি কল্পগ্রন্থ-ভূমিকা কিংবা প্রাক্-কথন |

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: শুক্র, ১২/১১/২০১০ - ১২:৫২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


প্রচলিত ভাবনা-স্রোতের মধ্যে থেকেও ব্যক্তি-মানুষের চিন্তা-শৈলীতে স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। ব্যক্তিবিশেষে এই স্বাতন্ত্র্য বা ভিন্নতা এতোটাই যৌক্তিক যে, একই অভিন্ন বিষয়কে দেখার ভঙ্গি ও আপতিক অবস্থানেও তা অনিবার্য পার্থক্য এনে দেয়। কখনো কখনো এই বৈচিত্র্যময় চিন্তারেখা এতোটা ব্যতক্রমী ও প্রশ্নপ্রবণ হয়ে ওঠে, তা আর প্রচলিত ধারণা বা ভাবনাস্রোতের অনুষঙ্গ হয়ে থাকতে পারে না। ক্ষেত্রবিশেষে বিপরীত স্রোতের যাত্রী হয়ে ওঠে। এটাকেই মুক্তচিন্তা বা চিন্তার স্বাধীনতা বলা যেতো। কিন্তু চিন্তার কোন দৃশ্যমান সত্তা নেই বলে অপ্রকাশিত চিন্তার আসলে কোন কার্যকরিতাও নেই। ভাষা, চিত্র, শব্দ বা সুর ইত্যাদি ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য মাধ্যমে চিন্তার প্রকাশ ঘটাতে হয়। কিন্তু চাইলেও তা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না বিভিন্ন বিপত্তিগত কারণে। এই প্রকাশের স্বাধীনতাকেই আমরা বলি চিন্তার স্বাধীনতা। তবে অপ্রকাশিত চিন্তাকে অস্তিত্বহীন বলাটাও অযৌক্তিক হবে। কেননা চিন্তক ব্যক্তির অদৃশ্য মননকোষে সতত সঞ্চারমাণ অসংখ্য ভাবনা-স্রোতের জারণ-বিজারণ ক্রিয়ার ফলাফলই তার নিজস্ব চিন্তারেখা। প্রতিনিয়ত তা প্রভাবিত হচ্ছে অন্যান্য চিন্তাস্রোতের সাথে, কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, কোথাও প্রাণিত হচ্ছে, কোথাও থেমে যাচ্ছে, কোথাও আবার গতি পাচ্ছে। এই যে চিন্তার অনিবার্য অভিঘাত, তার উপর ভিত্তি করেই ব্যক্তি তার চিন্তাজগতে এগিয়ে যায়, থেমে যায়, এবং কখনো বা পেছন হাঁটে।

ব্যক্তির একক চিন্তা কখনোই সমাজে বা জনগোষ্ঠিতে কোন প্রভাব ফেলে না, যতক্ষণ না তাঁর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চিন্তারাজির প্রকাশ ঘটে। সৃজনশীল ব্যক্তিরা অপ্রকাশের ভার সইতে পারেন না বলে তাঁরা তাদের ভাবনারাশিকে কোন না কোন মাধ্যমে প্রকাশ করতে উদ্যোগী হন। যিনি লিখিত ভাষার মাধ্যমে তা প্রকাশ করেন তাঁকে আমরা লেখক-সত্তা নামে আখ্যায়িত করি। এই লেখক-সত্তা যাকে উদ্দেশ্য করে তাঁর ভাবনাগুলো প্রকাশ করেন তিনি হলেন চিন্তাশীল পাঠক। এই লেখক-পাঠক মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমেই জগতের যাবতীয় চিন্তারেখার পরিবৃত্তায়ন ঘটতে থাকে, হতে থাকে চিন্তাপরিধির পর্যায়ক্রমিক বিস্তার। তাই পরবর্তীতে কোন ভাবনা গৃহিত হোক বা না-হোক, চিন্তা বা প্রতিচিন্তা প্রকাশের সুযোগ থাকা মানব সভ্যতার জন্যেই অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এটা মৌলিক মানবাধিকার। সেই কবেকার প্রাচীন গ্রিক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দ) চিন্তার স্বাধীন প্রকাশের অনুসারি ছিলেন এই বলে যে- ‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভালো।’ এতকাল পরে এসেও এই উক্তিটার চিরকালীন গুরুত্ব একটুও ক্ষুণ্ন হয়ে যায়নি।

ইউরিপিডিসের ওই মহত্তম বাণী বুকে ধারণ করে বিভিন্ন সময়ে লিখিত বেশ কিছু রচনা থেকে গুটিকয় নির্বাচিত রচনার সমন্বয়ে তৈরি একটি সংকলন-গ্রন্থ ‘অবমুক্ত গদ্যরেখা ’। বিভিন্ন লিটল-ম্যাগাজিন ও অন্তর্জালিক বিভিন্ন ফোরাম-ব্লগে প্রকাশিত ‘মাথায় কতো প্রশ্ন আসে’ জাতীয় লেখাগুলোর কয়েকটিকে একত্র গ্রন্থবদ্ধ করার এই প্রয়াস ভাবুক পাঠকের অপছন্দ হবে না বলেই বিশ্বাস। বিষয়-বৈচিত্রের কারণে রচনাগুলোকে মুক্তচিন্তা ও সাহিত্য-ভাবনা নামে মোটাদাগে দুটো ভাগে সূচিভুক্ত করা হলেও এখানে সংস্কার, ধর্ম, দর্শন, যুক্তিবাদ, সাহিত্য, কবিতা, ছড়া, রাজনীতি, সমাজনীতি ইত্যাদি বিচিত্র বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি রয়েছে, যা থেকে পাঠক বিচিত্র রসাস্বাদনের পাশাপাশি নতুন নতুন প্রশ্নে ভাবিত হবেন বলে আশা করছি।

পৃথিবীতে আসলে কোন জ্ঞানই চূড়ান্ত মৌলিক নয়। সমকালীন আমরা পূর্বলব্ধ জ্ঞানকে ধার করে সাথে কিছু নতুন জিজ্ঞাসা যুক্ত করে উত্তর অন্বেষণে ব্যাপৃত হই, সামনে আগাই। তাই সমকালীন জ্ঞানস্তর হচ্ছে চিরকালীন জ্ঞান-জিজ্ঞাসার ধারাক্রম মাত্র। এই জিজ্ঞাসার যেমন শেষ নেই, তেমনি শুরুও নেই। অথবা বলা যেতে পারে, সভ্যতার উন্মেষকালে যে জ্ঞান-জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়ে মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিলো তা সভ্যতার সমাপ্তিকাল পর্যন্ত চলতে থাকবে। আমাদের সমকালীনতা এই ধারাপথেরই আপেক্ষিক অবস্থান, যার ঋণ রয়ে গেছে পূববর্তী জ্ঞান-সাধকদের সাধনার মধ্যে। এ গ্রন্থের মাধ্যমে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ঋণ স্বীকারের সুযোগটুকু তৈরি হলো বলা যায়।

আশা করি এই গদ্যসংকলন ‘অবমুক্ত গদ্যরেখা’ পাঠককে কোনোভাবে হতাশ করবে না।
।।।
উপরের কথাগুলো বা লেখাটা কোন বুক-রিভিউ নয়। বলা যায় একটি বইয়ের আগাম ভূমিকা। আর যে কল্পগ্রন্থটিকে উদ্দেশ্য করে এতোসব কথা, এর একটা আগাম আপাত তথ্যকণিকা সাজানো যায় এভাবে-

নামঃ অবমুক্ত গদ্যরেখা
বিষয়ঃ প্রবন্ধগুচ্ছ
প্রকাশকঃ শুদ্ধস্বর
প্রচ্ছদঃ তৌহিন হাসান
।।।

একেবারে তলানিতে এসে এবার সত্যি সত্যি ভাবনা হচ্ছে, লেখাটা কি আসলে অতিরঞ্জন হয়ে গেলো !?! সেক্ষেত্রে মার্জনা চাওয়ার বিকল্প নেই।
।।।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বইটার অপেক্ষায় রইলাম

প্রচ্ছদ সম্ভবত তৌহিন হাসান করছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ নজু ভাই। তৌহিন হাসান নামটা সংশোধন করে দিলাম।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।