কর্পোরেট রক্ষিতা

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/০৫/২০০৮ - ৩:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হায়দার হুসেনের স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি গানটার জনপ্রিয়তা নয় বরং আকৃষ্ট হয়েছিলাম তার ফাইস্যা গেছি গান শুনে। অবশ্য মাঝে মাঝেই প্রতিপক্ষ হয়ে যায় অপরিচিত মানুষও। হায়দার হুসেনকে দেখলেই ইদানিং পায়ের রক্ত মাথায় চড়ে যায়। ভীষণ রকম রাগ হয় তার চেহারা দেখলেই। তার গলায় ঝুলানো গীটার দেখলেই সেটা ভেঙে ফেলেতে ইচ্ছা করে।
তার বিশ্বাস এবং তার প্রচারণার জায়গাটা আমার সাথে যায় না।
সামরিক অধিগ্রহনের পরপর নেভীর গুনকীর্তন করে লেখা এবং গাওয়া গানটা প্রচারিত হতো নিয়মিতই। সেখানে জাহাজের খোলের উপরে নেভী সেনাদের পদচারণার পাশে এক দাড়াল ছাগল ঝাপাচ্ছে ভঙ্গিটা অসহনীয় ছিলো। ইদানিং তৈরি পোশাক শিল্পের গুনকীর্তন করে লেখা এবং গাওয়া গান প্রচারিত হচ্ছে। সেটার অর্থায়নে আছে তৈরি পোশাক মালিক সমিতি।
পোশাক শিল্পের কারিগর এবং শ্রমিকদের জন্য সমবেদনা রইলো। আজকেও প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেছেন ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদনে গরিমসি সহ্য করা হবে না।
ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো আসলে কি অর্থ ধারণ করে আমার জানা নেই। তবে ইদানিং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ আর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুশীল বাতিক দেখে মনে হয় এটা নেহায়েত কোনো বিজ্ঞাপনের ট্রেলার। কোনো না কোনো ভাবে এতে দেশের অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
বিজেএমসি ভবন যে জমির উপরে দাঁড়িয়ে আছে সেটাতে স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ। অবৈধ একটা ভবন দাঁড়িয়ে আছে, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার নেপথ্যে এরাও ভুমিকা রাখছে। তবে তাদের দাপট কমে নি। আনিসুল হক এফবিসিসিআইয়ের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন ভোটে। এই মানুষটার কথাও চমতকার। তার কথা শুনলেই মনে হয় দেশের সবকটা গার্মেন্টস নেহায়েত দাতব্য প্রতিষ্ঠান। কোথাও লাভ হচ্ছে না, কারো কোনো ওয়ার্ক ওর্ডার নেই। তবে নেহায়েত সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্যই তারা একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে লোকসান গুনছেন। তাদের মহানুভবতা আমাকে ছুঁয়ে যায়। তারা ২০ লক্ষ শ্রমিকের ভরনপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন।

কর্পোরেট তার ব্যবসা বিস্তারের কাজে সবসময় মুখ খুঁজে, নতুন মুখ। এখন আমাদের কর্পোরেট পেয়ে গেছে নতুন বিবেক, হায়দার হুসেন। তিনি কর্পোরেটের কোলের উপরে বসে আদর খাবেন, কর্পোরেটের পয়সায় তিনি শ্রমিকের জয়গান গাইবেন। কর্পোরেটের সোহাগে তার শিল্পভান্ডার গর্ভবতী হবে, তিনি আরও অনেক অনেক শিল্পের জন্ম দিবেন।
তিনি গিনিপিগের মতো ঘনঘন শিল্প জন্ম দিয়ে যান। তিনি সামাজিক উন্নয়নের গল্প শোনান আমাদের, আমাদের হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতাকে খুঁজে দেওয়ার জন্য তার মতো একনিষ্ঠ কর্পোরেটরক্ষিতার প্রয়োজন ছিলো আমাদের।


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

জাঝা

ঠিক এইটাই আমার বক্তব্য



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

বিপ্লব রহমান এর ছবি

সামরিক অধিগ্রহনের পরপর নেভীর গুনকীর্তন করে লেখা এবং গাওয়া গানটা প্রচারিত হতো নিয়মিতই। সেখানে জাহাজের খোলের উপরে নেভী সেনাদের পদচারণার পাশে এক দাড়াল ছাগল ঝাপাচ্ছে ভঙ্গিটা অসহনীয় ছিলো।

হায় হুসেন! হায় হুসেন!


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

নজমুল আলবাব এর ছবি

খাইস্টা মনে হয় তারে দেখলে
মনে হয় অশ্লিল ভাষায় গাইছে।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চলুক

তারেক এর ছবি

আমাদের হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতাকে খুঁজে দেওয়ার জন্য তার মতো একনিষ্ঠ কর্পোরেটরক্ষিতার প্রয়োজন ছিলো আমাদের। - মন্তব্য অফ দ্য উইক!! জাঝা
ঠিক কি কারণে জানি না এই লোকের কোন গানই আমার ভালো লাগে নাই তেমন একটা ।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এই শালা হচ্ছে সঙ্গীত জগতের সাঈদী ।

-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

একটা হতে পারে ও এমবেডেড, নয়তো সুবিধাবাধী বোকচোদ। কিন্তু একা হায়দার কেন আজকের সিভিল, বিদ্বান ও মহানদের কে সরকার ও মালিকদের গুণগান গায় না? উর্দি পালিশের খয়ের খাঁ গিরি করে না। আমাদের অনেক গণতন্ত্র পুজারীই জিয়া, এরশাদ ও এখনকার এনাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য খাদেম। ড. ইউনুস থেকে শুরু করে ড, কামাল, মোজাফফর আহমদ থেকে শুরু করে আনিসুজ্জামান। কে তুলসী পাতা? বলতে হলে সবাইকেই বলতে হবে।
আজ এই লেখাটার দরকার ছিল। ধন্যবাদ রাসেল।


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

শামীম এর ছবি

এক্কেরে মনের কথা ... ... আজ দুপুরেই টিভিতে ঐ ব্যাটার চিঁহিঁ সুরের গান শুনে মাথায় রক্ত চড়ে যাচ্ছিল।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চমৎকার, সাহসী এবং শক্তিশালী লেখা। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই লোকটার গান আমারও কখনোই কেন যেন ভাল লাগেনি!

সবজান্তা এর ছবি

বি এন পির কপাল খারাপ মন খারাপ

ছাগল পালন প্রকল্পের সময় উনারে দিয়া কি দারুণ গানই না গাওয়ানো যাইতো, একদম রিয়ালস্টিক আত্মজীবনী হইতে পারতো।

--------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

মন্তব্যে‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ (বিপ্লব)

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেবো। কিন্তু কী পাবো তার বদলে? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

খেকশিয়াল এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

একবার এক ভরা মজলিসে বইলা ফেলছিলাম যে হায়দার হোসেনরে আমার রাজাকারচাটা মনে হয়... তাহা শুনিয়া আকুলিত বংলাদেশপ্রেমীরা পারলে য্যান আমারে মারে... বলে তার মতো দেশপ্রেমিক হয় না। আমি নানাভাবে বোঝানোর চেস্টা করলাম যে আমি তার সহিত বারকয়েক বাতচিত করিয়াই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইছি (কসম... লোকটার সাথে কথা কইলে তারে রাজাকারই মনে হয়) কিন্তু কিসের কি... হোসেন সাহেবের ইমেজ দেশে এইরকমই... এবং তার ব্যবহারবিধিও বেশ ভালোই।

এইক্ষনে আরেক্টা কথা বলি... প্রথম আলোর কিনিত মাল মাহমুদুজ্জামান বাবুকে দেখিয়াও আমার একই অনুভূতি হয়...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বিপ্রতীপ এর ছবি

এই ছাগ'টার গান দেখলে এখন মেজাজ খারাপ লাগে...দ্রুত চ্যানেল পাল্টাই... ২/৩ টির বেশি শব্দ কানে ঢুকতে দেই না।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিপ্রতীপ ব্লগ | ফেসবুক | আমাদের প্রযুক্তি

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক দিন নিয়মিত টেলিভিশন দেখা হয়ে উঠে না। হায়দার হুসেন এর "স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি" গানটা ভালোই লেগেছিল। কিন্তু এখন তাঁর এসব কাজ আপনার লেখায় জানতে পেরে খারাপ লাগলো।

আপনার এ লেখাটা তীক্ষ্ণ ও শক্তিশালী হয়েছে। বেশ ভালো লেগেছে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

হায়দার হুসেনদের কোনটা মুখ, কোনটা মুখোশ চেনা দায়। হুসেনের মুখোশ উন্মোচনের জন্য লেখককে ধন্যবাদ।

পান্থ রহমান রেজা

বজলুর রহমান এর ছবি

ভয়, লোভ ও আত্মতৃপ্তি - এই তিনটি উৎপাদকের সমন্বয় হলে প্রতিরোধ দুর্বল হয়ে যায়। আমি হায়দার হুসেনের পটভূমি জানি না, তাই বলতে পারি না তাঁর প্রধান দুর্বলতা কোথায়। ঢা,বি,র ডঃ আনোয়ার হোসেন সেনাবাহিনীর প্রতিটি জোয়ানের কাছে নিঃশর্তভাবে ঢা, বি,র প্রতিটি শিক্ষকের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেরকেও ক্ষেপিয়ে দিয়েছিলেন। এখানে কার্যকর ছিল ভয়, যদিও পরে তিনি তা অতিক্রম করতে পেরেছিলেন। আনিসুল হক (লেখক) এবং নির্মলেন্দু গুণ বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছিলেন - সেখানে ভয় বা অর্থলোভ কিছুই ছিল না, হয়তো একটা নতুন রকম কাজের অভিজ্ঞতা উপলব্ধির আগ্রহ ছিল।
আমার মনে হয় হায়দারকে বিশেষ বাহিণীর লোক খুব খাতির করে নিয়ে গিয়েছিল এবং তার গানের ভূয়সী প্রশংসা করে বেশ কিছু অর্থের লোভ দেখিয়ে রাজী করেছিল। পরে অর্থের ব্যাপারটা তাঁর কাছে বেশ গুরুত্বপুর্ণ হয়ে দাঁড়ায়, তাই কর্পরেট বিজ্ঞাপনে।
মানুষের দুর্বল জায়গাগুলো ব্যবহার করা হয় সব বিজ্ঞাপনে, দর্শকের এবং অভিনেতা/মডেল/গায়কের।

সৌরভ এর ছবি

স্যালুট।
এই লেখাগুলোনের জন্যেই লগইন করি।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অতিথি লেখক এর ছবি

একটু কারেকশন আছে ভবনটা বিজেএমসি'র না "বিজিএমইএ" এর

লেখার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

কল্পনা আক্তার

..........................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।