কূৎসিত অনুভব

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: সোম, ১০/০৯/২০০৭ - ৮:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আত্মজীবনি লেখবার দায়িত্ব নিতে খারাপ লাগে- যদিও আত্মজীবনি আমার নিজস্ব জীবনের কথা তবে আত্মজীবনির সাথে সংশ্লিষ্ঠ মানুষের অনুভবের কথাও ভাবতে হয়- তারা কিভাবে গ্রহন করবে আমার অনুভব কিংবা আমার পর্যবেক্ষণ এবং আমার অনুমানজনিত সিদ্ধান্ত তারা কিভাবে গ্রহন করবে এই সংশয় থেকে আমি কিছুটা পরোক্ষ আত্মজীবনি লেখতে চাই- যেখানে পাত্র পাত্রীর ভেতরে শুধুমাত্র আমার পরিচয়ই থাকবে এর বাইরে যারা আছে তারা কিংবা তাদের নাম অনুহ্য থাকবে- এটুকু আড়াল প্রয়োজন আছে জীবনে- অন্তত সবার সামাজিক জীবনে।

মানুষের সামাজিক সত্ত্বার খোলসের ভেতরে অন্য মানুষ বসবাস করে- এ সত্যটা সবাই মানে- তবে সামাজিক পরিবেশে এই খোলসটা সার্বক্ষণিক মুখে পড়ে থাকে মানুষ- তাদের কেতাদুরস্ত আচরণ আর তাদের সুন্দর শব্দ চয়ন কিংবা তাদের আন্তরিকতা আবং সামাজিকতার ভেতরে এবং তাদের অন্তর্গত অনুভবের ভেতরে বিস্তর পার্থক্য আছে-

তবে খানিকটা বেসামাল অবস্থায় কিংবা কোনো নেশার প্রভাবে যখন এই সামাজিক রক্ষা কবচ কিংবা এই গার্ড ওফ করে মানুষ নিজস্ব অনুভব প্রকাশ করে তখন তার ভেতরে মানুষের ভাবনা সামনে আসে।

এই আত্মজীবনির অংশে বেশ কিছু মানুষের বেসামাল জীবনের কথা আসবে- তারা বিভিন্ন সূত্রে আমার পরিচিত এবং তাদের সম্পর্কে আমার কিছু পূর্বানুমান থাকলেও শুধুমাত্র কূৎসা রটানো এই আত্মজীবনির লক্ষ্য নয়।

ঢাকা শহরের জরুরী অবস্থা চলাকালীন সময়ে এক দিন এক বন্ধুর ডাকে গেলাম তাদের ব্যবসার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে- চমৎকার আয়োজন ছিলো- অন্তত বৃষ্টি ভেজা দিনের স্যাঁতস্যাঁতে অনুভব ভেতরে নিয়েই যখন অনুষ্ঠানের পৌঁছালাম তখন অবাক হলাক কিছুটা হলেও- বাসার ছাদের আয়োজন হয়েছে অনুষ্ঠানের- উদ্বোধনী অনুষ্ঠান- ব্যবসায়ী বন্ধুরা একত্রে এসেছে- ছাদের উপরে সুন্দর ছাউনি তোলা হয়েছে- এক পাশে বুফেতে কাবাব- পরোটা- চিকেন ফ্রাই- জিলাপী- চটপটি- বিস্তর আয়োজন- সবাই সপরিবারে আমন্ত্রিত- একে একে অতিথীরা আসছে- ছাউনির নিচে মিনি বার- সেখানে নানা রকম পানীয়- আমার শরীর মূলত এলকোহল ইনটলারেন্ট- শরীর সায় দেয় না তাই বাঙ্গালী মাংনায় পেলে আলকাতরা খায় প্রবাদকে ভুল প্রমাণিত করে আমি শুকনা মুখে কোকাকোলা খাই- আশে পাশে মানুষ খাচ্ছে- কেউ কেউ নিয়মিত খায়- তারা পরিমিত পান করে- আর যারা আদতে মাংনা পেলে গলা পর্যন্ত মাল খায় তারা হাভাতের মতো খাচ্ছে- এবং পরিস্থিতি যা হয় আর কি- কিছু ক্ষণের ভেতরে সবাই মোটামুটি মাতাল- মাতাল হওয়ার দোষের কিছু না- তবে মাতাল হয়ে থাকবার জন্য আমার নিজস্ব ভাবনা বলে খুবই ঘনিষ্ট বন্ধুদের সামনে থাকতে হয়- যারা ব্যক্তিগত ভাবে তাকে চিনে- তাকে একটু আলাদা ভাবে যাচাই করবে- নিতান্ত অপরিচিত মানুষের সামনে মাতলামী করা মানুষদের আমার কুৎসিত মনে হয়- যদিও এটা একান্ত আমার অনুভব তবে শোভনতার বাইরে মাতলামি করাটা সব সময়ই নিন্দনীয় বিষয় বিবেচিত হওয়া উচিত-
অন্তত অপরিচিত মানুষের সামনে নিজের গোপন কথা- গোপন অভিলাষ ব্যক্ত করা যার সামনে উম্মোচিত হচ্ছে সত্য তার জন্য সর্বদা মোহাম্মদের মতোই বিব্রতকর- হয়তো অনেকেই অন্য কারো গোপনীয়তার ভার বহনে অক্ষম-

এবং আমার নিজস্ব সিদ্ধান্ত মাতাল ও মাতলামী সম্পর্কে যে এটা একটা রক্ষাকবচ- একদল মানুষ নির্বোধ মাতাল- যে মাল খেয়ে মাতাল হয়ে বিবেচনাশক্তি হারিয়েছে- এরা সুখী মাতাল- সব কিছু ভুলে উল্টা পাল্টা মাতলামী করে ড্রেনে ময়দানে উল্টে পড়ে থাকে- পরদিন সকালে নেশা কাটলে ভাবতে থাকে কেনো এই ঘটনা ঘটলো- সে কেনো এই অপরিচিত পরিবেশে পড়ে আছে-
অন্য একটা শ্রেনী হলো সেয়ানা মাতাল- এটা ভরপুর মাতাল হলেও বিবেচনাবোধ হারায় না- তারা ভোম হয়ে বসে থাকে-

তবে সবচেয়ে ভয়ংকর হলো সুবিধাবাদী মাতাল- এটা তক্কে তক্কে থাকে -মাতলামীর আড়ালে তারা নিজেদের চাহিদা পূরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে- এরা কোনো সময়ই মাতাল না বরং মাতালের ভান করে এমন উদ্ভট কাজ করা শুরু করে দেখে মনে হয় একে কিছু বলে লাভ নেই- তবে এদের হুঁশের নাড়ী টনটনাই থাকে-

যাই হোক মানুষের কানের কাজ শব্দ শোনা- তাই খাওয়া শেষ হওয়ার পরে অন্য সব মাতালদের কথা শুনি- আর চিন্তা করি এই যে জরুরী অবস্থা এত কড়াকড়ি- এর ভেতরেও লাইসেন্স ছাড়া অবৈধ ভাবে এত বোতল মদ আনা হলো কিভাবে- আর প্রবাদের সত্যতা উপলব্ধি করি আসলে কিছু মানুষ সব সময় আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে- তারা কোনো ভাবেই হাইপ্রোফাইল নয় তবে তাদের আনাগোনা উপরের সিঁড়িতে এবং তাদের অনেক পরিচিতই রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন করা থাকে- এবং এরাই মূলত ওদের অনেক সুবিধা দেয়-

আমার ওর সাথে শুতে ইচ্ছা করতেছে এখনই- মাতালের মুখে এই কথা শুনে আগ্রহী হয়ে সেই মেয়েকে খুঁজি- মাল খেয়ে পাকা আম হয়ে থাকা মানুষটা চেয়ারের হাতল ধরে বিগত বৌয়ের স্মৃতিচারণ করে- যদিও ডিভোর্স শব্দটা এখন খুব স্বাভাবিক একটা শব্দ বাংলায় তবে এখনও কেউ কেউ বিগত ডিভোর্সড বৌয়ের সাথে শুতে চায়- কি কিভাবে শুতে চায়- কত অপূর্ণ বাসনা ছিলো তার- এসবের বর্ণনা শুনে বিব্রত না বরং কৌতুক বোধ করি- হাসতেও পারি না- সবাই গম্ভীর মুখে তাকে সান্তনা দিতে শুরু করেছে- আরও অনেকের মুখ ভার-

একেএকে আরও পরিচিত মানুষেরা আসে- সবার পরিচিত মুখেরা বাদ্যযন্ত্র সহকারে পাণ করে- এবং আমরা যারা নিতান্ত সাধারণ মানুষ তাদের সকালে ঘুম থেকে উঠতে হয় এবং নিয়মিত মধবিত্ত হয়ে থাকবার যন্ত্রনা পোহাতে হয় তারা সবাই একে একে চলে আসে ঘরে-

ভেবেছিলাম এমন অভিজ্ঞতা বোধ হয় আর হবে না- তবে আমার জীবন আমাকে বারংবার একই পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয়- তাই আবারও একটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলাম- সেখানেও আমার পরিচিতেরাই উপস্থিত তবে সবাই স্বল্প পরিচিত-
অনেক ঘটনাই ঘটেছে তবে সেসবের বিস্তারিত নিয়ে কথা না বলে যেটা সবচেয়ে আহত করেছে সেইটুকু বর্ণনা করি-

কোনো একটা মেয়ের আত্মজীবনি কিংবা ভাষ্য শুনেছিলাম-
বক্তব্যটা মোটামুটি এরকম ছিলো যে
আমি যদি একদল ছেলের সাথে মদ খাই কিংবা নেশা করি তার মানে এই নয় যে আমি তাদের সাথে শুতে চাই- তবে অধিকাংশ সময়ই এই একদল ছেলেরা এই অবস্থার সুযোগ নিতে চায়-

কথাটার সত্যতা উপলব্ধি করলাম- আমাদের সবার ভেতরেই কম বেশী পুরুষতান্ত্রিকতা বিদ্যমান- আমরা মেয়েদের এবং ছেলেদের বলে শ্রেনী বিভাজন করেই রেখেছি- এসব নেশা ভাং ছেলেদের সম্পদ- যদি কোনো মেয়ে এটা করে তবে সে মেয়ে পরিচয়ে পরিচিত হয় না বরং একটা যোনী হয়ে যায়- তার স্তন আর যোনী সমেত সে একটা ভক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠে-

আমাদের আড্ডার একমাত্র মেয়ে- যে চটপটে- এবং হয়তো কোনো কোনো বিচারে কিছুটা সুন্দরী- সাথে আরও কিছু পুরুষ- তারা বিভিন্ন ভাবে মেয়ের সহচার্যে আমোদিত হচ্ছে- টেলিফোন আর ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কের জড়তা কাটে-

এসব সামাজিকতার ভেতরে আমাকে একজন বললো এটা অসামাজিক আচরণ হচ্ছে এত মানুষের ভেতরে আমি গলা শুকিয়ে বসে আছি-

মেজাজটা খারাপ ছিলো একটু এইসব দেখে বললাম- সামাজিকতার অর্থ এই না যে সবাই বোতলে চুমুক দিলে আমাকেও দিতে হবে-
ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিটাও ভালো লাগলো-

আর্তচিৎকার বলা যায় কিংবা প্রলুব্ধ করবার জন্যে মৃদু বাধা- যে যেভাবে গ্রহন করে বিষয়টাকে- ঘাড়ে হাত রাখা মানুষটা ভাব বিনিময় শেষে আরও ঘনিষ্ট স্পর্শ বিনিময় করতে চাইছে- শুরুটা চুমুতে এবং স্তনের ছোঁয়ায় সারতে চায়- মেয়েটা আগ্রহী কিংবা অনাগ্রহী এটা আসলে বিবেচনার বিষয় হতে পারতো-

তবে আমার মনে হয় সেই মূহুর্তে এই কামনার কুৎসিত প্রকাশ এবং সেটাকে সমর্থন এবং প্রতিরোধের বিভিন্ন সংলাপের ভেতরে কতটুকু সচেতনতা আছে সেটা বুঝে উঠা মুশকিল-

মেয়েটাকে আপসেট লাগে কিছুটা এবং মেয়েটা একটু পড়ে ঘর ছেড়ে অন্য ঘরে যাওয়ার পরে- আমাদের ভেতরের পুরুষতান্ত্রিকতার উজ্জল উদাহরণ মানুষটা বলে-
কি হলো ভাই মেয়েটার ব্রা খুললে ওর দুধ ঝুলে যাবে হাঁটুতে- ওকে চুদতে চাইছিলো আপনি বাধা দিলেন কেনো?

যার উদ্দেশ্যে এই কথা বলা সে তখনও আরও উত্তেজিত ভাবে আরও কিছু আচরণ করে যাচ্ছে-

তবে যে এই ঘটনা ঘটালো সে যে খুব মাতাল ছিলো তা নয়- বরং এই সুযোগ সন্ধানি মাতাল হয়তো আরও তক্কে তক্কে থাকে বিভিন্ন মদের আসরে গিয়ে এভাবেই অচেতন যৌণতার উপলব্ধি নিতে চায়-

গৃহস্বামীর মুখ থেকে অশালীন ভাবে ঝড়ে পড়ে হুইস্কির স্রোত- আমার ভেতরে জঘন্য একটা অনুভুতি হয়- মাল খেয়ে পাকা আম কথাটাও প্রযোজ্য নয় এ সময়ে- আসলে টলতে থাকা মানুষটা যে এতক্ষণ মেয়ের স্তনের উপরে প্রায় উপুর হয়ে পড়বার মতো করে বসে ছিলো টাল মাটাল- তাকে টেনে উঠানোর পর সে অশালীন একটা হাসি দিয়ে পড়ে থাকা একটা গ্লাসের সবটুকু হুইস্কি গলায় ঢেলে দেওয়ার পরে তার ঠোঁটের কোনা দিয়ে সামান্য হুইস্কি উপচে পড়ে- এবং এই হুইস্কি ফোঁটায় ফোঁটায় ঝড়তে থাকে তার টিশার্টের উপরে- এবং আমার অশালীনতার বোধ চরমে উঠবার পর আমি দেখি সে কোনো মতে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে- এবং জড়ানো স্বরে বলছে না আমি ঠিক আছি-

সুযোগ সন্ধানী মাতালের চাটুকারও একই ভঙ্গিতে অনেকক্ষণ মাতলামী করে-

রাত বাড়তে থাকে- আমি সম্পূর্ণ রাস্তায় আরও কিছু মজার মাতলামির অভিজ্ঞতা নিয়ে বাসায় ফিরে আসি-


মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এইটা ফাকিবাজি হইলো রাসেল।
কথা ছিল ছোটবেলা থেকে শুরু করবেন যেটি আমার ই-বুকে স্থান পাইবে।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

জলপথ কিংবা হাওয়াপথের কোন পরিব্রাজকের নারীঘটিত হ্যাংলামী ঢালি/বলি সিনেমাতেই অধিকতর ।
বাস্তবে এইসবে আরো বেশী সেয়ানাগিরী করেন ঠান্ডামাথার ভদ্রলোকেরাই ।

-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ও হ্যাঁ,ফাকিবাজী কিন্তু বেশী হয়ে যাচ্ছে আসলেই ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ফারুক হাসান এর ছবি

লেখার গায়ে দুএক ফোটা লেগেছিলো নাকি। টললাম মনে হয়!

-----------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ঠিকাছে।
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ভাস্কর এর ছবি

ঠিকাছে...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আত্মজীবনীর কথা কইয়া পরজীবনী। তীব্র পেতিবাদ!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

রাসেল এর ছবি

কোনটা ঠিক আছে এইটা বুঝি নাই এখনও-

তবে এইটা নিয়া ভাইবা লাভ নাই- সমাজকর্মীর দায়িত্ব আমার না- আমার কাজ দর্শকের।

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ঠিক।
তা দর্শক মহাশয় কি তার আরো কিছু দর্শনের বয়ান আমাদের দিবেন না?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।