নারীর অধিকার ও মানবাধিকার

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি
লিখেছেন রাতঃস্মরণীয় [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৮/০৩/২০১২ - ৪:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনুগল্পের প্রথম পর্বটা এরকমই- সেলিনা পারভীন পেশায় একজন যৌনকর্মী। যৌনসেবাদান তার একমাত্র পেশা। তার স্বামী হাকিম বাংলাদেশের কোনও এক যৌনপল্লীর এক খুদে মুদি দোকানদার। হাকিমের আবার বাংলা মদের বেজায় নেশা। সন্ধ্যের পর পরই শুরু হয় তার পানের সময়। তবে ভালো যে সে বেশি হৈ হল্লা করে না। তবে তার একটা স্বভাব হচ্ছে ছুতোনাতা করে সে সেলিনার পয়সা চুরি করে। আবার সেলিনাকে এটা ওটা বুঝিয়ে পয়সা নেয়। সেলিনা এবং হাকিমের দুটো ফুটফুটে বাচ্চা, বড়টা মেয়ে আর ছোটটা ছেলে। বয়স ওদের যথাক্রমে ছয় এবং সাড়ে চার। সবাই মিলে ওরা যৌনপল্লীর একটা ঘরেই বসবাস করে।

ওদের দুজনেরই ইচ্ছে বাচ্চা দুটোকে স্কুলে দেবে। বড়টাকে অবশ্য ঘরে পড়ানো শুরু করেছিলে আগেই। তো, সেলিনা ওদের নিয়ে নিকটস্থ স্কুলে গেলো। শিক্ষক আনিসুর রহমান তো হতবাক, “বেশ্যার বাচ্চা স্কুলে পড়বো! তুমি পোলাপান স্কুলে দিয়ে কি করবা? বড় হইলে তো মাইয়া তোমার খানকীই হইবে, ওগো স্কুলে দেওয়ার কাম কি? আর পোলাডাওতো বড় হইয়া চোর নাইলে মাগীর দালাল হইবে। যাও ভাগো।”

দ্বিতীয় পর্বটা দেখি- হাকিম শয়তার টাইপের মানুষ, প্রয়োজন না হলেও সেলিনার পয়সা চুরি করে নয়তো এটা ওটা বুঝিয়ে পয়সা নিয়ে নেয়। সেলিনা হাকিমকে বাঁটে ফেলে মাঝেমধ্যে কিছু আদায় করতে ছাড়েনা অবশ্য, তবে তা কদাচিৎ। হাকিমের বড়ো আশা সে পল্লীর বাইরের বাজারে একটা দোকান দেবে। কিছু পয়সা জমেছে। আবার বাজার কমিটির সেক্রেটারী গামা সাহেব সেলিনাকে বেশ পছন্দ করে। প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে ৩-৪ বার এসে সেলিনার ঘরে একটু থেকে যায়। হাকিমের কাছ থেকে সিগারেটও কেনে। সেই আশা নিয়ে হাকিম গিয়ে হাজির হলো গামা সাহেবের কাছে। সব শুনে গামা গম্ভীর স্বরে যা বলে তাতে হাকিমের আশার গুড়ে বালি পড়ে যায়, “তোমারে দোকান দিমু বাজারে, কি যে কও হাকিম, দিন দুপুরে মাল খাইছো নি? তুমি হইলা খানকীর ভাতার, তোমারে বাজারে দোকান দিলে আমার চাকরী নট। আর অন্য দোকানদারেরাও তোমারে পিটাইয়া উঠাইয়া দিবো। শ্যাসম্যাস তোমার আম ছালা, দুইটাই যাইবো। তার চাইতে যেমন আছো, পাড়ায় দোকানদারী করতে থাকে। প্রবলেম হইলে আমারে কইও।”

শেষপর্বে যা থাকছে- এনজিওর কর্মীরা এসে বাচ্চাদুটোকে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিলেও পল্লীর বাইরের বাচ্চারা ওদের সাথে ভালোমতো মেশেনা। আর মিশতে চাইলেও টিচারদের চোখ রাঙানীতে তারা থেমে যায়। পাড়ায় মাঝে মধ্যে পুলিশ এসে ঝামেলা করে। এমনই এক ঝামেলার সময় তারা হাকিমকে ধরে রাম প্যাঁদানী দেয় শুধু শুধু। এতে হাকিমের বেজায় বুকে ব্যাথা শুরু হয় এবং সে আর ঠিকমতো দোকানদারী করতে পারেনা। সেই শিক্ষক আনিসুর রহমান অবসরে গিয়ে পেনশনের টাকার জন্যে এজি অফিসে ঘুরতে ঘুরতে হয়রান হয়ে পড়ে, টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না।

এগুলো সবই আমাদের আশপাশের চিত্র। যৌনকর্মীর বাচ্চার শিক্ষার সূযোগে বঞ্ছনা, যৌনকর্মীর উপার্জিত অর্থের উপর স্বামীর অনধিকার হস্তক্ষেপ, যৌনকর্মীর স্বামীর পেশাগত বঞ্ছনা, আবার শিক্ষকের প্রাপ্য পেনশনের প্রক্রিয়ায় বঞ্ছনা- প্রতিনিয়ত অধিকারহরণের এবং অধিকারবঞ্ছনের কিছু নমুনা। চারপাশে চোখ বুলালে এরকম অনেক কিছুই সবার চোখে পড়বে।

২০০২ সালে ঠিক এই দিনে, ৮ মার্চে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের স্লোগান ছিলো “নারীর অধিকার নয়, বলো মানবাধিকার।” মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘনঘটার মধ্যে নারীর অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টা যেন প্রকটভাবে চোখে পড়ে। আর ঠিক সেকারনেই মানবাধিকারকে ছাপিয়ে নারীর অধিকারের বিষয়টি সবাক হয়ে ওঠে।

সনাতন সমাজব্যবস্থায় নারীর কাজের পরিমান পুরুষদের থেকে অনেক বেশি। বাসর রাতে স্বামীর উত্থিত পুরুষাঙ্গের কাছে নিজেকে সমর্পনের মধ্যে দিয়ে একজন নারীর বহুমূখী কর্মমূখর জীবনের সুচনা। সন্তান জন্মদান ও প্রতিপালন, ঘর-গৃহস্থালীর কাজ, সমাজ-সামাজিকতার কাজ, সেবাদাসীর কাজ, ইত্যাদি কাজের শ্রম এবং সময়বিবেচনায় আর্থিক মূল্যায়ন হলে তা কোনওভাবেই উপার্জক স্বামীর আয় থেকে হয়তো কম হবে না। কিন্তু তার পরও নারী স্বীকৃতি এবং সন্মানবঞ্চিত। আজকাল যদিও এর অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, সমাজে প্রগতিশীল মানুষ এবং পরিবার এখন অনেক, কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিগুলো যেন কেবলই শহরকেন্দ্রিক।

মানবাধিকারের বিষয়টা সার্বজনীন- নারী, পুরুষ, শিশু, আদিবাসী, এক্সক্লূডেড, এটা সবার অধিকার। তাহলে নারীর অধিকার নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলার কি প্রয়োজন? সার্বজনীন মানবাধিকার নিশ্চিত হলে তো নারীর অধিকারও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিশ্চিত হয়ে যায়! বাট, দ্যাট’স নট দ্য কেস ইন রিয়ালিটি- বঞ্চনা-নিগ্রহের খতিয়ান খুললে দেখা যাবে নারীরাই এর মূল স্বীকার। নারীর অধিকার পরিবারে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে নিশ্চিত নয় বলেই নারীর অধিকার নিয়ে জোরালোভাবে কথা বলা প্রয়োজন। তাই আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের দাবীর সাথে সাথে নারীর অধিকারের দাবীগুলো নিয়ে আরও সবাক এবং সোচ্চার হতে হবে, এবং এই দাবী উচ্চারণ একটা দিন-নির্দিষ্ট না করে চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখতে হবে। নারীর অধিকার নিশ্চিতকরণের দায় পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্বের। তাই নারীর অধিকার বঞ্ছনার বিষয়গুলো জনসমক্ষে এনে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্বকে দায়াবদ্ধতার শৃঙ্খলে বাঁধতে হবে। আমরা অবশ্যই মানবাধিকারের কথা বলবো কিন্তু দৃষ্টি রাখবো যেনো মানবাধিকারের দাবীর বৃহদায়তনে নারীর অধিকারের দাবিটি ঢাকা পড়ে না যায়।

।। নারীর প্রতি সকল সহিংসতার অবসান ঘটুক ।।


মন্তব্য

লাবণ্যপ্রভা এর ছবি

হাততালি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ লাবণ্যপ্রভা।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রাগিব এর ছবি

বাংলাদেশের জন্য নারী দিবস পালন করাটা একটা প্রহসন। যে দেশে নারী নীতি অনুমোদন করাতে হয় বায়তুল মুকারমের খতিব এবং আরো অনেক "আলেম"কে দিয়ে, এমনকি জামাত-বিএনপির আমলে না, এই আওয়ামী লীগের আমলেও, সেদেশে নারী দিবস পালন করে লাভ কী?

যেকোন জায়গাতেই বলে দেখুন না, সম্পত্তিসহ সব কিছুতে নারীদের সমান অধিকার দেয়ার কথা -- তথাকথিত শিক্ষিত লোকজনও তেড়ে আসবে, এবং কেনো বাপের সম্পত্তির অর্ধেক পেয়েই মেয়েদের আনন্দে নাচা উচিৎ, তার হাজারো গাণিতিক যুক্তিও দেখাতে বসবে। দুঃখজনক হলো, এসব বৈষম্যমূলক ধর্মীয় আইনের সমর্থক দলে আছে অনেক নারীও, নিজেদের তারা পূর্ণ মানুষ বলে হয়তো মনে করেন না, বরং ধর্মের আলোকে নিজেকে আধা-মানুষ হিসাবে ধরেই পরিতৃপ্ত থাকেন।

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

হিমু এর ছবি

চলুক

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আপনার মন্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষনের কোনও সুযোগ নেই। এটাই আমাদের তথা আমাদের নারীদের জন্যে ট্র্যাজেডি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

তানিম এহসান এর ছবি

(‌Y)

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

নারীর প্রতি সকল সহিংসতার অবসান ঘটুক।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ রাজা।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

কালো কাক এর ছবি

চলুক

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ কালো কাক।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

ধূসর জলছবি এর ছবি

আমাদের দেশের কম বেশি সব নারীই সহিংসতার স্বীকার। নিম্মবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত সবজায়গাতেই। শুধু শারীরিকভাবে সহিংসতার কিছু খবর আমরা পত্রিকায় পড়ি, কিন্তু মানসিক সহিংসতার খবর গুলো কোথাও লেখা থাকে না। লিখে রাখা যায়ও না। সবচেয়ে দুঃখজনক হল নারীর প্রতি সহিংসতা শুধু পুরষরা করে তা না নারীরা আরও বেশি করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। আগে ভাবতাম এসব অশিক্ষিত রা করে। কিন্তু বড় হয়ে চারপাশ দেখে বুঝেছি শিক্ষিতরাও পিছিয়ে নেই। এবং আমাদের প্রচলিত শিক্ষা আমাদের এ ব্যপারে খুব বেশি কিছু শিখায়ও না। নারীর অধিকার ঠিক রাখতে হলে আসলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থারও পরিবর্তন করা দরকার, ঘরে , স্কুলে , সবখানেই। মেয়েদের নিজেদেরই সবার আগে নিজেকে মানুষ মনে করতে হবে, নয়ত সমাজ ঠিক হবে না।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আসলেই সত্যি কথা বলেছেন। বিশেষ করে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সগুলো কিন্তু সেভাবে কখোনোই প্রচারে আসেনা। আর নারীদের উপরে যে মানসিক নির্যাতনের স্টীমরোলার চলে, দেখে মনে হয় যেনো এটাই একটা সিস্টেম। খুবই দুঃখজনক এগুলো। মেয়েদেরই এগিয়ে আসতে হবে এগুলোর প্রতিবাদে।

ধন্যবাদ আপনাকে ধূসর জলছবি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তাপস শর্মা এর ছবি

আর কত ???

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

এর উত্তর আপাতদৃষ্টিতে দেওয়া দুরুহ। তবে আশা নিয়েই থাকতে হবে, হতাশ না হয়ে।

আপনাকে ধন্যবাদ তাপস।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

দুর্দান্ত এর ছবি

১) মিডিয়া ও এন জি ও দের কাছ থেকে আমাদের আইনপ্রণেতারা একটি বড় ছাড় পায়। ২০০০ সালের টানবাজার মামালায় হাইকোরটের সিদ্ধান্তকে, ঢাকা কেন্দ্রীক মিডিয়া ও আন্দোলনকারিরা একটি পাকাপোক্ত আইন হিসাবে ধরে নিয়ে সামনে এগোয়ে। যদি কোনদিন সাম্প্রদায়িক শক্তি এই মামলাকে (যার বিবাদী সরকার নিজে) সুপ্রিম কোরটে ওঠায়, তাহলে সংবিধানের ২য় পরিচ্ছেদের ১৮ ধারা (জনসৃাস্থ ও নৈতিকতা) অনুচ্ছেদ, যেখানে বলা হচ্ছে "রাষ্ট্র দেহব্য়াবসা ও জুয়া প্রতিরোধ করতে কারযকরি পদক্ষেপ নেবে।" - এর বলে হাই কোরটের রায় রদ করা যাবে অনায়াসেই।

২) রাগিব ভাই‌‌‌য়ের সাথে একমত। আমরা কিছু সাম্প্রদায়িক প্রথাকে সংবিধান ও আইনের ওপরে স্থান দিয়ে চলেছি যুগ যুগ ধরে। এর পরিবরতন না ঘটলে মানুষ, পশু, বন, নদী, প্রত্নতাত্বিক সম্পদ - কেউই তাদের পাওনা অধিকার পাবেনা।

এই লক্ষে আরেকটি বড় অন্তরায় ও যেটাকে দেশের পুলিশ-ম্য়াজিস্ট্রেট-উকিল গোষ্ঠির টাকা ছাপানোর যন্ত্র বলা যায় - সেই ব্রিটিশ আমলের পিনাল কোডগুলিকে ঝেটিয়ে বিদায় দেয়া যায়। যেমন সলিসিটিং প্রিভেন্শান ১৮৬০, ইমরাল ট্রাফিকিং ১৯৩৩ এরকম পিনাল কোডগুলোর কথা বলা যায়। এগুলোর ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু পুলিশ হরেদরে দেহব্য়াবসায়ীদের ও কপোত-কপোতিদের হেনস্তা করে। এরও পরিবরতন দরকার।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

গোটা মন্তব্যেই একমত। ধন্যবাদ দুর্দান্ত।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানিম এহসান এর ছবি

সহমত।

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার লেখা।
যৌনকর্মীর পেশাগত বঞ্ছনার কথা একটু যোগ করা উচিত। তখন পড়াশোনা শেষ করে সবে মাত্র চাকুরীতে ঢুকেছি। কয়েকটা প্রজেক্ট কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। যৌনকর্মীর ক্ষমতায়ন অথবা এর কাছাকাছি একটা ধারণা নিয়েও কাজ হচ্ছিল। ‘গেল গেল’ রব উঠল, এই বৃত্তিকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে্‌... ইত্যাদি। নিজেও কিছুটা স্কেপ্টিক্যাল ছিলাম। এবং স্কেপটিক্যালিই প্রশ্নটা করেছিলাম আপনারই খুব কাছের (প্রয়াত) একজন মানুষকে,’যৌনকর্মীর ক্ষমতায়ন?’ কী সব ‘আজেবাজে কথা’ বলেন। একটা ছোট্ট উদাহরন দিয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন,’পশ্চিমে, এমনকী ব্যাঙ্ককে একজন যৌনকর্মী একজন সেবাগ্রহীতাকে কন্ডোম ব্যবহারে বাধ্য করতে পারে, কিন্তু এখানে এইডসের থেকে বাঁচার জন্য নিজের এই সমান্য ‘ইচ্ছেটুকুর’ কোন মূল্য নেই। তারপর আস্তে আস্তে জানতে পারলাম সেইসব ভাসমান যৌনকর্মীদের ভয়ঙ্কর জীবনের কথা। কিভাবে মাস্তান, পুলিশ এবং খদ্দের দ্বারা সমানভাবে নির্যাতিত হয়, কিভাবে ন্যূনতম টাকা না দিয়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়, কিভাবে রিহ্যাবিলিটেশনের নামে নিয়ে গিয়ে আবার অত্যাচার করা হয়। অমানুষিক, সিকেনিং। আমি জানিনা তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা। মানুষযে কতটা পাশবিক হতে পারে তার উদাহরণও দেখেছিলাম।

আরেকটা পয়েন্ট নিয়ে লিখার ইচ্ছে ছিল, এখন ইচ্ছে করছে না্‌...।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

খুবই সত্যি কথা বলেছেন। বিশেষত পল্লীর যৌনকর্মদের তুলনায় ভাসমান যৌনকর্মীদের অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের কৈশোরে পত্রিকায় পড়েছিলাম টানবাজারের কিছু যৌনকর্মীকে এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্যে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলো। একজন কমিশনার প্রতিটি মেয়েকে একটা করে সেলাই মেশিনও দিয়েছিলো। পরে তাদেরই একজন আবার পুরোনো পেশায় ফিরে আসে। সে জানায় বিয়ের পর থেকে স্বামীর সন্মতিতেই সে নিয়মিত শ্বসুরের দ্বারা যৌন নিপিড়নের স্বীকার হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে সে টানবাজারেই ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। ধিক এইসব পশুদের!

আপনাকে ধন্যবাদ নৈষাদ।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

। নারীর প্রতি সকল সহিংসতার অবসান ঘটুক ।।

এই পোড়ার দেশে চাইলেই সব হবে ?

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

হবে,

১। বাসে মেয়েটির নিতম্বে হাত দিলো যে শয়তানটা, মেয়েটা ঘুরে তার বিচির উপর কষে একটা লাথি মারুক; অন্য যাত্রীরা শয়তানটার কানের উপর কষে দুটো থাপ্পড় মারুক; এরকম চলতে থাকুক; ঠিকই হবে।

২। পুলিশের যে হাবিলদার এবং যে মস্তানটা যৌনকর্মীকে নির্যাতন করেছে, ওরা সেই দুটোর নাম লিখে প্ল্যাকার্ড বানিয়ে প্রেস ক্লাব আর ডিআইজি সাহেবের অফিসের সামনের রাস্তায় বসে থাকুক; একরম চলতে থাকুক; দেখবেন ঠিকই হবে।

৩। মেয়েশিশুটির উপর যে খালুজান নির্যাতন চালিয়েছে, এলাকাবাসী তাকে ধরে চৌরাস্তার মোড়ে তার ডিংডং-এ আধলা ঝুলিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখুক; এরকম চলতে থাকুক; ঠিকই হবে।

নারীর প্রতি সহিংসতার অবসান ঘটানো দায় সবারই নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, সমাজে শয়তানের সংখ্যা অনেক, কিন্তু তা ভালোমানুষের সংখ্যার তুলনায় অতি নগণ্য।

ধন্যবাদ সিনিয়র।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

কুমার এর ছবি

চলুক

পুেপ এর ছবি

নারী নীতি পাশ হলেই কি সব সমস্যার সমাদান হবে,প্রশ্ন রেখে গেলাম?
রাস্তায় প্রতিদিন একজন মেয়ের গায়ে হাত দেওয়ার যে অভ্যাস তা বন্ধ হবে কি করে?
বাসের তিন সিট (ইঙ্গিনের গরম বাতাস) এই প্রহসন রুখবে কে?
প্রতিনিয়িত মেয়েদের ছোট করা নানান ভাবে,আমি যদি বেরে উঠার মত একটা সুস্থ পরিবেশ না পাই বাবার সম্পত্তির অর্ধেক দিয়ে কয়দিন বেচে থাকতে পারব?
বেড়ে উঠার, বড় হবার মত একটা নিরাপদ পরিবেশ, যেখানে মানুষ হিসাবে সন্মান চাই,কখনই মেয়ের হিসেবে করুনা নয়,চাই আমার পাসের পুরুষ হবে আমার চলার পথের অনুপ্রেরণা,নয় আমার পথের বাধা।

স্বপ্ন দেখি শুধু সমান অধিকার নয় সমান দায়িত্ব বোধে জেগে উঠবে সকল নারী সমাজ।

কিছু ক্ষেত্রে আইনের চেয়ে ও বেশি কার্যকরী মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবরতন।
লেখায় পাঁচ তারা।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

কিছু ক্ষেত্রে আইনের চেয়ে ও বেশি কার্যকরী মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবরতন।

চলুক

ঠিকাছে। তা'ও বলি কিছু কিছু ক্ষেত্রে নয়, বরং সবক্ষেত্রে।

আপনাকে ধন্যবাদ।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

নিঃসঙ্গ পৃথিবী এর ছবি

চলুক

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ উদাস।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানিম এহসান এর ছবি

আজকে অধিকার, কালকে মানবাধিকার, তারপর.... আসতেই থাকবে কিন্তু ভণ্ডামির শেষ হবেনা। রাষ্ট্র সঠিকভাবে চাইলে এইসব সহিংসতা প্রবাহের প্রাথমিক রাশ টেনে ধরতে এক বছরও লাগবেনা।

সবাই কর্মী কিন্তু নারীর বেলায় সুযোগ নিতে সবাই ষোল-আনা। আমরাও তার বাইরে নই। এই দশ বছর আগেও এদেশে নারীদের প্রতি নূন্যতম সহজাত যে সম্মান ছিলো তা নেই, এখন বাড়ছে প্রচারণা, কৃত্রিম চেষ্টা। ঘর ঠিক না রেখে বাইরে চিৎকার করলে কোন লাভ নেই।

রাষ্ট্রযন্ত্র নিজেই নারীর প্রতি সহিংস। এই দেশটার আসলে ঝড়বাতাসে একবার উপুড় হয়ে যাওয়া দরকার, তাতে যদি সব নষ্টামি আর ভণ্ডামি থেকে মুক্ত হওয়া যায়।

সবার সব অধিকার সার্বজনীন হোক, শুধুমাত্র নারীর বেলায় অধিকার নিয়ে কথা বলে নারীদের আরো প্রান্তিক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেই আমি মনে করি।

লেখা ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

রাষ্ট্র সঠিকভাবে চাইলে এইসব সহিংসতা প্রবাহের প্রাথমিক রাশ টেনে ধরতে এক বছরও লাগবেনা।

দুঃখটা এখানে যে এদেশের সরকার এবং বিরোধীদলীয় প্রধানগণ নারী। নারীবান্ধব রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠায় এদের কোনওই প্রচেষ্টা নেই। ২০০৯ সালে আফগানিস্তানের অর্থ এবং মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে জেন্ডার রেসপন্সিভ ন্যাশনাল বাজেটিং-এর উপর মন্ত্রণালয়ের সবস্তরের প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তাদের জন্যে প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্যোগ নেয়। (সেখানে আমিও বিড করেছিলাম কিন্তু অবশ্য উচ্চদরপ্রদানের কারনে কাজটা পাইনি)। প্রায় বিদ্ধস্থ আফগানিস্তানও এসব উদ্যোগ নেয়, আর আমরা নয়ন মেলে দেখি। এখানে প্রধানমন্ত্রীর কাফেলায় বসে সহকর্মীর শ্লীলতাহানির অপচেষ্টার পরও সেই কর্মকর্তা স্বপদে সদম্ভে বহাল থাকে। যেখানে একজন শিক্ষকরূপী পশু কিশোরী ছাত্রীকে ধর্ষনের পর তারই নারী বস (প্রধানমন্ত্রীর তথাকথিত বান্ধবী) ঘটনাটিকে 'সমঝোতা সহবাস' ট্যাগ লাগিয়ে তার চামচার পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়।

তানিম, সবার অধিকার সার্বজনীন হোক, এটা তো আমি বলেছিই। নারীর অধিকার নিয়ে বিশেষভাবে কথা কেনো বলবো সেটাও ব্যাখ্যা করার চেষ্টাও করেছি। আমি এটা ভিন্ন পারস্পেকটিভ থেকে দেখি। পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় বঞ্চনা মূলক নারীকে যুগ যুগ ধরে প্রান্তিক অবস্থানে নিতে নিতে একদম দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে। এখন উপায় আছে শুধু রুখে দাঁড়াবার। তদুপরী, মানবাধিকারের বিভিন্ন দলের বেনিফিশিয়ারীদের দিকে যদি তাকানো যায় তো আমি দেখি,

শিশুঃ সবশিশুই বিভিন্নধরণের অধিকারবঞ্চিত, যার মধ্যে দেখা যায় শিক্ষার অধিকার, খাদ্যের অধিকার, যত্নের অধিকার, মাতৃদুগ্ধ পানের অধিকার, ইত্যাদি। কিন্তু যৌন হয়রানীর স্বীকার কেবলমাত্র মেয়ে শিশুকেই হতে হয়। কিছু কিছু মাদ্রাসায় অবশ্য ছেলেশিশু নির্যাতনের ঘটনা শোনা যায়। তবে মেয়েশিশুদের উপর যৌন নির্যাতন প্রায় প্রতিনিয়তই ঘটছে।

আদিবাসীঃ আদিবাসীদের ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন খুবই নিয়মিত ঘটনা। ভূমি মালিকানায় তাদের অধিকার লঙ্ঘিত, শিক্ষাদীক্ষায় তারা অন্যায্যভাবে পশ্চাৎপদ, সামাজিক গণমিলনমেলায় তারা অনেকটাই অছ্যুৎ, অন্যায় নির্যাতন, এবং এরকম আরও অনেক। এর উপরে আদিবাসী নারীদের যৌন হয়রানীর বিষয়টাও প্রায়শই শোনা যায়।

দুগ্ধবতী মাঃ কর্মক্ষেত্রের অধিকার লঙ্ঘন তো নিয়ম হয়েই দাঁড়িয়েছে। কয়জন মা তার দুগ্ধজাত সন্তানকে নিয়মিত দুগ্ধ পান করাতে পারছে যেখানে সন্তানকে স্তনদুগ্ধদান মায়ের একটা অধিকার, ঠিক যেমন দুগ্ধপান শিশুর অধিকার।

কর্মজীবি নারীঃ নিজের আয় নিজের সিদ্ধান্তে ব্যায়ের অধিকার নারীর। কিন্তু নারীর উপার্জন আপোষে হোক আর জোরপূর্বক হোক, চলে যায় স্বামী, ভাই অথবা বাবার কব্জায়।

বৃদ্ধা মাতাঃ সন্তানের কাছ থেকে সেবা পাওয়া মাতার অধিকার। কিন্তু হচ্ছেটা কি? অধিকাংশ বৃদ্ধামাতাই সংসারে অবহেলিত। যৌবনে স্বামীর এবং বার্ধক্যে সন্তানের অবহেলার স্বীকার।

এজন্যেই আমি বলেছি নারীর অধিকারের কথাটা মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের দাবীর পাশাপাশি আলাদাভাবে গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করতে হবে। আপনি যে দৃষ্টিতে ভণ্ডামী বলেছেন, আমি সঠিক বুঝে থাকলে আপনার সাথে দ্বিমত করছি না। তবে, ভূক্তভোগী নারীরাই পারে নিজেদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হতে। সমাজ পরিবর্তনশীল এবং সমাজ কারো বাপ-দাদার জমিদারী নয়। বঞ্চিত নারীরা যদি অধিকার আদায়ে মুখর হয়, আমি নিশ্চিত সমাজকে তারা তাদের পাশে পাবে। একদিনে এটা হবে না কিন্তু তাই বলে থেমে গেলে চলবে না। মানবাধিকারের বিভিন্ন বেনিফিশিয়ারী লেভেলে যদি নারী অধিকার সংশ্লিষ্ঠ দাবীগুলোতে কোনও সাফল্য অর্জিত হয়, তখন দেখতে পাবেন যে সার্বিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের এবং বঞ্চনার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সমাধানের আলো দেখেছে।

আশাকরি বোঝাতে পারলাম তানিম।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানিম এহসান এর ছবি

আরে, আমি আপনার কথার সাথে কোথাও দ্বিমত করিনি, যোগ করে যেতে চেয়েছি; আপনার অনুভূতিকে আমি শ্রদ্ধা করি।। তবে আপনার এই দীর্ঘ প্রতিমন্তব্যে একটা লাভ হয়েছে, আরো কিছু তথ্য নির্দিষ্টভাবে পাওয়া গেলো। ভালোইতো হাসি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

দ্বিমত মানে একরম বুঝেছি যে আপনার পার্সপেকটিভটা সার্বজনীন মানবাধিকার ফোকাসড। আর আমারটা সার্বজনীন মানবাধিকারের মধ্যে থেকেই নারী অধিকারের বিষয়টাকে আরও সোচ্চার ভাবে তুলে ধরা।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি এর ছবি

চলুক

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ হে অতিথি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।