বিচ্ছিন্ন ভাবনাগুলো

রেজওয়ান এর ছবি
লিখেছেন রেজওয়ান (তারিখ: সোম, ২০/০৮/২০০৭ - ৫:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১:

দেশের এক বাউল শিল্পীর সাক্ষাৎকার শুনছিলাম টিভিতে। বললেন নব্বই এর দশকের প্রথম দিক থেকে তাদের অবস্থা মন্দা হওয়া শুরু করে। এখন তেমন আর চাহিদা নেই। এটিকে পেশা হিসেবে রাখা দায়। বেচারাদের শত্রু অনেক। অনেক ব্যান্ডদল শুন্যস্থান পুরণের দায়িত্ব নিয়ে বাউল গানকেই অস্তিত্বের সম্মুখীন করে ফেলেছে। হেভি মেটালে বাউল গান শোনার অপেক্ষায় আছি।

যাত্রা শিল্পকেও তো মেরে ফেলা হলো সেই একই সময়ে। শুরু হয়েছিল এরশাদের আমলের শেষের দিকে অভিনয় নিয়ন্ত্রন আইন বলবৎের মাধ্যমে। কঠোর সেন্সরশীপ আরোপ করা হলো। এরপর তো ধুয়া তোলা হলো এগুলো অনৈসলামিক। জেহাদীদের আক্রোশ নেমে আসল তাদের উপর। বলবৎ হলো নিরাপত্তার ছুতো ধরে নিষেধাজ্ঞা। আজ যাত্রা শিল্পীরা কি করে খুব জানতে ইচ্ছে করে। কিভাবে তাদের অন্নসংস্থান হয়?

২:

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মননের জাগরনের স্বর্ণযুগ মনে হয় স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়গুলোতে। কারন দেশের রাজনৈতিক অঙনে নেতৃত্বদানকারী বাঘা বাঘা নেতারা ছিলেন শিক্ষিত এবং সংস্কৃতি মনষ্ক। তাদের ভাবনায় ছিল দেশ ও জাতি, অন্যকিছু নয়।

এরপর আবার জাগরন উঠল এরশাদ হটাও আন্দোলনের সময়। গদ্য, কবিতা, নাটক, গান থেকে শুরু করে ব্যান্ড সঙীত পর্যন্ত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধাচরন করল। রাজনীতির মতপার্থক্যগুলো মিলে এক উদ্দেশ্যে স্থির হলো।

এরশাদ গেল কিন্তু তার পর থেকে শুরু হলো সংস্কৃতির নোংরা রাজনীতিকরন (আগেও ছিল তবে এত ব্যপক নয়)। জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতির ব্যপক উত্তরন আমরা লক্ষ্য কললাম। রমনার বটমূল দখলের হুমকি দিল জাসাস। কর্মীরা সারা রাত পাহারা দিয়ে ঠেকাল। ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির আন্দোলন তুমুল জনপ্রিয়তা পেল। গনআদালত হলো। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য রাজনৈতিক চালে তাকে মিইয়ে দেয়া হলো।

এরপরের ইতিহাসতো অনেকেরই জানা। রাজনৈতিক বেনিয়াদের লুণ্ঠনে কলুষিত সমাজ, সংস্কৃতি। হুমায়ুন আজাদ, শামসুর রাহমানের মত কন্ঠগুলোকে মুছে ফেলার চেষ্টা। বুদ্ধিজীবি সমাজের বিরুদ্ধে নোংরা প্রপাগান্ডা। ইতিহাস বিকৃতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্যতার কারনে নতুন প্রজন্মে বিশাল শুন্যতা। ধর্ম এসে কখনো এই শুন্যতা পুরন করে। এই হিপোক্র্যাটদের দেশে আজ হিন্দী সংস্কৃতির জয়জয়কার। মুখে আমাদের ভারত বিদ্বেষ অন্তরে অভিষেক ঐশ্বরিয়ার জন্যে আঁকুতি।

আজ রেডিওতে বাংলিশ উচ্চারন শুনলে মাতৃভাষা ধর্ষিত হবার ক্রন্দন শুনতে পাই। নতুন প্রজন্মের যুক্তিবিহীন ব্রেনওয়াশড বক্তব্য কোন ব্লগে পড়ে দারুন আহত হই। নিজেকে গুটিয়ে নেই চরমভাবে। সেই শুন্যতার গহ্বরে পরে যেতে থাকি অতলে। উপরে তাকিয়ে দেখি শুধুই অন্ধকার।


মন্তব্য

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

জাপানে দেখি ট্র্যাডিশনাল কাবুকি, সুমো, নোও, এগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, মিডিয়ার সচেতনতা।
একটা সহজ উপায় এরা ফলো করে (যেহেতু এরকম ট্র্যাডিশনাল বিষয়গুলোর জনপ্রিয়তা কম), তা হলো এসব শো'র টিকিট খুব চড়া দামের। একই সাথে অরিজিনালিটির ব্যাপারে ভীষন কনভেনশনাল।
বিজনেসম্যানরাও ফরেইন ডেলিগেটদের উৎসাহিত করে এসব শোতে নিয়ে যেতে।

আমাদের যাত্রাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যেত ,,, বাউল সঙ্গীতের তো এখনও ভীষন জনপ্রিয়তা
কনভেনশনাল এটিচিউডটাও দরকার ,,,
আমাদের ধারনা, স্টার্টিং পয়েন্টেই জনপ্রিয় হবার জন্য পপ-বাউল গান/বাংলিশ এসবের প্রসার হচ্ছে ,,, আসল শিল্পীরা খালি বঞ্চিতই হচ্ছেন।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা খুবই দরকার, যেটা হয়ইনি।

দরকারী পোস্ট।

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বাংলাদেশের সংস্কৃতিচর্চা ঐতিহ্যগতভাবেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য জোরালো ব্যারিকেড ।
খুব কৌশলেই সে কারনে একেবারে শেকড় পর্যায় থেকে সংস্কৃতিচর্চার ভিত্তি উপড়ে ফেলা হচ্ছে ।
আমার শৈশবে দেখেছি- স্কুল পড়ুয়া খালারা বিকেল বেলা ওস্তাদজীর কাছে রবীন্দ্রসংগীতের তালিম নিচ্ছেন । ওস্তাদজী চলে গেলে মাগরিবের নামাজের পর হুজুর আসছেন কোরান শিক্ষা দেয়ার জন্য ।
এই ছবি কোনো শহুরে পরিবারের নয় । আশির দশকের শুরুতে এক মফস্বলের ছবি ।

আসলে '৯০ এর পর বিশ্বরাজনীতি,দেশীয় রাজনীতি,সংস্কৃতি চর্চা সবকিছুই খুব উলটপালট ।

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।