বিনীত প্রস্তাব : বিনীত প্রত্যাখ্যান

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি
লিখেছেন লুৎফর রহমান রিটন (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/১১/২০০৭ - ১১:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হাসিব-এর লেখা "ভোখেনব্লাট ০৩"-এ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের "স্বাধীনতা দিবসে আমার এ এক বিনীত প্রস্তাব" শিরোনামের লেখাটির প্রসঙ্গ এসেছে। ২০০৬ সালের ২৬ মার্চ প্রথম আলোতে প্রকাশিত মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের লেখাটি দৈনিক আমাদের সময় আজ ৫ নভেম্বর ২০০৭ পুনর্মুদ্রণ করেছে। মূল লেখাটি প্রকাশের পর আমি এই লেখাটি লিখেছিলাম যা ১৩ এপ্রিল ২০০৬-এ আমাদের সময়-এ ছাপা হয়েছিলো। সচলায়তনের পাঠকদের জন্যে লেখাটি তুলে দেয়া হলো।
------------------------

বিনীত প্রস্তাব : বিনীত প্রত্যাখ্যান
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে খোলা চিঠি

মান্যবর মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সমীপেষু,

আপনাকে আমি ভীষণ শ্রদ্ধা করি স্যার। সেই কৈশোর থেকে। আপনার সংকলিত অভিধানগ্রন্থ "যথাশব্দ" স্কুলজীবনেই আপনার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিল আমাকে। তুখোড় মেধাবী ছাত্র ছিলেন আপনি। বরাবরই শীর্ষে থেকেছেন মধো তালিকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিলেন আপনি, ইতিহাস বিভাগে। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনেও ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন আপনি। বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী প্রথম দশজনের দলটির নেতৃত্বেও ছিলেন আপনি। ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাচাকরিটি আপনি পাননি। ইতিহাস বিভাগে যোগ দেয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই পদত্যাগে বাধ্য হতে হয় আপনাকে। ওই ঘটনার প্রতিবাদও করেছিলেন আপনি অভিনব পদ্ধতিতে। ভ্রাম্যমাণ পান-সিগারেটের দোকান "শেলী'জ ঔন শপ" গলায় ঝুলিয়ে ফেরি করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। শেলী আপনার নিকনেম বা ডাকনাম। এই নামেও আপনি বিখ্যাত।

১৯৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকাটি "শেলীর যথাডায়েরি" শিরোনামে বানোয়াট একটি কভার স্টোরি ছেপেছিল। আপনি তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশ তখন একটি ক্রাšিতকাল অতিক্রম করছিল আপনার মেধা, মনন আর প্রজ্ঞার ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে। রোজনামচা বা ডায়েরি ফর্মে লেখা "শেলীর যথাডায়েরি"-র প্রতিটি শব্দ ও বাক্যবন্ধ আপনার স্বভাবের সঙ্গে মানিয়ে গেলেও কয়েকটি মন্তব্যের কারণে পত্রিকাটির পাঠকেরা বিভ্রান্ত ও বিস্মিত হয়েছিলেন। কোনো কোনো পত্রিকা তখন প্রশ্ন তুলেছিল আপনার নিরপেক্ষতা নিয়েও। একটি সরকারি তথ্যবিবরণী তখন জানান দিয়েছিল যে - কথিত ডায়েরির রচয়িতা আপনি নন, আপনি তা লেখেনওনি, পাঠানওনি। এপ্রিল মাসে পাঠকের সঙ্গে "এপ্রিল ফুল" বা তামাশা করেছিলেন যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান। যদিও পত্রিকাটির কোথাও ডায়েরিটি যে কাল্পনিক বা বানোয়াট সেটা বলা হয়নি। "এপ্রিল ফুল"-এর রঙ্গ হিসেবে মেনে নিয়ে পাঠক ফের ফিরে এসেছিলেন পূর্ণ আস্থায় - আপনার প্রতি।

অতি সম্প্রতি, দৈনিক প্রথম আলো-র ২৬ মার্চ সংখ্যায় "স্বাধীনতা দিবসে এক বিনীত প্রস্তাব" লিখে আপনি অনেকের মতো এই আমাকেও মহা বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছেন স্যার। আপনার লেখার, আপনার কথার প্রতিটি শব্দ এবং বাক্যে আমি বিশ্বাস রাখি স্যার। আপনার মতো পণ্ডিত একজন ব্যক্তির কাছ থেকে, আপনার মতো সৎ-মেধাবী ধীমান ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তির কাছ থেকে, আপনার মতো দৃঢ়চেতা এবং সাহসী মানুষের কাছ থেকে, আপনার মতো নির্লোভ ক্ষণজন্মা পুরুষের কাছ থেকে এরকম একটি প্রস্তাব, তা যতো বিনীতই হোক, আমরা মেনে নিতে পারছি না স্যার। বাংলাদেশের অতি নগণ্য একজন ছড়াকার হিসেবে, বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি আপনার বিনীত প্রস্তাবটি বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছি স্যার।

আপনি লিখেছেন - "২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তান সৈন্যবাহিনী ঢাকায় এক পিটুনি অভিযান চালালে বহু লোক নিহত হয়।" "গণহত্যা"-কে আপনি "পিটুনি অভিযান" বলছেন? পিটুনি আর গণহত্যা কি সমার্থক শব্দ? ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলা একাডেমী প্রকাশিত আপনার যথাশব্দ-র প্রথম সংস্করণে পিটুনির যথাশব্দ হিসেবে আপনি লিখেছেন (পৃষ্ঠা ২৭৯) - সংঘাত, প্রতিঘাত, অভিঘাত, সংঘর্ষ, ঠোকাঠুকি, প্রহার, মার, পিটানো। আবার গণহত্যা-র যথাশব্দ হিসেবে আপনি লিখেছেন (পৃষ্ঠা ৩৬৪) - হত্যা করা, খুন করা, মারা, কতল বা জবাই করা, গলাকাটা, হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া, গুলি ছোঁড়া, কামান দাগা, আত্মহত্যা করা, নিজের জান বা প্রাণ নেয়া।

আমাকে ক্ষমা করবেন স্যার। আপনার নিজের সংকলিত থিসোরাস সরলভাষ্যে অভিধানগ্রন্থেই আপনি পিটুনি আর গণহত্যাকে সমার্থক বলেননি। স্বাধীনতার এতোকাল পরে ইতিহাসের ভয়াল জঘন্য এবং নৃশংসতম একটি গণহত্যাকে আপনি স্রেফ পিটুনি অভিযান বলছেন কেন?

যথাশব্দ-এর পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৯৩, পুনর্মুদ্রণ ২০০৩ প্রকাশ করেছে ইউপিএল। ইউপিএল প্রকাশিত যথাশব্দেও আমি তল্লাশি চালিয়েছি। তালিকা দীর্ঘ না করে সবিনয়ে বলি - ওখানেও পিটুনি (ভুক্তি ৯৭৪) এবং হত্যা (ভুক্তি ৪০১ এবং ভুক্তি ৭০৩)-কে সমার্থক বলে উল্লেখ করেননি স্যার, আপনি। আপনার পাণ্ডিত্যে সন্দেহপ্রকাশ বা আপনার পাণ্ডিত্যকে চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস কারো কি আছে বাংলাদেশে? মনে হয় নেই। আমি আমার নিজের সংশয় এবং বিভ্রান্তি দূর করতে, নিজের অজ্ঞতা মোচনপ্রয়াসে অশোক মুখোপাধ্যায় সংকলিত সংসদের সমার্থশব্দকোষেরও শরণাপন্ন হয়েছি। সমার্থশব্দকোষে পিটুনির সমার্থ - পিট্টি, পেটা, ঠ্যাঙানো, প্যাঁদানো, আঘাতন, নির্ঘাতন, ঘাতন, আহুতি, তাড়ণ, মার লাগানো, ধোলাই, উত্তম-মধ্যম, গায়ে হাত তোলা, পিঠের চামড়া তোলা, পিটিয়ে লম্বা করা, হাড় গুঁড়ো করা, হাড়মাস আলাদা করা, নির্দয় প্রহার, রামধোলাই, রামঠ্যাঙানির উল্লেখ রয়েছে। আর গণহত্যার সমার্থ গণনিধন, মানুষ মারা, নরমেধ এবং জেনোসাইড। এখানেও "গণহত্যা" আর "পিটুনি" সমার্থক শব্দ নয়। তাহলে?

যথাশব্দ লেখকের হাতে যথাশব্দটিরই যথাপ্রয়োগ ঘটার কথা। বহুদূরের জিনিস আপনি স্যার দেখতে পান। বহুদূরের বাদ্যি আপনি স্যার শুনতে পান। আপনি নিশ্চয়ই জেনেবুঝেই গণহত্যাকে পিটুনি অভিযান বলেছেন। এ বিষয়ে আপনার কাছ থেকে একটি ব্যাখ্যা না পেলে তো স্যার আমার বিভ্রান্তি কাটছে না কিছুতেই!

দুই.

বিনীত প্রস্তাবে আপনি স্যার বলেছেন - "২৬ মার্চ রাতে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেন কি না তা নিয়ে একটা বিতর্ক চলে আসছে। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বাড়িতে বসে থেকে শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করার ব্যাপারটা নানভাবে আলোচিত হয়েছে।" আপনার নির্দলীয় ইমেজের সঙ্গে আপনার এই বক্তব্যটি খাপ খায় না স্যার। তা ছাড়া এই প্যারাটিতে জনাব বদরুদ্দীন উমরের কথার প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। সাপ্তাহিক ২০০০-এর ১৫ জানুয়ারি ১৯৯৯ সংখ্যায় বদরুদ্দীন উমর বলেছিলেন - "শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, এটা এখন অতি উচ্চস্বরে প্রচারিত হলেও এর চাইতে বড় মিথ্যা আর কিছুই হতে পারে না। এরকম কে কবে শুনেছে যে, স্বাধীনকাযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে এবং জনগণকে সেই যুদ্ধে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে কোন সেনানায়ক কিংবা মহান রাজনৈতিক নেতা নিজে বাড়িতে বসে থেকে শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং এটা করেন যখন তাঁর নিজ দেশের হাজার হাজার মানুষ ফ্যাসিস্ট সামরিক বাহিনীর হাতে মারা পড়ছেন।"

আপনি লিখেছেন - "২৭ মার্চ মেজর জিয়া নিজের উদ্যোগে স্বকণ্ঠে ঘোষণা দেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার। পরের দিন ২৮ মার্চ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।" ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস স্যার। আপনার ভাষ্যমতে "মেজর জিয়া নিজের উদ্যোগে স্বকণ্ঠে" স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ২৭ মার্চ। আমাদের স্বাধীনতা দিবস তাহলে ২৭ মার্চ নয় কেন স্যার?

তা ছাড়া এই প্যারাটির সঙ্গে আপনারই লেখা অন্য একটি রচনার বক্তব্য মিলছে না স্যার। সবিনয়ে উল্লেখ করি। "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কিছু কথা" শিরোনামে আপনার একটি নিবন্ধ পড়েছিলাম। ওখানে আপনি বলেছিলেন - "২৭ মার্চ বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র কালুরঘাট থেকে 'মহান নেতা ও বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ'-এ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান এক স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করেন।" (প্রথম আলো, ঈদসংখ্যা ২০০৩)

এখানে স্যার আপনার বিনীত প্রস্তাবে উল্লিখিত "মেজর জিয়া নিজের উদ্যোগে" এবং " পরের দিন ২৮ মার্চ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে" স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার বিষয়টি কেমন তালগোল পাকিয়ে গেল না কি?

আপনার দুটি লেখায় দু'রকম ইঙ্গিত পাচ্ছি তারিখের হেরফের ছাড়াও। একটিতে "স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচারের" অন্যটিতে "স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার"। কোনটি সঠিক স্যার?

তিন.

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম স্থপতি বেলাল মোহাম্মদ তাঁর বহুলপঠিত "স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র" গ্রন্থে এ বিষয়ে এতো বিশদ বলেছেন যে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ নিয়ে কোন বাগাড়ম্বরের কোন অবকাশই নেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক (২৫ মার্চ দিবাগত রাতে, রাত বারোটার পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ-এ) স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে অহেতুক ধুম্রজাল সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে জিয়ার মৃত্যুর পর থেকে। জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকতে তিনি নিজে কখনোই নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবি করেননি। জিয়ার জীবদ্দশাতেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্প গ্রহণ এবং "বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র" প্রকাশিত হয়। তখন, সেই দলিলপত্রেও স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জায়গায় জিয়া নিজেকে প্রতিস্থাপনের কোন চেষ্টা করেননি। পরবর্তীকালে আমরা দেখছি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি এবং কৃতিত্ব ছিনতাইয়ের নির্লজ্জ অপচেষ্টা। বেলাল মোহাম্মদ এখনো বেঁচে আছেন। সম্প্রতি ২৬ মার্চ জার্মান রেডিও ডয়েচেভেলে-র বাংলা বিভাগের প্রধান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম স্থপতি আবদুল্লাহ আল ফারুক তাঁর সহযোদ্ধা বেলাল মোহাম্মদের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এই সাক্ষাৎকারেও বেলাল মোহাম্মদ স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন আবারও। মেজর জিয়াকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করিয়েছিলেন এই বেলাল মোহাম্মদ। আপনি তো তার সবই জানেন। আপনাকে এইসব মনে করিয়ে দেয়াটা ধৃষ্টতা জেনেও সবিনয়ে বলছি স্যার।

আমার মতে, সবচেয়ে ভয়াবহ কথাটা স্যার আপনি বলেছেন বিনীত প্রস্তাবের শেষাংশে। উদ্ধৃত করছি - "... সেই অপূর্ণ এবং কোথাও কোথাও অস্পষ্ট তথ্যের ওপর ভর করে ইতিহাসে নবসচেতন গোষ্ঠী হিসেবে আমাদের মধ্যে যে তর্ক চলছে, তা সুকুমার কোমলমতি ছাত্রদের পক্ষে তার মোদ্দা কথা বুঝতেও বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ...আসুন, আমরা আগামী পনেরো বছর এ নিয়ে যেন আর কোন মতান্তর বা মতদ্বৈধ না ঘটাই। পনেরো বছর পরে আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির সময়, সুবর্ণজয়ন্তী পালনের কালে গবেষণালব্ধ নতুন তথ্যে আলোকিত হয়ে সোৎসাহে আমরা আবার আলোচনা করব। ... আমরা আম-জনগণ ওপরে স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে যা ব্যক্ত হলো তা নিয়েই আমাদের ধৈর্য বজায় রাখব। স্বাধীনতা দিবসে আমার এ এক বিনীত প্রস্তাব।" - স্যরি স্যার, আপনার এ বিনীত প্রস্তাবটি আমি বিনীতভাবেই প্রত্যাখ্যান করছি। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ইতিহাস বিকৃতি চলছে। তিরিশ বছরের অধিককাল ধরে বিরামহীনভাবে চিৎকার করে গলা ফাটিয়েও ইতিহাস-বিকৃতি রোধ করা যাচ্ছে না। আর আপনি কিনা স্যার প্রস্তাব করছেন আগামী পনেরো বছর নীরবতা পালনের!! এই পনেরো বছর আমাদের সন্তানেরা তাহলে কোন ইতিহাস পড়বে? আপনারই বর্ণিত "স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচারের" নাকি "স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া"র? সুকুমার কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা তবে কি লিখবে যে "২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস হইলেও ইহার একদিন পর ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়াছেন?"! কিংবা "বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক কে - তাহা পনেরো বছর পর জানা যাইবে"!

আমাকে ক্ষমা করবেন স্যার। আপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি বলে কিংবা আপনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হচ্ছি বলে আমি করজোড়ে ক্ষমাপ্রার্থী। মুক্তিযুদ্ধকে গণ্ডগোল বলা বা একাত্তরকে গণ্ডগোলের বছর বলার মতোই মনে হয় আমার কাছে, যখন জেনোসাইড বা গণহত্যাকে স্রেফ পিটুনি অভিযান বলেন আপনি। আপনি স্যার মহান। আপনার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করার কোনো যোগ্যতাই আমার নেই। যদিও এর প্রতিবাদ করাটা এখন সময়ের দাবি। নোবেল লরিয়েট জেরোস্লে সেইফার্ট বলেছেন - If an ordinary man is silent, it may be a tactical manoeuvre. If a writer is silent, he/she is a liar. (কৌশলগত কারণে একজন সাধারণ মানুষ নীরব থাকতে পারেন। কিন্তু একজন লেখকের নীরবতা মিথ্যাবাদিতার সমতুল্য।)

আপনি ভালো থাকুন স্যার। সুন্দর থাকুন স্যার। আপনার দীর্ঘজীবন আমাদের আলোকিত করুক স্যার।

------------------------------------------
অটোয়া, কানাডা
১১ এপ্রিল ২০০৬


মন্তব্য

অনিকেত এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা।

খালি এই জিজ্ঞাসায় প্রান যাচ্ছে যে, মু,হা,র এর কোনো প্রত্যুত্তর দিয়েছেন কিনা?

যদি দিয়েই থাকেন তবে কোথায়? কোনো ভাবে কি এখানে তা পেশ করা যেতে পারে?

মু হা র যদি এর উত্তর নাও দিয়ে থাকেন, আমাদের উচিত হবে তার কাছ থেকে সেটা আদায় করা।

আমাদের দেশে প্রায় সব 'মহান পুরুষেরা' শেষ পর্যন্ত দুর্বৃত্তে পরিনত হন।
আমি জানতে চাই, মু হা র ও কি ঐ দলের কি না।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

রিটন ভাইয়ের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হিমু এর ছবি
হাসিব এর ছবি

ধন্যবাদ । এসব জিনিস ডিজিটাইজড হয়ে থাকা অত্যন্ত জরুরী । ভবিষ্যতে মানুষ জানবে অন্তত কেউ একজন প্রতিবাদ করেছিলো ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

গত বছর আমাদের সময়েই পড়েছিলাম। জাঝা

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ঠিকাছে।
কিন্তু বিচারপতি হাবিবুর রহমান সাহেব কি এর কোন জবাব দিয়েছিলেন?



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

এই দুর্দান্ত লেখাটি এতোদিন আমার চোখের আড়ালে থেকে গেছে! কতো কিছু জানলাম আজ! আরো জানলাম গোয়াজমের নাগরিকত্ব মামলায় এই ব্যক্তির সম্পৃক্ততার কথা।

যথাশব্দের কারণে মুহার সম্পর্কে আমার শ্রদ্ধাবোধ ছিলো বরাবরই। শ্রদ্ধাবোধ এখন পরিণত হলো ঘৃণায়। জ্ঞানপাপী এই ব্যক্তির দীর্ঘজীবন কামনা করা কি ঠিক হলো, রিটন ভাই?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

রাগিব এর ছবি

The third recipient of the Bangla Academy Award 2008, which is given in recognition of contributions to Bangla language and literature, is rhymer Lutfor Rahman Riton, popular for his contribution to children's literature.

রিটন ভাই, অভিনন্দন আপনাকে।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

এমন চোখে আঙুল দেয়া আরো জরুরী
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

নৈষাদ এর ছবি

চোখ এড়িয়ে গেছল লেখাটা। দুর্দান্ত।

দ্রোহী এর ছবি

আমারও চোখ এড়িয়ে গেছিল। হিমুর সৌজন্যে পড়া হল।


কাকস্য পরিবেদনা

হিমু এর ছবি

প্রথম আলোর বিবেক বিচারপতি হাবিবুর রহমান কথিত "পিটুনি অভিযান" নিয়ে বিবিসির মাইকেল ক্লেটনের রিপোর্টের ভিডিও জুড়ে দিলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

রিটন ভাই বহু বছর পড়ে আপনার লেখা আবার পড়লাম....আপনার শিশুসাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা দিয়ে শুরু করেছিলাম যখন স্কুল এ ছিলাম ..মাঝখানে অনেকদিন পড়া হয়নি ....ভালো লাগলো আবার ...

-অর্ফিয়াস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।