ক্ষমা করবেন বেলাল মোহাম্মদ

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি
লিখেছেন লুৎফর রহমান রিটন (তারিখ: শনি, ০৩/০৮/২০১৩ - ৯:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতাসংগঠক বেলাল মোহাম্মদ চলে গেলেন! একাত্তরে আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের নয়টি মাস এই বেতার কেন্দ্রটি বাঙালির স্বপ্নের বাতিঘর হিশেবে উদ্দীপনার দীপ্ত মশালটি প্রজ্জ্বলিত রেখেছিলো। আক্রান্ত ও অবরুদ্ধ বাঙালি কী বিপুল আগ্রহ নিয়ে এই বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনেছে! চরমপত্রসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠান, সংবাদ ও দেশাত্মবোধক গানে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে নিরন্তর জাগ্রত ও প্রাণিত রেখেছিলো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। এখান থেকেই ২৭ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়ার ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের আয়োজনটি করেছিলেন এই বেলাল মোহাম্মদ।

শাদা লুঙ্গি আর শাদা জামা পরিধান করে একটি খুব মামুলি আর আড়ম্বরহীন জীবন কাটিয়ে গেলেন বেলাল মোহাম্মদ। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অপরিমেয় ও অমোচনীয় বিশাল অবদান সত্বেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ঊনচল্লিশটি বছর! ২০১০ সালে স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়েছিলো বেলাল মোহাম্মদকে। যদিও সেই পদকের জন্যে লালায়িত ছিলেন না তিনি। কখনো আক্ষেপও করেননি। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ধারে কাছে না থেকেও বহু নির্লজ্জ ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতা নামধারী কিছু অর্ধশিক্ষিত বাটপার স্বাধীনতা পদকটি বাগিয়ে নিয়েছেন। এমনকি স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বাঙালি নারীদের ‘গনিমতের মাল’ আখ্যা দেয়া শর্ষিনার পীর কুখ্যাত রাজাকার মাওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহকেও স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেছিলেন জিয়াউর রহমান, ১৯৮০ সালে। (স্মরণে আনতে পারি, স্বাধীনতার পর দালাল আইনে আটক হওয়া ওই কথিত পীর প্রায় দু’বছর কারাভোগও করেছিলো!)

বেলাল মোহাম্মদের লেখা ‘স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র’ নামের অসাধারণ বইটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য দলিল। বইটির প্রথম প্রকাশক ছিলেন খেলাঘরের আবদুল আজিজ। আজিজের ফুলদল প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছিলো বইটা। এরপর অনুপম প্রকাশনী বের করেছিলো কয়েকটি সংস্করণ। নির্মোহ এই মানুষটি কবিতাও লিখতেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্য রচনার স্বীকৃতি হিশেবে ২০১১ সালে বেলাল মোহাম্মদকে বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। সে বছর, ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে তিনি এসেছিলেন বাংলা একাডেমীতে, পুরস্কার গ্রহণ করতে। কতো আনন্দই না করেছি সেদিন তাঁকে ঘিরে!

আমার পরম সৌভাগ্য এই মহান যোদ্ধার বিপুল স্নেহ আর আশীর্বাদ আমি লাভ করেছিলাম। কতো স্মৃতি এসে ভিড় করছে চোখের সামনে। আমার আমন্ত্রণে বাংলা একাডেমীর একুশের বইমেলা প্রাঙ্গণে চ্যানেল আইয়ের লাইভ অনুষ্ঠান ‘বইমেলা সরাসরি’তে একাধিকবার এসেছেন তিনি। আমাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। মুঠোফোনে কতো কথাই না বলেছি আমরা! আমাকে কী যে ভালোবাসতেন! ছোটদের জন্যে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কথা লিখি বলে, রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লিখি বলে, এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কথা লিখি বলে আমার প্রতি তাঁর স্নেহের ধারাটি প্রবহমান ছিলো। বলতেন আরো বেশি করে লেখো। বড়রা নষ্ট হয়ে গেছে। ওদের কাছ থেকে কিছুই আশা করি না। কিন্তু নতুন প্রজন্মের কাছে আশা করি অনেক কিছু। তুমি নতুন প্রজন্মের জন্যে লেখো বলেই তোমাকে আমি ভালোবাসি।

বেলাল ভাইকে নিয়ে লিখতে গিয়ে বারবার ঝাপসা হয়ে আসছে চোখ। শাদা চুলের শাদা পোশাকের শাদাসিধে সরল এই মানুষটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি জরুরি ইস্যুকে বিকৃতি থেকে রক্ষার জন্যে উৎসর্গ করেছেন নিজের পুরো একটা জীবন। বিএনপি নামের রাজনৈতিক দলটি মেজর জিয়াকে স্বাধীনতার বানোয়াট ঘোষক হিশেবে অহেতুক প্রতিষ্ঠা দিতে যতোবারই কোমর বেঁধে নেমেছে, একজন বেলাল মোহাম্মদ ততবারই তাঁর নির্মোহ ও নৈর্ব্যাক্তিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে ‘ইতিহাসের সত্য’কে অনুচ্চ কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন। ‘একজন বেলাল মোহাম্মদের সত্যে’র কাছে ‘এক কোটি বিএনপি’র মিথ্যা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেই পারেনি। অথচ বেলাল মোহাম্মদ আওয়ামী লীগের বক্তৃতাবাগীশ নেতা-নেত্রীদের ‘পোষা লেখক- সাংবাদিক’ ছিলেন না বলে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা দিতে দলটি এতো দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছে। তাঁর হাঁটুসমান যোগ্য অনেক দলীয় লেখক-সাংবাদিককে তাঁরা ‘স্বাধীনতা পদক’টি বিতরণ করেছেন। বেলাল মোহাম্মদের নামটিকে তালিকায় আনতে তাঁদের সময় লেগেছে চার চারটি দশক!
২০০১ সালে জামাত-বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে অনেকের মতো তাঁর জীবনও বিপন্ন হয়েছিলো। দেশের সীমানা ছেড়ে দীর্ঘদিন কাটাতে হয়েছিলো তাঁকে প্রবাসে, পরবাসে। নেতারা সহিসালামতে দেশে থাকতে পারলেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির অরক্ষিত লেখক-শিল্পী-সাংবাদিকদের পালিয়ে বাঁচতে হয়। হায় সেলুকাস!

১৯৭১ সালে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ নামের অত্যন্ত জরুরি এবং শক্তিশালী ও মহাকার্যকর একটি ইভেন্টের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা হওয়া সত্বেও সেই কৃতিত্বের কথা তিনি জোর গলায় প্রচার করতেন না। সেই কৃতিত্বের জন্যে বাড়তি কোনো গৌরব, প্রশংসা বা সম্মানও প্রত্যাশা করতেন না। চুপচাপ নিজের কাজ করে গেছেন। কোনো চোখ রাঙানি কিংবা প্রলোভন নিজের আদর্শ ও লক্ষ্য থেকে একচুল বিচ্যুত করতে পারেনি বেলাল মোহাম্মদকে। বাংলাদেশ নামের শত্রুকবলিত অবরুদ্ধ একটি দেশকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নিতে নিজের মেধা মননসহ পুরো জীবনটাকেই নিয়োজিত রেখেছিলেন বেলাল মোহাম্মদ। আবার, স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতেও নিজের সবটুকু মেধা আর মননসহ পুনরায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু দেশ তাঁকে সঠিক সময়ে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছিলো।

বাংলাদেশ নামের দুর্ভাগা দেশের এই অক্ষমতাকে আপনি ক্ষমা করবেন বেলাল ভাই। আপনার মতো কয়েকজন মানুষ ছিলেন বলেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস কেউ পাল্টাতে পারেনি। স্যালুট আপনাকে বেলাল মোহাম্মদ।
অটোয়া ০৩ আগস্ট ২০১৩

(ক্যাপশন/২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১, আর কিছুক্ষণ পরেই বাংলা একাডেমী মঞ্চের পর্দা উঠবে, বেলাল মোহাম্মদ গ্রহণ করবেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার। তাঁকে ঘিরে আমাদের আনন্দ সমাবেশ। )

ছবি: 
12/08/2007 - 10:52অপরাহ্ন

মন্তব্য

রণদীপম বসু এর ছবি

শ্রদ্ধা জানাই প্রয়াত বেলাল মোহাম্মদ ভাইয়ের প্রতি। তাঁদের মতো অসাধারণ নির্মোহ কিন্তু স্বাধীনতার ইতিহাসের নিরাপত্তা-দেয়াল হয়ে গুটিকয় বাঙালি ছিলেন ও আছেন বলেই এই দেশটা প্রকারান্তরে পাকিস্তান হয়ে যায়নি ফের !
আমরা কি তাঁদের যোগ্য প্রজন্ম হতে পেরেছি !?!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

পারিনি মনে হয়।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তারেক অণু এর ছবি
স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট এর ছবি

শ্রদ্ধা

-------------------------------------------------
ভালবাসা কেবল নিজেকে দেয় এবং নিজ থেকে নেয়-
ভালবাসার যেমন নিজেরও কিছু নেই, তেমনি সেও কারো নয়;
কেননা, ভালবাসার জন্য শুধু ভালবাসাই যথেষ্ট।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

শ্রদ্ধা তাঁর জন্য

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

শ্রদ্ধা
অন্তরের অন্তস্থল থেকে উৎসারিত অকৃত্রিম শ্রদ্ধা এই সত্যনিষ্ঠ ন্যায়বান ব্যক্তিত্বের জন্য।

____________________________

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কয়েকবার দেখেছি দূর থেকে। কথা হয়নি কোনোদিন।
আমি বার বার অবাক হয়ে দেখেছি তাঁকে। তাঁরা যদি সেদিন সাহস করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তৈরি না করতেন। বাংলাদেশের এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্যরকম হতো। মুক্তিযুদ্ধে এই একটি মাত্র রেডিও স্টেশনের অবদান কতোটা তা ভেবে চমকে যাই মাঝে মধ্যে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

একজন অসাধারণ মানুষের জন্য একটি মন-কেমন-করা নৈবেদ্য।
একটা কথা মনে হল - দেশবাসীর হয়ে ক্ষমা চাওয়াটা আপনার কাছে মনে হয়েছে ন্যূনতম যা আপনি করতে পারেন। কিন্তু যে কারণে তিনি আপনাকে স্নেহ করতেন, সেই কাজটাই তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, ভালবাসায় জড়িয়ে নেওয়া। সেটা আপনি করে চলেছেন যত্ন করে। অনেক হতাশার মধ্যে সেই আমাদের আসল আশার আলো।
- একলহমা

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতাসংগঠক বেলাল মোহাম্মদের প্রতি অফুরান শ্রদ্ধা।

আয়নামতি এর ছবি

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি/পুরস্কারের ব্যাপারটিকে ঘিরে এতবেশি দলীয়করণের নোংরামি ঢুকে গেছে যে মনে হয় এর জন্য বেলাল মোহাম্মদের মত যোগ্যতম ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেয়ার নামে অসম্মানই করা হয়ে যায়! পাশাপাশি এটা ভেবেও মনে স্বস্তি পাই, আপনার আমার মত সাধারন মানুষের সংখ্যাটাই বেশি। যাদের হয়ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেবার ক্ষমতা নেই। কিন্তু যোগ্য মানুষটিকে খুব ভালোবেসে হৃদয় উড়ার করে প্রাপ্য সম্মান-ভালোবাসা দিতে জানে, দেয়ও। শ্রদ্ধেয় বেলাল মোহাম্মদকে ঘড়িঘন্টার হিসেব না কষেই আমরা দিয়েছি তাঁর প্রাপ্য সম্মান-ভালোবাসা। আজীবন সেখানেই থাকবেন তিনি। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা!

azim এর ছবি

বাতিঘর!

স্যাম এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু
ব্যানার করার সময় একটা ভাল ছবিও খুঁজে পাওয়া যায়নি কোথাও ...

নেতারা সহিসালামতে দেশে থাকতে পারলেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির অরক্ষিত লেখক-শিল্পী-সাংবাদিকদের পালিয়ে বাঁচতে হয়।

সবসময়ের জন্য সত্যি ! এবং এবারো কোন পরিবর্তন নেই এখন পর্যন্ত মন খারাপ

তানিম এহসান এর ছবি

শ্রদ্ধা! গুরু গুরু গুরু গুরু

অতিথি লেখক এর ছবি

আজীবন সংগ্রামী নির্লোভ এই মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা।

স্বয়ম

সাব্বির হোসাইন এর ছবি

বেলাল মামাদের মতো মানুষরা শুধু দিয়েই যান...
মামার আত্মার শান্তি কামনা করি...

পামাআলে এর ছবি

আপনাদের মত লেখার যোগ্যতা নেই আমার। আমি সচলায়তনের একজন নাদান পাঠক। দেশের বাইরে বসে পরম শ্রদ্ধেয় বেলাল ভাইয়ের মহাপ্রয়ানের খবরটি জানার পর প্রতিদিন সচলায়তনের পাতায় ভাল ভাল অনেক লেখা দেখার আশায় চোখ রাখছি। কিন্তু আমার আশা পূরণ হয়নি। আজ আপনার লেখাটি পড়ে মনটা তৃপ্ত হ‘ল। আশা করি, আরও অনেক সচল তাঁকে নিয়ে লিখবেন। নব্বইয়ের দশকে বেলাল ভাইয়ের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বইটি প্রথম পড়ার সৌভাগ্য হয়। বইটি আমার এতই মূল্যবান মনে হয় যে এটিকে আমার বইয়ের সেলফে রাখা নিরাপদ মনে হয়নি। হারিয়ে যাবার ভয়ে এটিকে ট্র্যাংকে তালা দিয়ে রাখি। এখনও বইটি তালবদ্ধ অবস্থাতেই আছে। দেশে থাকতে মাঝে মাঝেই এটি বের করে বারবার পড়তাম।
আপনার এত সুন্দর ও মূল্যবান লেখাটি যখন এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছিল, তখন এমনিতেই ধীরে ধীরে মন খারাপ হয়ে আসছিল। খারাপ মনটি চরম খারাপ হয় যখন লেখার নীচে ’অটোয়া ০৩ আগস্ট ২০১৩‘ মুদ্রিত দেখি। আমার মন বলছে, যে কারণে আপনি পরম শ্রদ্ধেয় বেলাল ভাইয়ের ‘বিপুল স্নেহ আর আশীর্বাদ’ লাভ করেছিলেন, সে কারণেই লেখার নীচে ’ঢাকা‘ না হয়ে ‘অটোয়া‘ ব্যবহৃত হয়েছে। আমি জানি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এখনও পুরোপুরিভাবে যারা ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বধীনতার কথা’ লিখেন, যারা ‘রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে‘ লিখেন- তাদের নিরাপদ আবাসস্থল হয়ে উঠেনি। গোলাম আযমের আর সব রাজাকারের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করে আমরা দেশমাতাকে আপনাদের বাসযোগ্য করে যেতে পারব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

-পামাআলে

অতিথি লেখক এর ছবি

শ্রদ্ধা
ইসরাত

গৃহবাসী বাউল এর ছবি

প্রয়াত বেলাল মোহাম্মদের জন্য সীমাহীন শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা

একটি অফটপিক প্রশ্নঃ
শর্ষিনার পীর যে স্বাধীনতা পদক পেয়েছে এই তথ্যটি বিভিন্ন জায়গায় পড়েছি। কখনো ইন্টারএ্যাক্টিভ অবস্থায় কাউকে জিজ্ঞেস করার সুযোগ পাইনি। তাই আপনার কাছে বিনীত জিজ্ঞাসা। এই লোক স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার সময় দেশের মানুষ, মুক্তিযোদ্ধারা কোন প্রতিবাদ করেননি? আর যদি কোন জরুরী অবস্থার কারনে কেউ প্রতিবাদ নাও করে থাকে, এই পুরস্কার কি পরবর্তীকালে নিয়ে নেওয়া যেত না? এই ধরণের চিহ্নিত রাজাকার অথবা স্বাধীনতা বিরোধীদের পুরস্কৃত করার অর্থ হচ্ছে, হিটলারকে শান্তিতে নোবেল প্রাইজ দেওয়া। আমার জন্ম এই ঘটনার অনেক পরে, আর তথ্যটি কোথাও বিস্তারিত ভাবে পড়িনি। নিজের অজ্ঞতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

অতিথি লেখক এর ছবি

‘একজন বেলাল মোহাম্মদের সত্যে’র কাছে ‘এক কোটি বিএনপি’র মিথ্যা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেই পারেনি।

হাততালি হাততালি হাততালি

…….জিপসি

আইলসা  এর ছবি

বেলাল মোহাম্মদের, "স্বাধীন বাংরা বেতার কেন্দ্র" বইটা গতদুই দিনে টানা পড়ে শেষ করলাম।

বইটির চমৎকার দিক হলো, উঁনি ঘটনার বর্ণনায়ই আগ্রহী ছিলেন, অহেতুক ব্যাখ্যা যোগ করেননি এবং কারো ক্ষেত্রেই জাজমেন্টাল ছিলেন না, শুধুমাত্র ঘটনাটি বর্ননা করেছেন।
বইটির দ্বিতীয় সংস্করনে উঁনার কিছু সাক্ষাৎকারও যোগ করা আছে। আছে, জিয়াউর রহমান কর্তৃক উঁনাকে ফোন করার নির্লিপ্ত বর্ননা। কিছু ব্যাক্তির স্বাধীনতা পূর্বের এবং পরের আচরনের আবেগহীন বর্ননা ও বেশ ভালো লেগেছে। মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন কিছু রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থান্ধ আচরনের ঘটনাগুলোও যথেষ্ট আগ্রহোদ্দীপক।

রাত-প্রহরী এর ছবি

শ্রদ্ধা

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

বেলাল মোহাম্মদের মতো মানুষেরা আমাদের গর্ব। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় সাহসী উদ্যোগ না নিলে ইতিহাস অনরকম হয়ে যেতো হয়তো।
শ্রদ্ধা জানাই তাঁকে। শ্রদ্ধা

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আমার সাথে বেলাল মোহাম্মদের কখনো দেখা হয়নি। কিন্তু হঠাৎ খবরটা পেয়ে এমন চমকে গিয়েছিলাম যেন আমার খুব চেনা কেউ চলে গেল। আমি তাঁর বইটা খুব আগ্রহ নিয়ে বারবার পড়েছি। বেলাল মোহাম্মদের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র আর মুশতারী শফির 'স্বাধীনতা আমার রক্ত ঝরা দিন' বইটা একই সাথে পড়েছিলাম বলে দুটো বইয়ের যোগসুত্রগুলো মেলাতে খুব ভালো লেগেছিল। এই দুটি বইতে একই ঘটনার বর্ননা থাকাতে বাড়তি আনন্দের সাথে আছে ইতিহাসের সত্যতার সমীকরণ। একাত্তরের মার্চের ওই উত্তাল সময়ে মুশতারী শফির বাসায় থেকেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। দুজনেই দল নিরপেক্ষভাবে ঘটনাগুলোর বর্ননা দিয়েছিলেন।

তাঁর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বইটা অনেক নামজাদা রাজনীতিকের ইমেজের উপর চড় মেরেছিল। সেই কারণেই হয়তো তাকে স্বাধীনতা পদক পেতে চার যুগ অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

বেলাল মোহাম্মদ, আপনার কথা আমরা অনেকদিন মনে রাখবো। শ্রদ্ধা

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।