যত্রতত্র কয়েকছত্র > পাখির কথা কই

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি
লিখেছেন লুৎফর রহমান রিটন (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৫/০৭/২০১৩ - ১২:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ক’দিন ধরেই পাখিকে মনে পড়ছে খুব। পাখি। মিষ্টি একটা মেয়ে। আমাদের ওয়ারির বাড়িতে ভাড়াটে ছিলো। ওর মা আমাদের চলচ্চিত্রের একজন অভিনেত্রী ছিলেন। খুব রূপসী মহিলা। ধবধবে ফর্সা। হাস্যোজ্জ্বল চেহারা। কথা বলেন বরিশাইল্যা একসেন্টে। আমাকে খুবই পছন্দ করতেন তিনি। আদর করে আমাকে সম্বোধন করতেন—‘জামাই’।
বলতেন—আমার মেয়েটা বড় হলে তোমার সঙ্গেই ওর বিয়ে দেবো। তোমাকে আমি জামাই বানাবো। তাঁর ‘জামাই’ সম্বোধনে আমি লজ্জা পেতাম। বিব্রত আমাকে আরো বেকায়দা লজ্জায় ফেলতে হাসতে হাসতে রাষ্ট্র করতেন তিনি—আমার জামাই দেখি আবার লজ্জাও পায়! আমি তাঁকে খালাম্মা ডাকতাম। তিনি কপট রাগ দেখিয়ে বলতেন—শাশুড়িকে খালাম্মা বলো কেনো?

আমার ভবিষ্যৎ শাশুড়ি ধবধবে ফর্সা সেই ভদ্রমহিলা লাল শাড়ি পড়তে ভালোবাসতেন খুব। খুব গাঢ় লাল লিপস্টিক ব্যবহার করতেন। তাঁর ব্যবহৃত পারফিউমের সুবাসে চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠতো। আমাকে আদর করে মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দেবার সময় আমি বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতাম। একটা মিষ্টি সৌরভে আমার মনটা চনমনে হয়ে উঠতো।

আমার সেই খালাম্মা তাঁর ছোট্ট মেয়ে পাখিকে নিয়ে বলতে গেলে একাই থাকতেন। পাখির বাবা নিয়মিত থাকতেন না এই বাড়িতে। আমাদের জানা ছিলো—সেই ভদ্রলোকের আরেকটা সংসার আছে। আর সে কারণেই আমাদের বাড়িতে তাঁর নিয়মিত থাকাটা সম্ভব ছিলো না।

আমাকে প্রকাশ্যে দিবারাত্রি জামাই সম্বোধনে কাবু করা ভদ্রমহিলাকে সিনেমার পর্দায় দেখবার জন্যে আমি মধুমিতা কিংবা অভিসার সিনেমা হলে গিয়ে ‘কুঁচ বরণ কন্যা’ ‘সুয়োরানী দুয়োরানী’ ‘স্বর্ণকমল’ টাইপের কয়েকটা চলচ্চিত্র দেখেছিলাম। তিনি নায়িকা ছিলেন না। ছিলেন পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করা শিল্পী।

আমি ভালোমন্দ খেতে ভালোবাসি বুঝতে পেরে মাঝে মধ্যেই ভদ্রমহিলা আমাকে ডেকে নিয়ে এটা-সেটা খাওয়াতেন। আর আমার মাথার চুল ঠিক করতে করতে রাজ্যের গল্প করতেন। সব গল্প আমি হয়তো ঠিকঠাক বুঝতেও পারতাম না। কিন্তু খুব মনোযোগী শ্রোতার মতো শুনতাম।
দিন যায়। আমি বড় হতে থাকি। গোঁফের রেখা উঁকিঝুঁকি দেয় আমার ঠোঁটে। আমার হবু শাশুড়ি সেইটা খেয়াল করেন। আড়ালে আমাকে ফিসফিস করে বলেন—জামাই তোমারে খুব সুন্দর লাগতে আছে। বোজ্ঝো? মোচ কাটবা না। তোমারে হিরুর মতোন লাগবেয়ানে।

লজ্জায় আমি জড়োসড়ো হয়ে যাই। আয়নায় নিজের মুখের প্রতিবিম্বে গোঁফের স্পষ্ট রেখা দেখি আর অজানা অপরাধবোধে নিজেকে লুকিয়ে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা করি। সবার কাছ থেকে লুকোতে পারলেও আমার হবু শাশুড়ির হাতে প্রায়শ ধরা পড়ে যাই। তিনি আমাকে আটকে রাখেন। নানান কথা বলেন। আদর করে আমাকে সন্দেশ হালুয়া আর কুলফি খেতে দেন। আমি কথা বলার সময় অহেতুক আমার একটি হাত কবজি উলটে মুখের কাছে উঠে আসে। গোঁফের রেখাকে আড়াল করার সে এক হাস্যকর প্রচেষ্টা। আমার হবু শাশুড়ি ব্যাপারটা বোঝেন, উপভোগ করেন, কিন্তু কিছু বলেন না। মুখ টিপে হাসেন।

দিন যায়। পাখিও বড় হতে থাকে। চঞ্চল হুল্লুড়ে মেয়েটা কেমন শান্ত আর লাজুক হয়ে ওঠে। আগে ওর সামনে ওর মা আমাকে জামাই সম্বোধন করলে ফিকফিক করে হাসতো মেয়েটা। এখন মুচকি হেসে আড়ালে চলে যায়। লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠে ওর মুখটা।

দিন যায়। মাস যায়। বছর যায়। গোঁফ জোড়া আমাকে লজ্জায় ফেলতে বিপুল উদ্যমে জোর কদমে উদিত হতে থাকে। আমাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে পাখিরা একদিন বাসা বদল করে গেন্ডারিয়ার দিকে চলে যায়। আমার হবু শাশুড়ির সঙ্গে আমার আর দেখা হয় না। দীর্ঘ অদর্শনে আমিও ভুলে যেতে বসি আমার শাশুড়ি ওরফে খালাম্মাকে। এক রাতে বাসায় ফিরে মায়ের কাছে শুনি, বিকেলে তিনি এসেছিলেন। আমার খোঁজ করেছেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছেন আমার জন্যে। আমি সকালে বেরিয়ে যাই রাতের আগে ফিরি না জানতে পেরে তিনি নাকি বলে গেছেন--একদিন সকাল সকাল আসবেন তিনি তাঁর অতি আদরের জামাইটিকে পাকড়াও করতে।

স্কুলের পাঠ চুকিয়ে আমি তখন কলেজে যাচ্ছি। দেশের বিখ্যাত ‘ঢাকা কলেজ’এ পড়ি। ক্যান্টিনে বন্ধুদের সঙ্গে চা-সিঙ্গারাযোগে আড্ডা পেটাই। বন্ধুরা সিগারেটের ধোঁয়ায় টেবিল ধূমায়িত করে ফেলে। সিগারেট না ফুঁকেও জামা-কাপড়ে সিগারেটের গন্ধ নিয়ে বাসায় ফিরি আমি। পাখির কথা আমার মনেও পড়ে না। মনে পড়ে না পাখির মা আমার সম্ভাব্য শাশুড়িকেও।

সদরঘাট থেকে আমাদের ওয়ারির বাসাটা নিকটদূরত্বে বলে লঞ্চে চেপে গ্রাম থেকে শহরে আসা আত্মীয়-স্বজনে ভরপুর থাকে আমাদের ওয়ারির বাড়িটা। স্কুল লাইফ থেকেই রাতে আমি দেরি করে বাড়ি ফিরি বলে প্রায়শ আমার বিছানাটা বেদখল হয়ে যায়। আমার জন্যে নির্ধারিত বিছানা-বালিশে অন্য কাউকে শুয়ে থাকতে কিংবা ঘুমিয়ে থাকতে দেখি। অতঃপর বাধ্য হয়েই আমাকে ঘুমুতে হয় সোফায়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে সোফাটাই আমার স্থায়ী বিছানা হিশেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বিনা প্রতিবাদে আমিও মেনে নিই অনিবার্য ললাটলিখন।

একদিন সকালে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আমি আদুল গায়ে উপুড় হয়ে পড়ে আছি সোফার ওপরে। ঘুমের মধ্যেই পুরনো কিন্তু চেনা একটা পারফিউমের গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা খায়। ঘুমিয়ে আছি বলে আমি টের পাই না যে অনেকক্ষণ ধরেই আমার মাথার কাছে একটা মোড়ার ওপরে বসে আছেন আমার হবু শাশুড়ি। আমার জেগে ওঠার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলে তিনি মাঝে মধ্যেই আমার পেটে সুঁড়সুড়ি দিচ্ছেন। মাথার ঝাকড়া এলোমেলো চুলগুলো আরো এলোমেলো করে দিচ্ছেন—অ জামাই উঠো উঠো, তোমার শাশুড়ি আইস্যা বইস্যা আছে। এতো ঘুমাইলে চলবে?

ঘুম ঘুম চোখে আমি পিটপিট করে তাকাই। আমার সামনে লাল টুকটুক ঝাপসা একটা শাড়ি। শাড়ির মানুষটা ধবধবে ফর্সা কিন্তু চেহারাটা আউট অব ফোকাস। বড় একটা হাই তুলে বারকয় চোখ ডলে ফোকাসিং ঠিক করেই তিড়িং করে উঠে বসি আমি—আরে খালাম্মা আপনি? নিজের বেআব্রু আদুল গায়ের দিকে তাকিয়ে আশপাশে টিশার্ট কিংবা চাদর খুঁজি। নেই। কিচ্ছুটি নেই হাতের নাগালে! খালাম্মা আমাকে শান্ত হতে বলেন—অসুবিধা নাই বাজান, ব্যস্ত হইওনা। আস্তে ধিরে ফ্রেস হইয়া আসো বোজ্ঝো? তোমারে আমার দরকার। তোমার সাহাইয্য লাগবেয়ানে।

দ্রুত ফ্রেস হয়ে চুল আঁচড়ে প্যান্টশার্টের ভেতরে নিজেকে চালান করে দিয়ে ফিরে এলাম খালাম্মার কাছে। খালাম্মা বললেন, তাঁকে একটা কাজ করে দিতে হবে। বারান্দায় পাখি দাঁড়িয়ে আছে। ওকে ৩৭ র‍্যাংকিন স্ট্রিটে কালাম সাহেবের বাসায় একটু নিয়ে যেতে হবে। বিক্রমপুরের জাহাজ ব্যবসায়ী কালাম সাহেবই আসলে পাখির আব্বা। আমরা এতোদিন যে লোকটাকে পাখির আব্বা হিশেবে জানতাম সেই লোকটা পাখির আসল আব্বা না। আসল আব্বা কালাম সাহেব পাখির এই মাসের খরচের টাকাটা দিতে গড়িমসি করছে। নির্ধারিত টাকাগুলো না পেয়ে খুবই বিপদের মধ্যে আছেন আমার হবু শাশুড়ি। বাড়ি ভাড়া বাকি পড়েছে। বাড়িঅলা তাগাদা দিচ্ছে। কেলেংকারী অবস্থা।

আমি বললাম--নো প্রবলেম খালাম্মা।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসিমুখে খালাম্মা বললেন—সেই জইন্যেই তো তোমারে জামাই বানাইছি। যাও জামাই এইবার শাশুড়ির একটু সেবা করো।

বহুদিন পর পাখিকে দেখলাম। কয়েক বছরে বেশ বড় হয়ে গেছে মেয়েটা। আর কী যে সুন্দর হয়েছে দেখতে! আমাকে দেখে লজ্জায় একেবারে জড়োসড়ো হয়ে গেলো সে। তাকিয়ে আছে ফ্লোরের দিকে। আই কন্টাক্টে আসতেই চায় না পাখি। সিঁড়ি দিয়ে দোতলা থেকে নামতে নামতে জানলাম পাখি এখন ক্লাশ এইটের ছাত্রী। (নাকি নাইনের?)

আমাদের হেয়ার স্ট্রিটের বাসা থেকে খুব দূরে নয় বলে রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটেই আমরা যাচ্ছি কালাম সাহেবের বাড়ির দিকে। পাখি লজ্জা পাচ্ছে বলে ওর সঙ্গে তেমন কোনো কথাই বলছি না আমি। ওর মা আমাকে জামাই ডাকে। পাখি ছাড়া ওর মায়ের দ্বিতীয় কোনো মেয়েও নেই। সুতরাং আমাকে ‘জামাই’ বলা মানে যে কি পাখি সেটা বোঝে। সুতরাং ওর লজ্জা পাবার যৌক্তিক কারণটা আমি উপলব্ধি করতে পারি। তারপরেও একপর্যায়ে টুকটাক এটা সেটা বলে ওকে হাসানোর চেষ্টা করি আমি। হাসলে ওর গালে সামান্য টোল পড়ে। আর তাতে ওর সৌন্দর্য বেড়ে যায় বহুগুণ। এটা বলার পর থেকেই দেখলাম পাখি আমার হাসির কথাতেও কঠিন মুখ করে হাসি চেপে রাখে।

কালাম সাহেবের চেহারাটা আমার ঠিকঠাক মনে নেই। তবে দেখলে নিশ্চয়ই চিনতে পারবো। একই মহল্লায় থাকি। চেনাটাই স্বাভাবিক। বিশাল বাড়ি কালাম সাহেবের। মেইন গেট থেকে একটু এগিয়ে বারান্দা পেরিয়ে কলিং বেল চাপি। কাজের লোককে বলি কালাম সাহেবকে ডেকে দিতে। আমি আর পাখি বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। কালোমতো কালাম সাহেব এসে আমার সঙ্গে পাখিকে দেখে ক্ষেপে ওঠেন—তুমি ওরে ক্যাম্নে চেনো?

আমি বলি—ক্যাম্নে চিনি সেইটা বড় কথা না। আপ্নে ওর এই মাসের খর্চাপাতির টাকা দ্যান নাই। সেইটা ওরে দিয়া দ্যান।

আমার কথায় খানিকটা অপ্রস্তুত কালাম সাহেব মেয়েটাকে ড্রইং রুমে আসার ইশারা করে নিজেও চলে যান আধো অন্ধকার বিশাল কক্ষটায়। আমি বারান্দায় ইধার-উধার পায়চারি করি। ভেতর থেকে কালাম সাহেবের চোটপাট শুনতে পাই স্পষ্ট। কালাম সাহেব বলছেন—তোমার সাহস তো কম না। মহল্লার ফালতু পোলাপানরে নিয়া আসছো আমার কাছ থিকা টাকা নিতে! ভবিষ্যতে আর কুনুদিন যদি এই কাজ করো তাইলে কিন্তু আমার ধারেকাছে আসতে পারবা না। একটা টাকাও পাইবা না। কথাটা য্যান মনে থাকে।

শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয় কিন্তু আমি শান্ত থাকার চেষ্টা করি। পাখি নামের ঝকঝকে সুন্দর দুখি কিশোরীটার জন্যে অপমানটা গায়ে মাখি না। ভেতর থেকে কালাম সাহেবের চোটপাটই শোনা যায় কেবল। পাখির কোনো কথাই শোনা যায় না। এরপর কিছুক্ষণ নিরবতার পর শুনতে পাই কালাম সাহেব বলছেন—এই ন্যাও টাকা। শেষবারের মতোন দিলাম। আর আসবা না আমার কাছে।

কিছুক্ষণ পর কালাম সাহেবের পেছন পেছন বারান্দায় আসে পাখি। পাখির চোখে আমি স্পষ্ট দেখতে পাই অশ্রুর কম্পন। ওড়নায় চোখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে এসেছে সে। ওর হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রাখা কিছু টাকা। কালাম সাহেব রাগী রাগী চেহারায় ততোধিক রাগী কণ্ঠে আমাকে বললেন—তুমি আর জীবনেও আসবা না আমার বাসায়।

খুব শান্ত কণ্ঠে আমি বললাম—আপ্নের মতোন একটা ফালতু লোকের বাসায় আমি জীবনেও আসি নাই। কিন্তু এই মেয়েটা যতোবার আমার কাছে আসবে আমি ততোবারই আসবো। চোটপাট দেখানের চেষ্টা কইরেন না। চুপচাপ মেয়েটাকে ওর প্রাপ্য টাকা দিয়ে দেবেন। না দিলে এই মহল্লায় আপ্নেরে কেউ রক্ষা করতে আইবো না। আপ্নের উপ্রে কেয়ামত নাজেল হইয়া যাইবো। মিয়া আপ্নের লজ্জা করে না নিজের এমন সুন্দর একটা মেয়েকে বঞ্চিত করতে? আমার সঙ্গে ফাজলামি কইরেন না। আমি মাস্তান না। কিন্তু এই মহল্লায় এমন কোনো মাস্তান নাই যে আমার সিদ্ধান্তের বাইরে যাবে। খোঁজ খবর লন কে আমি। সিনিয়র জুনিয়র সবতেই আমারে যথেষ্ট রেস্পেক্ট দিয়া কথা কয়। এলাকায় আপ্নেই প্রথম মিসবিহেভ করলেন। আপ্নে পাখির বাবা শুধু সেই কারণে এই যাত্রায় পার পাইয়া গেলেন। সেকেন্ড টাইম পাইবেন না কয়া রাখলাম। বুদ্ধিমান মানুষ আপ্নে। তিঞ্চাইরটা বিয়া করছেন। লাগে আরো দুইচাইরটা করেন কিন্তু আমারে চ্যালেঞ্জ কইরেন না। সামলাইতে পারবেন না।

আমার দীর্ঘ ঝাড়িতে কাজ হলো জাদুমন্ত্রের মতো। খানিকক্ষণ আগের বাঘের ভূমিকা থেকে বিড়ালের ভূমিকায় নেমে এলেন কালাম সাহেব। পাখিকে নিয়ে বেড়িয়ে এলাম। বিষণ্ণ পাখিও আমার আচরণে যাকে বলে হতভম্ব! নিঃশব্দে অশ্রুসজল পাখি আমার পেছন পেছন হাঁটে। কিছুতেই পাশাপাশি হাঁটে না। আমি বুঝতে পারি ওর আব্বার সঙ্গে ওর কথোপকথনের সিংহভাগই আমি শুনে ফেলেছি বলে লজ্জায় অপমানে এবং গ্লানিতে মেয়েটা ছোট হতে হতে একেবারে ধুলোয় মিশে গেছে। পুরোটা রাস্তায় একটি কথাও বলেনি সে। আমাদের বাসার সামনে এসে ওকে বললাম—তোমার লজ্জা পাবার কিছু নেই পাখি। তোমার আব্বা একটা খারাপ মানুষ। তার সঙ্গে মিউ মিউ করলে হবে না। প্রতি মাসে আসবে তুমি। টাকাটা তোমার প্রাপ্য। তোমার জন্যে বাবার আদরটা আদায় করে দিতে না পারলেও টাকাটা আমি আদায় করতে পারবো, প্রমিজ। আমি চাই লেখাপড়াটা তুমি চালিয়ে যাবে। তোমার এই দুঃখের দিন চিরকাল থাকবে না।

কোনো কথা না বলে আমার দিকে শুধু একবার কৃতজ্ঞতার একটা লুক দিয়ে ওড়নায় চোখ মুছতে মুছতে মেয়েটা আমাদের বাড়িতে ঢুকলো।
এরপর তিন চার মাস পাখিকে নিয়ে নিয়মিত মাসের প্রথম সপ্তাহে আমার হবু শাশুড়ি এসেছেন আমাদের বাসায়। আমি পাখিকে নিয়ে ৩৭ র‍্যাংকিন স্ট্রিটে কালাম সাহেবের বাড়িতে গেছি। কোনো রকম হম্বিতম্বি না করেই কালাম সাহেব তার কন্যাটির হাতে খরচের টাকাগুলো তুলে দিয়েছেন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের বাসা থেকে কালাম সাহেবের বাসায় আসা এবং যাওয়ার পথে পাখি এবং আমি, আমরা দুজন কেউ কারো সঙ্গে কোনো কথা বলতাম না।

আজ বহু বছর পর পাখিকে খুব মনে পড়ছে। আমি কল্পনা করছি পাখির একটা সুন্দর সংসার হয়েছে। স্বামী হিশেবে চমৎকার একজন যুবককে পেয়েছে পাখি। জনমদুখি অসহায় আর বঞ্চিত মেয়েটাকে আদরে সোহাগে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করে রেখেছে সেই যুবক। আচ্ছা পাখি তার বরকে কি আমার কথা বলেছে? আমার সেই লাল টুকটুক ‘হবু শাশুড়ি’ কি বেঁচে আছেন? দেখা হলে তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম—আপনার জামাইয়ের কি গোঁফ আছে খালাম্মা?

২৫ জুলাই ২০১৩


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

কি যে ভাল লাগলো চলুক হাততালি গুরু গুরু , আমার খুব জানতে ইচ্ছা হচ্ছে পাখি এখন কেমন আছে?
ইসরাত

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

সত্যি খুব জানতে ইচ্ছে করছে, পাখি নামে সেই মেয়েটি কেমন আছে!

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

পাখির সঙ্গে আর দেখা হয়নি।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

নজমুল আলবাব এর ছবি

আপনার বউ হবার কথা ছিলো যার, সে আবার যুবুক জামাই পায় ক্যাম্নে? খবর নিয়া দেখেন, আপনার মতই কোন বুড়ার ঘর করতেছেন উনি।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দেঁতো হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

নজমুল আলবাব, মেয়েটারে সুখি হইতে দ্যাও দেঁতো হাসি

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

নজমুল আলবাব এর ছবি

উনার সুখ কেউ ফেরাতে পারবেনাতো। এইটা সেইদিনই নিশ্চিত হয়ে গেছে, যে তিনি সুখি, যবে তিনি আপনার বউ হওয়া থেকে বেঁচে গেছেন। শয়তানী হাসি

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

এইতো বুঝছো! চোখ টিপি

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চমৎকার লাগল লেখাটা। একেবারে ঝরঝরে একটা ছোটগল্প।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

মন মাঝি এর ছবি

হা হা হা.... ঠিক এই কথাই ভাবতেছিলাম আমি, আপনি বলে দিলেন দেঁতো হাসি

****************************************

মন মাঝি এর ছবি

মনের বিচিত্র গতিতে দীর্ঘ অতীতের মানুষরা যাদের সাথে সেই সময় থে্কেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের স্মৃতিতে তাদের বয়স কিন্তু বাড়ে না - সেই সময়কার চেহারা ও বয়সেই থেকে যায় তারা চিরকাল। অন্তত আবার দেখা না হওয়া পর্যন্ত।

অনেক সময় নস্টাজিক স্মৃতিমেদুর অতীত - অতীতেই রেখে দেয়া ভাল হয়তো। ঐসব অতীতের অজানা ভবিষ্যৎ-কল্পনা সব সময় বর্তমান বাস্তবতার সাথে মিলে না। অনেক পার্থক্য হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে বাস্তবের বদলে স্মৃতির মোহন সরোবরে অবগাহন করাই মনে হয় অনেক শ্রেয়। তবুও কৌতুহল থেকেই যায়....

****************************************

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

ঠিক।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

সুলতান এর ছবি

আপনি তো ভাই আসলেই বস! কালাম সাহেবকে যে ঝাড়ি দিয়েছেন। অনেকটা গল্পের মতো লেগেছে।

ভালো থাকবেন।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আকৈশোর প্রিয় ছড়াকারের একটা লেখায় প্রথম মন্তব‌্যটা আমার - ওরে আজকে ঘুম ভেঙে কার মুখ দেখেছিলাম রে!!!
যথারীতি ঝরঝরে গদ্য। তবে বেশী টানলো কাহিনিটা। আমাদের সমাজের আনাচে কানাচে এই রকম কত কামাল সাহেব যে ছড়িয়ে আছে। তবে মনটা মেদুর হয়ে গেলো পাখির জন্য। বেচারী মেয়েটা স্রেফ ভাগ্যের কারনে আজন্ম দু:খি - বাবার আদর ভরা শৈশবের স্বাদ যে পেলোনা।

প্রার্থনা করি মেয়েটার ভবিষ্যত যেন হাসি আর আনন্দে ভরপুর হয়ে থাকে।

হাততালি

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

আমারও সেই একই রকম প্রার্থনা।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

রাত-প্রহরী এর ছবি

মনটা ভিজে গেছে রিটন ভাই। পাখির একটা হিল্লে না করে আপনি তাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারলেন?
লেখা -গুড়- হয়েছে

----------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

লেখাটি পড়ে পাখিকে দেখতে পেলাম।
যেখানেই থাকুক না কেন, তিনি যেন ভালো থাকেন এই কামনা করি।

আলম সাব্বির এর ছবি

হয়তো পাখী সুখেই আছে। আশাও করি তাই। কিন্তু আমাদের দেশে এমন অনেক পাখিরা আছে যাদের জীবনে চোখের পানি সুখায়না । কে জানে আপনার পাখি হয়ত এখনো কাঁদে ।

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

মন খারাপ

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আচ্ছা পাখি তার বরকে কি আমার কথা বলেছে?

আপনি নিজেই যখন মেয়ে বিয়ে দিয়ে শ্বশুর হবার আগে কথাটা কাউরে বলতে সাহস করেননি তখন সে কেমনে বলবে?

সে বলবে টাইটানিকের বুড়ির বয়সে গিয়ে বুড়া মরে যাবার পর... অপেক্ষা করেন...

মর্ম এর ছবি

চলুক পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

খাইছে

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

অতিথি লেখক এর ছবি

মোচ কাটবা না। তোমারে হিরুর মতোন লাগবেয়ানে।

, চিন্তিত (স্বপ্নীল সমন্যামবউলিসট)

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

শয়তানী হাসি

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

অতিথি লেখক এর ছবি

জব্বর হইছে ওস্তাদ চলুক

......জিপসি

রকিবুল ইসলাম কমল  এর ছবি

বাহ! আপনি তো বেশ নায়োকচিত ছিলেন! যেভাবে পাখি আন্টির(!?) বাবা কে ঝারি মারলেন। হাততালি

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

চাল্লু

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

অতিথি লেখক এর ছবি

এই গল্পে কি বাস্তব অতীতের সংশ্লেষ আছে? যদি থাকে তবে হয়তো সে কাহিনীর এবরো থেবরো অসমতল অংশগুলো আপনি সমতল করে দিয়েছেন পরম যত্নে। কিন্তু বাস্তবের পাখির পক্ষে সুন্দর একটা সংসার পাবার সম্ভাবনা খুবই কম। সিনেমার এক্সট্রার গৃহে সুতীব্র অভাব এবং সৌর্ন্দযের মেলবন্ধন পাখিকে সে র্পযন্ত যেতে দিয়েছে বলে মনে হয় না। সেই পরিণতির কথা ভেবে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।

আব্দুল্লাহ এ এম

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

হয়তো সে কাহিনীর এবরো থেবরো অসমতল অংশগুলো আপনি সমতল করে দিয়েছেন পরম যত্নে।

কোনো অসমতল অংশে বুলডোজার চালিয়ে সমতল করা হয়নি।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

himel khaled এর ছবি

প্রথম দিকে ভালোই লেগেছে, কিন্তু শেষ দিকে পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল । এমনটা আশা করিনি ।

ভালো লিখেছেন আপনার জন্য শুভ কামনা রইল ।

#himel khaled#

স্যাম এর ছবি

চমৎকার ! আহারে যদি দ্বিতীয় পর্ব থাকত!! (নাই?!)

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

থাকবে না কেনো? আছে। চোখ টিপি

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

একটা ঘটনা কল্পনা করা যাক, বছর দশেক পর ঢাকার রাস্তায় হঠাৎ আপনার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়ে গেলো। এবং জানা গেলো তিনি এখনো লুৎফর রহমান রিটন নামের একজন গোঁফওয়ালা তরুণের জন্য অপেক্ষা করে আছেন...

সিনেমা হবে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তানিম এহসান এর ছবি

জটিল সিনেমা হবে!

তানিম এহসান এর ছবি

লেখাটা খুব খুব ভাল লাগলো।

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

চরম উদাস এর ছবি

চলুক ... দারুণ। এই গল্প নিয়ে রীতিমতো একটা সিনেমা বানিয়ে ফেলা যায়।

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

ইয়ে, মানে...

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

রিসালাত বারী এর ছবি

রিটন ভাই কি এই কারনেই আর মোচ কাটেননি চিন্তিত

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

হ। শয়তানী হাসি

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

তারেক অণু এর ছবি

এমন স্মৃতিমেদুরতায় আচ্ছন্ন করে আপনার জীবনের নানা মানুষদের নিয়ে আঁকা চিত্র গুলো। আচ্ছা প্রভুকে নিয়ে আবার লিখুন না, প্লিজ। আর ছিটেফোঁটা নিয়ে লেখা পাওনা আছে ,মানে সেটার পিছনের কাহিনী নিয়ে ! পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

সেই কাহিনি একদিন তোমাকে সামনাসামনি দেখা হলে বলবো না হয়। স্ত্রী এবং কন্যার প্রতিরোধের কারণে ওই পর্বটি লেখা হয়নি। ম্যাঁও

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

বিধুভূষণ ভট্টাচার্য এর ছবি

গোঁফ জোড়ার মাহাত্ম্য আছে! কখনও কাটবেন না।

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

মাত্থা খারাপ! চোখ টিপি

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

অতিথি লেখক এর ছবি

একটি চমৎকার স্মৃতিমেদুর ছোটগল্প।
পৃথিবীতে কত আশ্চর্য ঘটনা ঘটে! আশা করা যেতেই পারে পাখীর আকাশে এখন অনেক আলো, আঁধারের দিনগুলো তার কেটে গেছে।
অণু যেমন বলেছেন, আপনার আরো এইরকম স্মৃতিমেদুর মণি-মাণিক্যের আশায় থাকলাম।
- একলহমা

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

খাইছে

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

ক্যাপ্টেন নিমো এর ছবি

আপনার তো পাখির চেয়ে পাখির মার কথাই বেশি বললেন। কি ঝরঝরে করে গদ্য লেখেন। আবেশ ভর করল। বাহবা বাহবা

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

অনিকেত এর ছবি

কী যে চমৎকার লাগল লেখাটা---- গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।