সাম্প্রতিক সময়ের পদাবলী

আসাদুজ্জামান রুমন এর ছবি
লিখেছেন আসাদুজ্জামান রুমন (তারিখ: শনি, ২৪/১১/২০০৭ - ৯:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২.
সাম্প্রতিক সবচাইতে আলোচিত ইস্যু ছিলো যুদ্ধাপরাধী, তাদের বিচার এবং তাদের সনাক্তকরণ নিয়ে। ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে, প্রকাশ্যে সাবেক জোটসরকারের অন্যতম অংশীদার জামাতে ইসলামীর নেতৃস্থানীয় কয়েকজনের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিস্থিতির অপমানজনক ব্যাখ্যা, মন্তব্যে উঠে আসে এই ইস্যুটি। যারা দেশের জন্মের ব্যাপারে, দেশের গর্বিত সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমন কুৎসিত মন্তব্য করতে পারে তাদের আর যাই হোক দেশশাসকের আসনে আসীত করার কোন যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না। তথাপি তারা দেশ শাসনে অংশীদারিত্ব করেছে। ক্ষমতার সিটাডেলে বসে নিজের বিষদাঁতে শান দিয়েছে। এখন সেই বিষদাঁতের ট্রায়াল এণ্ড এরর করছে।

তত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতারোহনের পরপরই ধরা হয়েছে প্রায় সব রাঘব-বোয়ালকে যারা দূর্নীতিকে একটা জাতীয় শিল্প এবং ঐতিহ্যের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলো। আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীর দু'জনকেই। এঁদের কোন একজনের মুক্তির দাবীতে পশ্চিমা দেশের বাংলাদেশী দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচী পালন করা হয় প্রবাসী নাগরিকদের দ্বারা। কিন্তু কোনদিনও দেশদ্রোহী, রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের মুক্তিযুদ্ধকালীন ক্রিয়াকলাপ এবং অপরাধের বিচারের দাবীতে কোন ঘেরাও কর্মসূচী হয় না, কোন বিবৃতি আসে না, কোন সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হয় না। এমনই অভাগা জাতি আমরা। জাতি হিসেবে আমাদের জন্মকে যারা চ্যালেঞ্জ করেছে তাদেরকে মাথায় নিয়েই ঘুরি আমরা।

এখনকার তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আরোহনের পর সেনাবাহিনী প্রধানের কিছু বক্তব্যে আশাজাগানিয়া ভাব লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই আশায় বুক বেঁধেছেন, এবার বুঝি সব বিতর্কের অবসান হবে, এবার বুঝি বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাজ্ঞাপন হবে।
নাহ্, তা হয়নি। জেনারেল মইন কিংবা ড. ফখরুদ্দীন আহমেদকে ঘিরে সাধারণ মানুষের যে স্বপ্ন, দেশের সবকটি শহীদ পরিবারের যে আকুতি ছিলো তা ধূলায় মিশতে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের সনাক্তকরণ এবং তাদের বিচারের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার কিংবা সেনাবাহিনীর মধ্যে এক অজানা নিরুৎসাহ বিরাজ করছে। এমনকি সরাসরি দেশের সংবিধান, গঠনতন্ত্র পরিপন্থি প্রকাশ্য মন্তব্য করার পরেও সরকার নাগরিকের কাছ থেকে অভিযোগ আশা করছেন।

মাননীয় সরকার কেন নিজে বাদি হয়ে অভিযুক্তদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করছেন না।

তত্বাবধায়ক সরকারের মাননীয় উপদেষ্টার নিকট বিনীত আরজ, 'বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ব্যক্তি হিসেবে স্বাধীনতার বিরোধীতাকারীদের তাদের কৃতকর্মের জন্য বিচারের আলোয় নিয়ে আসুন দয়াকরে। ইতিহাস আপনাকে মনে রাখবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আপনি সবার চোখের মণি হয়ে থাকবেন।'

জেনারেল মইন-এর কাছে সবিনয় জিজ্ঞাসা, 'আপনি কি জানেন না যারা মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে এখন ঔদ্ধত্বপূর্ণ মন্তব্য দিচ্ছে, একাত্তরে এদের কার কি ভূমিকা ছিলো!'

দেশচালকের আসনে থেকে কি তারা এতোটাই দূর্ধর্ষ হয়ে উঠেছে যে আপনারাও তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে কুণ্ঠিত হচ্ছেন! মাননীয়, বেরিয়ে আসুন উৎকণ্ঠার বলয় থেকে। বাংলা মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তালিকায় আপনারা। মায়ের প্রতি কর্তব্যটুকু পালন করুন।
'ব্রিং দ্য ভ্যাম্পায়ার্স টু দ্য লাইট অফ জাস্টিস!'

৩.
'সিডর'- ব-দ্বীপ অঞ্চলের এক দানবের নাম। প্রবল বেগে ধাবিত হয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে গেছে বাংলাদেশের বুক। স্বজনহারা আহাজারি আর লাশের গন্ধে ভারী হয়ে উঠছে বাতাস। খাদ্যের অভাব প্রকট। ত্রাণ চাই অনতিবিলম্বে। কম-বেশি শুরুও হয়েছে আসা। এবং আমাদের সেই রক্তচোষা স্বভাবে ফিরে যেতেও দেরী হয়নি আমাদের। শিবচরে এক ইউপি মেম্বারের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৩৮৫ কেজি চাল। এটা সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। যেগুলো আসেনি, সেগুলো!

আমাদের দেশে যেকোন কিছু ঘটলেই তার দুর্ভোগ পোহায় সাধারণ নাগরিক। হরতাল হলে জিনিষপত্রের দাম বাড়ে, বিদ্যুৎ না থাকলে জিনিষপত্রের দাম বাড়ে, ঈদে জিনিষপত্রের দাম বাড়ে, ইরাকে যুদ্ধ হয়েছে- আর জিনিষপত্রের দাম বাড়ে আমাদের। এবারো বেড়েছে। কারণ হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে 'সিডর'। সত্যিই রোম যখন লেলিহান শিখায় পুড়তে থাকে নিরু তখন মনের খুশীতে বাশীই বাজায়।

আমরা কথায় কথায় উন্নত বিশ্বের উদাহরণ দেই। তারা এই তারা সেই। কই, একবারের জন্যও তো ভাবিনা তারা সবাই মিলে কী করে সবার জন্য আরেকটু ভালো সুবিধা অফার করে, সেটা নিয়ে। তারা তো বড়দিনে জিনিষপত্রের দাম চারগুণ বাড়িয়ে দেয় না, বরং করে উল্টোটা। জাতীয় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে যখন সবার মাঝেই এর প্রভাব পড়ে, তখনতো কেউ কারো গলায় ছুঁড়ি ধরেনা। বরং সাহায্যের জন্য দুই হাত বাড়িয়ে দেয়।

দেশের বাইরে যারা আছে তারা সর্বান্তকরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সিডর দূর্যোগ মোকাবেলায় যতোটুকু সম্ভব সাহায্য প্রাপ্তির। কিন্তু কথা হলো, এই সাহায্যের কতোটুকু তারা পাবে যাদের জন্য সাহায্য তোলা হচ্ছে, যাদের আসলেই দরকার, যারা সাহায্যের আশায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে দূর্বল শরীরে মূর্ছা যায়!

আমরা কি অন্তত খানিকটা সময়ের জন্য, আমাদের নিজেদের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে পারি না। আমরা কি পারিনা দুঃস্থ মানুষের পাশে নিঃস্বার্থভাবে দাঁড়াতে!

*** **** ***** ******

লেখাটির সম্পূর্ণ অংশ হাজারদুয়ারীর ভাবনাদুয়ার-এ প্রকাশিত


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শেখ জলিল এর ছবি

সত্যিই রোম যখন লেলিহান শিখায় পুড়তে থাকে নিরু তখন মনের খুশীতে বাশীই বাজায়।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হাজারদুয়ারীর সম্পাদকীয় দুর্দান্ত হয়েছে ।
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ডিসেম্বরে একটা গ্র্যান্ড ইস্যু বের করা যায় দাদা। পাশে পাওয়া যাবে আপনাকে?
আপলোডের তারিখটা কবে রাখা যায়?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পাশে নাই? আছি তো !
শেষ তারিখ জানাস আমারে মেইলে ।
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হাজারদুয়ারীতে পুরোটাই পড়লাম।
তরী ভিড়বে কোন তীরে? নাকি আশার বাতাসে পাল তোলে অনিশ্চিতে যাত্রায় যাবে সবাই!
লেখার ধরণে আত্মজিজ্ঞাসার প্রয়াস ভালো লেগেছে। এটা পাঠকের কাছে নতুন কিছু না। এমন করে বলা হয় অনেক কিছু, বারবার, হয়তো সময়ের প্রয়োজনে। এ পদাবলীতে চলমান সময়ের রোজনামচা যেখানে ওঠে আসে, সেখানে প্রশ্নের বদলে প্রস্তাবনাই বোধ করি ভালো লাগতো। কারণ, আসাদুজ্জামান রুমনের লেখা সেরকম নতুনত্বের ইংগিতই দেয়।

রুমন সাহেব, এরকম সমাজ-রাজনীতির হালচাল ভাবনা নিয়মিত করা যায় কি?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।