বালিকার জন্য চিরকুটগুলি

শমিত এর ছবি
লিখেছেন শমিত (তারিখ: রবি, ১১/০৫/২০০৮ - ১০:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বালিকার জন্য চিরকুটগুলি

চিরকুট ১

এখন সন্ধ্যে নামার আয়োজন অ্যাসফাল্ট শহর জুড়ে এক অটোমোবিল কনসার্ট এখন প্রস্তুতিপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ঢিক্‌ ঢিক্‌ সাউন্ডচেকের তালে তালে হাল্‌কা কোমরদোলানি। ফলতঃ অসংযত সকালের টানা দুপুর পেরিয়ে এ পড়ন্ত বিকেলভূমিতেও যে বালিকাটি লঘুপদে ছোটাছুটি, অহংকারী ভ্রূ-রেখা ও জেদী গ্রীবার বাঁকে এসে সেও একটি হলুদ নাকছাবি ক্রমে অ্যালবামে ও জানালায়।

চিরকুট ২

পাশাপাশি দু’একটি হরফ ছুঁয়ে ফেলতেই শব্দ হারিয়ে যায় ও যা নেমে আসে তা বৃত্তবৎ মুখের হলুদে একটি সার্বজনীন হাসি ও লাল জিভের বাঁকা দাগ। বাকীটুকু বিন্দুবৎ, শুধু কী-বোর্ডের খেলা। এভাবেই আজকাল কথোপকথন হয়, পাঁচ বা সাত খন্ডে।

চিরকুট ৩

কিছু কিছু অস্থিরতা হয় যাদের নাম হয় না ও চেহারাও পরিচয়হীন। সন্ধ্যে সিরিয়ালের ফাঁকা বাতাসে কোনো মুখরা বালিকার ছবি ছেপে এলে শুধু তাদের অবয়ব চোখে পড়ে। আবছা, ফলতঃ অনুসঙ্গহীন।

চিরকুট ৪

তখন ট্রামরাস্তা, দুপুরের ঝিম ফাঁকা বাসের সীটেও পরানো থাকতো জাদুজুতোর হাততালি আর হুশ্‌ বলতেই পৌঁছে যাওয়া যেতো বউবাজার থেকে পার্ক স্ট্রীট; শ্যামবাজার, গোলপার্ক, বরানগর, এন্টালি হয়ে কলেজচত্বরে। পালক ও চামড়ার ডানাগুলি ফুটবোর্ডে, মেট্রোমহলে সারি সারি সাজানো থাকতো যেন কতগুলি জিন্‌সের হাঁটু; এখনি শাট্‌ল ট্যাক্সির পেছনের সীটে বসে গুছিয়ে নেবে নিজেদের প্রাপ্য জায়গা, গুঁতো। এক চরকিবাজির গপ্পো শুনে আজ হঠাৎ এইসব মনে পড়ে।

চিরকুট ৫

অক্ষরগুলি আঙ্গুল ছুঁতেই এক একটি বুদবুদ শান্ত স্ক্রীনজলে কাঁপন তোলে আর এক একটি ‘ডিং’ শব্দে সারাদিন লা লা লা। কথাচ্ছলে এইসব খেলা জমে, অক্ষরে অক্ষরে। (যেন) পরিত্যক্ত রানওয়ে শেষে দেখা যায় একটি সাইকেল, আইসক্রীম বাক্সের গায়ে হাতেআঁকা লালফ্রক, বিনুনির ছবি।

চিরকুট ৬

ধরো একটি ভ্রূ-কুয়াশায় হাত পাততেই চারিদিকে অক্ষরের জাদুঘর। আর চটিচ্ছলে গলিয়ে নিচ্ছো বলে ধরে নাও কোনও অচেনা লাল রোয়াক; অনেকগুলি গাছপাথর পেরিয়ে আসা লেকবিকেলের বাদামকোলাহল; তোমার ও তোমার উৎপলদার ব্যক্তিগত লিখনভঙ্গিমাও। আসলে তোমার এখন কোথাও যাওয়ার কথা নেই । তোমার তালুতে মুঠোতে এখন এক বোতামআঁটা ম্যাজিকবাক্স খোলা।


মন্তব্য

শেখ জলিল এর ছবি

ভালো লাগলো চিরকুটগুলো। বিশেষ করে ৫ ও ৬।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

শমিত এর ছবি

ধন্যবাদ, শেখ জলিল। ৫ ও ৬ আমারও সবথেকে প্রিয়।

---------------------------------
একটি বাংলা ব্লগ http://samitonline.net

শ্যাজা এর ছবি

শমিত,
কলকাতায় এলে জানান দিও।


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

শমিত এর ছবি

একশো বার। গতবারে 'হতে হতে না হওয়া দেখা'-টা এইবার সুদে আসলে উসুল করে নিতে হবে। কারুদা'কে আমার শুভেচ্ছা দিও।

---------------------------------
একটি বাংলা ব্লগ http://samitonline.net

মুজিব মেহদী এর ছবি

'আমার ব্যক্তিগত লিখনভঙ্গিমা আমি হারিয়েছি বাদাম পাহাড়ে...'
ভালো আপনার চিরকূটগুলো।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

শমিত এর ছবি

ধন্যবাদ মুজিব মেহদি। উৎপলবাবুর লেখা আমাকে কখনো কখনো খুবই প্রভাবিত করে।

---------------------------------
একটি বাংলা ব্লগ http://samitonline.net

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এই হলো ঘটনা।
আমাকে ধরেছে চার নম্বরী চিরকুট.............



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- সেই পুরানো শো-মিট দা।
আমারে একটায়ও ধরে নাই। কারণ ও পুরাতন, আগে বঙ্গানুবাদ করতে হবে তারপর বুঝতে হবে কোনটায় ধরেছে।

বস, একটু রেগুলার হওয়া যায় না?- এইটা একটা প্লীজ!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আজ হঠাৎ এইসব মনে পড়ে।


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।