শেক্সপিয়ারের জন্মস্থানে -৩

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শনি, ১৪/০১/২০০৬ - ৯:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


নাট্যকার ও ব্যবসায়ী শেক্সপিয়ার

শেক্সপিয়ার তার নাটকের গল্পগুলো যেসব লেখা থেকে পেয়েছিলেন সেসবের কিছু অনুলিপি প্রদর্শনীতে রাখা আছে। গ্রামার স্কুলেই রোমান ইতিহাস, অভিদের গল্প এবং টেরেন্স ও পেস্নাটাসের নাটকের সাথে তার পরিচয় হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। সেসময় প্রকাশিত 'ক্রনিকলস্ অব ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড' নামের ইতিহাসের একটি বইয়ের পাতা খুলে রাখা হয়েছে। সেই খোলা পাতায় দেখানো আছে ম্যাকবেথের গল্পের সূত্র। কোনো গল্পের পস্নটই তাকে কল্পনা করতে হয়নি সেকথা বেশ বড় করে লেখা। আর নাটকগুলো যে সত্যি সত্যি শেঙ্পিয়ার লিখেছিলেন তার প্রমাণ হিসেবে রাখা আছে রাজবাড়ির প্রদর্শনীর খাতা। থিয়েটারের দল তখন রাজা-রাণীর সামনে পয়সার বিনিময়ে নাটক করতো। কাকে কত দেয়া হলো তা লিখে রাখা হতো। সেটাই এখন প্রামাণ্য দলিল। অনেক নাটকের নামই অদল-বদল হয়েছে। এমনকি শেক্সপিয়ারের নামও একেকবার একেক রকম লেখা। চারশ' বছর আগের ইংরেজি অক্ষর অবশ্য এখনকার মত নয়। ইউ লেখা হতো ভি এর মত করে, ভি ইউ-এর মত, এস লেখা হতো এফ-এর মত করে। তবু পরিষ্কার পড়তে পারলাম রাজবাড়ির তালিকায় নাটকের পাশে লেখকের নাম লেখা শেক্সবার্ড। বার্ডের মানে কবি। শেক্সপিয়ারের নাটক বিশেষত: সুখ্যাতি কুড়িয়েছিল তার কাব্যিক সংলাপের জন্য। সমসাময়িক বন্ধু-বান্ধবরা তাকে বার্ড বলে সম্বোধন করতো বলেই অনুমান করা হয়।

স্ট্র্যাটফোর্ড ছেড়ে লন্ডন এসে শেক্সপিয়ার যে থিয়েটার দলে ভেড়েন তার মূল মালিক ছিলেন লর্ড চেম্বারলেইন। তারা যে থিয়েটারে নাটক করতেন সেই গ্লোব থিয়েটারের সেসময়কার একটি রেপ্লিকা তৈরি করে রাখা হয়েছে। থিয়েটারটি অবশ্য 'হেনরি এইটথ্' নাটকটি চলার সময় 1613 সালে পুড়ে যায়। পরের বছরই তা আবার নির্মাণ করা হয়। এখনও এতে নাটক মঞ্চায়ন হচ্ছে। বিশ বছর চেম্বারলেইনের দলে নাট্যকার হিসেবে কাজ করেন শেঙ্পিয়ার। বছরে গড়ে দু'টি নাটক লিখতেন তিনি। সে হিসেবে তার নাটকের সংখ্যা চলি্লশ।

তিনি শুধু নাট্যকার ছিলেন না নাটকের দলে ও গ্লোব থিয়েটারে তার বড় শেয়ারও ছিল। যদিও রাণী প্রথম এলিজাবেথের এক প্রেমিক আর্ল অব সাউদাম্পটন আগে থেকেই তার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং শেক্সপিয়ার তাকেই তার দুটো সনেটের বই উৎসর্গ করেছেন তবুও রাজবাড়ির সুনজর তিনি পান যখন প্রথম এলিজাবেথের পর স্কটল্যান্ডের ষষ্ঠ জেমস্ ইংল্যান্ডের প্রথম জেমস্ হিসেবে রাজ দায়িত্ব নেন তখন থেকে। শেক্সপিয়ারের নাটকের দল তখন পরিচয় পায় 'রাজার দল' হিসেবে আর রাজবাড়ির আঙ্গিনায় তারা নিয়মিত মঞ্চস্থ করতে থাকে জনপ্রিয় নাটকগুলো। পাশাপাশি গেস্নাবের খোলা থিয়েটার ও আরেকটি ইনডোর থিয়েটারে নাটক চালিয়ে অনেক টাকার মালিক হন শেক্সপিয়ার। লন্ডনে এলেও স্ট্র্যাটফোর্ডের সাথে তার যোগাযোগ কখনও ছিন্ন হয়নি। 33 বছর বয়সেই তার হাতে অনেক টাকা জমে যায়। সে টাকায় স্ট্র্যাটফোর্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাড়িটি কেনেন তিনি। 'নিউ প্লেস' নামের বাড়িটি এখনও আছে এবং দর্শনীয় স্থানও। তাছাড়া তিনি বাড়িঘর কেনা ও ভাড়া দেয়ার ব্যবসায় যুক্ত হন এবং বছর পাঁচেক পরে 107 একর জায়গা কেনেন স্ট্র্যাটফোর্ডে। কে বলে লেখকরা গরীব ছিলেন সব কালে।

আকর্ষণীয়ভাবে সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন দর্শনীয় জিনিসের পাশে বড় বড় করে লেখা এসব টুকরো ইতিহাস পড়তে পড়তে ঘন্টা দুয়েক কেটে যায়। এখনও অনেক কিছু দেখা বাকী। আমাদের যে সহকর্মী শেক্সপিয়ার পড়ায়, ক্যারিবিয়ান দ্বীপ বার্বাডোজের মেয়ে লিসা তাড়া লাগায়। তাড়াতাড়ি করে আমরা এসে ঢুকি শেক্সপিয়ারের বাবার পুরনো বাড়িতে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।