আমরা ভোট দেই বৃহস্পতিবারে

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৭/০৫/২০১৫ - ৩:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ বৃহস্পতিবার। ভোটের দিন। কোনো উৎসব উৎসব ভাব নেই। হাঁক-ডাক নেই। গাড়ি-ভেঁপু, চিৎকার, চেঁচামেচি কিছু নেই। ঘুম ভেঙে ওঠে চার-পাশ দেখে বিশ্বাস হয় না আজ ভোট। কম্পিউটারে বারের নাম দেখি। ৭ মে, বৃহস্পতিবার। হুমম... আজই তো ভোট।
ভোট বৃহস্পতিবারে কেন? শুক্রবারে হলে কী সমস্যা। (গুগল মিয়াকে জিজ্ঞেস করেন)। ছুটির দিনে কী ঝামেলা। যুক্তরাজ্যে আরেক কায়দা। ভোটের দিন কোনো ছুটি নেই। তবে ভোটকেন্দ্র খোলা সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। কাজে যাওয়ার আগে বা কাজ থেকে ফিরে ভোট দেয়ার জন্য অফুরন্ত সময়।
প্রায় মাসখানেক ধরে ভোটের প্রচার চলছে তবে কোনো প্রার্থী বা প্রচারকর্মীর সাথে আমার দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। পোস্টবক্স দিয়ে বাসায় লিফলেট ফেলেছে শুধু লেবার প্রার্থী। বাকীরা কি অংক কষে আমাকে বাদ দিয়েছে? পরিসংখ্যান আর কম্পিউটার প্রোগ্রামের কষাকষি করে যুক্তরাজ্যে দলগুলো ঠিক করে কোন আসন কোন পার্টির ঘাঁটি। একপক্ষের ঘাঁটি হলে অন্যপক্ষ সেখানে আর ঘাম ঝরায় না। যে আসনগুলো দুলছে সেখানেই দলগুলোর আগ্রহ। আমাদের আসনটা লেবারের জন্য সেফ।
ভোট দিতে ভোটার হওয়া লাগে, তবে নাগরিক হওয়া লাগে না। লন্ডনে পা দেয়ার পর থেকেই ভোট দিয়ে যাচ্ছি। কমনওয়েলথ সদস্য দেশের প্রবাসী হিসেবে। কিন্তু রাণি ভোট দেন না। নিরপেক্ষতার জন্য। কিন্তু প্রার্থী হতে কি নাগরিক হওয়া লাগে? আবার ইন্টারনেট ঘুঁটা। না, প্রার্থী হতেও নাগরিক হওয়া লাগে না। তার মানে নজমুল আলবাব, রানা মেহের, মায় হাসান মোরশেদ, লাগে কি আরিফ জেবতিকও ব্রিটিশ এমপি হিসেবে খাড়া হয়ে যেতে পারবে।
বাংলাদেশের পত্রিকায় দেখলাম গোটা ১২জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত প্রার্থীর নাম। রুশনারা, টিউলিপ, রূপা হককে নিয়ে আলাদা ফিচারও দেখলাম। স্কটল্যান্ডে জনৈক সুমন হক অবশ্য মাতাল অবস্থায় ও লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালানোর দোষে প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ গেছেন। তালিকা থেকেই জানলাম লুটন-সাউথে আমাদের এক বন্ধু আসুকও খাড়া লিবডেম থেকে। খাড়া হওয়ার তালিকায় নাম লেখাতে পারলে একে বলে টিকেট পাওয়া। টিকেট বলে কেন? কিসের টিকেট?
ভোট দিতে না গিয়ে ব্লগরব্লগর করছি। বরং বেট ধরা ভালো। ভোট নিয়ে ভালো বেট চলে। পত্রিকা পড়ে জানলাম বেটিং-এর ভালো সময় হচ্ছে ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পরপরই রাত দশটায় যখন এক্সিট পোলের হিসাব আসবে তখন বেট ধরা। তবে ধরতে হবে দ্রুত। পোল আসা শুরু হলেই রেট বদলে যায়।

ভোট উপলক্ষে ব্রিটেনে পোলের ছড়াছড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাচ্চা-কাচ্চা গবেষক থেকে শুরু করে বিরাট বিরাট প্রতিষ্ঠান তাদের পরিসংখ্যান জ্ঞান আর কায়দার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে ভোটারদের ওপর। একেক পোলে একেক ফল। সেজন্য কারা যেন বের করেছে পোল অব দ্য পোলস্। সব প্রকাশিত পোলের একটা গড়।
মিডিয়ায়, পত্রিকাগুলোয়ো নির্বাচন নিয়ে আগ্রহের কমতি নাই। সাধারণ জনগণকে নির্বাচন কী এটা বুঝানোর জন্য সচিত্র সহজ পাঠ। যেমন ভোট দিতে হলে ব্যালট পেপারে ক্রস মার্ক দিতে হয়। তবে টিক মার্ক, কোনো সংখ্যা বা ইমোটিকন দিলেও (যেমন স্মাইলি ফেস) চলবে। ভোটদাতার উদ্দেশ্য বুঝা গেলেই হলো। বাহ্ বিরাট স্বাধীনতা দেখা যাচ্ছে।
যাক কেন বৃহস্পতিবার সেই প্রশ্নের উত্তর যারা এখনও খুঁজছেন তাদের জন্য আরেকটা তথ্য। লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ড এবার প্রধানমন্ত্রী হলে সে হবে ব্রিটেনের প্রথম এথেইস্ট প্রধানমন্ত্রী। এতে কিছু বিশ্বাসী নাগরিক দেশত্যাগ করতে পারেন- আশংকায় আছি।
বৃহস্পতিবারে ভোট কেন হয় এর উত্তর নিয়েও নানা থিওরি। তবে জোরদার থিওরি হচ্ছে এদিন লোকের হাতে টাকা থাকে না। মজুররা পারিশ্রমিক পায় শুক্রবারে। মদ গিলে উল্টা-পাল্টা ভোট দিতে পারে বলেই নাকি এ ব্যবস্থা। রোববার দিন হলে চার্চ আর ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার একটা আশংকা আছে। তবে মদ গেলা থামানো হলেও মাতালকে থামানো যাবে না। মাতাল ব্যক্তির ভোটদান আইনসম্মত। বেচারা সুমন হক, মাতালতার ঝামেলায় পলিটিক্যাল ক্যারিয়ারটাই গেল।
আচ্ছা দুই প্রার্থী যদি সমান ভোট পায় তখন কী হবে? মানে ড্র বা টাই হলে? (ঢাকা টেস্ট কি ড্র হতে যাচ্ছে?) বাংলাদেশে কী কায়দা? যুক্তরাজ্যের কায়দা হচ্ছে টস্। কীভাবে টস্ হবে মুদ্রা ছুঁড়ে না চিরকুটের ড্র - সেটা ঠিক করার দায়িত্ব প্রিসাইডিং অফিসারের।
মেলা আসলে জমবে রাত দশটার পর। বিবিসি ৯:৫৫ মিনিট থেকে ক্যমেরা-ক্রু নিয়ে নির্বাচনি ফলাফল প্রচারে তৈরি। ডেভিড ডিম্বলবি'র এটাই শেষ নির্বাচনী অনুষ্ঠান। সেই ১৯৬৪ থেকে বেচারা লেগে আছে। কয়েক ঘন্টা আজ রাতে টেলিভিশনকে দিতে হবে। চ্যানেল ফোর বিজ্ঞাপন দিয়ে আবদার করেছে নির্বাচনের রাতে তাদেরকে ভুলে না যেতে। তারাও আছে।


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

আর বইলেন না। আমারতো এসব জানা ছিলো না। ভোট তোলা হলো না।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আগামীবার খাড়া হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়া নাও।

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অনেকদিন পর আপনাকে দেখে ভালো লাগছে। ভোট নিয়ে লেখা ভালো লেগেছে। বৃটেনের ভোটের অনেককিছুই অজানা ছিল। বিশেষ করে ভোট দিতে কিংবা প্রার্থী হতে যে নাগরিকত্ব লাগে না সেটা জানা ছিলনা।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

প্রকৃতিপ্রেমিককে দেখেও ভালো লাগছে। জং ধরা কি-বোর্ড ঝাড়া-মুছা করছি আরকি।

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আসেন, আবার নতুন করে শুরু করি হাসি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ইন্টারেস্টিং লেখাটা! আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাঁড়ানোর যোগ্যতা তিনটি লাগে:

১) ন্যাচারাল বর্ণ সিটিজেন। অর্থাৎ আমেরিকার মাটিতে জন্মগ্রহণের মাধ্যমে নাগরিক।
২) বয়স পঁয়ত্রিশের উপর।
৩) আমেরিকায় কমপক্ষে ১৪ বছর ধরে বসবাস করছে।

সুত্র: http://en.wikipedia.org/wiki/United_States_presidential_eligibility_legislation

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

প্রোফাইলের ছবিতো ব্যাপক স্লিম এসএমথ্রি। ঘটনা কী?

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই সিস্টেম বাংলাদেশে হইলে কারচুপি করে ফাডায়া ফেলতাম হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আপনে যেরকম উড়াধুরা কারচুপির কথা ভাবছেন তার চেয়ে অনেক সূক্ষ্ম কারচুপি করে টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র লুতফুর রহমান ধরা খাইছে। পাঁচ বছর নির্বাচনের সুযোগ বন্ধ। সেইসাথে তার আইনজীবি হিসেবে প্রফেশনাল প্র্যাকটিসও বন্ধ। বুইজেন ঠেলা।

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।