চিঠিপত্রের কলাম ও মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ১১/০৪/২০০৬ - ৬:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


বাংলাদেশের মিডিয়া ভাবুক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের একটি লেখা পড়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদকের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলাম বছর খানেক আগে। কিন্তু প্রথম আলো তা ছাপায়নি। সম্ভবত: তাদের একজন কলামিস্টের এত বড় অপমান তারা মেনে নিতে পারেনি। তাই চিঠিটি এখানেই তুলে দিলাম।

প্রিয় সম্পাদক,

প্রথম আলো আমার প্রিয় সংবাদপত্র। বিদেশে সময়ের অভাব থাকলেও আমি প্রায় প্রতিদিন এ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের প্রায় পুরোটা একবার অনত্দত: পড়ি। প্রথম আলোতে যারা লেখেন তাদের লেখার একটা মান বজায় রাখার চেষ্টা আপনি করেন নি:সন্দেহে। তবে পাঠক হিসেবে আমাদেরও মাঝে মাঝে হয়তো পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি আপনাকে জানানো দরকার। আজ আমি নিতানত্দই বিরক্ত হয়ে তেমনি একটি অভিযোগ করছি আপনার কাছে।

আমার বিরক্তির কারণ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর। আগেও তার অনত্দসারশূন্য অনেক লেখা চোখে পড়েছে। 17 মে'র সংখ্যায় দেখলাম ছাপার অযোগ্য একটি লেখা। মিডিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ কিছু মনত্দব্য করতে গিয়ে তার জ্ঞান ও জানা-শোনার যে দৌড় এ লেখায় দেখা গেল তা স্মারক ডাকটিকেট ছাপিয়ে স্মরণীয় করে রাখার মত। পুরো লেখায় তার বিভিন্ন রকম ভুল-ত্রম্নটির লম্বা ফিরিসত্দি দেয়ার মত ধৈর্য্য আমি দেখাতে পারছি না। একেবারে না বললেই নয় এরকম কিছু বিষয় নীচে তুলে ধরছি।

লেখাটা যেখানে এসে শেষ হয়েছে সেখান থেকে শুরম্ন করি। পাদটীকা বলে তিনি সম্পাদকের চেয়ে কলাম-লেখকের স্বাধীনতা বেশি এরকম একটি উক্তি তুলে ধরেছেন। তার এই অল্প কয়েক ইঞ্চি লেখার তিনটি বিষয়ের কোনোটির সাথেই পাদটীকা বলে সেলাই করা এই উক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। একে শুধু লেখকের গ্রন্থনা বা কল্পনা শক্তির অভাব বলে মানতে আমি নারাজ।

এর ঠিক ওপরের অনুচ্ছেদে তিনি একটি বাক্য লিখেছেন; 'আরেকটা বিষয় এই প্রসঙ্গে বলতে চাই'। বাক্যটি ভুল। প্রথম আলো থেকে তাকে একটি অভিধান কিনে দেয়া দরকার। তাতে বিষয় ও প্রসঙ্গ এ দু'টি শব্দ টেস্ট মার্কার দিয়ে রঙিন করে দিলে ভালো হয়। তিনি বুঝতে পারতেন তিনি বলতে না চাইলেই ভালো হয়। যাইহোক, বলতে চেয়ে তিনি একটি প্রশ্ন করেছেন। এবং সেখানেই তার লেখার যতি টেনেছেন। প্রশ্ন করা আর বলা কবে থেকে এক হলো? বাংলাদেশে একটা কথা চালু আছে যে, স্কুল-কলেজে লেখাপড়ার মান এখন বেশ নেমে গেছে। মান যে আগেও বিশেষ তেমন নাচবার মত কিছু ছিল না তা জাহাঙ্গীর সাহেবের কলম পেষায় বোঝা যায়। কলামের নীচে তার পরিচয়ে সম্ভবত: শিৰার আদিমানের বিষয়টি আরো পরিষ্কার। কারণ তার পরিচয় হচ্ছে তিনি সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক।

তার লেখার প্রথম ও প্রধান অংশটি ছিল টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত। তাতে তিনি জানালেন, 'বিজ্ঞাপনের যে বিষয়টি অধুনা অনেক সচেতন পাঠক (বিজ্ঞাপন যে টেলিভিশনে পাঠ করা যায় তা আগে শুনিনি এবং এর পাঠকরা যে সচেতন হয়েছেন তাও জানতাম না!) ও দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, তা হলো বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট ও নাট্যাংশ'। শব্দের ব্যবহার (স্ক্রিপ্ট ও নাট্যাংশ!) চেয়ে থাকবার মত। দর্শকরা আকর্ষিত হয় এরকম আরো কিছু তিনি আবিষ্কার করতে পারতেন। যেমন: নৃত্যাংশ, সঙ্গীতাংশ, চলচ্চিত্রাংশ। বিজ্ঞাপনে এতো অংশ আবিষ্কারের কিছু নেই। শুধু স্ক্রিপ্ট বললেই চলে। অবশ্য দর্শকরা মনোযোগ দিলে আর আকর্ষণ করা লাগে না।

তার লেখার প্রতি পাঠকের আকর্ষণ বাড়াতে তিনি একটি তুলনা ব্যবহার করেছেন। সংবাদ ও বিজ্ঞাপনের মিশেল নিয়ে কথা কপচাতে গিয়ে তিনি তুলনা টেনেছেন গোয়ালার দুধে পানি মেশানোর। এ নিতানত্দই তার সাধারণ জ্ঞানের দৌড়। তুলনা করার ৰমতা দিয়ে সাধারণ জ্ঞানের নানা রকম প্রশ্ন থাকে। যেমন মাথার জন্য যদি টুপি হয় তবে হাতের জন্য কী? এর উত্তর সবাই হাতমোজা বা গস্নাভস্ মনে করলেও মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর যে চুড়ি বা ঘড়ি মনে করতে পারেন সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কারণ দুধে পানি মিশিয়ে দুধ হিসেবে চালানো হয়। বিজ্ঞাপন কি সংবাদ বলে চালানো হয়? বিজ্ঞাপন থেকে অর্থ আসে এজন্য সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশনের ব্যয় সংকুলান সহজ হয়। দুধ ও পানির ৰেত্রেও কি তাই। আমাদেরকে আম-পাবলিক পেয়ে কি বুঝাচ্ছেন মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর?

শব্দ ও ভাষার বিচিত্র ছি:-চিত্রের পর আসি তার বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞানের দৌড়ে। তার পুরো লেখাটা দাঁড়িয়ে আছে এই যুক্তির ওপর যে বিজ্ঞাপন সবার জন্য উন্মুক্ত এটা সীমিত করা যায় না। দু:খিত জনাব জাহাঙ্গীর। বিজ্ঞাপনকে সেন্সর সার্টিফিকেট দেয়া হয়ে থাকে এবং দেয়া যায়। এই সেন্সর সার্টিফিকেট দিয়ে বিজ্ঞাপনের প্রচারকে নানাভাবে সীমাবদ্ধ করা যায়। বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য নির্দিষ্ট সময়, বিশেষ ধরনের চ্যানেল বা মাধ্যম নির্দিষ্ট করে দেয়া যায়। এমনকি বিজ্ঞাপনটি নিষিদ্ধও করে দেয়া যায়।

কারো অজ্ঞানতা নিয়ে ঠাট্টার কিছু নেই। কিন্তু অজ্ঞানতাকে যারা ছড়ায় তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা অত্যনত্দ জরম্নরি। মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের ৰেত্রে প্রথম আলোরও সে ভূমিকা নেয়া দরকার। আর এই ভূমিকা সত্ত্বর নিলেই মঙ্গল।

আপনাকে ধন্যবাদ


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।