শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শনি, ১৫/০৪/২০০৬ - ৮:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


এক
ভোরের না ফোটা আলো আর কুয়াশার মাঝে দেখা যায় গাছ পালার ফাঁক দিয়ে ধীরে সরে যাচ্ছে বিশাল প্রান্তর। পাহাড় থেকে ব্রিটেনের ল্যান্ডস্কেপ। ব্যস্ত মটরওয়ে। শহরমুখী গাড়িগুলোর হেডলাইট এখনও জ্বলছে। শত শত গাড়ির মাঝে ছুটে যাচ্ছে একটা কাভার্ড ভ্যান (মাইক্রোবাস)।

দূরে পাহাড়ের ফাঁকে সূর্য ওঠে। তার আলো এসে পড়ে মাইক্রোর গায়ে। ব্রিটেনের রাস্তার নানা দৃশ্য দেখা যায়। সুন্দর সাজানো বাড়িগুলি। ধীরে ধীরে দিনের আলো বাড়ছে। মাইক্রো ছুটে চলেছে।রাস্তার পাশের রেস্টুরেন্ট। প্যারাম্বুলেটরের মধ্যে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে একটি শিশু। তার মা রাস্তা দিয়ে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে শিশুসহ সে প্রাম। মা রাস্তা পার হতে হতে দেখা যায় মাইক্রো। মাইক্রোর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে এক হুইল চেয়ারে বসে থাকা বৃদ্ধা মহিলা।

দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। আলো দিয়ে আঁকা হয়ে গেছে লন্ডনের আকাশ। স্কেটিং করছে একটা ছেলে। ওর নানা কসরতের ফাঁক দিয়ে দেখা যায় মাইক্রো ছুটে যায় অন্ধকারের দিকে। কারখানার ধোঁয়া আর মটরওয়ের গাড়ির দঙ্গলের পেছন থেকে আরেক দিনের সূর্য ওঠে। মাইক্রো এখনও ছুটছে। অাঁকা বাঁকা রাস্তা দিয়ে ছুটতে ছুটতে ওয়েলকাম টু লন্ডন সাইনবোর্ড পার হয় মাইক্রোটা। গাড়ির সামনে ড্রাইভারের পাশে বসা লোকটির মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

মাইক্রোর সামনে বসে থাকা দালালটি ছোট্ট উইনডো খুলে ভ্যানের পেছনের দিকে তাকিয়ে বলে, ্তুআমরা এখন লন্ডনে।্থ মাইক্রোর ভেতরে অন্ধকারে বসে আছে চার যুবক। তাদের চোখ বাঁধা কালো কাপড়ে। হাত লোহার শেকলে। সে হাতে অন্ধকারে ওরা সিগারেট ধরায়। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি।ক্লান্ত চেহারা। তার পরও তাদের মুখে ফুটে ওঠে বিজয়ীর হাসি।

সিকোয়েন্সঃ 2
সজিবের গাড়ির ভেতর।
সজিব ও রাশেদ বসে আছে।
গাড়ি নিয়ে ওরা রেস্টুরেন্টের দিকে ফিরছে।

রাশেদঃ ওই ইন্ডিয়ান দালাল তো মস্কোতে রেখে চলে গেলো। তারপর তিনমাস কোন খবর নাই। তারপর প্রথমে এলাম ফ্রান্সের স্যাঙ্গাত পোর্টে। তো এদিকে নাকি খুব কড়াকড়ি। পরে গেলাম বেলজিয়ামের জি্বব্রুজ বলে একটা পোর্ট আছে সেখানে। সেখান উঠলাম লরিতে। বর্ডার পার হওয়ার পর গভীর রাতে লরি থেকে নামালো এক জঙ্গলের মাঝে। পরে ভ্যানে তুলে দিলো।।
সজিবঃ এই ভ্যানে তোরা কতজন ছিলি?
রাশেদঃ বাঙালি ছিলাম দুজন। আর দুজন চীনা। বাঙালি ছেলেটা মজার ছিল। ও সবসময় সাহস দিত। একটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হলো। কিন্তু টাকা পয়সা সব শেষ।
সজিবঃ টাকা নিয়ে কোন চিন্তা করিস না। আমার বাসায় চাইলে থাকতে পারিস। ঝুমকাকে অবশ্য বলা হয়নি। আর যদি প্রিভেসি চাস তবে আমাদের রেস্টুরেন্টের উপরে একটা রুম খালি আছে।
রাশেদঃ না না বাসা-টাসা না। আমি ঐ খালি রুমটাতেই থাকবো। ঐ ঠিকানাটার খোঁজ নিয়েছিলি?
সজিবঃ খোঁজ নিয়েছিলাম। ঐ ঠিকানায় কোন বাঙালি থাকে না। মরীচিকার পেছনে ছুটিস না দোস্ত।
রাশেদঃ তুই দোস্ত কঠিন হৃদয়। লোহার ব্যবসায়ী।
সজিবঃ হা: হা: হা: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মায়ের চিঠি পেয়ে সাঁতরে দামোদর নদ পাড়ি দিয়েছিলেন। আর তুই বিনা চিঠিপত্রে সুড়ঙ্গপথে টেমস নদী পার হয়ে গেলি।
রাশেদ সজিবেরদিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে শহরের দিকে তাকায়।
ব্যস্ত লন্ডন শহর।

সিকোয়েন্স ঃ 3
স্থানঃ পত্রিকা অফিস
সময়ঃ দিন

সাজনার বাবা দেশবাংলা পত্রিকার প্রুফ দেখছেন।

সা. বাবাঃ আমি বুঝি না বকুল সাহেব। বাংলাটা বলার না হয় অভ্যাস নাই। লেখায় তো এরকম ভুল হওয়ার কথা না।
বকুলঃ আসলে এখানে চর্চা হয় নাতো।
বাবাঃ আপনার কি ধারণা, যারা এসব বাংলা লেখে তারা ইংলিশটা ঠিকমত পারে? সেটাও পারে না। আমার ছেলেমেয়েদের তো বাংলাদেশো দু-এক বছর করে পাঠিয়ে শিখিয়ে এনেছি। শুধু বড় মেয়েটা কিছুতেই গেলো না।
বকুলঃ দেশের প্রতি, ভাষার প্রতি তো আপনার মত মায়া সবার হয় না।
বাবাঃ আমাকে খুশি করার জন্য বলছেন তো?
বকুলঃ যা সত্যি। ভালবাসা না থাকলে এত কষ্ট করে কি বাংলা সাপ্তাহিক করতে যান? এত ইনভেস্ট করে ক'টাকা আর লাভ হয়?


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।