লাবণ্যময়ী লুবিয়ানা: ২ (উৎসর্গ: ধুসর গোধূলি)

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: সোম, ০১/০৫/২০০৬ - ২:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


কংগ্রেস স্কোয়ারঃ
প্রচুর স্কোয়ার আছে লুবিয়ানাতে স্লোভিন ভাষায় যেগুলোকে বলা হয় টিআরজি। কিন্তু কংগ্রেস স্কোয়ারটা নানা কারণে বেশ আলাদা। নদীর পাড়ে আর নতুন ও পুরনো শহরের মাঝামাঝি জায়গায় বিশাল সবুজ একটি চত্বর, কংগ্রেস স্কোয়ার। বিভিন্ন টু্যরিস্ট বাসগুলো এখানেই এসে থামে। আমার হোটেলটা একটু দূরে থাকায় হোটেলের সিটি শাটল বাসগুলো যখন শহরে আসে তখন থেমে থাকে এখানেই। গ্রীষ্মকাল এখনো আসেনি। টু্যরিস্টের সংখ্যাও কম। মাত্র ঘাস বসানো হয়েছে। কিন্তু সেতো শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের বিষয়। স্কোয়ারের সৌন্দর্য্য তো তার অবস্থানে, ঐতিহ্যে আর পরিবেশে। এই স্কোয়ারের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস আর একে ঘিরে রয়েছে অপূর্ব স্থাপত্যশৈলির নামকরা সব ভবন। কংগ্রেস নামটি এসেছে 'কংগ্রেস অব হলি এ্যালায়েন্স' থেকে। 1821 সালে লুবিয়ানাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাজা-রাণী আর রাষ্ট্রনেতারা এক হয়েছিলেন ইউরোপের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করতে। সেই সম্মেলনকে শ্রদ্ধা জানাতে এই স্কোয়ারের নাম কংগ্রেস স্কোয়ার।

স্কোয়ারের মধ্যে সবচে আগে চোখে পড়ে যেটি তা হলো গোল একটি ধাতব শেড। আসলে এটি ব্যান্ড স্ট্যান্ড, কিন্তু এখন আর ব্যান্ড বাজানোর কাজে এটি ব্যবহার করা হয় না। তার কাছাকাছি সোনালী রংয়ের একটি মূর্তি আছে। 1836 সালে প্রথম যখন মূর্তিটি এখানে পাওয়া যায় তখন ধরে নেয়া হয়েছিল এটি কোনো সম্রাটের মূর্তি (সম্রাট কন্সট্যানটাইন)। কিন্তু আসলে তা 'এমনা' শহরের নাগরিকের মূর্তি। হুনরা আক্রমণ করে ধ্বংস করার আগে লুবিয়ানা শহরের নাম ছিল 'এমনা'। এমনা নাগরিকের মূর্তিটির কাছে দাঁড়িয়ে পূর্ব দিকে তাকালে চোখে পড়বে দূরে পাহাড়ের শীর্ষে লুবিয়ানা ক্যাসেল। আর ক্যাসেল বরাবর নীচে স্কোয়ারের কাছাকাছি ভবনটি হলো স্লোভিন ফিলহারমোনিক। পৃথিবীর অন্যতম পুরনো সংগীত ভবন। 1821 সালে তৈরি অত্যনত্দ চমৎকার একটি ভবন আছে দক্ষিণদিকে যেটি এখন ইউনিভার্সিটি অব লুবিয়ানার। স্কোয়ারটির উত্তরদিকে আছে ক্ল্যাসিক্যাল আর্কিটেকচারের এক উজ্জ্বল নিদর্শন যেখানে কাজিনা ড্যান্স স্কুল রয়েছে। পশ্চিমে রয়েছে বারোক স্টাইলে তৈরি অত্যন্ত সুন্দর একটি চার্চ, উরসুলাইন চার্চ অব হলি ট্রিনিটি। এই চমৎকার চার্চটির মূল স্থপতি কে তা জানা যায়নি। চার্চের সামনের দিকে রয়েছে বিখ্যাত হলি ট্রিনিটি কলামগুলো। 1693 তে প্লেগ রোগের মহামারী থেকে বেঁচে যাওয়ার জন্য ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এই কলামগুলো। পরে কাঠের কলামগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়।

প্রতিদিনই স্কোয়ারের কাছে আসি। তবে ছবি তোলার জন্য যেদিন গেলাম সেদিন দেখলাম স্কোয়ারের পানির কলে বিয়ার ভিজিয়ে ঠান্ডা করছে এক আয়েসি মদারু। স্কেটাররা স্কেটিং করছে। সাইকেল খুব জনপ্রিয় লুবিয়ানায়। তরুণ-তরুণীরা সাইকেলে ঘুরছে স্কোয়ারে। বর্ণবাদ বিরোধী ছোট্ট একটা মিছিলও চলে গেলো চোখের সামনে দিয়ে। সার্কাসের খেলার (জাগলিং) চর্চা করছে দুয়েকজন। অলস আড্ডা পিটাচ্ছে কেউ কেউ। স্কোয়ারের কিছু অংশে ঘাস বিছানো হয়েছে, বাকী জায়গা তৈরি করা হচ্ছে ঘাস বিছানোর জন্য। পর্যটকদের জন্য সাজানো হচ্ছে স্কোয়ারটি। 'সামার'-তো আসলে এসেই গেছে। পর্যটকদের ঢল নামতেও বেশি বাকী নেই।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।