সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালবাসিলাম

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ০৯/০৫/২০০৬ - ৫:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


1970 এর কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে যদি আজ নবীন এক বিজ্ঞানী ভুল প্রমাণ করেন তবে 70 এর প্রবীণ বিজ্ঞানী নবীন এই বিজ্ঞানীকে সাধুবাদ জানাবেন। সাধুবাদ জানাবেন এই বিভ্রম দূর করার জন্য, নতুন ব্যাখ্যায় সত্যকে পুনরাবিষ্কার করার জন্য। আর নবীন বিজ্ঞানীও প্রবীণ বিজ্ঞানীর কাছে তার ঋণ স্বীকার করবেন। যেহেতু গবেষণাটা প্রবীণই শুরু করেছিলেন। যেহেতু আলো তিনি ফেলেছিলেন। ধারাবাহিকতা ছাড়া অর্জন কখনও বিশাল হয় না। বিজ্ঞান বা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার গবেষণা ও তত্ত্বের ক্ষেত্রেই এ কথাই সত্য। কিন্তু সত্য নয় ধর্ম বিষয়ক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে। কারণ এখানে সত্যকে আবিষ্কার নয় বরং নিজের প্রাচীন বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে রক্ষা করতে চায় অন্ধ বিশ্বাসীরা। তাদের লক্ষ্য সত্য আবিষ্কার নয় তাদের লক্ষ্য তাদের বিশ্বাস রক্ষা।

ডারউইনের তত্ত্ব সম্পর্কে আমার এক লেখায় সাদিক অহেতুক হারম্নন ইয়াহিয়ার কিছু প্রোপাগান্ডা ম্যাটেরিয়ালের লিংক তুলে দিচ্ছিলেন। আমি খুব অবাক হচ্ছিলাম সাদিকের এই অদ্ভুতুড়ে আচরণে। আমি মনে করি না ধর্মান্ধ কিছু ব্লগারুর মন যোগাতে বা সমর্থন জয় করতে সাদিকের এই হারুন ইয়াহিয়াকে টেনে আনা। আমি ধারণা করি হারুন ইয়াহিয়া যে কি আবর্জনা ছড়াচ্ছে তা সাদিকও বোধ করি জানেন। দেশ-বিদেশে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে লেখাপড়া করা একজন ছাত্রের এই ফাঁক ও ফাঁকিটুকু ধরতে পারার কথা। যেভাবে তিনি জানেন মরিস বুকাইলি'র বোকা বোকা যুক্তি সৌদী অর্থের ভারে পার পেয়ে যায় না। কিন্তু সাদিক জেনেও জানেন না, বোকা বন্ধুর চেয়ে বুদ্ধিমান শত্রুও ভালো। বোকা সে শত্রু হোক আর বা মিত্র হোক তাতে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি। মরমীবাদের ফাঁকে ফাঁকে কোরানের বাণী ছড়িয়ে দিয়ে যেসব বোকা ও ধর্মান্ধ বন্ধু সাদিক হাতে এনেছিলেন, তার ছোট্ট এক প্রশ্নের কারণে এদের সবাই এখন তার দিকে ছুঁড়ছে তীর। গত কয়েকদিন হয় মরমীবাদ নিয়েও সাদিক আর লিখছেন না।

ধর্মান্ধতা কি জিনিস তা এখন সাদিক বেশ মনোকষ্টের সাথে অনুভব করছেন। পিয়াল তার মনোকষ্টের ভাগ নিতে একটি লেখা লিখেছেন। আমার এই লেখার উদ্দেশ্যও তাই। কিন্তু আমি এও মনে করি এ এমন বড় কষ্ট নয় সাদিকের জন্য, যে তার বুক ভেঙে যাবে আর তিনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠবেন। বরং এ হচ্ছে তার মনের ভাবনাগুলোকে গুছানোর সময়। আর অনেক সময় ইসলামের উদাহরণ দিয়ে মুসলিমরা বলেন ইসলামকে বুঝতে হলে কোরান-হাদিস বুঝতে হবে, এখন মুসলিমরা যা করছে তা নয়, এটা যে কত বড় ভুল কথা তার সাক্ষাৎ প্রমাণ সাদিক। কারণ ধর্মগ্রন্থ নয় একটি ধর্মের অনুসারীরাই ঠিক করে কোনটি তাদের ধর্মের পক্ষের বিষয় কোনটি বিপক্ষের।

সাদিক, আপনাকে বলছি, মৌলবাদ একেই বলে। যুক্তি দিয়ে ধর্মের যে ইতিহাসকে আপনি কাঁটাছেঁড়া করতে চেয়েছিলেন, করতে চেয়েছিলেন মূল সত্যে পৌঁছানোর জন্য। সেই যুক্তি ধর্মবিশ্বাসীদের কাছে অচল। আর ধর্মবিশ্বাসীরাই নির্ধারণ করবে আপনি ভুল না সঠিক বলছেন, ধর্ম নয়, যুক্তিও নয়। প্রশ্ন হলো, আপনি কি তাহলে ছেড়ে দেবেন সত্যের সন্ধান? আপনার ধর্মান্ধ বন্ধুরা আপনাকে পরিত্যাজ্য করে দিলো বলে আপনিও কি তাদের পরিত্যাগ করবেন? কোথায় তাহলে সংস্কারের শুরুটা করতে হবে? কাউকে না চটিয়ে কি কাজটা করা যাবে?

আপনি হয়তো উত্তর খুঁজছেন, খুঁজছেন এবং খুঁজছেন। আপনাকে এটুকু বলতে পারি কাউকে না চটিয়ে সত্য কখনও উদ্ধার করা যায় না। আর এই ক্ষেত্রে অতি অবশ্যই আপনার চটাতে হবে অন্ধ বিশ্বাসী মৌলবাদীদেরকে। তারা চটেছে এবং দূরে সরে যাচ্ছে ক্রমশ: আপনার কাছ থেকে। তারা যত দূরে সরবে আপনি ততই কাছাকাছি হবেন সত্যের।

আপনার সাফল্য কামনা করি। তাদের বিশ্বাস তারা আঁকড়ে থাকুক, আপনার লক্ষ্য হোক সত্য আবিষ্কার। তবে সত্য বড় কঠিন।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।