পোস্তনস্কা গুহা -১: মানুষ মাছ (উৎসর্গ: সাধক শংকু)

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শুক্র, ১২/০৫/২০০৬ - ৯:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


বিবিসির অসামান্য ডকুমেন্টারি প্ল্যানেট আর্থ যারা দেখেছেন তারা হয়তো পোস্তনস্কা গুহার ভেতরের ছবি দেখেছেন। আমার আরেকটি পোস্টে সেই ডকুমেন্টারির কথা ছিলো। শুধু কেইভ বা গুহার উপরে একটি পর্ব আছে প্লানেট আর্থের। গুহার ভেতরে ঢুকার কথা ভাবলে দম বন্ধ একটা পরিস্থিতির কথা মনে আসে। তবু গুহার ভেতরে ঢুকার আগ্রহে আমার কমতি ছিলো না কখনো। কাঠমান্ডুতে শহরের কাছেই যে গুহাটি আছে তাতে ঢুকেছিলাম। ভেতরে খুব সুন্দর একটা মন্দির আছে শত বর্ষের পুরনো। আরো ভেতরে ঢুকলে শেষ মাথায় গিয়ে দেখতে পাওয়া যায় একটি জলপ্রপাত। অন্ধকারের ভেতর থেকে জলের সে ধারা দেখতে অপূর্ব লাগে। গুহা সম্পর্কে আমার আগ্রহ আরেকগুণ বাড়িয়ে দিলো বিবিসি'র ডকুমেন্টারিটি।

বাসে চড়ে হাজির হলাম পোস্তনস্কায়। ছোট্ট শহর। হাতে থাকা ম্যাপ দেখে দেখেই টু্যরিস্ট সেন্টারে আসলাম। খুবই স্বল্প আয়োজন আর নূ্যনতম ব্যবস্থা। গুহাটি এখান থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। কিন্তু ট্যাঙ্ িপাওয়া বড় কঠিন। প্রচন্ড রোদ মাথায় নিয়ে হাঁটাই শুরম্ন করলাম হাইওয়ে ধরে। গুহার কাছে গিয়ে দেখি অনেক টু্যরিস্ট। টু্যরিস্ট বাসে যারা এসেছেন তারা সরাসরি এখানেই চলে এসেছেন। আমি এসেছি পাবলিক বাসে। সেটি থেমেছে নির্ধারিত বাস-স্ট্যান্ডে। গুহার ভেতরে দু' ঘন্টা পর পর টু্যর হয়। পরবর্তী টু্যর দুপুর 12 টায়। সময় বেশি বাকী নেই। টিকেট করতে গিয়ে দেখি একসাথে তিনটি দর্শনীয় স্থানের টিকেট বিক্রি করছে ওরা। একসাথে কিনলে কিছুটা ছাড়। গুহা, একটি ক্যাসেল এবং গুহাবাসী প্রাণীদের নিয়ে তৈরি করা একটি ছোট্ট গুহা-চিড়িয়াখানা। তিনটাই কিনলাম। হাতে আধঘন্টা সময় আছে তাই প্রথমে ঢুকলাম টিকেট ঘরের সাথের গুহা-চিড়িয়াখানাটিতেই।

টিকেট ঘরটিও যে একটি ছোট্ট গুহাতে তা একটু এগিয়েই বুঝলাম। তো গুহার গভীর অন্ধকারে যেসব প্রাণী থাকে সেসব দিয়ে সাজানো হয়েছে এই গুহা-চিড়িয়াখানা। প্রাণীগুলোর কারণেই অন্ধকার করে রাখা হয়েছে ভেতরটা। ফ্ল্যাশ ছাড়া ছবিতে প্রাণীগুলোকে মোটেই দেখা যাচ্ছে না। একটি পোস্টারে প্রাণীগুলোর ছবি দেয়া আছে। তাই দেখে বিভিন্ন কাঁচের ভেতর রাখা গুহাবাসী প্রাণীগুলোকে দেখতে চেষ্টা করি। কোনোটি লুকিয়ে আছে বালির ভেতর। কোনোটি পাথর খন্ডের আড়ালে। গভীর অন্ধকারের প্রাণী এরা। সূর্যের আলো সইতে পারে না।

গুহার প্রাণীগুলোর মধ্যে সবচে' খ্যাতি পেয়েছে প্রোটিয়াস। রহস্য করে এর নাম দেয়া হয়েছে 'হিউম্যান ফিশ বা মানুষ-মাছ। ছোটো ছোটো হাত-পা থাকাতেই এরকম নাম বোধ হয়। কালো প্রোটিয়াসও পাওয়া গেছে গুহায় তবে আমরা দেখতে পেলাম সাদা মানুষ-মাছগুলোকেই। 25-30 সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এগুলো। যার ফলে গুহাতে বাস করে এমন প্রাণীদের মধ্যে এটিই সবচে দীর্ঘতম। আমাদের চেনা-জানা প্রাণীদের চেয়ে একেবারে ভিন্ন এই মানুষ-মাছের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। যদিও সালামান্দারেরই আত্মীয় এরা। গভীর অন্ধকারে থাকায় ত্বকের রং দরকার পরে না এদের। চোখটা কেমন ভেতরে আটকানো। কিন্তু ওদের নাকি আছে সুতীক্ষ্ন ঘ্রানেন্দ্রিয় এবং উচ্চ শ্রবণশক্তির অনত্দ: কান। দূর্বল চৌম্বক ক্ষেত্রগুলোও সে বুঝতে পারে যে কারণে অন্ধকার পৃথিবীতে চলতে ফিরতে তার অসুবিধা হয় না।

(গুহাতে সাধুরাও বাস করে। তাই এই লেখা সাধক শংকুকে)


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।