বোর্নমাউথ থেকে পুলে

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/০৬/২০০৬ - ৭:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আমরা যে হোটেলে উঠেছিলাম সেটি ছিলো বোর্নমাউথ আর পুল শহরের মাঝামাঝি। ব্র্যাংকসাম নামে স্টেশনের ঠিক উলটাদিকে। রোববার দিন সকালে উঠে আমরা রওয়ানা দিলাম পুলের দিকে। সন্ধ্যায় যেহেতু কবিবর শুয়েবের বোর্নমাউথ তান্দুরীতে আবার দাওয়াত তাই ঠিক করলাম পুল থেকে সন্ধ্যায় বোর্নমাউথ যাবো। চমৎকার সুন্দর সব বাস চলে এই দুই শহরের মাঝে। ছুটির দিনগুলোতে গ্রুপট্রাভেলে বিশেষ কনসেশন। 5 জনের ডে টিকেট 5 পাউন্ড। যেখানে একজনের টিকেটই সাড়ে তিন পাউন্ড।

পুল ঠিক সমুদ্র সৈকত নয়। ছোট্ট একটু জায়গা দিয়ে সমুদ্র ঢুকে গেছে স্থলভাগের মধ্যে। অনেকটা বড় গোল লেকের মতো। ফলে সেই জলাশয়ে গড়ে উঠেছে বন্দর। অজস্র ছোট বড় বিলাসী বোট রাখা পুরোটা এলাকা জুড়ে। আর বাসস্ট্যান্ড থেকে বন্দর পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার রাস্তাটা দু' পাশের দোকানসহ খুবই প্রাণবন্ত। সকালের নাস্তাটা সারলাম একটা ট্র্যাডিশনাল ইংলিশ ব্রেকফাস্টের দোকানে।

তান্নু একটা ভদকা কিনেছে দিনভর খাবে বলে। কিন্তু পানির কাছাকাছি গিয়ে নোটিশ দেখলাম প্রকাশ্য স্থানে আবর্জনা ফেলা ও মদ্যপানে জরিমানা 75 পাউন্ড। স্মিরনফকে তখন সে কায়দা করে চালান করে দিলো কোকের বড় বোতলে। ডিসপোজেবল গ্লাসে করে সবার হাতে হাতে তখন কোক মিশ্রিত স্মিরনফ। সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাস আর সূর্যের উজ্জ্বল আলোয় স্মিরনফ আর কোকের মিশ্রণের কারণে ছুটলো আমাদের দমফাটা হাসির জোয়ার। আমাদের দুই বাথরুম সিংগার তখন বাংলা গান গাইছে আর আমরা প্রকৃতির আস্বাদ নিতে নিতে পাড় ধরে হাঁটছি।

বিভিন্ন সাইজের লঞ্চ আর বোটে করে ভ্রমণের সুযোগ আছে। কোনোটা যায় এখান থেকে বোর্নমাউথ। কোনোটা দূর সাগরের দ্্বীপ ওয়াইটে। কোনোটাবা ঘুরিয়ে আনে ঘন্টা খানেকের জন্য। তাছাড়া রয়েছে মাছ ধরার ব্যবস্থা। হয় সারাদিন না হয় ঘন্টা তিনেকের টিকেট কেটে বসে যেতে পারে যে কেউ মাছ ধরতে। এক পাশে দেখলাম বাচ্চারা ধরছে কাঁকড়া। সে ব্যবস্থাও আছে।

নানারকম বিলাসী নৌকা দেখতে দেখতে এসে পেলাম সবুজ এক মাঠ। যেখানে বিভিন্ন বয়সের লোকজন উড়াচ্ছে বাহারি ঘুড়ি। কুকুর ঘুড়ি, প্রজাপতি ঘুড়ি, মেয়েদের ঠ্যাং ঘুড়ি, ঘুড়ি যে কত রকমের হতে পারে।

বন্দর চারপাশে তো পর্যটকদের ভিড় আছেই। সুতরাং সেখানে একটা উৎসবভাব আছে। তাছাড়া শহরের সর্বত্রই কেমন যেন প্রশান্তি প্রশান্তি অবস্থা। পুলের প্রেমে পড়তে আমাদের বেশি সময় লাগলো না। দুপুরের খাওয়াটা আজ পুলেই একটি বাঙালি মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টে। এমন চমৎকার পরিবেশ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো না। কিন্তু দাওয়াত বলে কথা।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।