আবার বোর্নমাউথ

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শুক্র, ০২/০৬/২০০৬ - ৯:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


পুলে দুপুরের দাওয়াতটার জন্য আমরা নৌকা ভ্রমণটা করতে পারছিলাম না। সময় মেলানো যাচ্ছিল না। দাওয়াতটা বাতিল করা যেত, কিন্তু তারা আবার আমাদের থাকার ব্যবস্থাটাও করেছেন। সুতরাং হাজির হলাম তাদের গেইট অব ইন্ডিয়া রেস্টুরেন্টে। ষাটোর্ধ মালিক আমাদের খুব সমাদরেই বসালেন। তার অভিজ্ঞতায় ভরপুর জীবনের নানা কাহিনী শুনতে খুবই ভালো লাগছিল।

1970 এর দিকে চা-বাগানের ম্যানেজারি বাদ দিয়ে এসেছিলেন এদেশে। তারপর এক আইরিশ মহিলাকে বিয়ে করে থেকে যান। এখন দেশে চা-বাগানও কিনেছেন। তিনছেলের মধ্যে বড় ছেলে আয়ারল্যান্ডে স্থায়ী, ইঞ্জিনিয়ার। মেঝছেলে, আমেরিকায় মাইক্রোসফটে চাকরি করছে 6 বছর ধরে। ছোটছেলে লন্ডনে ব্যাংকার। তিনি নিজে তিনদিন থাকেন পুলে আর সপ্তাহের বাকী চারদিন লন্ডনের কাছাকাছি ধনাঢ্য মানুষের এলাকা সারে-তে। পুরনো এ্যালবাম খুলে অনেক ছবি দেখালেন। আইয়ুব খানসহ অনেক বিখ্যাত লোকের ছবি আছে তাতে। অনেক ঐতিহাসিক ছবিও আছে।

তার জমজমাট গল্পের ফাঁকে ফাঁকে আমরা অপূর্ব স্বাদের সব ইন্ডিয়ান ডিশ সাবাড় করছিলাম। ভদ্রলোকের আরেকটি কথা খুব মনে বাজছে। আয়ারল্যান্ড ও ভারত-বাংলাদেশের ঔপনিবেশিকতা বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে অনেক মিল আছে মনে করেন তিনি। এ নিয়ে গবেষণা করতে আগ্রহী কিনা কেউ বারবার জানতে চাচ্ছিলেন। হয়তো তিনি স্পন্সর করবেন। গল্প শুনতে শুনতে আমাদের দেরীই হয়ে গিয়েছিলো।

সাড়ে তিনটার পর আর কোনো বোট রাইডের ব্যবস্থা নেই পুলে। স্যান্ড ব্যাংক বলে একটা জায়গা আছে, যেখানে স্থলভাগ সরু হয়ে সমুদ্রে ঢুকে গেছে, সেখানে যাওয়ার শেষ বাসটাও আমরা মিস করলাম। লন্ডনের মে-ফেয়ারের পর স্যান্ড ব্যাংকেই বাড়ি-ঘরের দাম ইউকে-তে সবচাইতে বেশি। বিশাল বিশাল ধনীদের বাড়িঘর এখানে। অগত্যা পুলে কিছক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে বোর্নমাউথের বাস ধরলাম। পুলের হার্বারের পাশেই একটা গোলাকার লেক আছে। হঠাৎ করে সে জায়গাটা আবিষ্কার করে মনে হলো মুফতে একটা সুন্দর জায়গা দেখলাম।

আগেরদিনও বোর্নমাউথের সমুদ্র সৈকতে এসেছি। আজ সিটি সেন্টার থেকে পাহাড়ের দিকে যেতে থাকলাম। সমুদ্র সৈকতের পাশেই পাহাড়। উপর থেকে সৈকত দেখা। সেখান থেকে আবার সিঁড়ি দিয়ে সৈকতে নেমে আসা যায়। গতকালের চেয়ে আজ ঠান্ডা কম। সূর্যের আলোও বেশি। পিয়ারটাকে আরো বেশি ভালো লাগছিলো তাই। পাহাড়ি পথ দিয়েই হেঁটে হেঁটে রওয়ানা দিলাম কবিবর শুয়েবের রেস্টুরেন্টের দিকে। রাসত্দার পাশে সে রেলিং তাতে নানা রকম ছোট ছোট শিল্পকর্ম। শামুক, জাহাজ, দাবার গুঁটি, মাছ কতকিছু চোখে পড়লো। সেইসাথে আছে সৈকতের পোষাকও। দেখে মনে পড়লো সমুদ্রের কাছে এসেছি কিন্তু সমুদ্রে নামার কোনো সাহস দেখাচ্ছি না আমরা কেউ। ঠান্ডা এখনও কমেনি।

ছবি পরিচিতিঃ
1. বোর্নমাউথ পার্কের মধ্যে ঝর্ণাসহ বাগান।
2. পুলের লেকে কালো মাথার গাংচিল।
3. পাহাড়ের রেলিং-এ ঝুলানো সাঁতারের পোষাকের শিল্প কর্ম।
4. পাহাড় থেকে বোর্নমাউথ পিয়ার
5. জলক্রীড়া
6. হার্বারের বিলাসবহুল নৌকাগুলো


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।