...বন্ধু নাইরে নাই, তুমি ছাড়া আমার আপন কেহ নাই...

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: সোম, ০৩/০৭/২০০৬ - ১০:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


মনের বন্ধু, প্রাণের বন্ধু, দরদীয়া বন্ধু ছাড়া দুনিয়া অন্ধকার। কিন্তু কে সেই বন্ধু? কারে মানুষ বন্ধু হিসেবে বেছে নেয়? কারে ছাড়া নিজের জীবন অচল হয়ে যাবে ভাবে মানুষ? এই বন্ধুর সংজ্ঞাটা কি সবসময় একই রকম থাকে? নাকি বদলে যায়। বন্ধুর জন্য মানুষের এই ভালবাসার গল্পই আজ করতে চাই। খুব বেশি বিরক্ত করবো না। মাত্র দু'টি গল্প শোনাবো। কঠিন কঠিন কথা শোনাই বলে বদনাম আছে আমার। আজ সেই বদনাম থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাই। আজ আমার তৃতীয় বিবাহবার্ষিকী। দীর্ঘ দাম্পত্যের আশা করেই বন্ধু-ভালবাসার গল্পের থলে নামাই কাঁধ থেকে।

প্রথম গল্প সালমার। পাশের বাসার আসিফের সাথে তার পুতুলখেলা বয়স থেকে প্রেম। দুই বাসার মধ্যে মাখামাখিরও কোনো অভাব ছিল না। কিন্তু দু'জনের প্রেমে প্রথম ধাক্কা এলো এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিনে। সালমা প্রথম বিভাগে পাশ। আসিফ ফেল। শুরু হলো প্রেমের কঠিন সময়। সালমার পরিবার কঠোর হলো আসিফের সাথে তার অতিরিক্ত মেলামেশার ব্যাপারে। মনের দু:খে সালমা নিজেও পড়ালেখায় ঢিলে দিলো। আসিফ পরের বছর পাশ করে কলেজে। সালমার এক বছর জুনিয়র। প্রেমের জন্য এটা কোনো বাধা না। সালমা এইচএসসি পাশ করলো দ্বিতীয় বিভাগে। প্রথম বিভাগে পেতে পারতো সে কিন্তু তখন সে চেষ্টা করছে খারাপ ছাত্রী হয়ে যেতে। আসিফকে জীবনে পাওয়ার জন্য ভালোছাত্রীর তকমাটা থেকে মুক্তি পাওয়াই তখন সালমার ধ্যানজ্ঞান। সে যাক, পরের বছর এইচএসসি-তে আসিফ আবার ফেল। সালমার প্রেম বেচারাকে পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য যথেষ্ট প্রেরণা দিতে পারেনি। সালমা ধীরে ধীরে বি.এ পাশ করলো। আসিফ সেই এইচএসসি দিয়েই যাচ্ছে। একসময় বিয়ে ঠিক হলো সালমার। প্রচুর পাহারা, পারিবারিক হুমকি ইত্যাদি দেয়া হয়েছিল যাতে সালমা পালিয়ে না যায় আসিফের সাথে। পরিবারের অনুরোধে সালমার বান্ধবীরা পালা করে বুঝাতে আসতো সালমাকে যে, আসিফের সাথে তার বিয়ে কখনও সুখের হবে না। কিন্তু সালমা সব সময়ই কম কথা বলে। সুতরাং যেকোনো বিপদের জন্য সবাই অতিরিক্ত সতর্ক ছিলো। বিয়ে হয়ে গেলো ভালো ভালোয়। সালমা চলে গেলো শ্বশুরবাড়ি। ফিরা যাত্রায় আবার বাপের বাড়ি আসছে সালমা। বান্ধবীরা সব উদ্বিগ্ন। যদি শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সালমা কোনো নেগেটিভ ধারণা পেয়ে থাকে? যদি বিয়ের পরও আসিফ তাকে নতুন মন্ত্রণা দেয়? তবে কেলেংকারি হয়ে যাবে। সালমা শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরা যাত্রায় আসার আগেই তারা হাজির হলো সালমার বাড়িতে। সালমা আসার পর তারা যথারীতি বুঝাতে শুরু করলো, "দেখ শ্বশুরবাড়ি আর বাপেরবাড়ি এক জিনিস নয়। মানিয়ে নিতে সময় লাগবো। তাছাড়া নতুন একটা মানুষের সাথে মনের মিল হতেও সময় লাগে"। তারা যত বুঝায় সালমা ততো মাথা নাড়ে। উদ্বেগে আর উৎকণ্ঠায় বান্ধবীদের তখন মাথা হট। সালমা ওদেরকে থামিয়ে দিয়ে বলে, "তোদের অনেকেরই তো বিয়ে হয়নি। তোরা আমাকে কি বলবি। আমার স্বামী যে কি ভালো মানুষ। বাইরে থেকে দেখে কিছুই বুঝা যায় না। আর একজন মানুষ যে আরেকজন মানুষকে কত সুন্দর করে ভালবাসতে পারে তা ওর সাথে বিয়ে না হলে কখনও জানতে পারতাম না"। সালমার আত্মতৃপ্তিতে ভরা চোখমুখের ভঙ্গি আর তার কথা শুনে বান্ধবীদের সব দুশ্চিন্তা মুছে যায়। কোথায় তারা এসেছিল সালমা অতীতের ভালবাসা ভুলে যাওয়ার কথা বুঝাতে সেখানে উল্টা সেই এখন তাদেরকে বুঝাচ্ছে বিয়ের পরের ভালবাসার কত সৌন্দর্য!!! বেচারা আসিফ! বাল্যবেলার প্রেম!!

....বন্ধু নাইরে নাই, তুমি ছাড়া আমার আপন কেহ নাই ...

আমার দ্বিতীয় গল্প শিউলির। শিউলি তত ভালো ছাত্রী নয়। মাসে দু/তিনবার হাজিরা দিতে আসে কলেজে। আর ওর সাত বছরের প্রেমিক আজমল পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। তবে ছাত্র হিসেবে আজমল যতটা কৃতি তারচেয়ে তার কৃতিত্ব বেশি মাস্তান হিসেবে। আজমলের কুকীর্তিতে মহাবিরক্ত শিউলি। কিন্তু এত দীর্ঘদিনের ভালবাসার টানটাও ভুলতে পারে না ও। কয়েকদিন হলো এক ছেলে শিউলিকে ফোনে বিরক্ত করা শুরু করেছে। বাসায় এ নিয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছে। শিউলি জানায় আজমলকে। আজমল মাস্তান হিসেবে প্রতিপত্তিশালী। টিএ্যান্ডটিতে লোক লাগিয়ে সে বের করে কে শিউলিকে বিরক্ত করে ফোনে। ছেলেটির নাম শাহীন। শিউলির কলেজেই পড়ে। শিউলিকে কলেজে আসতে বলে দলবল নিয়ে আজমলও সেদিন আসে শিউলির কলেজে। তারপর শাহীনকে ধরে আনে। ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে শাহীন। সাধারণ ভীরু টাইপের ছেলে সে। বাঁচার জন্য যেকোনো শর্ত মানতে সে রাজি। আজমল তাকে শর্ত দিলো, পুরো কলেজের সবার সামনে শিউলির পা ধরে মাফ চাইতে হবে শাহীনকে। সেইসাথে তাকে মা বলে ডাকতে হবে। শাহীন বিনাবাক্যে রাজি হয়ে গেল। শিউলির পা ধরে বললো, "মা, মা আমাকে মাফ করে দেন"।

মাস্তানির সাথে সাথে আজমলের প্রেমের সুনামও তখন ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে। দেড় মাস পরে শিউলির বিয়ের খবর পেল আজমল। বিশাল ধাক্কা খেলো আজমল। শিউলি আজমল ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারে তা সে ভাবেনি কখনও। এর ফলাফল যে খুব খারাপ হবে তাও জানে শিউলি। আজমল আগেই সেরকম ধারণা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু আরো বিস্মিত হলো আজমল যখন ও জানলো পাত্রের নাম শাহীন। আজমল অবাক হয়ে ভাবছে সেই ভীতু শাহীন, যে শিউলির পা ধরে মা বলে ডেকেছে। কি আশ্চর্য! কিভাবে হলো? প্রচন্ড আঘাত লাগলো আজমলের মনে। শাহীনের উপর কোনো এ্যাকশন নেয়ার কথা সে ভাবতেই পারলো না। ও শত ভেবেও কোনো কূল-কিনারা করতে পারলো না, কিভাবে হলো এটি, কেনো হলো!

...বন্ধু নাইরে নাই, তুমি ছাড়া আমার আপন কেহ নাই...

যদিও তিন বছর মাত্র পার হলো, তবু বউকে ভালবাসা জানাই এই একই কথা বলে। নেগেটিভ গল্প শুনিয়ে পজেটিভ কথাটাই বলতে চাই। তাই বলি...

...বউ নাইরে নাই, তুই ছাড়া আমার আপন কেহ নাই...


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।