সুধা কেনা ও পানি বেচা

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৬/০৭/২০০৬ - ২:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ক্রেতা আমরা সকলেই। জীবন বাঁচাতে ও সাজাতে কেনা-কাটা লাগে না এমন সাধু-সন্তও আজকের বাজারে বিকায় না। কিন্তু তাই বলে বেচা-বিক্রিও কি সবাই করি। হ্যা, তাতেও সবাইকে হাত লাগাতে হয়। ফকিনি্ন থেকে রাজরাণী বিক্রেতার তালিকায় নাম পাওয়া যাবে সবার। কেউ বেচে ভিক্ষার চাল, কেউ হীরে-জহরত। তফাৎ এতটুকুই। কিন্তু কেনাবেচার যে ক্রিয়াকর্ম, তাতে হাত ময়লা করে সকলেই। তাইতো সচল এত অর্থনীতির চাকা। তবে কেউ কেউ হয়তো পেশাদার ক্রেতা। কম মূল্যে বেশি দামের জিনিস কেনাটাই তার পেশা।

আহা, দামের কথা যখন এসেই গেল, তাহলে বলে নিতেই হয়, এই কেনাবেচা কাজকর্মের চাবিকাঠি হচ্ছে এই দাম। দামেরা মোটে দুই ভাই। কেনা দাম আর বেচা দাম। এই দুই দামের পার্থক্যই হলো লাভ। আর লাভটা সবাই কোঁচড়ে ভরতে চায় বলেই তো কেনাবেচার এত প্রতাপ।

তা আমার আছেই কী আর বেচবোই বা কী? আছে, আছে। শরীরটার কথাই আগে আসে। শরীর বেচা মানে চলতি কথায় লোকে যাকে বলে গতর বেচা তাকে কেউ সম্মানের কাজ হিসেবে দেখে না (চুপিসারে বলে রাখি, মানুষ মাত্রই হিংসুটে। অন্যকে খুব সহজে পয়সা বানাতে দেখলে তাদের চোখ টাটায়। তাছাড়া সব শরীর তো আর বেচা চায় না। তার ছিরি-ছাঁদ ভালো হওয়া চাই। সবার তো আর ফর্মা মাপে শরীর হয় না। যাদের অমন লক্ষ্মী-কার্তিক গঠন-গাঠন তারা আবার তা বেচবে সে দৃশ্য চন্ডালের চোখে সহ্য হয় কি করে। অবশ্য কার্তিকদের চেয়ে লক্ষ্মীদেরই এ লাইনে বাজার ভালো)। সেসব বাজে কথা বেশি চটকাতে চাই না। শরীর নাই বেচলে, কিন্তু শরীরের তাকত, পেশিশক্তি, তার ক্রেতা ম্যালা। যদিও দাম কম কিন্তু খরিদ্দার প্রচুর। বেচা যায় মগজও। ঘটে যদি বুদ্ধি থাকে, কিংবা স্কুল-কলেজে দৌড় ঝাঁপ করে থাকো, তাহলে হয়তো ঘাম ফেলতে হবে না। তবে তেল ওরা ঠিকই বের করে নেবে। মাস শেষে যে বেতন দেবে তার দ্বিগুণ যদি তোমাকে দিয়ে কামিয়ে নিতে না পারে তা তোমাকে পোষা কেন? ধনী হওয়ার কায়দাই ওই। দিবে কম আর পকেটে পুরবে বেশি। ও যদি তোমাকে দিয়ে চলি্লশ টাকা ফলাতে পারে দিনে তা হলে কুড়ি টাকা রোজে তোমাকে বেন্ধে ফেলবে। হররোজ কুড়ি টাকা তার মুনাফা। ঠিক যেন মুরগির খামার। দিনশেষে খাঁচা ভর্তি ডিম। যত মুরগি তত ডিম। মুরগি কেনা আর ডিম বেচা। তবে মুরগি যখন ডিম পাড়া বাদ দিবে তখন খাঁচা ভরে সেগুলোও বাজারে নিয়ে ঝেড়ে দিতে হবে। তারও ক্রেতা আছে। লোকে মুরগির হাড়-মাংসের সু্যপ খাবে। খেয়ে শরীরের তাকত বাড়াবে। তারপর আবার এসে বাজারে শ্রম বেচবে।

কেনাবেচার কারবারটা দেখতে আবার খুব ভালো লাগে। ছোট থাকতে যেখানেই ক্যানভেসার দেখতাম দাঁড়িয়ে যেতাম। প্রথমে উদ্দেশ্য অবশ্য কেনাবেচা দেখা ছিল না। ও ব্যাটা বলছিল এক পেটি তাস থেকে নাকি সবার চোখের সামনে এক বস্তা তাস বানাবে। তাসে তাসে নাকি খোলা জায়গায় রাখা ওর চাদরটা ভরে যাবে। চারপাশে লোক গিজগিজ করে। ব্যাটা খেলাটা দেখাতে শুরুকরে। কিন্তু এরপরই অন্য কথায় চলে যায়। কেনাবেচার কথা। তাসের পেটি হাতেই থাকে ওর। এর মাঝে ও কয়েক কার্টন 'মরা বেঁচে উঠার' সুধা বেচে ফেলে। খেলাটাই ব্যাটা দেখায় না। ওসব সুধা নিজে কিনিনি কিন্তু শুনেছি ও তে নাকি কিছু নাই শুধুই পানি। দেশটা খালে-বিলে ভর্তি। তা পানি না বেচে ও বেচবেই বা কি? শুধু পানি বললে তো আর লোকে কিনবে না। গোলাপজল বললেও দরদাম করবে। তাই বলে সুধা। তা ওর দোষ কি? দুনিয়ার এ্যাব্বড় এ্যাব্বড় কোম্পানী তাই করছে। কত বাহারি নাম, কোচাকোলা, ফানডা, মিশিন্দা। কিছু রং, কিছু চিনি আর পানি। অতটুকু বোতলের পানি বড় জোর এক টাকা চাওয়া যায়। ওরা বেচে ছয় টাকা। তবে সিটি কর্পোরেশনের পাইপে যখন পানির সাথে কেঁচো আসতে লাগলো তখন নাগরিক সাহেবেরা ধৈর্য ধরলো না। বোতলের পানি কিনতে দোকানে ছুটলো। পানির দেশে চিনি, রং ছাড়াই এখন বোতল ভর্তি কাঁচা পানির দাম ছয়-নয় টাকা। সবাই কিনছে। তা নাগরিকরা যদি ধৈর্য ধরতো তাহলে কি এমন কচুটা হতো? কেঁচো আসছিলো। ক'দিন পর কেঁচোর পেছন পেছন পুঁটি মাছটাও আসতো। ধরো আরো কড়াইতে ভাজো। তা ওত ধৈর্য কার আছে? কিনতে হলে এখন সবাই বাজারেই যায়। খাল-বিলের মাছ কিনতেও বাজার। গাছ-লতার ফল-মূল কিনতেও বাজার। এমনকি উঠতি ছোঁড়ারা বিয়ের কনে দেখতেও বাজারে যায়। বলতে ভুলে গেছিলাম বাজারের শুদ্ধ বাংলা হচ্ছে মার্কেট। ও বিষয়ে লোকজন পড়ালেখাও করে। যে যত বড় মার্কেটার তার তত বেশি রোজগার। তো এই মার্কেটারের কাজ কি? ঐ ক্যানভেসার যা করে। সুধার নামে পানি বেচে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।