অগ্রিম ছাগল জবাই ও তানজিমের জঙ্গি লেবেল

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শুক্র, ০৪/০৮/২০০৬ - ১১:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


বাবুর শাহ ইংরেজিতেই বলেছিল দেশে কোনো জঙ্গি সংগঠন নাই। এখন দেখি সকাল বিকাল জঙ্গি সংগঠনের নেতারা ধরা পড়ে। গতকাল পত্রিকায় দেখলাম নতুন এক জঙ্গি নেতা ধরা পড়েছেন। তার দলের নাম তানজিম। দলের নাম দেখে ভাবলাম বেচারা নিশ্চয়ই নতুন হালাল সাবান কোম্পানির মালিক হওয়ার পারমিটের জন্য আবেদন করেছিলেন। সাংবাদিকরা কোম্পানির নাম আরবি দেখে একেবারে জঙ্গি লেবেল সেঁটে দিয়েছে। অর্থমন্ত্রীর মানা আছে। সাংবাদিক আর সংবাদপত্র আজগুবি গল্প ছাপে; সুতরাং তানজিম সম্পর্কে আগ্রহে আমার বাম ভুরম্ন লাফাতে থাকে কিন্তু সংবাদ-সূত্র নিশ্চিত হতে পারি না। শুধু পত্রিকা পড়ে এসব জঙ্গিসংস্কৃতি বিশদ বুঝা যায় না। 2000 সালে যখন দেশ ছাড়ি তখন দেশে জঙ্গি ছিল দুইজন। একজন জীবিত ও একজন মৃত।

আমার কথা যারা বিশ্বাস করেন না তারা ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের মোড়ে গেলেই বুঝতে পারবেন। পীর জঙ্গির মাজার ঢাকা শহরের অনেক বাসের ঠিকানা ছিল একসময়। আমার জানামতে তিনিই দেশের প্রথম জঙ্গি। দ্বিতীয় জঙ্গি হচ্ছেন আমার ছোট মামা। মামা জন্মানোর পর থেকে অদ্ভুত সব অঙ্গ-ভঙ্গি করতেন। তাকে মৃগী রোগী সন্দেহ করে নানী তখন পীর জঙ্গির মাজারে শিনি্ন মানত করেন। শিনি্ন খেয়ে মামার মৃগী রোগ চলে যায় তবে জঙ্গি হয়ে যায় তার ডাকনাম। সুতরাং তিনি হচ্ছেন দ্বিতীয় জঙ্গি। কিন্তু এই ছয়বছরে আমাদের প্রিয় জঙ্গি মামার এত ভাগ্নে হয়ে দেশ সয়লাব হলো কি করে সেই তেলেসমাতি বুঝতে পারি না। মনে হচ্ছে দেশে জঙ্গি বন্যা হচ্ছে।

কাগজের পাতায় বিভিন্ন রকমের জঙ্গিসংবাদ। নতুন নতুন জঙ্গি ধরার কাহিনী পড়ি। তাদের কায়-কারবার নিয়া সাংবাদিকরা মশকরা করে, জঙ্গিরা নাকি তারাবাতির মত সারাদেশে বোমা ফাটায়, বুলেটপ্রম্নফ জ্যাকেট পড়াইয়া তাদেরকে পুলিশ আটক করে, আটক হওয়ার পর তারা সরকারকে তথ্য ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দেয়, সরকার তখন তাদেরকে বিশেষ ভবনে জামাই আদরে ইজ্জত দিয়ে বাতচিত করে, সেবাযত্ন করে। প্রফেশন হিসাবে খারাপ মনে হয় না। কিভাবে জঙ্গি হওয়া যায় জানা থাকলে মামা তো আছেই, একটা ভাগ্নেরেও জঙ্গি বানাইতাম। তানজিম নামটা পছন্দ হইছে। ভাগ্নেরে এই জঙ্গিস্কুলেই দিতাম অনুমান করি।

'তানজিম' শব্দটা নাকি আরবি এর অর্থ হলো সংগঠন। আমি তো আর শহীদুলস্নাহ না জানবো কি করে? জঙ্গিরা জানে। জঙ্গিদের প্রিয় ভাষা আরবি। তবে তানজিমের সদস্যরা নাকি তাদের সংগঠনের নাম বারবার বদলায়। পুলিশের হাতে ধরা পড়লে আসল নাম বাদ দিয়া সংগঠনের অন্য নাম বলে দেয়। ব্র্যান্ডিং-এর পৃথিবীতে এভাবে দ্রম্নত নাম বদলালে পণ্যের বাজার বাড়বে কি করে? এরা লেবেলিং-এ নিজেরাই গন্ডগোল করে ফেলে।

সে যাক, তানজিমের টার্গেট ছিল 2010 এর মধ্যে রাষ্ট্রৰমতা দখল। একথা শুনে বুক আমার ঝিমঝিম করে উঠে। খুব খুশি। ভাগ্নেটা মন্ত্রী-টন্ত্রী হতে পারতো। সাংবাদিকদের ঈর্ষাকাতর লাগে। রাষ্ট্রৰমতায় কে না যেতে চায়? ক্যাডেট স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র থেকে শুরম্ন করে পশুমন্ত্রীর ব্যক্তিগত রাখাল সবাই স্বপ্ন দেখে মসনদে চড়ার। তানজিমের বেলায় দোষ।

মাত্র শুরম্ন হয়েছিল সংগঠনটা। ভালুকায় উঁচু দেয়ালতোলা মদরাসা হয়েছে। সেখানে লাঠি খেলা ও ভারোত্তোলন ইত্যাদি শিৰা পেত প্রশিৰণার্থীরা। রাষ্ট্রৰমতা চালানোর জন্য যে সার্কাসের দড়াবাজ হওয়ার যোগ্যতা লাগে এটা তানজিমের মহান জঙ্গিনেতাই প্রথম আবিষ্কার করেন বলেই অনুমান করি। লাঠি তো খেলতে হবেই, তা ছাড়া ৰমতার গদিতে যেসব মেদ-মাংস সর্বস্ব নালায়েকরা গদিনশীন হয়ে আছে তাদেরকে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলার জন্য ভারোত্তোলনটা জানা চাই-ই। একেক জনের যা আকার-প্রকার সোবহানালস্নাহ; অনত্দত: ভারোত্তোলনে এশিয়ান রেকর্ড না থাকলে তাদেরকে গদি থেকে উঁচা করা যাবে না। জঙ্গি ভাগ্নেকে এ দায়িত্ব দেয়া যাবে না। পরে বাংলা-সিনেমার হিরো হতে চাইবে। মন্ত্রী তুলতে পারলে নায়িকাতো বিষয় না।

গদি কামিয়ার করার জন্য তাদের আছে বিশেষ বাহিনী 'ফিদাই'। এও নাকি আরবি শব্দ, অর্থ হচ্ছে আত্মঘাতী। বুঝতে পারি না, আত্ম কে ঘাত করে ফেললে ৰমতায় বসবে কে? তাছাড়া নামটা দেখে ভেবেছিলাম মাদ্রাসাগুলোর ছেলে-পেলেরা হিন্দি ছবির ফিদা হয়ে গেছে। পরে বুঝলাম আমি বুরবক। আরবি ভাষায় তাদের বুৎপত্তি দিন দিন বাড়ছে। আরব মুলস্নুকে সিটি কর্পোরেশন আর এয়ারপোর্টে এসব আরবি জানা বাঙাল সেবকবাহিনীর নাকি ভীষণ কদর। কিন্তু তারা সেখানে গিয়ে ময়লা সাফা করার যে কি ট্রেনিং পায় বুঝি না, গরীব-মিসকিনের দেশে ফেরত এসে বোমা মেরে মানুষগুলোই সাফ করে দিতে চায়। সবই জঙ্গি দিলের ফিদা হয়ে যাওয়ার খায়েশ! ভাগ্নের ভবিষ্যতটা আমি চোখের সামনে দেখতে পাই।

তবে তানজিম নামটা দেখে সন্দেহও হয়। 'তেজারত' টাইপের কোনো ভুষিমালের দোকান নাতে এটা। ভাগ্নে ভূষিমালের দোকানে পালস্না মারছে ভাবতে বেশি এ্যাডভেঞ্চারাস মনে হয় না। তবে নাম নিয়ে আমার সন্দেহটা একেবারে অমূলক না। কারণ সাংবাদিকরা একে জঙ্গি সংগঠন বললেও এর বিরম্নদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন একজন মনোহারী দোকানের মালিক। সেই দোকানদার (আমার ধারণা ঈর্ষার শিকার হয়ে) বলেছেন এতগুলো লোক মদরাসার ভেতর থাকলেও তারা কখনও দোকান থেকে একটা ম্যাচও কেনে নাই।

মনোহারী দোকানদারের এই কথাটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু ব্যাটা নির্ঘাত আহাম্মক। সারা দেশ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার মত বারম্নদ যাদের কাছে আছে তারা কেন ম্যাচ কিনতে যাবে দোকানে? স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি তাদের। কদিন পর দেশ চালাবে তারা। একজন মনোহারী দোকানদারের উপর তারা নির্ভরশীল হলে দেশ দৌড়াবে কি করে, ঘূর্ণন বাদ দিয়ে থেমে থাকবে।

জঙ্গিদের এই স্বনির্ভর আদর্শের মরতবায় মুগ্ধ হয়ে আমি যখন মারহাবা বলে হাঁক মারতে যাচ্ছিলাম তখন সাংবাদিকের লেখা রিপোর্টের দ্বিতীয় লাইন পড়ে গলার স্বর গেল আটকে। দোকান থেকে কিছু না কিনলেও কিছুদিন আগে গ্রামের একটা ছাগল তারা ধরে নিয়ে হাপিস করে দিয়েছে। এৰেত্রেও তথ্যপ্রদানকারীদেরও নিবুর্দ্ধিতায় আমি বাক্যহারা হয়ে যাই। মদরাসায় কি আর ছাগল হয়? ছাগল তো তারা গ্রামের মাঠ থেকেই ধরবে। এতগুলো লোকের খানা-পিনার হিসাবে গোলমাল লাগতেই পারে। বাড়তি ছাগল দরকার হতেই পারে। কিন্তু সেই ছাগল লোপাট করে দেয়ায় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাকি তাদের বিরম্নদ্ধে নোটিশও দিয়েছিল। তানজিমের সদস্যরা সেই নোটিশকে পাত্তাই দেয় নাই। সাব্বাশ বাঘের বাচ্চা। ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরে ডরাইলে কি আর দেশের ৰমতা দখল করা যায়। আর দেশটা যখন দখলে আসবে তখন দেশের গরম্ন-ছাগলগুলোর মালিকওতো তারাই হবে। সেখান থেকে না হয় অগ্রিম একটা ছাগল গেল। তাই বলে পুলিশ ডাকাডাকি?

(আচ্ছা ছাগলের আরবী কি? এইসব হিন্দুয়ানী শব্দ ব্যবহার করা ঠিক হচ্ছে না। এই প্রেস্টিজেই হয়তো ভাগ্নেটা তানজিমে নাম লেখাতে চাইবে না।)


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।