দেশের উন্নয়নে উদ্ভাবনকে সমর্থন

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৪/০৮/২০০৬ - ৮:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


Innovation শব্দটির ঠিক বাংলা প্রতিশব্দ আছে কিনা জানি না। কাছাকাছি একটা শব্দ হতে পারে উদ্ভাবন। যদিও অভিধানে উদ্ভাবন বলতে Invention -ই দেয়া আছে। অর্থাৎ আবিষ্কার। তবে Innovation আসলে আবিষ্কার নয়। আবিষ্কৃত জিনিসকে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নতুন সাজে ও চেহারায় উপস্থাপনা করা। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে হয়তো। মোটরগাড়ি হচ্ছে একটি আবিষ্কার। তার একটি তিনচাকার রূপ হচ্ছে স্কুটার বা বেবিট্যাক্সি। স্কুটার যদিও আলাদা করে আবিষ্কারের মর্যাদা পায় না তবু স্কুটার তৈরির জন্য কারখানা লাগে এবং একেবারে শুরুতে এরকম একটি যানের কল্পনা, ডিজাইন ইত্যাদির জন্য উঁচুপর্যায়ের দক্ষতারও প্রয়োজন হয়। তবে স্কুটার ব্যবহার করে আমাদের দেশের কারিগররা খুব সহজ একটি উদ্ভাবন করেছে যার নাম দেয়া হয়েছে টেম্পু। তিন যাত্রীর জন্য তৈরি বাহনটিকে কেটেকুটে গোটা 10/12 যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা। আবিষ্কার বিষয়টা এখন জটিল গবেষণা ও বিপুল অর্থসাপেক্ষ হয়ে গেছে কিন্তু এরকম উদ্ভাবন বা Innovation এর সুযোগ কিন্তু আমাদের প্রচুর। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র বা কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ব্যাপারে খুবই অনাগ্রহী। বরং যা দুয়েকটা উদ্ভাবন আমাদের মাঝে কেউ করে থাকে তাকে পৃষ্ঠপোষকতা না করে তার বিরুদ্ধাচরণ বেশি পাওয়া যায় আমাদেরকে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের সম্ভবত: সবচে বড় উদ্ভাবন হচ্ছে মিশুক। কিন্তু যানটি বোধ হয় এখন বিলুপ্তির পথে। যথাযথভাবে এই যানের উন্নয়নে যদি সরকার ও বুয়েট মনোনিবেশ করতো তবে হয়তো আমাদের দেশে বিদেশ থেকে তিনচাকার স্কুটার আনতে হতো না। হয়তো আমরা বিদেশেই রপ্তানি করতাম মিশুক। কিন্তু দু' দফায় দুবার ডিজাইন করে উৎপাদন করার পর এ বিষয়ে হয়তো আগ্রহ হারিয়েছে কতর্ৃপক্ষ। যদিও আগ্রহ হারানোর কোনো কারণ নেই; দেশ জুড়ে তিনচাকার স্কুটার/মিশুকের বিপুল চাহিদা।যান্ত্রিকতার কথা যদি বাদ দেই তবে রিকশা আমাদের একটি অনন্য উদ্ভাবন। পরিবেশ বান্ধব এই যানটি হতো পারতো আমাদের জাতীয় পরিবহনের প্রতীক। রিকশার সুবিধা ও গুণাগুণ নিয়ে এখানে বর্ণনা দেয়ার সুযোগ নেই, দরকারও নেই। রিকশা আর্ট বিশ্বব্যাপী বোদ্ধামহলে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। কিন্তু আমরা রিকশার এক বাজে ইমেজ তৈরি করে নগরগুলোয় এই যানটিকে হত্যা করছি। প্রয়োজনের কারণে শস্য পরিবহনের জন্য শ্যালো মেশিন ব্যবহার করে আমাদের দেশের কৃষকরা তৈরি করেছে নসিমন/ভটভটি। সস্তা পরিবহন, তেমন কোনো অর্থ বিনিয়োগ নেই, কারিগরি মান নেই সুতরাং এর বাস্তব কিছু অসুবিধা ছিল। কিন্তু জাতের পরিবহনদের হিংসার প্রকোপে সরকারী হস্তক্ষেপে এসব যান এখন রাস্তায় নিষিদ্ধ। উদ্ভাবনকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার বদলে সরকারের শাসকসুলভ নিষেধাজ্ঞা এসবের কবর রচনা করে। একইভাবে নদীবহুল দেশের জন্য এক প্রয়োজনীয় আবিষ্কার ইঞ্জিন নৌকা। ক্ষয়িষ্ণু নৌকাশিল্পের জন্য হয়তো এ এক হুমকি। কিন্তু এর উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যায় না। কি এমন প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা আমরা দিতে পেরেছি এই বাহনের জন্য? আবিষ্কার করার মত সহায়তা যদি আমদের নাও থাকে, দক্ষতার যদি অভাব থেকেও থাকে, উদ্ভাবনে আমাদের পরিশ্রমী জনগণ কখনও পিছিয়ে ছিল না। কিন্তু বিদেশী প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট কিছু কমিশন লোভী ক্ষমতাশীল ব্যক্তির প্ররোচনায় রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানিক সমর্থন এসব উদ্ভাবনগুলো পায় না। একটি জাতি যদি তার জনগোষ্ঠীর উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগাতে না পারে তবে সে আগায় কি করে?


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।