কেন তারা কথা বলেন না?

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বুধ, ২২/১১/২০০৬ - ৮:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


রাজনৈতিক সংস্কৃতির চল দেশের সাধারণ সংস্কৃতির উপরই দাঁড়িয়ে থাকে। সশস্ত্র বাহিনী দিবসে হাসিনা-খালেদার কথা না বলা নিয়ে এই ব্লগেও পোস্ট পড়েছে। প্রশ্নটি সহজ: তারা কেন কথা বললেন না? ভদ্রতা বলে একটা ব্যাপার আছে না?দু'জনের কেউ কথা বলেননি। এই পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা এটুকু অন্তত: বুঝতে পারি যে এদেশের রাজনৈতিক বিরোধ অনেকটা যুদ্ধের সংস্কৃতি অনুসরণ করে। টনি ব্লেয়ার ইরাক সফরে গেলে জেলখানায় গিয়ে সাদ্দামের সাথে কেন দেখা করবেন, কেন করা উচিত না; এ প্রশ্নের জবাব কে দেবে। আমরা এরকম সংস্কৃতি নির্মাণ করি। আবার দেশের প্রসঙ্গে আসি: একটি সৌহার্দ্যময় দৃশ্য কল্পনা করি:দৃশ্য: 1মঙ্গলবারের অবরোধ পরবর্তী জনসভা শেষে হাসিনা ঘরে ফিরলেন। হাত-মুখ ধুয়ে রান্নাঘরে ঢুকলেন। একঘন্টা পর বের হয়ে এলেন এক হাড়ি দুধের পায়েস নিয়ে। এবার রওয়ানা হলেন ক্যান্টনমেন্টের দিকে খালেদার বাসভবনের উদ্দেশে।দৃশ্য: 2(খালেদা জিয়ার ড্রইংরুমে উচ্ছল হাসির আওয়াজ)খালেদাঃ মিটিং-টিটিং করে রান্নাঘরে ঢোকার সময় পাও তুমি?হাসিনাঃ ভাবলাম মিটিং-এ তো আপনাকে অনেক হুমকি দিলাম। এখন পায়েস খাওয়ায়ে আপনার মাথা ঠান্ডা করি। খালেদাঃ আরে পলটনের বক্তৃতার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গুলানোর কি আছে। প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো। এখন বুঝি ঐসব হচ্ছে পাবলিকের জন্য বক্তৃতা দেয়ার নিয়ম।হাসিনাঃ আমি যে আপনার জন্য পায়েস বানাইয়া আনছি এইটা আবার মিটিং-এ বলে দিয়েন না। খালেদাঃ আরে অত বোকা আছি নাকি? তাইলে তো পরের দিন সাইফুর রহমান আমারে হাসিনার দালাল বলে বিএনপি থেকে বের করে দেবে। দুই কল্পদৃশ্য থেকে আমরা কি বুঝি? এবার সত্য ঘটনার কথা বলি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে গোলাম আজম ও হাসিনা এক টেবিলে বসেছিলেন। সেই ছবি এখনও হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। ভবিষ্যতেও ব্যবহৃত হবে। বড় বড় তত্ত্ব বানানো হবে এই হঠকারী বৈঠক নিয়ে। শোনা যায়, তোফায়েল আহমেদের সাথে সাকা চৌধুরীর গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। জানি দোস্ত তারা। শুনলেই মনে হয় না, এরা মিলে-মিশে একটা ঘাপলা করছে। মনে হয় না, সাকার সাথে তোফায়েলের বন্ধুত্ব হওয়া উচিত না। কেন উচিত না? আওয়ামী লীগের কর্মীরা তোফায়েলের কথায় 100 ভাগ আস্থা রাখতে পারে না, এরকম দল-বহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই। হাসিনা-খালেদা যদি বিকালের চা খেতে গলফ কোর্সের রেস্তোরায় প্রতি মাসে বসেন, তবে আপনি কি ভাববেন? " আরে ভাই, ভিতরে ভিতরে ওদের ঠিকই মিল আছে। আমগো পাবলিকের সামনে আইলে খালে ফাল পাড়ে। দল টিকায়া রাখা লাগবো না। সব রসুনের গোড়া একখানে"। কিছু পরিবার আছে বাংলাদেশে, যেখানে এক ভাই বিএনপি, এক ভাই আওয়ামী লীগ, এক ভাই জাতীয় পার্টি করে। এধরনের পরিবারকে আমরা সুবিধাবাদী পরিবার হিসেবেই দেখি। ভাইয়েরা এক টেবিলে একই ভাত-তরকারি খেয়ে বের হয়ে এসে আলাদা আলাদা মিছিল করে। তবে বাজারে ভাইদের মধ্যে কল্পিত এক বিরোধের গল্প চালু থাকে। পূর্ব-বাংলার সর্বহারা পার্টির সদস্য হতে হলে একসময় প্রথমেই গলা কাটতে হতো পরিবারের ধনাঢ্য কারো। শ্রেণীচরিত্র বদলানোর প্রমাণ হিসেবে। গলা কেটেছেন এরকম অনেকে এখনও বাংলাদেশে বড়সড় রাজনৈতিক নেতা। বিরোধ ও বন্ধুত্বের রীতি-নীতি ও সংস্কৃতি ভিন্ন জনপদে ভিন্ন হয়। একে দ্রুত বদলে ফেলা যায় না। পাশ্চাত্যরীতির আচরণ করা যায়। করে দেখতে পারেন। তাতে আপনি ড. কামাল হবেন। জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। হাজী মকবুল হতে পারবেন না। নির্বাচনে জিততে পারবেন না। এদেশে হাজী মকবুলের সংখ্যা বেশি। তার পক্ষে ভোট কারচুপি করার লোকের সংখ্যা বেশি। হাজী মকবুলকে ভোট দেয়া লোকের সংখ্যা বেশি। ভোটের গণতন্ত্রে লোকের সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের বাজারে হাজী মকবুল, হাজী সেলিমের পাল্লা ভারী হয়; ড. কামাল বা ডা: জালালের নয়। হাসিনা-খালেদা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি জানেন, তাই তারা কথা বলেন না। বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের ক'জন দম্পতির মধ্যে বন্ধুত্ব-পূর্ণ সম্পর্ক থাকে। না থাকার কথা কেউ চিন্তা করে। নাকি সমাজ এরকম কোনো দৃশ্যের কথা কল্পনা করতে পারে? এবার পশ্চিমা বিশ্বের দিকে তাকান। বিবাহ-বিচ্ছেদের পর কত ভাগ দম্পতির মধ্যে দেখা-সাক্ষাত বন্ধ হয়ে যায়। (উত্তর: খুব কম।)রাজনীতি সমাজ বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতি জনপদের সংস্কৃতি থেকেই তৈরি হয়। সোনার পাথর-বাটি হয় না।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।