বাংলাদেশে মন্ত্রীরা কেনো পদত্যাগ করেন না

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শনি, ০৭/০১/২০০৬ - ৫:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


কেউ শুনেন কিনা জানিনা বিবিসি এখন বাংলাদেশ সংলাপ নামে একটি সরাসরি অনুষ্ঠান করছে বাংলাদেশে। শেষ সংলাপ অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হলো 6 জানুয়ারি সন্ধ্যায়। বিষয় ছিল সরকার ব্যবস্থা।

অনুষ্ঠানে একজন শ্রোতা প্রশ্ন করেন, কেনো বংালাদেশের মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেন না। প্যানেলে যারা ছিলেন তারা প্রশ্নটিকে নানাদিকে নিয়ে যান কিন্তু আমার কাছে মনে হয় তারা কেউ প্রশ্নটিকে গুরুত্ব দিয়ে নেননি। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যপ্রচুর হাত তালির মধ্যে বলেন যে, তারা পদত্যাগ করেন না কারণ তাদেরকে কেউ পদত্যাগ করতে বলেন না। হয়তো হালকা রসিকতা হলো কিন্তু মন্ত্রীদের এই গায়ে মানে না আপনি মোড়লের প্রবণতাটা আমার মনে হয় আমাদের সংস্কৃতির আরো গভীরে প্রোথিত।
মন্ত্রীর দায়িত্ব যিনি পান তার ব্যর্থতার ঘটনা ঘটলে পদত্যাগের প্রশ্ন ওঠে। অথবা অন্য কোনো কারণে যদি মনে হয় তিনি মন্ত্রী হিসেবে তার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দেয়ার নৈতিক শক্তি হারিয়েছেন তখন তার পদত্যাগ করা উচিত। কিন্তু বড় কথা হচ্ছে এই মনে হওয়াটা হতে হবে যিনি মন্ত্রী তার। কিন্তুগাঁটের প্রচুর পয়সা খরচ করে আরো পয়সা বানানোর উপায় হিসেবে যারা মন্ত্রীত্বের চেয়ার দখল করেন তাদের মনে কি আর এমন বিবেক স্থান পায়। তার উপর বাংলায় একটা কথা আছে মানীর মান জুতা দিয়ে পিটালেও যায় না। সুতরাং যতই স্খলন হোক, যতই তারা অপমানিত হোক তাদের চোখের কোনো পর্দা নেই। লোভী, দু-নম্বরী মানুষের এতো লজ্জা থাকলে কি চলে।
দারিদ্রের কারণে এবং শিক্ষার যথার্থ স্পর্শ বঞ্চিত হওয়ায় জাতি হিসেবে আমাদের মধ্যে আত্মসম্মানের বোধই কম। কিছুতেই যখন আমাদের সম্মান হানি হয় না তখন কোথায় কে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কি অভিযোগ তুলেছে তা আর কানে তোলে কে। আমার মতে সমস্যাটা মূলত: এ জায়গায়। আত্মসম্মানহীন মানুষ আঁকড়ে ধরে থাকবে চেয়ার। পদত্যাগ তার কাছে বোকামি। তখন সে আশ্রয় নেবে উপর-চালাকির। যেনো তার চালাকি আর কেউ ধরতে পারছে না। পদত্যাগের জনদাবীকে সে আখ্যায়িত করবে বিরোধীপক্ষের ষড়যন্ত্র হিসেবে। জল ঘোলা হবে, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি হবে কিন্তু সে সম্বল মোর কম্বল খানির মত আঁকড়ে ধরে রাখবে গদির চেয়ার।

এরকম উদাহরণ আমরা দেখেছি আমাদের নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর বেলায়। বিদেশি দাতা সংস্থা চিঠি দিয়ে যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে তিনি গাঁইগুঁই করে ধরে রেখেছেন পদ। কিন্তু এমন আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বেলায়ও। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে ছাত্রীরা মিছিল করেছে তাদের রুমে পুলিশ পাঠানো হয়েছে কিন্তু উপাচার্য মনে করেন নি তিনি তার নৈতিক শক্তি হারিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়কে নেতৃত্ব দেয়ার। শিক্ষা সবাইকে বিনয়ী করে না।
পদত্যাগ শুধু মন্ত্রীরা করে না তা নয়। আমাদের কেউ কোথাও থেকে পদত্যাগ করে না। করতে চায় না। যে পদে সুবিধা আছে তার কথা বাদ থাক। যেখানে কোনো সুবিধা নেই তেমন পদের কথা ধরি। স্কুলে দেখেছি ক্লাসের ক্যাপ্টেনরা তাদের ক্যাপ্টেনসি ছাড়তে চায় না।
গরীবের কাছে তার ছিদ্র হয়ে যাওয়া থালাটিও মূল্যবান। কিন্তু আত্মার দারিদ্রই মানুষকে সত্যিকার দরিদ্র করে তোলে। যারা পদকে ত্যাগ করতে চায় না তারা দরিদ্র আত্মার মানুষ। বিত্ত তাদের মনের দারিদ্র ঘুচাতে পারেনি।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।