লেখক ও ঈশ্বরদৃষ্টি: অদিতি ফাল্গুনির সাক্ষাৎকারের অংশ

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শুক্র, ১০/০২/২০০৬ - ৮:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


অদিতি ফাল্গুনি অনেকের মত আমার এক প্রিয় লেখক। লেখালেখিতে তার নিষ্ঠা, একাগ্রতা, পরিশ্রম ও উঁচু মানের শিল্পবোধকে আমি শ্রদ্ধা করি। প্রথম আলোর সাময়িকীতে তার খুব সুন্দর একটি সক্ষাৎকার ছেপেছে। তার নতুন গল্পগ্রন্থ ছাপা হয়েছে। জনপ্রিয় ধারার লেখক নয় বলেই তার বই বিলেত পর্যন্ত এসে পৌঁছায় না। তবে পত্রিকাগুলোতে তার প্রকাশিত গল্প ইন্টারনেটের সুবাদে পড়া হয় প্রায়ই। পাঠকদের জন্য তার সাক্ষাৎকারের দুটি বিশেষ অংশ তুলে দিতে চাই।

কেনো প্রানত্দিক জনগোষ্ঠী নিয়ে গল্প লেখেন এই প্রশ্নের আলাপচারিতায় অদিতি নিজের কর্কটরোগ আর প্রতিবন্ধীতার প্রসঙ্গ টানেন। তারপর তার নারীত্ব। অবশেষে সংখ্যালঘুর অভিজ্ঞতা। সে কথা বলতে গিয়ে তিনি একটি মর্মস্পর্শী কথা উচ্চারণ করেন, "শ্রী কৃষ্ণ গীতায় বলছেন নাকি, সংশয়ে যে ভোগে, যে আর্ত, তার চেয়ে পুণ্যবান আর পৃথিবীতে কে আছে? আমার তাই সংশয়: তীব্র রক্তাক্ত যে দাহ, তা জানত্দব/প্রত্যক্ষভাবে বলতে হবে নাকি দূর থেকে নির্লিপ্তভাবে বলতে হবে? হয়তো বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের যন্ত্রণাল সেরা আখ্যান লিখবেন কোনো বাঙালি মুসলিম লেখক, সত্যিকারের ঈশ্বরদৃষ্টি নিয়ে! আমি কি কোনো দিন পারব বাঙালি মুসলমানের প্যাশন-ব্যর্থতা-সাফল্যের কাহিনী লিখতে? যদি পাই কোনো দিন লেখকের সেই ঈশ্বরদৃষ্টি।"

অদিতির ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি সে উত্তর অদিতি দিয়েছেন খুব আনত্দরিক ভাবে, অননুকরণীয় ভঙ্গিতে। "লেখক অদিতি সাহিত্যের জন্য বিয়ে এমনকি প্রেম করতেও ভয় পায়, ভালো লাগার মানুষদের সঙ্গে চেতন-অবচেতনে প্রায়ই সে নিষ্ঠুর আচরণ করে, কুৎসিত অপমান করে ফেলে মাঝেমধ্যে...অচেতন মনকে তার হয়তো সিমঁ দ্য বুভোয়ারই শাসন করে যে রিপ্রোডাক্টিভিটি সাইকল মানে কিনা প্রেম-বিয়ে-সংসার মেয়েদের বড় লেখক বা শিল্পী হতে দেয় না! আবার বু্যভোয়ার জীবনযাপন অর্থাৎ পশ্চিমা স্বাধীন যৌনতার তত্ত্বেও তার তেমন ভরসা নেই। ...কিন্তু মানুষ অদিতির কি নি:সঙ্গতা বোধ হয় না? খুব হয়। সারা জীবনের জন্য নি:সঙ্গতাকে সাহিত্যের জন্য আমি কি নিতে পারব? আবার ভাবি, স্বামী-সংসার-সনত্দান খুব গুরম্নত্বপূর্ণ। উপনিষদের মৈত্রেয়ীর কথাও তো ভুলতে পারি না: 'যেনাহং নামৃতা স্যাং/তেমহং কিম কুর্যাম!' যা দিয়ে আমি অমৃত পাব না, তা দিয়ে আমি কী করব? সেই অমৃত তো সাহিত্য সাধনাতেই, তাই না?"

কেনো এটা তুলে দিলাম? ভালো লাগলো পড়তে তাই। যেধরনের কথা ভাবায়, চিন্তার দরোজা খুলে দেয় তাকে তো স্বাগত: জানাতে হয়। তার সুসংবাদও পৌঁছে দিতে হয় অন্যদের কাছে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।