ডুবে যাচ্ছে ফাস্ট ফুড দানব ম্যাকডোনালড

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বুধ, ০১/০৩/২০০৬ - ১২:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


পাঁড় কমিউনিজমের দেশেও পুঁজিবাদী বিশ্বের যে দু'টি প্রতীক হাতুড়ি কাসত্দের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় তা হলো ম্যাকডোনাল্ড আর কোকাকোলা। বিশ্বব্যাপী ভোগবাদের এই বিস্ফোরণকে কতিপয় সমাজবিজ্ঞানী চিহ্নিত করেছেন ম্যাকডোনাল্ডাইজেশন হিসেবে। এই প্রবণতায় হয়তো চিড় ধরেনি তবে প্রতিষ্ঠান হিসেবে ম্যাকডোনাল্ড এখন ইউরোপে খারাপ সময় পার হচ্ছে। কে জানে হয়তো এই শুরম্ন হলো ম্যাকডোনাল্ডের হলুদ 'এম'-এর অসত্দকাল।

ম্যাকডোনাল্ড উন্নতিরও প্রতীক। কোনো অপরিচিত দেশ বাণিজ্য-ব্যবসায় কতটা এগিয়েছে জানতে হলে প্রশ্ন করম্নন সেই দেশে ম্যাকডোনাল্ডের ফাস্টফুড শপ আছে নাকি। পিজা হা্ট ঢাকা শহরে দোকান খুলেছে কিন্তু ম্যাকডোনাল্ড এখনও যায়নি। শুধু একারণেই ভারতের অনেক শহরের সাথে সম্ভ্রমের দৌড়ে ঢাকাকে অনেক তরম্নণ-তরম্নণীরা পিছিয়ে রাখেন। ম্যাকডোনাল্ড এমনই সম্মাননার প্রতীক।

এহেন ম্যাকডোনাল্ড ইউরোপে তার বাজার হারাচ্ছে। ক্ষণটা প্রথম ধরা পড়েছে জার্মানি ও ব্রিটেনে। এখনও ঝেড়ে কাশছে না ম্যাকডোনাল্ড কর্তৃপক্ষ তবে পরোক্ষে তারা স্বীকার করেছে মরফিন ইনজেকশন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার বেশ কয়েকটি চেষ্টা বিফল হয়েছে। সুতরাং ব্রিটেনে তাদের অনত্দত: 25টি আউটলেট বন্ধ হয়ে যাচ্ছ্।ে 1974-এ প্রথম দোকানের ঝাঁপি খুলেছিল ব্রিটেনের উলউইচে এবং গত ত্রিশ বছরে নিরনত্দর সে সংখ্যা শুধু বেড়েছে হু হু করে। প্রায় 8,000 দোকান আছে তাদের ব্রিটেনে। বিশ্বে তাদের মোট রেস্টুরেন্টের সংখ্যা 31,000। তবে আরো কিছু ফ্র্যানচেইজ আছে তাদের।

ম্যাকডোনাল্ডের বড় শত্রম্ন হয়ে দেখা দিয়েছিল স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রচারণা। বার্গারের বিপক্ষে বিপুল প্রচারণা হয়েছে ব্রিটেনে। পরবর্তী প্রজন্মকে স্বাস্থ্যসচেতন করে তোলা হয়েছে। এতে এখন নানারকম স্বাস্থ্যসম্মত স্যান্ডউইচের দোকান ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কফির দোকানগুলো জনপ্রিয়। কারণ তারা একেবারে তরতাজা খাবার বিক্রি করে। তো এই ধাক্কায় ম্যাকডোনাল্ডও শুরম্ন করে ক্রেতার সামনে হাতে বানানো স্যান্ডউইচ বিক্রি করা। 2003 সালে সব দোকানেই সালাদ বিক্রি করা শুরম্ন করেছে তারা। সব খাবারের পুষ্টিতথ্য জানাচ্ছে ক্রেতাদের। ভেজেটেরিয়ান সোসাইটির সাথে গাঁটছড়া বেঁধে ক্রেতাদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের নিশ্চয়তা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাকের ময়ুর সাজে অনেকেই ভোলেনি। টিনএজাররা বার্গার-চিপস-কোক ছেড়ে ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের দিকে ঝুঁকছে। ম্যাকডোনাল্ডও নানারকম অদল-বদল করে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় 6300 দোকানে তারা ওয়ারলেস ইন্টারনেটের সুযোগ দিয়েছে। পস্নাস্টিকের চেয়ার বদলে সোফা বসিয়েছে অনেক দোকানে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করতে। ইউরোপ জুড়ে তাদের বিক্রি কমেছে 6.6%। পরিস্থিতি এই ইঙ্গিতই করে যে এটি এই বিরাট প্রতিষ্ঠানটির অবনতির শুরম্ন।

ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে যারা পড়েছেন তারা হয়তো জানেন যে সফল প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে এরকম একটি মিথ চালু আছে যে কোনো সফল প্রতিষ্ঠান 20 বছরের বেশি নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ম্যাকডোনাল্ডের ক্ষেত্রেও তা সত্যি হতে যাচ্ছে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।