ব্লগঃ কি লিখছি বনাম কি লিখতে চাই

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শুক্র, ১০/০৩/২০০৬ - ৮:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ব্লগ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা ও কিছু বিদেশী ব্লগ ঘাঁটাঘাঁটির পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে এই ব্লগে লিখে রাখবো আমার প্রতিদিনের রোজনামচা। কারণ ব্লগ তো ওয়েবলগের সংক্ষিপ্তরূপ। এখানে হয়তো মাশীদের সাথে আমার ধারণাটা মিলে। কিছুটা ব্যক্তিগত অঙ্গন যেখানে নিজের আপন সংলাপগুলো জমিয়ে রাখা। কেউ পড়লে ভালো,না পড়লেও তেমন কোনো বিশ-একুশ হবে না।
কিন্তু এই সাইটে ব্লগ লেখার একটি ধারা শুরু হয়ে একটি কাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। কাঠামোটি আবার আমাদের সংস্কৃতির সাথে খাপ খায় নিশ্চয়ই যেকারণে কেউ তেমন প্রশ্নও তুলছে না। এখানে জনপ্রিয় লেখাগুলো অনেকটা দৈনিক পত্রিকার উপ-সম্পাদকীয় টাইপ লেখা। কোনো একটা সমস্যা বা সংকট নিয়ে ব্লগারের ব্যক্তিগত ভাবনা ও বিশ্লেষণ। এ ধারায় অনেকেই লিখেন। আড্ডাবাজ, তীরন্দাজের নাম মনে আসছে এ মুহুর্তে।
অনেকে এখানে আসেন প্রতিদিন সাহিত্য চর্চাটা সেরে নিতে। তারা পাঠকদের জন্য বা মূলত: নিজেদের জন্যই কবিতা লেখেন বা গল্প লেখার চেষ্টা করেন। এই তালিকায় আছেন, সুমন চৌধুরী, হিমু, কালপুরুষ, সঞ্জয়, মহুয়ামঞ্জুরি, উর্বশী বসু ও আরো অনেকে।
পেশাগত কারণে অনেককেই কম্পিউটার খোঁচাতে হয়। তাদের সামনে ইন্টারনেট খোলাই থাকে দিনরাত। অন্তত: অফিসের সময়টুকু। তো তারা আর অফিসের সময়ের শ্রাদ্ধ করে পাশের চা-দোকানে বিড়ি ফুঁকতে যান না। তারা চলে আসেন বাধ ভাঙার আওয়াজে। অথবা সবসময় অনলাইনেই থাকেন। কলিগ আর বস একটু এদিক উদিক গেলেই দুলাইন ছড়া মেরে দেন এখানে। এদের মধ্যে সাইবার ক্যাফেতে কাজ করেন এমন ব্লগাররাও পড়েন। তো এই দলে আছেন: হাসান, অরূপ, মাশীদ, হাসিন, শাহানা, বদরুল প্রমুখ।
বিভিন্ন রকমের প্রচারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিয়েছেন কেউ কেউ এ সাইটকে। তারা অনেকটা এনজিও ভঙ্গিতে কাজ করে যাচ্ছেন। অন্য চরিত্রও তাদের আছে তবে এনজিও চরিত্র প্রকট। যেমন সঞ্জয়, যিনি বিক্রমপুরের কৃতি সন্তানদের বিবরণী দিচ্ছেন। আছেন রাইসু, তিনি মাধ্যমিক শ্রেণীর জন্য বাংলা সাহিত্য পাঠ ধরনের কবিতা সংকলন তৈরির কাজে মনোনিবেশ করেছেন। কেউ আছেন প্রবাসীদের দু:খ কষ্ট লাঘবের চেষ্টা নিয়ে, কেউ আছেন ইসলাম ধর্মের সম্মান বাড়ানোর ব্রত নিয়ে।

বাংলাদেশের টিভিতে পরিবারভিত্তিক কিছু সিরিয়াল হয় সবসময়। 'আমাদের মামাবাড়ি' টাইপের একটা খোশগল্পের আসর। এরকম একটি পাশর্্ব চ্যানেলও চালু আছে এখানে। এতে অংশ নেন, ওয়ালী, শাওন, মলি, শর্মি, ফারিয়াল, দাদা ও তাদের অন্যান্য কাছের দূরের আত্মীয়স্বজন।
অপরিচিতরাও আসর বসান মাঝে মাঝে। চলুন আড্ডা দেই বলেই শুরু হয়। ক্রিকেট নিয়েই শুরু হয়েছিল প্রথম। এখন এটা নিয়মিত বিষয় হয়ে গেছে। অরূপ, হাসান, মাশীদ ইত্যাদির কল্যাণে এখন তাতে হাট্টিমাটিমটিম করে ছড়ার কাচ্চাবাচ্চারা ডিম পাড়ে। তারা সাইটটিকে চ্যাটিং-এর একটি বিকল্প ক্ষেত্র হিসেবে নতুন ব্যঞ্জনা দিয়েছেন।
কিছু ব্লগারের নিজের পাতা খালি, তারা কাকের বাসা খুঁেজ বের করে ডিম নষ্ট করে। মন্তব্যের বিষ্ঠা ত্যাগ করেই চলে যায়। নিজেরা কোনো সন্তান প্রসব বা লালন-পালনের ধারকাছ দিয়ে যায়না।
আরো নানারকম ফের আছে। বর্ণনাটা খুব দীর্ঘ করতে চাচ্ছি না। নিজেকেও বিশেষ ভাগে ফেলতে পারছি না। আমি মনে হয় সব জায়গাতেই একটু একটু ঢুঁ দেই। আর বোকার মত বিভিন্ন জনের সাথে বিরোধ তৈরি করি। যেমন দীক্ষক ও বদরুলের মিলন ঘটাতে গিয়ে দুজনের চক্ষুশূল হলাম নিজে।
সে যাক, এতসব বিচিত্র কর্মকান্ড সত্ত্বেও দিনশেষে মনে হয়, মনে রাখার মত বা মজাদার কিছু কি পড়েছি আজ? হ্যা, হয়তো পড়েছি, তবে সংখ্যায় তা অল্প, একটি বা দুটি। এতো কর্মাকান্ডের মধ্যে বেশ কম হয়ে গেলো না। বিনোদন বা আড্ডা হচ্ছে ঠিক। কিন্তু যত ভালো ভালো লেখা পড়ার আশা করে আসি তত ভালো ভালো লেখা পড়তে পাই না।
আপনারও কি সেরকম মনে হয়?


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।