ব্যায়াম করা নিয়ে যত অজুহাত

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: সোম, ১০/০৪/২০০৬ - ৮:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


স্বাস্থ্য ও ফিটনেস কাজে আসে। তবু যখন শারীরিকভাবে আরো কাজ করার কথা ওঠে তখন বেশির ভাগ লোকজন নানা অজুহাত এবং দুশ্চিন্তার কথা বলে। এইসব বাধার জন্য আমরা পা ফেলতে পারি না। নীচে কিছু সাধারণ বাধা এবং এসবের সম্ভাব্য সমাধান দেয়া হলো:

"আমার যথেষ্ট সময় নাই।" সবারই সময় সমান। আমরা শুধু আলাদাভাবে এটা ব্যবহার করি। এটা হচ্ছে গুরুত্ব ঠিক করার বিষয়। অনেকে টেলিভিশন দেখার জন্য অনেক সময় পান কিন্তু ফিটনেসের জন্য সময় পান না। এর জন্য অনেক সময় লাগে না। দিনে পাঁচ মিনিট করে শুরু করাও ভালো। একেবারে কোন শারীরিক কাজ না করার চেয়ে এটি ভালো। আপনি একসাথে দুটি কাজ করতে পারেন। যেমন, টেলিভিশন দেখতে দেখতে থেমে থাকা (স্টেশনারি) সাইকেল চালানো। অথবা ব্যবসা বা পরিবারের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য "হেঁটে হেঁটে" কথা বলুন।

"আমি খুব ক্লান্ত।" যখন আপনার শরীর বেঢপ হয়ে যায় তখন আপনার নিজেকে কেমন নির্জীব মনে হয় এবং আপনি সহজেই ক্লান্ত হয়ে যান। তখন আপনি আর ব্যায়াম করেন না কারণ আপনি ক্লান্ত। এবং এটা আরেকটা খারাপ চাকার (ভিসিয়াস সাইকেল) মত হয়ে দাঁড়ায়। আপনাকে এই "খুব ক্লান্ত" হয়ে যাওয়ার চাকা ভাঙতে হবে। নিয়মিত শারীরিক কাজ আপনার স্ট্যামিনা বাড়াবে এবং আপনার পছন্দের কাজ করার জন্য আপনাকে অনেক শক্তি দেবে। যখন আপনার শরীরের আকার ঠিক হয়ে আসবে তখন আপনি নির্জীব ভাব বা "বেঢপ শরীর" হয়ে যাওয়া ও শারীরিক ভাবে ক্লান্ত হওয়ার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেন।

"আমি অতি অসুস্থ।" এটা সত্য হতে পারে যে, কোন একটা পরিশ্রমের ব্যয়ামের প্রোগ্রাম করার জন্য আপনি অত্যন্ত অসুস্থ। কিন্তু কর্মক্ষম থাকার জন্য আপনি সবসময় কোন না কোন উপায় বেছে নিতে পারেন। শরীরের ফিটনেস বাড়লে আপনি অসুখের সাথে আরো বেশি খাপ খাওয়াতে পারবেন এবং অসুবিধা বাড়াটা বন্ধ করতে পারবেন।

"আমার যথেষ্ট ব্যায়াম হয়।" এটা সত্যি হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ লোক তাদের পেশা বা দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে যথেষ্ট ব্যায়ামের সুযোগ পায় না যা তাদেরকে ফিট ও শক্তিশালী রাখতে পারে।

"ব্যায়াম করা একটা একঘেঁয়ে বিষয়।" ব্যায়ামকে আপনি আরো মজাদার ও ইন্টারেস্টিং করে তুলতে পারেন। হেডসেট ব্যবহার করে অডিও টেপ বা রেডিও শুনুন। বিনোদনের কাজ হবে। আপনার হাঁটার পথ বা কাজকর্মগুলো বদলান।

"ব্যয়াম করা কষ্টকর।" পুরনো সেই কথা "কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না" একেবারেই ভুলও মান্ধাতা আমলের কথাবার্তা। সমপ্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, হালকা, কম মাত্রার এবং উপভোগ করা যায় এমন শারীরিক কাজকর্ম থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়া যায়। আপনি ঘামতে পারেন বা কিছুটা দমের অভাব বোধ করতে পারেন। কিন্তু যদি ব্যায়ামের শুরুর চেয়ে শেষে বেশি ব্যথা হয় তবে আপনি কি করছেন সেটা ভালো করে খেয়াল করুন। এটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি যে, আপনি ঠিকভাবে ব্যায়াম করছেন না বা আপনার অসুখের ক্ষেত্রে বেশি ব্যায়াম করছেন। আপনার ইন্সট্রাক্টর, ফিজিওথেরাপিস্ট বা ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। হয়তো আপনার আরেকটু কম কষ্টকর ব্যায়াম করা দরকার বা যে ধরণের ব্যায়াম আপনি করছেন তা বদলানো দরকার।

"আমার খুব অস্বস্তি হয়।" কারো কারো জন্য স্কিনটাইট (গায়ের সাথে লেগে থাকা) "ডিজাইনার" ব্যায়ামের পোষাক পরা এবং লোকজনের সামনে লাফালাফি করা বেশ মজার, কিন্তু অন্যদের মন এতে খারাপ হয়ে যায়। ভালোকথা যে, আমরা যেসব শারীরিক কাজকর্মের কথা বলছি সেগুলোর মধ্যে একা একা করার ব্যায়াম থেকে শুরু করে সবার সাথে মিলে দলের সাথে করার মত কর্মকান্ডও রয়েছে। আপনার নিজের জন্য মানায় এমন একটা কিছু আপনি খুঁজে পাবেন।

"আমার ভয় হয় যে আমার হার্ট এ্যাটাক হবে।" বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের চেয়ে যারা শারীরিক ভাবে সচল না তাদের হার্ট এ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু এ বিষয়ে যদি আপনার চিন্তা হয় তবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। বিশেষভাবে, যদি আপনার অসুখ নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে ব্যায়াম না করার চেয়ে ব্যায়াম করাটাই বেশি নিরাপদ।

"এখন খুব ঠান্ডা, এখন খুব গরম, এখন অনেক অন্ধকার, ইত্যাদি। " যদি আপনি ফ্লেঙ্বিল হন এবং আপনার ব্যায়ামের ধরন বদলান তবে কিছু ব্যায়াম যেগুলো বিশেষ আবহাওয়ায় করা কঠিন সেগুলোর বিষয়ে নতুন ব্যবস্থা নিতে পারেন। ইনডোরে ব্যায়াম করার কথা ভাবুন। যেমন ব্যায়ামের সাইকেল চালানো বা মিউজিয়াম বা শপিং মলে হাঁটা।

"আমার ভয় হয় আমি ঠিকমত এটা করতে পারবো না বা সফল হবো না। আমার ভয় হয় আমি হয়তো ব্যর্থ হবো।" বহু মানুষ নতুন কাজ শুরু করে না কারণ তারা ভয় পায় যে তারা ব্যর্থ হবে বা সফলভাবে এটা শেষ করতে পারবে না। যদি আপনি ব্যায়াম শুরু করার ব্যাপারে এরকম ভাবেন তবে দুটো কথা মনে রাখবেন। প্রথমত: যে কাজই আপনি করতে পারেন _ যত ছোট বা সহজ হোক- কোন কিছু না করার চেয়ে অনেক ভালো। আপনি যা করেছেন তা নিয়ে গর্বিত হোন। যা করতে পারেননি তার জন্য নিজেকে দোষী ভাববেন না। দ্বিতীয়ত: নতুন যে কোন কাজকেই বিশাল মনে হয় _ যতক্ষণ না আমরা কাজটা শুরু করি এবং প্রতিদিনের এডভেঞ্চার ও সফলতাকে উপভোগ করতে শুরু করি।

সম্ভবত: আপনি আরো কিছু বাধার মুখে পড়েছেন। যদি আপনি কোথাও আটকে যান, তবে অন্যদের কাছে পরামর্শ চান।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।