ধর্মীয় মৌলবাদের চাষাবাদ-৫

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শনি, ২২/০৪/২০০৬ - ৬:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ইসলামিক মৌলবাদ:
আলাদা আলাদা ধর্মগুলোর মৌলবাদী আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে হলে প্রথমে বলতে হয় খ্রিস্টান ধর্মের মৌলবাদী আন্দোলনগুলোর কথা। কিন্তু সে বিষয়ে পাঠকরা খুব একটা আগ্রহী হবেন না মনে করে ইসলাম ধর্ম দিয়েই আলোচনা শুরু করছি। তবে এর মাঝেই খ্রিস্টান ধর্মের মৌলবাদের প্রয়োজনীয় প্রসঙ্গগুলো চলে আসবে। খ্রিস্টান ধর্মের সাথে ইসলাম ধর্মের যতটুকু মিল, খ্রিস্টান ধর্মের মৌলবাদের সাথেও ইসলাম ধর্মের মৌলবাদের ততটুকুই মিল। প্রথমত: খ্রিস্টানদের মত ইসলামিক মৌলবাদীরাও তাদের ধর্মগ্রন্থ কোরানকে আক্ষরিকভাবে ব্যাখা-বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে। ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত আইনকানুনগুলো তারা ইসলামিক সমাজে চালু করার জন্য জোর-জবরদস্তি করে (এক্ষেত্রে শরিয়া আইন)। পানাহার সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন, হালাল-হারাম, মেয়েদের পর্দা ও সমাজে নারীর অবস্থান বিষয়ে তাদের মত ও অবস্থান খুবই কড়া।

মৌলবাদীদের সাথে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের একটি মৌলিক পার্থক্য হলো, সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ যেভাবে ধর্মকে নিজেদের সমাজে চর্চা হতে দেখেছে সেভাবেই গ্রহণ করতে চায়। কিন্তু মৌলবাদীরা কোনো একটি বিশেষ সময়ে ধর্ম যেভাবে পালিত হতো সেই ভঙ্গিতে ধর্মকে আবার পুন:প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ইসলামের ক্ষেত্রে মৌলবাদীরা মধ্যযুগে ইসলামের যেসব নতুন প্রথা বা আচার-রীতি যুক্ত হয়েছে সেগুলোকে সত্য বিশ্বাসের মাঝে বিভ্রান্তি হিসেবে দেখে।

সব ইসলামিক মৌলবাদীরা এক রকম নন, অবশ্যই। কেউ কেউ ওসামা বিন লাদেনের মতো খিলাফাত প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। একজন নেতার অধীনে পুরো মুসলিম বিশ্ব চলবে এ ধারণার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে অনেক ইসলামিক মৌলবাদী প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে প্যালেস্টাইনের হামাসের মত অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা তাদের নিজেদের দেশে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই খুশি। দেশে দেশে পার্থক্যের কথা বলতে গেলে বলতে হয় ইরান ও আফগানিস্তানের কথা। ইরানে মহিলারা গাড়ি চালান ও কাজে যান। কিন্তু তালেবান আমলে (1995-2001) আফগানিসত্দানে মহিলাদের এরকম কোনো অধিকার দেয়া হয়নি। ইসলামে অনেক ধরনের মৌলবাদী সংগঠন আছে যাদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। তারপরও এদের মধ্যে এত বেশি মিল রয়েছে যে সবগুলোকে একটি আন্দোলনেরই অংশ মনে হয়।

আগের পর্বেই এ আলোচনা করেছি যে চাপের বা সংকটের মুখে পড়লেই ধর্মানুসারীরা মৌলবাদের পথে পা বাড়ায়। সমাজকে মূল ও পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। একে বলা যায় ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন। ইসলামে এই পুনর্জাগরণের প্রথম ঘটনা ঘটে আহমদ ইবনে তাইয়্যিমিয়ার (1263-1328) নেতৃত্বে। মোঙ্গলরা যখন এশিয়া অঞ্চল থেকে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্য দখল করে নিল সেই সময়ের অব্যবহিত পরেই তাইয়্যিমিয়ার জন্ম। তিনি বিশ্বাস করতেন মোঙ্গলদের কাছে আরবদের এই পরাজয়ের কারণ হচ্ছে তারা দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে পড়েছিল এবং ইসলাম ধর্ম থেকে বিচু্যত হয়ে পড়েছিল। তাইয়্যিমিয়া এজন্য প্রথমত: দায়ী করেন সুফিজমকে। এই ভাববাদী পথ বিশ্বাসীদেরকে প্রকৃত ইসলাম থেকে সরিয়ে নিয়েছে, এই ছিল তার অভিযোগ। তাইয়্যিমিয়া এসব অনৈসলামিক পথ ছেড়ে কোরানের নির্দেশমত ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান করেন।

তাইয়্যিমিয়ার দেখানো পথ ধরে পরে অনেক বিচিত্র মৌলবাদী গোষ্ঠী ও মতবাদের জন্ম হয় ইসলামে। তাদের মধ্যে সবচে' শক্তিশালীটির নাম হচ্ছে ওহাবিজম। সে নিয়ে কথা বলবো পরের কিসত্দিতে।


মন্তব্য

করতোয়া এর ছবি

"মৌলবাদ" এবং "সাধারন" ধর্মের মধ্যে একটা পার্থক্য দিয়ে লেখাটি শুরু করলে আমার বুঝতে সুবিধা হয়। কিভাবে একজন মানুষকে আপনি "মৌলবাদ" ধার্মিক মানুষ বলবেন আর কখন বলবেন না?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।