লাবণ্যময়ী লুবিয়ানা: ১ (অরূপকে উৎসর্গিকৃত)

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: রবি, ৩০/০৪/২০০৬ - ৯:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


এমন কোনো বিশ্ববিখ্যাত শহর নয় স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবিয়ানা। তবু এ শহরে হাঁটলেই বুঝা যায় এর রয়েছে, ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্টাইল, শিল্প ও সংস্কৃতি। তাছাড়া এ সবকিছুতে মিলে-মিশে আছে মধ্য-ইউরোপ আর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের আবহ। লুবিয়ানার অধিবাসীদেরকে অতিথিপরায়ণ বলতেই হবে। টু্যরিস্টদেরকে বাড়তি সম্মান দেখাতে তারা কখনও ভুল করে না।

আরেকটি গুণ রয়েছে এর অধিবাসীদের। প্রায় সবাই দু-তিনটি ভাষা জানে। ছোট্ট শহর লুবিয়ানার প্রাণস্পন্দন হচ্ছে এর হাসিখুশি সুখি সুখি মানুষেরা। শহর জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ঘরানার স্থাপত্যকলার ভবন। আছে বারোক, আর্ট নভো এবং সামপ্রতিক স্টাইলের চমৎকার সব চরিত্রের দুর্গ, গির্জা, বাণিজ্যিক ও সরকারী ভবন, মূর্তি ও স্কোয়ার। এত ছবি তুলেছি আমি, যদিও কাঁচা হাতের তোলা তবু ব্লগে তুলে দেয়ার লোভ সামলাতে পারছি না, যে প্রতিটি ভবন বা স্কোয়ার নিয়ে যদি আলাদা আলাদা করে কিছু না লিখি তবে ছবিগুলো দেয়ার সুযোগ হবে না।

লুবিয়ানার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জনসংখ্যার অধিকাংশ তরুণ। রাস্তায় আমি কদাচিৎ দুয়েকজন বয়স্ক লোক দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীই রয়েছে 50 হাজারের মত। তারা মাতিয়ে রেখেছে শহরকে প্রাণচঞ্চলতায়। বছরে প্রায় 10 হাজার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সুতরাং উৎসব ভাব তো চলছে প্রতিদিনই। মূল শহরটির ঠিক পেছনে এক উঁচু পাহাড় আর তার শীর্ষে রয়েছে মধ্যযুগের এক দুর্গ (ক্যাসেল)। শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটি নদী লুবিয়ানিকা। নদীটির আরেকটি নাম হচ্ছে 'সাত নামের নদী'।

সবুজকে বড় ভালো বাসে এ শহরের অধিবাসীরা। তাই নগরের একেবারে মাঝখানেই রয়েছে নানা পার্ক আর বনাঞ্চল। নানা রকম স্কোয়ার আর সবুজ এলাকাতো রয়েছেই। যদিও খৃষ্টের জন্মের আগেই এই শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল তবে আধুনিক শহরটি সুবিন্যস্ত করতে ডিজাইন করেছেন একজন; জোসে প্লেসনিক (1872-1957)। শহরের রাস্তা ঘাট, স্কোয়ারগুলোর অবস্থান থেকে শুরু করে অনেকগুলো বড় বড় বিল্ডিং ডিজাইন করেছেন তিনি।

প্লেসনিক একেবারে ছক কেটে শহরটাকে তিনি সাজিয়েছেন। শহরের বিভিন্ন অংশ, ভবন আর স্কোয়ারের বর্ণনা আমি দেবো। তবে প্লেসনিক-কে শ্রদ্ধা জানিয়েই শুরু করি। পৃথিবীতে খুব কম শহরই আছে যেখানে একজন মাত্র শিল্পী বা স্থপতির অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটেছে পুরো শহর জুড়ে। লুবিয়ানায় জন্ম নেয়া প্লেসনিক হচ্ছেন তেমনি ব্যতিক্রমী একজন স্থপতি। চেকোশস্নাভিয়ার চিফ আর্কিটেক্টও ছিলেন তিনি। সুতরাং প্রাগেও তার ডিজাইন করা অনেক ভবন রয়েছে। আর লুবিয়ানা শহরটাকে তিনি নিজ হাতে সাজিয়েছেন।

নদীর উপরের সেতুগুলো নতুন করে ডিজাইন করা থেকে শুরু করে পার্ক, স্কোয়ার, সেন্ট্রাল মার্কেট, জাতীয় লাইব্রেরি, বিখ্যাত ট্রিপল ব্রিজ (শহরের মাঝে অবস্থিত তিনটি সেতু), বিভিন্ন চার্চ, সেমিট্রি, সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম এবং রাজধানীর মূল পার্ক টিভোলি পার্কের অনেক অংশ তার ডিজাইনে তৈরি। সব জায়গাগুলোতে যাওয়া হয়নি। যেগুলোতে গিয়েছি সেগুলোর কিছু ছবি তুলে দিলাম। বাকীগুলো পরবর্তী অংশে দেয়া যাবে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।