লাবণ্যময়ী লুবিয়ানা: ৪ (উৎসর্গ: মুখফোড়)

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ০২/০৫/২০০৬ - ২:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


লুবিয়ানা ক্যাসেলঃ
প্রেসেরেন স্কোয়ার থেকে টু্যরিস্ট ট্রেনে করে ক্যাসেলে আসা যায়। তবু পাহাড় হেঁটে উঠার আনন্দ হারাতে চাইলাম না। অনেক কষ্ট হলো অনভ্যাসের কারণে। কিন্তু অসাধারণ কিছু দৃশ্যও দেখা গেল। একটি বাড়ির সামনে ফুল ফুটে এক অপার্থিব দৃশ্যের সৃষ্টি করে রেখেছে (ছবি: 2)। পায়ে খিল ধরে যাওয়ায় বেশ কয়েকবার থামতে হলো। যখন চূড়ায় পেঁৗছৈ গেলাম তখন দেখি উল্টো দিকের সহজ রাসত্দা দিয়ে উঠে এসেছে গোটা চারেক টু্যরিস্ট বাস আর কয়েক ডজন গাড়ি। কিন্তু পাহাড় বেয়ে উঠার আনন্দ সব সময়ই আলাদা। এও বুঝতে পারলাম ক্যাসেল হিসেবে এটি খুব একটা দুর্গম ছিল না কখনও।

লুবিয়ানা শহরের প্রতীক এই ক্যাসেল (ছবি: 3)। যদিও এই পাহাড়ে মানুষ বাস করা শুরু করেছিল খৃষ্টপূর্ব 12 শতাব্দীতে তবু সম্ভবত: কাঠের প্রথম দুর্গটি তৈরি করা হয় 11 শতাব্দীতে। 17 শতকের পরে গুরুত্ব হারানোতে ক্যাসেলটি আর্মি গ্যারিসন ও আরো পরে জেলখানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তখন এর ক্ষয় ও ধ্বংস শুরু হয়। এখন আবার নতুন করে ঠিক ঠাক করার কাজ চলছে। ক্যাসেলে ঢুকতেই দেখলাম বিরাট অঙ্গনটিতে চেয়ার বসানো হচ্ছে (ছবি: 4)। মাঝে মাঝেই এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। আজ রোববার তেমনি একটা দিন। অনুষ্ঠানে অংশ নেবে বলে কিছু মানুষজন ঐতিহ্যবাহী স্লোভিন পোষাক-আশাক পরে এসেছেন (ছবি: 5)। ক্যাসেলের ভেতরে একটি থ্রি-ডি শো'র ব্যবস্থা আছে। সেখানে পুরো শহরের বিবর্তনের একটি ফিল্ম দেখলাম। ব্যাপ্তি মাত্র 20 মিনিট হলেও থ্রি-ডি হওয়াতে বেশ অন্যরকম লাগলো প্রামাণ্যচিত্রটি। সেখান থেকে বের হয়ে গোলাকার সিঁড়ি (ছবি: 6) বেয়ে উঠতে লাগলাম টাওয়ারের শীর্ষে, যেখানে উড়ছে স্লোভেনিয়ার বিশাল পতাকাটি। টাওয়ার থেকে ছবি তুললাম প্রেসেরেন স্কোয়ারের (মূল ছবি)। শহরের অন্যদিকে ক্যামেরা তাক করেও কিছু ছবি তুললাম। কোনো ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে পর্বতমালা আবার কোনোটার মাঝে লুবিয়ানিকা নদীর আভাস (ছবি: 7/8)।

টাওয়ারে বেশ কিছুক্ষণ বিশুদ্ধ বাতাস উপভোগ করে নেমে ঢুকলাম ক্যাসেলের চ্যাপেলে। চ্যাপেলের ভেতরের দেয়ালের অলংকরণে দেখলাম জার্মান নাম_ধাম। অলংকরণের বৈশিষ্ট্যও অনেক আলাদা (ছবি: 9)। ব্লু হল বলে একটি অডিটোরিয়াম মতো জায়গা আছে সেখানে একটি ফটোগ্রাফ প্রদর্শনী চলছিল। তাতে উঁকি ঝুঁকি মেরে বাইরে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের দর্শক হয়ে গেলাম। কয়েকটি গান শোনার পর আবার শুরুরম্ন করলাম নীচে শহরের দিকে যাত্রা। অনেক দিক দিয়েই নামা যায় পাহাড় থেকে। একটু খাড়া ভিন্ন একটি পথ বেছে নিলাম এবার।

স্লোভেনিয়া বা ইউরোপের অনেক দেশেই এরকম প্রচুর ক্যাসেল আছে। ক্যাসেল মানেই হচ্ছে শক্তিধর শোষকদের নিরাপদ আস্তানা। নিজেদেরকে নিরাপদ করে তারা চাষী আর খামারিদের উপর অত্যাচার করে আদায় করতো খাজনা। অত্যাচারিতরা যাতে ক্ষুদ্ধ হয়ে আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য দুর্গম করে বানাতো দুর্গ। কিন্তু তারপরও বারবার ইতিহাসে পতন ঘটেছে এসব দুর্গের। লুবিয়ানা ক্যাসেলের চূড়ার কাছে সেরকম একটি চাষী বিদ্রোহের বিশাল স্মৃতিসত্দম্ভ আছে। অনেকক্ষণ বসেছিলাম সে জায়গাটায়। পরে ছবি তুলবো ঠিক করেছিলাম। কিন্তু ঘুর পথে নেমে আসায় ছবিটা তোলা হয়নি। নাকি অবচেতনে অন্য কিছু কাজ করছিলো। তবে কি বিদ্রোহের ছবির চেয়ে দুর্গের ছবিই আমাদের প্রিয় বেশি?


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।