রবীন্দ্র ভক্তি বনাম রবীন্দ্র বিরক্তি

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ০৯/০৫/২০০৬ - ১:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ষোল-সতেরো বছর বয়সে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার দরোজা যখন খুলছে সে সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তখনি মানুষের নিজস্ব দর্শন-চিন্তার মূল কাঠামো গঠিত হতে থাকে। সে সময়ে আমাদের মূল পাঠ্য ছিলো 'দেশ' পত্রিকা। এই দেশ পত্রিকার বদৌলতে আমি বিরক্ত হয়ে উঠলাম রবীন্দ্রনাথের লেখায়।

কেনো বিরক্ত? রবীন্দ্রনাথ তখন দেশ পত্রিকার কুমির ছানা। জলপাইগুঁড়িতে না খেয়ে শ্রমিক মরছে, দেশ শিক্ষা নেবে রবীঠাকুরের কবিতা থেকে। মহাশূন্যে স্যাটেলাইট যাচ্ছে, দেশ 'আকাশ বাণী' কবিতা থেকে দু'চরণ দিলো। বিষয় কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ, দেশ খুঁজে বের করলো রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য। রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের পতন হলো, দেশ তুলে দেবে 'রাশিয়ার চিঠি'।

এই যে কেঁচো থেকে শুরু করে মহাশূন্যযান সবকিছুতে রবীন্দ্রনাথকে টেনে আনা বড় বিরক্ত করে মারতো। আর সেসব ব্যাখ্যাকারী ও বিশ্লেষককে মনে হতো মরিস বুকাইলি'র ভাব-শিষ্য।

চামচা-দের কারণে নেতারা নাকি জন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তো এই শান্তিনিকেতনি গোষ্ঠীর জন্য আমরা হয়ে উঠলাম রবীন্দ্র বিরক্ত। এক বন্ধু রবীন্দ্র সঙ্গীতের নাম দিলো দরিদ্র সঙ্গীত। ফলে আমরা নানা রকম প্যারোডি বানাতে লাগলাম রবীন্দ্র সঙ্গীতের। "আজ বাংলাদেশের বুকের ওড়না গলায় উঠেছে....ওগো মাx তোমার কানি্ন আমার বুকে ঘা মারে......."।

হিরন বলে এক বন্ধু ছিলো। ও যেকোনো রবীন্দ্র সঙ্গীত লোকগীতির সুরে গাইতে পারতো। সে এক বিস্ময়কর বিষয়। আইরিশ/স্কটিশ সুরে (চার্চের প্রার্থনা-সঙ্গীতের সুরে) যেসব গান সেগুলোও ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালী-বা কীর্তনের মত করে ও গাইতে পারতো।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হলে রবীন্দ্র নিয়ে মাথাব্যথাও শেষ হলো। বিদেশ এসে পরিচয় হলো কিছু হঠাৎ বাঙালির সাথে। এরা নাকি আগে মোছলমান পরে বাঙালি। তো তারা পেলেই নানারকম সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন করতেন । যেমন, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মধ্যে কে বড় কবি? কি ষড়যন্ত্রের কারণে নজরুল নোবেল পেলেন না? তারপর কঠিন কঠিন সব ঐতিহাসিক তথ্য দিতেন। যেমন, নজরুল যাতে নোবেল না পান সেজন্য রবীন্দ্রনাথ তার দুসম্পর্কের ভাগি্নর সাথে নজরুলের বিয়ে দিয়েছিলেন। আর সেই ভাগি্নই স্লো পয়জনিং করে তাকে অসুস্থ করে দিলো।

তো এদের কথার কি জবাব দেবো? শুধু অবাক হয়ে ভাবতাম কোন দুনিয়ায় এরা বাস করে। এদের এছলামী জ্ঞানের বিরক্তিতে আরো বিরক্ত হয়ে উঠলাম। ওদের বাসায় দাওয়াত থাকলে, বিবাহ বার্ষিকী বা জন্মদিনের, উপহার দেয়া শুরু করলাম গীতবিতান বা গল্পগুচ্ছ। আর আমার বাসায় যদি আসে তারা তবে ক্যাসেটে গান ছাড়ি:
.......তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে.
সে আগুন ছড়িয়ে গেলো
সে আগুন ছড়িয়ে গেলো সবখানে....সবখানে......


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।