আমার ছাত্রশিবির জীবন-১

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: রবি, ২১/০৫/২০০৬ - ৮:৫২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ছাত্রশিবিরের কাছে আমার ঋণ অনেক। তার স্বীকারোক্তি করতেই এই আত্মজৈবনিক ধারাবাহিক। প্রথম ঋণ হচ্ছে চিনত্দামূলক বইপড়ার একটা অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য। দ্বিতীয় ঋণ হচ্ছে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান ও আগ্রহ বাড়ানোর জন্য। আগের স্কুলে পড়ালেখার বাইরে অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল। নতুন স্কুলে এসে সেসব হারালাম। তবে ছাত্রশিবিরের বিচিত্র কর্মকান্ডে সে শূন্যতা কেটে গেলো। তবে কর্মকান্ডগুলো ছাত্রশিবিরের নামে হতো না। স্কুল পর্যায়ে ছাত্র-রাজনীতির কোনো সুযোগ থাকার কথা নয়। ছাত্রশিবিরের সহযোগী সংগঠন ফুলকলি, সাইমুম বা অন্য কোনো ফোরামের ব্যানারেই কর্মকান্ডগুলো হতো। স্কুলের বোরিং কাজগুলোর মাঝে এসব কর্মকান্ড এনে দিতো বিচিত্র আনন্দের সুযোগ।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে স্কুলে একটি অনানুষ্ঠানিক সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযোগিতা হতো। তাতে অংশ নিতাম প্রতি সপ্তাহে। প্রতিযোগিতায় প্রথম হলে একটি বই পুরষ্কার দেয়া হতো। সেই প্রতিযোগিতায় যেতে যেতেই ঘনিষ্ঠতা বাড়লো কিছু সিনিয়র ভাইদের। তাদের সাথে ঘুরাঘুরি শুরুহলো। বিকেলে জামাতে নামাজ পড়া। এসব করতে করতে কখন ছাত্রশিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে গেলাম বুঝতেই পারিনি। প্রথম আমাকে প্রশ্ন করলো স্বপন। স্বপন এখন বুয়েটের টিচার। মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বেরুচ্ছি তখন স্বপন জিজ্ঞেস করলো টেবিল টেনিস খেলতে যাবি অফিসার্স ক্লাবে। আমি বলস্নাম না হোসেনের সাথে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি যাবো। ও বললো, হোসেনের সাথে তোর কি? তুই কি ছাত্রশিবিরে যোগ দিয়েছিস নাকি? আমি অবাক হয়ে বল্লাম, নাতো! পরে মনে হলো যোগ দিলেই কি? আমি তো খারাপ কিছু করছি না।

আরো কিছু বন্ধু-বান্ধবরা সাবধান করে দিলো। খারাপ কিছু করছি না এটা ওদের কাছে প্রমাণ করতে গিয়ে আরো বেশি করে জড়িয়ে গেলাম ছাত্রশিবিরের সাথে। আর আসলেইতো খারাপ কিছু না। সাপ্তাহিক জ্ঞানের প্রতিযোগিতা ছাড়াও ছিল বই পড়ার প্রতিযোগিতা। প্রতি সপ্তাহে আমরা পড়ার জন্য বই নিতাম গাজী ভাইয়ের কাছ থেকে। প্রতিটি বই পড়ে কি বুঝলাম তা লিখতাম। পরের সপ্তাহে তা আলোচনা হতো। অন্য যারা একই বই পড়েছে, তারা সেই বইয়ের উপর আলোচনা করতো। আমাদের প্রত্যেকের বই পড়ার খাতা ছিল। তাতে আমরা লিখে রাখতাম কী কী বই পড়েছি। সব মিলিয়ে বাংলা ভাষায় লেখা প্রায় 5 শ' ইসলামী বই আমি পড়েছি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর কথা সময়মত কিছুটা বলবো। এখন অন্য ভালো অভ্যাসগুলো নিয়ে কথা বলি।

শুধু বইপড়া নয়। আমরা একটি খাতায় সারাদিনের লগ রাখতাম। সারাদিন কী পড়েছি, কী করেছি। নামাজ কাজা হলো কিনা। একটা ফর্মেট ছিলো। এখনও ছাত্রশিবিরের সদস্যরা সেই ফর্মেটই ব্যবহার করে নিশ্চয়। সেই ফর্মেটের শেষ কলাম ছিলো আত্মসমালোচনা। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সারাদিনের সময় ব্যবহার ও কাজ নিয়ে নিজের সমালোচনা ও আরো অর্থপূর্ণভাবে সময় কাটানোর কামনা করে ঘুমাতে যাওয়া। নিয়ম করে আবার ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে উঠতাম। এ্যালার্মের জন্য বিশেষ একটা যন্ত্র ছিলো। গাজী ভাইয়ের সৌজন্যে। আমি তখন থাকতাম সমরাস্ত্র কারখানা এলাকায়। ফজরের আজানের সময় সাপ্লাইয়ের পানি আসতো। তো পানির কলের নীচে বালটিতে আমরা একটা তারের দলা রাখতাম। লাইনে পানি আসলে সেটি ভেসে উঠে উপরে রাখা একটা তারে লাগতো। আর সেই তারের সাথে লাগানো ব্যাটারিযুক্ত কলিংবেল বেজে উঠতো। সেই শব্দের সাথে উঠে অজু ও নামাজ। তবে সকালে উঠার সেই অভ্যাস কোনো কাজে আসেনি আমার। পরে পুরোপুরি রাতের প্রাণীই হয়ে যাই আমি।

(চলবে?)


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।