সুমন চৌধুরীর বাউল চুল ও আমার মনোকষ্ট

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শুক্র, ২৬/০৫/২০০৬ - ১২:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


অনেকের প্রোফাইলের ছবি বদলাচ্ছে। দুষ্ট লোকের কথায় কান দিতে নাই। আমি দিচ্ছি না। শুধু জানিয়ে দেই অনেকে ইঙ্গিক করছেন এই ছবি বদলানোর সাথে আড্ডাবাজের ব্লগে বিয়ের আয়োজনের সম্পর্ক আছে। আড্ডাবাজ নাকি পাত্রখুঁজছেন। ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথেই নাকি অনেকে ব্লগে তাদের ছবি বদলাতে শুরু করেছেন। সুমন প্রথমে যে ছবি দিলেন তাতে তার টাকটি আর দেখা যাচ্ছে না। টাক পাত্রদের জন্য এক মহা- দু:স্বপ্ন। ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব মিলে যায়। তবে সে ছবিতে তার রূপের ধ্বনাত্মত দিকটা হয়তো ধরা পড়েনি। তাই এবার দিলেন বাবড়ি দোলানো চুল সহ ছবি। বাংলার মেয়েরা বাবড়ি বড় ভালোবাসে। "সাম্পানওয়ালার বাবড়ি চুল...." তাদের আকুল করে। দেখা যাক ঘটনা কোথায় গড়ায়। তবে আমার দু:খ অন্যত্র।

সুমনের চুল দেখে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বছরের চুলের দু:খ জেগে উঠলো। আহা আমি তখন বাউল। প্রথম দিন ক্লাশ শেষে বাসায় গিয়ে বললাম, ক্লাসে আমার চুলই সবচে লম্বা। সবাই হায় হায় করে উঠলো, তোর ক্লাশে কোনো মেয়ে নাই। আমি বল্লাম আছে, তবে আমার চুলই সবচে' লম্বা। সে রহস্য কারো মাথায় ঢোকে না।

তখন বয়কাটের চল। আমাদের ক্লাসের মেয়েরা চুল কেটেছে বামুন বিধবার মত। যেন তাদেরকে মেয়ে মনে না হয়। এটা হিজাব পড়ার বিকল্প বলা যায়(কোনো হিজাবী অবশ্য আমাদের ক্লাসে ছিল না। একজন অবশ্য শেষবর্ষে মাথায় হিজাব মার্কা টুপি পরে আসতো। কারণ ভিন্ন ছিল। ও চুল খুসকিমুক্ত ও লম্বা করার আশায় মাথা বেল করেছিলো।) উদ্দেশ্য এক। পথ ভিন্ন। দুটোরই উদ্দেশ্য চুল দেখে যাতে পুরুষ-সন্তানরা আকর্ষিত না হয়।

ক্লাস করতে লম্বা চুল নিয়ে আমার কোনো সমস্যাই হয়নি। ক্লাশ নিয়মিত না করলেও রেজালট আমার ভাল ছিলো। সমস্যা দেখা দিলো মৌখিক পরীক্ষায়। পরীক্ষার এক্সটার্নেল হচ্ছেন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক। তার চুল ক্রু কাট। এধরনের লোকজন বিটলস মার্কা চুল দেখলে ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তিনি অতোটা খারাপ না। তবে ভাইভাতে সবাই নার্ভাস। তিনি তাদের গায়ে বরফ ঢলে দিচ্ছেন। আমার পালা এলো, আমি এসে ঢুকলাম।

রুমে ফায়েজ স্যার (বর্তমান ভিসি, ঢাবি) বসা। স্যার আমাকে ভীষণ আদর করেন। ঢুকতেই প্রথমে পিঠে হাত দিয়ে আদর করে বসালেন। ফায়েজ স্যারকে দেখে আমি কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। এক্সটার্নাল শফিউদ্দিন প্রশ্ন করা শুরু করলেন।
ঃমি: চৌধুরী আপনি নিশ্চয়ই খুব ব্যস্ত। তা কী কারণে আপনি এত ব্যস্ত।
ঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন স্যার। ছাত্রদের মূল কাজ অধ্যয়ন। তো অধ্যয়নই ব্যস্ত স্যার আমি। (জবাব দিলাম আমি)।
ঃ কিন্তু মি: চৌধুরী, আপনি কি এত ব্যস্ত যে আপনার চুল কাটার সময় পান না?
ঃ নাপিতের কাছে চুল কাটাতে যাওয়ার (এখানে আমি স্যারকে সুক্ষম ইঙ্গিত দিয়েছি যে চুল আমি কাটিনা, নাপিত কাটে) মত সময় আমার আছে স্যার। কিন্তু আপনি যদি জানতে চান আমার চুল দীর্ঘ কেন তবে উত্তরটা ভিন্ন হবে।
ঃ মি: চৌধুরী, আমি আপনার কাছ থেকে সেটাই জানতে চাচ্ছি।
ঃ স্যার, আমার চুল লম্বা রাখার কারণ আমার শারীরিক ত্রুটি। শারীরিক ত্রুটির কারণে আমি চুল লম্বা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ঃ কি এমন ত্রুটি যে আপনাকে চুল লম্বা রাখতে হয় মি: চৌধুরী?
ঃ স্যার, আপনি নিশ্চয়ই জানেন অনেক মানুষের শরীরের দু'টি প্রত্যঙ্গ একরকম হয় না। আমারও সেই ত্রুটি আছে। আমার দুটি কান দু'রকম। নিজের ইমেজের জন্য খারাপ দেখায় বলে আমি কান দুটোকে ঢেকে রাখি স্যার। আরো অনেক বিকল্প হয়তো থাকতে পারে। তবে চুল দিয়ে ঢেকে রাখাটাই আমার কাছে সহজ মনে হয়েছে। এ কারণেই আমার চুল লম্বা স্যার।

শফিউদ্দিন খুবই মেধাবী শিক্ষক ছিলেন। আমার উত্তর শুনে তিনি আহত হলেন। লজ্জায় তার চোখ-মুখ লাল হয়ে উঠলো। এতক্ষণ অন্যান্য ছাত্রদের খানিকটা লম্বা চুল নিয়ে তিনি যে ত্যানা পেঁচাচ্ছিলেন তার জন্য নিশ্চয়ই তার মনে অনুশোচনা হচ্ছিল। কারণ পরে আর কোনো ছাত্রকে তিনি চুল নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেন নি।

ভাইভা শেষে বের হয়ে এলে সবাই ধরলো কী কী প্রশ্ন পারলাম। আমি তাদেরকে চুলের গল্পটা বল্লাম। সবাই তখন পরলো আমার কান নিয়ে। দুটি কান তারা দেখে আর মাপে...রহস্য বুঝতে পারে না।

সেবারের ভাইভায় শুভের সাথে আমিও সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছিলাম। কিন্তু কানের মর্যাদা সমুন্নত করতে পরের পয়লা বৈশাখে বাবড়ি উৎসর্গ করে দিলাম কিংস হেয়ার ড্রেসিং সেলুনে।

সুমন চৌধুরীর চুল দেখে সেই বিসর্জনের দু:খটা কাঁচা ঘুম ভেঙে জেগে উঠলো।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।