আমার ছাত্রশিবির জীবন-৪

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শুক্র, ২৬/০৫/২০০৬ - ১১:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ছাত্রশিবিরের কর্মী হওয়ার সূত্রে পাওয়া ইসলামী বইগুলো ইসলাম বা ধর্ম সম্পর্কে আমার তৃষ্ণা মেটাতে পারে না। আমি বুঝতে পারি ধর্ম কিছু আচার বা প্রথা হতে পারে না। ধর্ম শুধু অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক মতাদর্শ হতে পারে না। ধর্ম শুধু শাসন, ক্ষমতা অধিগ্রহণ আর ক্ষমতার জোরে ধর্মপ্রচার হতে পারে না। ধর্ম বরং প্রেমের ফল্গুধারা হওয়া উচিত। ধর্মের মূলে থাকবে ভালবাসা, মানুষে মানুষে, স্বজাতিতে-বিজাতিতে; এ কথা আমি সেই বইগুলোতে পাই না। অন্যদিকে, রফিক আমাকে ভিন্ন কথা শোনায়। রফিক বলে আলস্নাহর যত নাম আছে তার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তিনি প্রেমময়। রফিক বলে, পরমাত্মার সাথে জীবাত্মার সম্পর্ক প্রেমের। আশেক ও মাশুকের। অবশেষে একদিন রফিক আমাকে তার কাছে থাকা একটি বই আমাকে পড়তে দেয়। সৃষ্টি রহস্যের বই।

এতোদিন পর সেই বইয়ের বিস্তারিত কিছুই মনে নেই। মনে আছে বইয়ের প্রথম দিকে ব্যাখ্যা দেয়া ছিলো কেন মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। উদাহরণ দেয়া ছিলো অনেক। একটি উদাহরন মহিষের। মহিষ নাকি কখনো মা-মহিষের সাথে সঙ্গম করে না। সুতরাং শুধু এই বিবেচনাবোধের কারণেই মানুষ শ্রেষ্ঠ নয়। তাহলে মহিষও হতো। প্রাণীজগতে থাকা এরকম অনেক গুণের তুলনামূলক আলোচনা ছিল বইটিতে। সৃষ্টি রহস্য নিয়ে কথা ছিল। হাদিসে কুদসি শব্দ-বন্ধটি আমি এই প্রথম দেখি। একটি হাদিসে কুদসির উলেস্নখ ছিল বইটির শুরুতে। সৃষ্টি করার পূর্বে স্রষ্টা কোথায় ছিলেন, কী করছিলেন তার জবাব দিতে ব্যবহৃত হয়েছে হাদিসে কুদসি। হাদিসে কুদসিতে বলা আছে, "তিনি ডিম্বরূপে শূন্যে ঘুমনত্দ ছিলেন"। আমার আর সব পড়া ইসলামী বই থেকে এটি আলাদা। এখানে সৃষ্টি রহস্য আর দর্শনই প্রধান। আর তা মারিফতের দৃষ্টিতে। মারিফত সম্পর্কে এই প্রথম কোনো বই পড়লাম আমি।

রফিক আমাকে শব্দগুলো বুঝায়। শরীয়ত, মারিফত, হকিকত, তরীকত। আমার মনে নানা প্রশ্ন। আমি শিবিরের বিভিন্ন সভায় এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি। এ সম্পর্কে নেতাদের মতামত জানতে চাই। তারা বিরক্ত হন। তারা জানতে চান আমি কি কমু্যনিস্ট কারো সাথে ঘুরাঘুরি করি কিনা? আমাকে ইসলামী সাম্যবাদের বই ধরিয়ে দেয়া হয়। ধর্মের রাজনৈতিক ভাষ্য।

প্রায়ই ঢাকা থেকে বড় বড় শিবির নেতা আসতেন আমাদের এখানে। আমরা মসজিদে একসাথে নামাজ পড়তাম। বিকেলের চা খেতাম কোনো কর্মীর বাসায়। আর আলোচনা করতাম কিভাবে বাড়ানো যায় ইসলামের সৈনিক। সাইফুল আজম নামে এক বড় শিবির নেতা আসেন একদিন। তার সাথে কথা বলে আমি বেশ আনন্দ পাই। তিনি আমাদের কাছে তাবলীগ জামাত সম্পর্কে মতামত জানতে চান। আমাদের মতামত শোনার পর তিনি তার মনত্দব্য যোগ করেন। তিনি জানান যদিও তাবলীগ আমাদের মতকে ততটা সমর্থন করে না তবু আমরা তাদের সম্পর্কে কোনো কটু কথা বলবো না। বরং আমরা তাদের সাথে একধরণের সমঝোতায় আসতে চাই। ইসলামের জন্য এ ধরনের সমঝোতা প্রয়োজন। তাবলীগের জনপ্রিয়তা আমাদের কাজে আসবে। সুতরাং এখন আর তাবলীগের কর্মকান্ডের প্রকাশ্য সমালোচনায় আমাদের জড়ানো ঠিক হবে না। এসব কথায় আমি পরিকল্পিত রাজনীতির গন্ধ দেখতে পাই। ধর্ম খুব একটা দেখতে পাই না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ নির্বাচনে সাইফুল আজমের অংশগ্রহণ নিয়ে শিবিরে কোনো একটা বিরোধের কথা জানতে পারি। পরে শুনি তিনি পদত্যাগ করেছেন। এসব পদত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তুললে নেতারা আমাদেরকে শিশুতোষ গল্প শোনাতেন। আমাদের সন্দেহ দূর হতো না।

স্বপন, বুলবুলদের সাথে আমি তখন ক্রিকেট খেলি। বোরহানের সাথে খেলি ব্যাডমিন্টন। তারা আমাকে অদ্ভুত সব প্রশ্ন জোগান দেয়। আমি সেসব প্রশ্ন শিবির নেতাদের করতে থাকি। প্রশ্ন তুলি কেন পাকিসত্দান আমলের ছাত্র সংঘ ও ছাত্র শিবিরের লোগো একরকম। কেন জামায়াতে ইসলামের আমিরের নামটা উহ্য। কার জন্য খালি রাখা হয়েছে পদটি এবং প্রধান নেতা কেন অস্থায়ী আমির। তবে কি সত্যিকার আমির অন্য কেউ। নেতারা বিরক্ত হন। কর্মী থেকে আমার উন্নতি কেবল পেছাতে থাকে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।