ঘুরে এলাম বোর্নমাউথ

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/০৬/২০০৬ - ১:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


মে মাসের শেষ সোমবার ব্যাংক হলিডে। সাপ্তাহিক ছুটি গিয়ে দাঁড়ায় তিনদিনে। সুতরাং সবাই ছুটে নানা দিকে। আমরা এবার ঠিক করলাম সমুদ্র দর্শনেই যাবো। লন্ডনের কাছাকাছি সৈকত ব্রাইটনে অনেকবার যাওয়া হয়েছে। তাই ঠিক করলাম এবার যাবো বোর্নমাউথ। দলে সদস্য সংখ্যা দাঁড়ালো 6-এ। হলিডে'র সময় হোটেল পাওয়া যায় না। দামও বাড়িয়ে দেয় তারা এসময়। জনপ্রতি প্রতিরাতে 30 পাউন্ডের নীচে কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। থাকা-খাওয়া মিলে বহুটাকার মামলা। একরাত থাকলে খরচ কম হবে।

কিন্তু রনি বলে কথা। ওর গণযোগাযোগে ডিগ্রি আছে। গোটা কয়েক ফোন করে ফ্রি থাকার সুযোগ বের করে ফেললো। এক রেস্টুরেন্ট মালিক স্পনসর করছেন। সেইসাথে তিনি আমাদের দাওয়াত দিলেন একবেলা খাওয়ার। আমাদের তখন বাকবাকুম অবস্থা। শুয়েব আহমেদ শওকতি নামে এক কবি ও রেস্টুরেন্ট মালিক আছেন। তিনি ঘোষণা দিলেন তার রেস্টুরেন্টে সব দিনই আমাদের দাওয়াত। খাওয়া-দাওয়া ও থাকাটা নিশ্চিত হওয়ায় আমরা বাসের টিকেট বুকিং দিলাম।

যদিও মেগাবাস কোম্পানি 1 পাউন্ডেও টিকেট ছাড়ে ছুটির সময় জনপ্রতি তা 16 পাউন্ড রিটার্ন হয়ে গেলো। শনিবার ঘন্টাখানেক আগেই ভিক্টোরিয়ায় গ্রিনলাইন কোচ স্ট্যান্ডে হাজির হয়ে জানলাম বাস আধঘন্টা দেরিতে ছাড়বে। কিন্তু বোর্নমাউথ পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল 5 টা। তবে আবহাওয়াবিদদের ষড়যন্ত্র বাতিল করে দিয়ে আকাশ বৃষ্টিমুক্ত হয়ে গেল। পথে অবশ্য আমরা বৃষ্টি পেয়েছিলাম। কিন্তু বাতাস ছিল প্রচন্ড।

হোটেলে বাক্স পেটরা রেখে আমরা গেলাম পাশের একটি ফিশ এ্যান্ড চিপসের দোকানে। তান্নু মাছ খায়না। সুতরাং ও নিলো মুরগি। বাকীরা সবাই কড ও চিপস। তাজা মাছ ভাজা। সেকি সুস্বাদু। তারপর ছুটলাম বোর্নমাউথ পিয়ারের দিকে।

টাউন সেন্টার থেকে একটি সুন্দর পার্কের মধ্য দিয়ে যেতে হয় সৈকতে। বিশাল এক বেলুন রাখা সেখানে। বেলুনটা যদিও আটকানো মাটির সাথে তবু এতে নাকি চড়া যায়। মাটি থেকে শ' ফুট উপরে নাকি এটা উঠে। খুব একটা আগ্রহ হলো না। তখন অবশ্য বন্ধও ছিলো। হাজির হলাম বোর্নমাউথ পিয়ারে। সব সমুদ্র বন্দরেই এরকম পিয়ার থাকে। কাঠ, লোহা, সিমেন্টের একটা সেতু মত জিনিস। সমুদ্রের ভেতর কিছুটা গিয়ে থেমে গেছে। খোলা জায়গায় সমুদ্রের বাতাসে ঠান্ডা লাগছিলো। তবু মনে হচ্ছিল আমরা সৌভাগ্যবান যে বৃষ্টি হচ্ছে না। পিয়ারের উপর মাঝখানে থিয়েটার। দর্শকরা টিকেট দেখিয়ে ঢুকছে। দুই পাশে উৎসাহী মৎস্যশিকারীরা ছিপ মেলে মাছ ধরছে। একজনকে দেখলাম বেশ কয়েকটা ম্যাকারেল মাছ ধরেছে। খুবই মজার মাছ। আমি কয়েকদিন রেঁধে খেয়েছি। বাসা কাছে হলে কেনার চেষ্টা করতাম।

রাত হয়ে আসছিলো। সুতরাং কবিবর শুয়েবের রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলাম। মুফতে দেখা হয়ে গেলো বোর্নমাউথ শহরটি। ছোট্ট ছিমছাম শহর। লন্ডনের চেয়ে একেবারে আলাদা। বেশ একটা রিল্যাক্সড ভাব শহর আর তার অধিবাসীদের মধ্যে। শুয়েব আমাদের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। ভেতরের দিকে দুটো টেবিলে আমাদের বসালেন। তারপর টেবিল ভরিয়ে ফেললেন খাবার দিয়ে। নিজে একসময় শেফ ছিলেন। তাই আজ তিনিই নির্দেশ দিয়েছেন শেফকে কিভাবে রাঁধতে হবে। আমরা যা খেলাম তার দ্্বিগুণ খাবার নষ্ট হলো। শেষ বাস চলে যাবে বলে সাড়ে এগারোটায় আমরা বিদায় নিলাম। কবি আবার দাওয়াত দিলেন কাল সন্ধ্যায় আসার জন্য। তিনি সকালে দেরী করে ঘুম থেকে উঠেন। দুপুরে তার রেস্টুরেন্ট খুলে না। নইলে দুপুরে আসতে বলতেন। কিন্তু কালকে অন্য একটি রেস্টুরেন্টে আমাদের দাওয়াত। সেটি বদলে দুপুর করা হলো।

ঠিক করলাম পরের দিন ঘুম থেকে উঠে কাছের শহর পুলে যাবো। পুল নাকি পৃথিবীর দ্্বিতীয় বৃহত্তম হার্বার। সিডনি প্রথম।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।