জিব্রাইল ব্লগিং করছে না কেন? (পর্ব-১)

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বিষ্যুদ, ২২/০৬/২০০৬ - ৮:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আদম সন্তান হিসেবে আমার মর্যাদা ফিরিশতার উপরে। খবরদারী, তদারকি আমি করতেই পারি। আমার আগেও অনেকে করেছেন। নতুবা আমার ঘাড়ের একটা মাথা শায়খ-বাংলার জমানায় উঁচা করার সাহস দেখাতাম না। রীতিমত গল্পের বই আছে, 'জিব্রাইলের ডানা'। লেখক শাহেদ আলী, আবার নামে মুসলমান না। স্বরচিত রবীন্দ্র সঙ্গীত লেখা প্রজেক্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাকিস্তানের পেয়ারা বাঙালি লেখকদের মাঝে হীরকখন্ড।

শাহেদ আলীকে যদি আমল না দেন তবে ধর্ণা দেব পবিত্রভূমিতে। খোদ আরবজাহানে। আরব জাহানে জিবরাইল নিয়া যে গল্প চালু আছে বলে সৈয়দ সাহেব শুনায়ে গেছেন সেই গল্প শুনলে আপনারা বুঝতে পারবেন আমি মোটেই বেয়াদপ না।

প্রশ্নটা করতে গিয়ে ভূমিকা বেশি করলাম যদি মনে করেন তবে শিরোনামটা দেখতে বলবো। জ্বী, প্রশ্ন আগেই করেছি। আপনাদের চোখের মটমট দেখে ভিরমি খেয়েই শানে নযুলের ফেনা তুললাম। বোমার ভয়ও আছে মনে। ফিরিশতাদের নয়া জব ডেসক্রিপশনে এই কাজ অন্তুর্ভুক্ত হয় নাই একথা ইরাকে যাওয়া আমেরিকান সৈন্যরা হলপ করে নিশ্চিত করতে পারে নাই।

জিব্রাইল ফিরিশতা এখন কি করে- এই প্রশ্ন তুলে কিন্তু আমি বোমা প্রসঙ্গ নিয়ে তারে কিছু বলি নাই। সোজা কথায় আমি বলতে চাচ্ছি-ওহি আনা-নেয়ার কাজ থেকে অব্যাহতি সে পেয়েছে অনেক আগেই। হাজার দেড়েক বছর হবে। সে এখন সম্পূর্ণ বেকার। মাদ্রাসা পাশ আলিম-ফাজিলরা তাও চাকুরি খোঁজে, জিব্রাইলের সে যন্ত্রণাও নাই। সুতরাং তার কাজের প্রসঙ্গ তুলে আমি দ্্বীনের বাইরে কিছুই করি নাই। আদমসন্তানেরা এখন আল্লার বাণী কেমন মানছে সে খোঁজখবর নেয়ার কিছু দায়িত্ব তাকে পালন করতে বলাটা কোনো কারণেই শাস্ত্রবিরুদ্ধ হবে না। (জিব্রাইলকে সে বলাতে যারা মনে কষ্ট পেলেন তাদের বলি জিব্রাইল যেসব ভাষা জানে তার মধ্যে তিনি শব্দ আশা করি নেই। সুতরাং সে শুনলে সে নিজেও মাইন্ড করবে না।)

প্রশ্ন করতেই পারেন যে জিব্রাইল ব্লগিং করলে কি সুবিধা? অনেক রকম সুবিধা। প্রথম সুবিধা তখন আর পয়সা দিয়ে মহিউদ্দিনের মাসিক মদিনা কিনতে হয় না। বাতচিতটা জিব্রাইলের সাথেই করতাম। কিন্তু সাবমেরিন ক্যাবল নিশ্চয়ই উধর্্ব আসমানের দিকে পৌঁছায় নাই। তাতে কি আমাদের মাদ্রাসা থেকে পাশ দেয়া কত আত্মঘাতী বোমারু নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ানরা শহীদ হয়ে বেহেশতে গেল। ওরা একটু লাইন-টাইন টেনে দিতে পারে তো। ওসামার স্যাটেলাইট কানেকশন আছে শুনছি। বুশ চাচার ভয়ে ব্যবহার করতে পারে না। জিব্রাইল যদি সপ্তম আসমানে ব্রডব্যান্ড কানেকশন টানতেই চায় ওসামা নিশ্চয়ই আপত্তি করবে না। আসলে খাঁটি মুমিন রিসোর্স কোথাও ঠিকঠাক ব্যবহার হচ্ছে না। না দুনিয়ায়, না আসমানে।

এইজন্যই তো জিব্রাইলের ব্লগিং বড় দরকার। ওহি-টহির যে মান্ধাতা সিস্টেম তাতে হুজ্জত বেশি। যাদের ক্বলবে মোহর মারা তারা আবার নানা বেমক্কা প্রশ্ন করে তালগোল পাকায়া দেয়। তাছাড়া সাত-আসমান থেকে আলোক-তরঙ্গ হয়ে এতদূর ভ্রমণ করে এসে আবার রক্তমাংসের প্রাণী হয়ে নবী-রাসুলদেরকে ওহি বুঝানোর ঝামেলা কি কম। দুনিয়াবী বদবাতাসে যদি সর্দি-কাশি যদি লেগে যায়, আবার এখন দুরারোগ্য এইডস পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ওষুধটা বার না করায় বেহেশতের তিব্বতি দাওয়াখানার পুরান জরিবুটি দিয়ে বিশেষ কাজও হয় না। তার চেয়ে ব্লগিং অনেক ভালো। তা ছাড়া ওহি-টহির ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ হওয়ারও কোনো সমস্যা নাই। একসাথে সব লোকে পড়লো। লিখিত প্রমাণও থাকলো। ব্লগিং-এর সিস্টেমটার চল বেহেশতে এখনও চালু না হলেও মানুষের কারবারটা খারাপ বলা যাবে না। সবকিছু ইবলিশের ষড়যন্ত্র মনে করলে ভুল হবে। আদমই তো বরং ইবলিশের সেজদা পাওয়ার কথা।

"ভাষাটা সমস্যা করতে পারে"। জিব্রাইলের অজুহাতের শেষ নাই। বেকার থাকতে থাকতে কাজ দেখলেই ফিরিশতাদের কাঁপুনি দিয়া জ্বর উঠে। গাঁও-গেরামে বলে ভালুক জ্বর। হিব্রু ভাষা না হয় কেউ আর বুঝতে পারে না। আরবির তো সমস্যা নাই। জিব্রাইল ব্লগিং করছে শুনলে আরবি ভাষা শিক্ষার ধুম পরে যাবে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ইমেজ আর সম্মানটাও বাড়বে।

ও আচ্ছা। জিব্রাইলকে যে আরবি শেখানো হয়েছিল সেটা তো আদ্দি আমলের। তা এখন আর মানুষ বুঝতে পারে না। এক শব্দের সত্তরটা মানে করে কালামের অর্থেই ঘাপলা করে ফেলে। সুতরাং সেই ক্ল্যাসিক্যাল আরবি চলবে না। তবে এরা দেখলাম কি যেন ফোনেটিক না কি একটা সিস্টেম বের করেছে। টিপবে এক ভাষার হরফ আর লেখা হবে আরেক ভাষা। দুনিয়ার কায়দা আসলেই রঙিলা। বেহেশতে এই সিস্টেমটাও নাই। আসলে খান্নাসের সাথে সহবত করতে করতে মানুষও যত পিছলা কেরামতি শিখছে। দুনিয়ার সাথে কতদিন কানেকশন নাই জিব্রাইলের। মেলা সময় লাগবে পুরানা ফর্মে আসতে।

বাই দ্য বাই, টাইপিং করে তো আর জিব্রাইলের অভ্যাস নাই। কান দিয়ে শোনা, মুখস্থ আর মুখ দিয়ে রিপ্লে । এর বেশি টেকনোলজি ছিল না তখন। আহা, কত অজুহাত জিব্রাইলের। অসুবিধা নাই, দুনিয়ায় বিজ্ঞানীরা ভয়েস রিকগনিশন সিস্টেম চালু করছে। মুখে বললেই টাইপ হয়ে যাবে।

সুতরাং জিব্রাইলের ব্লগিং করাতে কোনো বাধা দেখছি না। যদি থাকে তবে আমার ফরিয়াদ চূড়ান্ত করার আগে আওয়াজ দিবেন।

সময় বেশি নিলে জিব্রাইল নিয়ে চালু পবিত্র আরবজাহানের গল্পটা বলা ছাড়া আমার গতি থাকবে না। পাবি্লক ডিমান্ডের কাছে আজকাল বেহেশত, দুনিয়া সবই বান্ধা। গল্পটা অবশ্য জনৈক খ্যাতনামা সৈয়দ সাহেব বলেছেন। সুতরাং কপিরাইটের কোনো ঝামেলা নেই।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।