ঈশ্বর স্বপ্নে এসে কথা বলেছেন নাকি স্বপ্নে ঈশ্বরকে কথা বলতে দেখেছি?

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শনি, ০৮/০৭/২০০৬ - ৯:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আপনার কাছে যদি কেউ এসে বলে "ঈশ্বর তার সাথে স্বপ্নে কথা বলেছেন" তবে আপনি কি ভাববেন? লোকটিকে অবিশ্বাস করবেন, না ঈশ্বরে আপনার আস্থা দৃঢ় হবে? (সাদিক আলাদা একটা পোস্টে আমার কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন অন্যের সত্য বলায় বিশ্বাস আনা বা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলাটার কোনটা যুক্তিসঙ্গত জানতে চেয়ে। নীচের আলোচনাটা সেই পেক্ষাপটেই)। মানুষের বিশ্বাসের প্রক্রিয়াটা কি? (লেখাটি জটিল বিষয়ে, তাই দীর্ঘ। কিন্তু ভরসা দিচ্ছি শেষ পর্যন্ত পড়ে গেলে একেবারে নিরাশ হবেন না।)

মানবজাতি এ পর্যন্ত যা জেনেছে তা জানার জন্য দু'টি পথ ব্যবহার করেছে। অনত্দত: দর্শন তাই বলে। একটি হচ্ছে অভিজ্ঞতা। আরেকটি হচ্ছে যুক্তিপ্রয়োগ। দুই আর দুই মিলে চার হয়। এটি প্রমাণ করে দেয়া সম্ভব। নানা ধরণের যুক্তি দিয়ে। কিন্তু আমাদের চোখের সামনে যে কাঁঠাল গাছ আছে, গরম্নটা শব্দ করে জাবর কাটছে, সামনের খালি মাঠ প্রখর রৌদ্রে খাঁ খাঁ করছে; এগুলো আমাদের ইন্দ্রিয় অনুভূতির মাধ্যমে জানা তথ্য। আমরা এগুলো দেখি, শুনি ও অনুভব করি। আমাদের এইসব অনুভূতি দিয়ে মাঠের পরও যা দেখা যাচ্ছে না তা সম্পর্কে আমরা অনুমান করতে পারি। আমাদের অনুভব দিয়ে সে বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরতে পারি। সুতরাং মানুষ যা দেখতে পায় না সে সম্পর্কেও মানুষ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। উত্তর সে দেয় তার চেনা-জানা তথ্য আর অনুভূতি-অভিজ্ঞতা থেকেই। মানুষের না দেখা বিষয়গুলো সম্পর্কে বিশ্বাস তাই তার চেনা অনুভবের যুক্তিতেই সাজানো। প্রশ্ন হচ্ছে কতটা যৌক্তিক সে বিশ্বাস? ধর্মের যে ঈশ্বর, সে তো আর শুধু একটা ধারণা নয়। বরং আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে এক বাসত্দবতা। সুতরাং মানুষের কাছে এই বাসত্দবতার সত্য পৌঁছে দেয়ার জন্য ঈশ্বর নিশ্চয়ই মানুষের অনুভবে আসেন। নতুবা মানুষ কেন ঈশ্বরের বাসত্দবতায় বিশ্বাস করতো?

বিশ্বাস, অন্ধবিশ্বাস ও যুক্তিসঙ্গত বিশ্বাস বলতে আমরা নিশ্চয়ই আলাদা আলাদা কিছু বুঝাতে চেষ্টা করি। অনেকে বলে থাকেন, 'আমি ভূত-প্রেতে বিশ্বাস করি না। কেউ কখনো ভূত-প্রেত দেখেছে'? তাদের এই কথায় বুঝা যায় তারা বিশ্বাস করার আগে যুক্তি খোঁজেন। যদি মেলে, যদি তাদের অভিজ্ঞতায়, জানা-শোনার সাথে খাপ খায় তবে বিশ্বাস করেন। নতুবা না। আবার অনেকে বলেন বিশ্বাস, বিশ্বাস। সবকিছু যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। আমি অমুক ধর্মে বিশ্বাস করি। এরকম করে চোখ বুঁজে কোনো কিছুকে সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়াকে কি অন্ধবিশ্বাস বলা যায়? কাকে আমরা বলি অন্ধবিশ্বাস। যুক্তি ও চিনত্দা ছাড়া মেনে নেয়া বিশ্বাসকেই তো? যে বিনাপ্রশ্নে কোনো বিষয় মেনে নেয় তাকেই তো আমরা সেই বিষয়ে অন্ধবিশ্বাসী বলি। 'এই বিষয়ে ভাই আমি অন্ধ। যতদিন দুনিয়ায় বেঁচে আছি যাদুটোনায় আমি বিশ্বাস করবো'? প্রশ্ন হচ্ছে কেন? 'ভাই, এই যে আমার ল্যাংড়া পা দেখছেন এইটা গুণীনে গুণ মেরে করছে?' এখানে বিশ্বাসী তার বিশ্বাসের পক্ষে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিচ্ছেন। সে উদাহরণ গ্রহণযোগ্য কিনা, সত্যি সত্যি গুণ মারা সম্ভব কিনা, সে প্রশ্ন এখন থাক। এখান থেকে একটি বিষয় আমরা বুঝতে পারি যে, বিশ্বাসী বা অন্ধবিশ্বাসীও তার বিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি খোঁজে, যুক্তি দেয়। অভিজ্ঞতা ও তথ্যের সাথে একেবারে না মিলিয়ে কেউ বিশ্বাস করে না। সেই মেলানোর বিষয়টা কতটা গাঁজাখুরি আর কতটা অংক, পরিসংখ্যান ও বিজ্ঞানের উপর দাঁড়িয়ে তা নিয়ে অনেক সময়ই বিশ্বাসীদের মাথাব্যথা থাকে না।

দর্শনের অধ্যাপক W.C. Cliford বলছেন,


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।