যে ছবি দেখা যায় বনাম যে ছবি দেখা যায় না

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: রবি, ২৯/১০/২০০৬ - ৯:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ছবি অনেক কথা বলে। ছবি অনেক শক্তিশালী। একটি যুৎসই ছবি মানুষকে অনেক বেশি নাড়া দিতে পারে। অনেক বেশি কার্যকর। তাই ছবি তোলার জন্য ফটো-জার্নালিস্টরা ধোলাই খায় প্রায়শ:। তাদের ক্যামেরা ভেঙে দেয়া হয়। তাদের লেনস ঢেকে ফেলা হয়। সিজনড অপরাধীরা নিজেদের অত্যাচারের কোনো প্রমাণ-চিহ্ন রাখতে চায় না। ক্যামেরাকে তাদের বড় ভয়। তাদের কর্মযজ্ঞে ক্যামেরার প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাদের নিজেদের মুখও তাকে কালো কাপড়ে মোড়া। জেএমবি ইসলামের নামে বোমাবাজি করে যেসব প্রাণ নিয়েছে তার ছবি আমরা দেখিনি। ডজন ডজন ক্যামেরার সামনে গুলিস্তানে গ্রেনেড বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু কোনো ক্যামেরায় কোন গ্রেনেড নিক্ষেপকারীর ছবি ওঠেনি। তারা অদৃশ্য। তাদের দেখা যায় না। দুর্নীতির দেশে রাষ্ট্রও কালো কাপড় পড়ে নেমে যায় তার ভাষায় সন্ত্রাসী নিধনে। বাহবাও পায় অনেকের কাছ থেকে। সেসব ছবিও আমরা দেখি না। যদিও আমরা বলি সব মৃতু্যই সমান বেদনাদায়ক, তবু কিছু কিছু ছবি আমাদের দেখানো হয়, কিছু কিছু দেখানো হয় না। যেমন এই ছবিটি। আমরা এখানে আক্রান্তের চেহারা দেখি না। বরং দেখি আক্রমণকারীদের ছবি। তাদের মুখে কালো কাপড় নেই। তারা নিজেদের আড়াল করে রাখেনি। তাদের এই দুষ্কর্মের ছবি তোলার জন্য তারা ফটোজার্নালিস্টদের ক্যামেরা ভেঙে দেয়নি। তাদের হাতের কাছাকাছি যা ছিল তা দিয়েই তারা পিটাচ্ছে নৃশংসভাবে। এই ছবি আমরা মিডিয়ায় দেখি। এটা দেখাতে কেউ বাধা দেয় না। এখানে নৃশংসতার সাথে জড়িত সকলের মুখ চেনা যায়, কিন্তু বিশেষ কোনো পরিচয় দিয়ে তাদের চিহ্নিত করা যায় না। তাদেরকে বলা হয় সাধারণ মানুষ। বলা হয় জনগণ। এরকম কর্মকান্ডকে বলা হয়ে থাকে গণধোলাই। ক্রুদ্ধ, বিচার না পেয়ে উন্মত্ত, হঠাৎ সুযোগ পাওয়া নিরীহ মানুষগুলোর উগ্র ও নৃশংস চেহারা বড় বেদনা জাগায় মনে। এই ছবি আমরা দেখতে পাই। এরকম একটি ছবি দেখার আগে, আরো অনেক ঘটনা ঘটে একটি সমাজে, যেসব ছবি আমরা কখনও দেখতে পাই না। যে ছবি দেখা যায় ও যে ছবি দেখা যায় না দুটোর প্রতি সমান ঘৃণা।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।