ব্লগের কিছু উজ্জ্বল চরিত্রের মুখোমুখি: চতুর্থ শতকের বয়ান

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বিষ্যুদ, ১১/০১/২০০৭ - ৩:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যদিও আমি স্বনামে লেখি, তবু ভাচর্ুয়াল পরিচিতিকে বাসত্দবতার স্পর্শ দেয়ার বিষয়ে অনিচ্ছুকই ছিলাম আমি। কয়েক মাস আগে স্কটল্যান্ড থেকে ঈদের বন্ধে লন্ডনের কাছাকাছি এসে হাসান মোরশেদ যখন সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ফোন দিলেন তখন একটু দেরি না করেও রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। হাসানের সাথে সেই স্বল্পদৈর্ঘ সাক্ষাতটি পরে অমূল্য মনে হয়েছে। জার্মানি থেকে রেজওয়ান বেড়াতে এসেছিলেন লন্ডনে আমাদের ফ্যাটে। বেশ ক'ঘন্টা তার সাথে সেই আলাপ নি:সন্দেহে বস্নগীয় বন্ধুত্বকে আরো প্রশস্থ করেছে। আর এবার বাংলাদেশে আসার আগেই অরূপের ফোন নাম্বার নিয়ে রেখেছিলাম। সুতরাং ঢাকায় আসার পর আজিজ মার্কেটে আড্ডার আয়োজন হয়ে গেলো। দেখা হলো একে একে অমি রহমান পিয়াল, এস এম মাহবুব মুর্শেদ সুমন, ঠুনকো ও হিমু'র সাথে। বন্ধ মার্কেটের সামনের রাসত্দায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘ আড্ডার পাশর্্বপ্রতিক্রিয়া হলো ঠান্ডা লেগে যাওয়া। কিন্তু হৃদয়ের উষ্ণতার কোনো অভাব ছিলো না আমাদের সেই সম্মিলনে।

এরপরই ঘটলো আরো বড় ঘটনা। অরূপের আয়োজনে রওয়ানা দিলাম সামহোয়ার ইনের অফিসের দিকেই। হাসিন, রেজওয়ানসহ আরলিডকে আমরা আবিষ্কার করলাম গেটেই। একটু হেঁটে একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ বু্যফে। এর মাঝে পরিচয়পর্ব, বস্নগ নিয়ে মত বিনিময়। সেখানে এসে যোগ দিলেন রাগইমন ও জামাল ভাস্কর। প্রতিজন বস্নগারের সাথে প্রথম সাক্ষাতের সময় তীব্র একধরনের আবেগ অনুভব করেছি। যেন কতদিনের চেনা আপনজন। এতদিন যাদের লেখা পড়েছি, যাদের সাথে মত-বিনিময় করেছি, যাদের চিনত্দা_ধারার ঝর্ণাধারায় স্নাত হয়েছি তাদেরকে চোখের সামনে ধরা-ছোঁয়ার নাগালে পেয়ে যাওয়ার আনন্দটা ছিলো খুবই হৃদয় তোলপাড় করা। বস্নগে হাসিনের সাথে সাথে খুব একটা মত-বিনিময় হয়নি আমার, কিন্তু দুপুরের খাবার খেতে খেতে আমি আবিষ্কার করি অত্যন্ত বুদ্ধিমান, মননশীল, কর্মপ্রিয় ও রসিক এক ব্লগারকে। আমাদের বস্নগসাইটের অন্যতম ডিজাইনার রেজওয়ানের উজ্জ্বল চোখদুটো সারাক্ষণ হাসছিলো, মুখে কথা বলছিলেন তিনি কমই। তবে কথা বলছিলেন আরলিড। সামহোয়ারইন ব্লগ নিয়ে তাঁদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাবার্তা রেস্টুরেন্ট থেকে অফিস পর্যন্ত চললো। অফিসের রুমগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখানোর পর আরলিড হোয়াইট বোর্ডের সামনে রীতিমতো দাঁড়িয়ে গেলেন ছবির সাহায্যে পরিকল্পনার বয়ান দিতে। কোনো অগ্রগতির প্রস্তাবেই আমাদের কারো আপত্তি ছিল না। আমরা শুধু ভাবছিলাম কতটা সম্ভব হবে এসবের বাসত্দবায়ন আর কবে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠবে বাঁধ ভাঙার আওয়াজ। আমাদেরকে পেয়ে কতর্ৃপক্ষকে মনে হলো আহ্লাদিত আর এরকম একটা মত-বিনিময়ের সুযোগ পেয়ে খুশি হয়ে উঠলাম আমরাও।

আড্ডাটা সেখান থেকে আবার স্থানানত্দরিত হলো আজিজ মার্কেটে। সেখানে বস্নগার শুভ তার দূরপাল্লার বাস মিস দেয়ার পর অপেক্ষা করছিলেন অরূপের জন্য। পিয়ালের কোঁচড়ে রাখা মার্লবোরো লাইটসের কার্টনটা অরূপ তুলে দিলেন শুভের হাতে। কয়েকদিন পাহারা দেয়ার অজুহাতে পিয়াল অবশ্য ভাগ বসালেন শুভ'র সিগারেটে। দ্রম্নতই চলে গেলেন শুভ। যাওয়ার সময় তার কায়দায় আলিঙ্গন করলেন সবার সাথে। তাকে বিদায় দিয়ে আমরা এসে ঢুকলাম অনত্দরে রেসত্দোরাতে। সেখানে এসে যোগ দিলেন ভাস্কর ও মৌসুম জুটি। আসলেন লাল সোয়েটার পরা বালিকামোহন হিমু, তারপর আপাদমসত্দক শীতের পোষাকে মোড়া অন্য চেহারার রাগইমন। পিয়ালের সৌজন্যে অসংখ্য কাপ চা পান করে তুমুল আড্ডার পর ফিরলাম বাসায়। বাকী কয়েকজন অবশ্য সিগারেট ধ্বংসেও ছিলেন। আমি তাতে যোগ দেইনি বলেই কিনা বাসায় ফিরে শিকার হলাম ঠান্ডার। পরের দিন অরূপের যাওয়ার দিনের আড্ডায় আর যেতে পারিনি। ঘুমের ঘোরে অবশ্য বুঝতেও পারিনি ফোনটা কে করেছিলেন, পিয়াল না ভাস্কর।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।