বিনিয়োগ ও উন্নয়ন নিয়ে আরো কিছু মন্তব্য

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: সোম, ০২/০৬/২০০৮ - ২:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মন্তব্য শুধু বড়ই হয়, তাই ভাবলাম আলাদা করে পোস্ট দেই। এই আলোচনার সূত্রপাত রাগিবের এই পোস্ট

দিগন্ত যেমন বলেছেন - বৈদেশিক বিনিয়োগের খারাপ-ভালো নিয়ে বই লেখা যায়, এবং গাদা গাদা বই লেখাও হয়েছে। স্বল্প পরিসরে মন্তব্যে অনেকেই সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আরেকটু যোগ করি -

- ৫০০-২৫০=২৫০, এই হিসাবটা আসলে টেকে না। অর্থনীতিতে মাল্টিপ্লাইয়ার এফেক্ট নামে একটা জিনিস কাজ করে। মানুষের যখন আয়-ইনকাম হয়, তখন সেটা থেকে তার নতুন নতুন চাহিদা তৈরী হয়। একটা বেকার ছেলে - মোবাইলের স্টল দিয়ে মাসে ৫,০০০ টাকা আয় করা শুরু করলো। আগে ছিল শূন্য। তার সেই ৫,০০০ টাকা ইনকাম থেকেই তৈরী হচ্ছে নিত্য নতুন ডিমান্ড। সে নতুন কাপড় কিনতে চায়, একটা ভালো বাসা নিতে চায়, ছোট ভাইকে স্কুলে পাঠাতে চায়। দেখা গেলো যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, leisure, retail সহ আরো দশটা সেক্টরে সুপ্রভাব পড়লো। তাই ঐসব সেক্টরেও নতুন করে তৈরী হলো আরো কর্মসংস্থান এবং আরো আয়-রোজগার।

- এই জন্যে অর্থনীতিতে বেকারত্ব মোচন, job creation, income generation - এইসব নিয়ে নীতি নির্ধারকরা এত পেরেশানিতে থাকেন। কারন সেই মাল্টিপ্লাইয়ার এফেক্ট অনেক সেক্টরে গতি এনে দিতে পারে। মাল্টিপ্লাইয়ার এফেক্ট দিয়ে উন্নয়ন সাধনের চরম মডেল হলো বিগ পুশ (big push) মডেল। একটু পুরান মডেল, তবে মজার আছে। বড় ধাক্কা দিয়ে অনেকগুলো ইন্ডাস্ট্রি বসানোর চেষ্টা করতে হবে। সেই সব মিল কারখানার নতুন কর্মীরাই একে অপরের ইন্ডাস্ট্রির পরিপূরক ডিমান্ড তৈরী করবে। জুতা ফ্যাক্টরীর কর্মী বেতন পেয়ে পাশের ফ্যাক্টরীর কাপড় কিনবে, আর সেলাই কর্মী কিনবে পড়শীর বানানো জুতা। সম্পূরক ডিমান্ড সৃষ্টির মডেল। বুঝতেই পারছেন একটু হাওয়া হাওয়া টাইপের মডেল এটা, ৫০, ৬০-এর দশকে বোধ হয় নাম করে ছিল, কিন্তু কথাটা হলো এই যে মডেল পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে সেই মাল্টিপ্লাইয়ার এফেক্টের উপরে।

- মোবাইলের একটা বড় অবদান, ব্যবসার কর্মকান্ড অনেক সহজতর করে দিয়েছে। গার্মেন্টস মালিকের ভালো উদাহরণ দিয়েছেন একজন। সেই গার্মেন্টস মালিকের যে management cost, ব্যবসায় লেনদেনের যেই বেহুদা transaction cost, এইগুলা অনেক জায়গায় কমিয়ে দিয়েছে মোবাইল। ৫০০-২৫০-র হিসাবে এই বেগ, এই গতি ক্যাপচার হয় না।

- তবে একটা ব্যাপারে আমি ১০০% একমত যে শুধুমাত্র মোবাইল ফোন বিকিকিনি করে উন্নয়ন সাধন হয় না। মূলত শিল্প (আর আরো সীমিত ভাবে কৃষি) থেকেই তা আসতে হবে। কিন্তু সেখানেও আমাদের mismanagement-এর অভাব নেই। গার্মেন্টস শিল্প দাঁড়িয়েছে সম্পূর্ণ উদ্যোক্তাদের চেষ্টায়। বলতে পারেন not because of government, but in spite of it. বরং গত দশ বছরে রাজনীতির হোলি খেলা বারবার চেষ্টা করেছে ব্যবসা-শিল্প-রপ্তানীর পায়ে কিভাবে কুড়াল মারা যায়। একটু দূরে চলে গেলাম আবার ফিরে আসি। গার্মেন্টস-জুতা শিল্প - এগুলো সব চেয়ে শ্রমঘন শিল্প, এবং শিক্ষা বা স্কিলের প্রয়োজন সবচেয়ে কম। তাই জনবহুল গরীব দেশের উন্নয়নের প্রথম ধাপে এগুলো সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয়। জাপান তাইওয়ান কোরিয়াও ৫০-৬০-৭০-এর দশকে এই দিয়েই শুরু করেছিল। কিন্তু পরের ধাপে আরেকটু sophisticated শিল্পে পা বাড়ায় - টিভি কম্পিউটার বানায়, light manufacturing, গাড়ি এসেম্বলি ইত্যাদি। এবং শিল্পায়নের শেষ ধাপে একদম চরম হাই-টেক জিনিস - সেমি-কন্ডাক্টর, মাইক্রোচিপ থেকে শুরু করে biotech, nanotech পর্যন্ত।

কিন্তু দুঃখের বিষয় ৩০ বছর পরেও আমরা শিল্পায়নের সেই প্রথম ধাপ থেকে এগুতে পারিনি। সেখানে মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ধাই ধাই করে নতুন নতুন সেক্টরে উঠে গেছে। একে পরিভাষায় বলে climbing up the value chain. আমরা ভ্যালুর সিঁড়ির প্রথম ধাপে আটকে আছি এখনো। এর কারন বিবিধ তবে সবচেয়ে বড় দুই একটা কারন ধরি - কর্মীদের শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব আছে (টিভি বা সেমি কন্ডাক্টর বানাতে গেলে শিক্ষিত দক্ষ শ্রমিক দরকার, সেলাইয়ের স্কিল দিয়ে তা হবে না); আমাদের অবকাঠামোর অভাব - (কারেন্ট না থাকলে টিভি বা গাড়ির assembly line দুই মিনিট পরপর বন্ধ হয়ে যাবে); রাস্তাঘাট হাইওয়ের অপ্রতুলতা - রপ্তানীকারকের ট্রাক জামে আটকে থাকবে দিনের পর দিন; রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব - ফ্যাক্টরী মালিক নিশ্চিত না সে হরতাল-স্ট্রাইকের কারনে সময়মত অর্ডার মেটাতে পারবে কি না। অর্থনীতি আর শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ হয়নি, সব কিছু ঢাকা কেন্দ্রিক - গ্রামের গরীব মানুষ ভাতের খোঁজে এসে ভিড়ে ঢাকা শহরের রিক্সার গ্যারেজে, অথচ দক্ষিনাঞ্চলে চিটাগং ও মংলা পোর্টের পাশে হতে পারতো দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিল্প এলাকা, যা উদ্বৃত্ত শ্রমিক শুষে নিতে পারতো অনেক। ঢাকার অবকাঠামোর উপরে চাপও কমতো অনেক।

- সব কিছুর পেছনে পাবেন আমাদের রাজনীতিবিদ আর নীতিনির্ধারকদের সচেতনতা দক্ষতা ভবিষ্যতমুখীতার প্রকট অভাব। শুধু মঞ্চ আর স্লোগানের দেশপ্রেম নিয়েই মেতে আছেন তারা, এবং অনেকাংশে আমরাও। ১৯৭১ আমাদের আত্মার অংশ কিন্তু ২০৭১ নিয়ে কথা বলবে কে বা কবে? আজকে যদি উন্নয়নের পদক্ষেপগুলো না নেয়া হয়, তাহলে কি ২০৭১ সালে বাংলাদেশ সার্বভৌম ভূখন্ড হিসাবে টিকে থাকবে? রাজনীতিবিদদের দিকে আঙুল দেখালে আজকাল আবার সুশীল বলে গালি খাওয়া লাগে। কারন স্লোগান দিয়েই হয়তো মানুষের পেট ভরানো যায়। পক্ষান্তরে আমার ধারণা হলো যে উদ্বৃত্ত জনসংখ্যা মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানী করেই আমরা বিরাট সামাজিক দাবানল দূরে সরিয়ে রেখেছি। বছরে প্রায় ৭-৮ লাখ বেকার যুবককে বিদেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। কারন দেশে শিল্পায়নের কিছুই ঠিকমতো হলো না, এক সাধের গার্মেন্টস বাদে। ফিলিপাইনের স্বৈরশাসক মার্কোস ঠিক একই কাজ করেছিলেন বিরাট সাফল্যের সাথে প্রায় ৪০ বছর আগে। ফিলিপিনের লক্ষ লক্ষ প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি অসাধারণ প্রতিবেদনে সেই গল্প পাবেন। আমরাও আজকে চলি মার্কোসের দেখানো পথে।

- ভারতের যেই সার্ভিস সেক্টর বুম, সেটাও আমাদের সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে গেলো। বেকারদের কিছু কম্পিউটার টেপাটেপি, ফোনে বকবক শেখানো গেলে ভারতে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যাক অফিস ব্যবসা তৈরী হয়েছে, তার সিকি ভাগও আমাদের হাতে আসতো। এবং সেখান থেকে পরে আরো উন্নত ধাপের আইটি ব্যবসা। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থাকে পঙ্গু করা হয়েছে, সস্তা রাজনীতি করে স্কুল কলেজে ইংরেজী শিক্ষাকে জারজ সন্তান বানানো হয়েছে, ইংরেজীর অভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের যুবকদের ডিমান্ড কমে গেছে। বরং ভারতে খরচ বেশি দেখে কল সেন্টার এখন যায় ফিলিপাইনেই আবার, এমন কি চীনেও ইংরেজী শিক্ষার হিড়িক পড়েছে। অথচ আমাদের natural advantage ছিল, আমাদের বাবাদের জ়েনারেশন আমাদের থেকে কত ভালো ইংরেজী শিক্ষা পেয়েছেন, এবং সেটা গ্রামে মফস্বলে বসে!

- শেষ করি গার্মেন্টস দিয়েই। ইউনিভার্সিটিতে আমার একটা বড় পেপার লিখতে হয়েছিল আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের উত্থান নিয়ে। জেনে অবাক হবেন যে কোরিয়ার Daewoo কম্পানীর বড় সাহায্যের কারনেই আমাদের পোষাক শিল্প জিরো থেকে শুরু হয় ৭০-এর দশকের শেষ ভাগে এসে প্রচন্ড বেগ পায়। Joint venture ছিল নুরুল কাদের সাহেবের দেশ গার্মেন্টস-এর সাথে। অর্থাৎ সেই যাত্রাও বিদেশী বিনিয়োগের সাহায্য নিয়েই শুরু হয়েছিল।

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর


মন্তব্য

গৌতম এর ছবি

অর্থনীতি বিষয়টা খুব কঠিন লাগে। মাথার উপর দিয়া যায়। তবে এর কাণ্ডকারখানা দেখে চমৎকৃত হই।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ...ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শামীম এর ছবি

টেলিভিশনের সমস্ত টক শোতে আর পেপারের পাতায় নির্বাচন আর ক্ষমতা নিয়ে টক মিষ্টি তিতা কথা হয়। কিন্তু দেশের উন্নয়ন/শিল্পায়ন, অর্থনীতি, স্ট্র্যাটেজি নিয়ে তেমন কোনই কথা হয় না ... ... দেশের তথাকথিত নেতা-নেত্রী এবং সুশীলদের (+মিডিয়ার) দেশের উন্নতি হওয়ার প্রতি আগ্রহের অভাব আছে বলে মনে হয় ... ... আফসোস।

লেখাটা ভাল লাগলো। তবে এটা আরো বিস্তৃত করলে আরো ভালো লাগতো।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

স্নিগ্ধা এর ছবি

সব কিছুর পেছনে পাবেন আমাদের রাজনীতিবিদ আর নীতিনির্ধারকদের সচেতনতা দক্ষতা ভবিষ্যতমুখীতার প্রকট অভাব

ভারতের যেই সার্ভিস সেক্টর বুম, সেটাও আমাদের সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে গেলো।

সুবিনয়, আমি ব্রতচ্যুত অর্থনীতিবিদ - তাই আপনার লেখাটা আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করলেও গোড়া থেকেই ভাবছিলাম একমত হতে পারবো না, কিন্তু সেটা ভুল ছিলো।

এই সার্ভিস সেক্টর বুম দিয়ে আমাদের দেশটার যে কি পরিমাণ সমস্যা সমাধান করা যেতো সেটা ভাবলে দুঃখের আর সীমা থাকে না। এখনও হয়তো সম্ভব - বিশেষত বিশ্বজোড়া এই মন্দার সময়ে হয়তো আরো cost cutting এর আশায় offshore contracting নতুন করে বাড়তে পারে।

অবশ্য এসব simulation বা prediction এর ব্যাপারে আপনার তুলনায় আমার জ্ঞান নিতান্তই বালখিল্য।

(অন্য বিষয়ঃ সময়াভাবে 'না বলা কথা'য় East Asian দেশগুলো নিয়ে আপনার মন্তব্যের উত্তর দেয়া হয় নি, সে ব্যাপারে কিন্তু আমি একমত নই হাসি )

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

বিদেশী বিনিয়োগ মাত্রই ধন্বন্তরি, তা আলাদীনের যাদুর চেরাগ এই চিন্তা নিশ্চয়ই আপনি পোষেন না এবং রাগিব তো রাখেনই না। আমিও বিষয়টাকে ক্রিটিকালি দেখতে আগ্রহী। কোথায় কোন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিনিয়োগ হচ্ছে সেই কেস স্ট্যাডিটা গুরুত্বপূর্ণ। আবার একদিকে তা সুফল ফলিয়ে অন্যিদিকে কী ক্ষতি করলো; তা বিবেচনায় না রাখলে সামগ্রিক চিন্তাটা পাব না।
এই দিক থেকে আমি রাগিবের চিন্তার কাছাকাছি, তবে সুবিনয়ের পদ্ধতির অনুসারী। দুজনকেই অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্যের পরিসরে আলোচনা অগ্রসর করবার জন্য স্বতন্ত্র কিছু বক্তব্যও পেশ করা দকার। তাই আলাদা একটা পোস্ট দিচ্ছি ঘন্টাখানেকের মধ্যে। অনুগ্রহ করে দেখবেন।


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

বিদেশী বিনিয়োগ মাত্রই ধন্বন্তরি, তা আলাদীনের যাদুর চেরাগ এই চিন্তা নিশ্চয়ই আপনি পোষেন না।

না, তা পুষি না, কিন্তু আমি empirical evidence-এ বিশ্বাস করি। আমি চোখের সামনে দেখতে পাই এশিয়ার মধ্যেই আমাদের থেকে অনেক গরীব দেশ তাদের গতিপথ বদলে ফেলেছে, দারিদ্র্য দূর করছে, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নীত করছে, প্রবাসগামী মানুষের ঢল কমিয়েছে। সেটা কিভাবে করেছে, সেটাই আমরা অনুসন্ধান করি, তাদের থেকে best practice-গুলো অনুসরণ করি। যদি বিভিন্ন টার্গেট সেক্টরে বিনিয়োগ, দেশী বা বিদেশী, তার একটা অংশ হয়, সেটা খতিয়ে দেখি।

এমএনসি-রা আমাদের ভাই-বেরাদর লাগে না, আমাদের উপকার করে দেয়া ওদের কম্মো নয়। এখন বাংলাদেশের উপর ওদের নজর বেড়েছে আমাদের খনিজ সম্পদের কারনে। সেটাকে যার তার কাছে বিকিয়ে না দিয়ে আমাদের শিল্পায়নের উপরে জোর দিতে বলি। পাওয়ার সেক্টর এবং অবকাঠামোর একটা বিহিত করি। ওদের থেকে আমাদের লাভ আমাদেরকেই বুঝে নিতে হবে, যেটা বুঝে নিয়েছে মালয়েশিয়া চীন ভিয়েতনাম কোরিয়ার মত দেশ। এর জন্যে প্রয়োজন হবে দক্ষ বলিষ্ঠ নেতৃত্বের। বৈদেশিক বিনিয়োগের ব্যাপারে এতগুলো দেশের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কিছু শিখতে পারবো না?

অনেকের হিসাবে সব গ্লোবালাইজেশান খারাপ, সব বৈদেশিক বিনিয়োগ খারাপ -- সেই অতি সরল এবং অতি দুর্বল যুক্তি আমি মানতে রাজি না। কারন Daewoo না এগিয়ে এলে আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের যাত্রাও শুরু হতো না। কারন গ্লোবালাইযেশানের পিঠে সওয়ার হয়েই এই দেশগুলো বর্তমানে পৃথিবীর অর্থনীতির ভারসাম্য বদলে দিচ্ছে। খোদ ইউরোপ আমেরিকা আজ আর হালে পানি পাচ্ছে না এশিয়ার কাছে।

বৈষম্য এবং গরীবের কল্যাণের কথা ভূলে যাচ্ছি না। কিন্তু আমার প্রিয় উক্তিগুলোর একটা এখানে উদ্ধৃত করি - You cannot redistribute wealth without creating wealth in the first place. নাইলে সাম্য সকলেরই দারিদ্র্যের সাম্য।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সৌরভ এর ছবি

অনেকদিন পরে মচমচে সুবিনয় মুস্তফী।
আহা!


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অতিথি লেখক এর ছবি

দেশের সব যুবক কাজে ডুবে গেলে ফেন্সিডিলগুলার কি হবে? কি হবে এত কষ্ট করে হেরোইনের প্যাকেটগুলো এনে? তা ছাড়া বাইরে থেকে যে খয়রাতগুলো আসে, সেগুলোর সুসমবন্টন নিয়েও কেলেঙ্কারি হবে না? কাজেই বাংলাদেশে যত বেশি গরিব আর অশিক্ষিত থাকবে তাহলেই লাভটা বেশি। সেটাই আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সব গ্লোবালাইজেশান খারাপ, সব বৈদেশিক বিনিয়োগ খারাপ -- সেই অতি সরল এবং অতি দুর্বল যুক্তি আমি মানতে রাজি না। কারন Daewoo না এগিয়ে এলে আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের যাত্রাও শুরু হতো না। কারন গ্লোবালাইযেশানের পিঠে সওয়ার হয়েই এই দেশগুলো বর্তমানে পৃথিবীর অর্থনীতির ভারসাম্য বদলে দিচ্ছে। খোদ ইউরোপ আমেরিকা আজ আর হালে পানি পাচ্ছে না এশিয়ার কাছে।

ভাল-খারাপ নৈতিক বর্গ আমি বড় জোর দ্বান্দ্বিকভাবে দেখতে পারি। অবশ্যই বিশ্বায়নের ফলে কিছু দেশ ধনী হয়েছে এবং আরো কিছু দেশের কিছু মানুষ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কিন্তু বিশ্বের সামগ্রিক দারিদ্র এবং নৈরাজ্য বাড়লো কেন? আর যাদের ভাল হয়েছে তারা অসম বাণিজ্যের মাধ্যমেই হয়েছে, মুক্তবাজার-বিরোধী নীতি নিয়েই হয়েছে। বিশ্বায়ন আমাদেরই বেশি দরকার, মুক্তবাজার আমাদেরই বেশি লাভ, যদি তা সুষম হয়। এশিয়ার বেশিরভাগ মানুষ কিন্তু আগের থেকে গরিব এটা ভুলি না, বিশ্বায়নের ফল যে খাদ্যবাণিজ্য এবং তাতে একচেটিয়া ও স্পেকুলেশনের প্রভাব, তা এই প্রথম বিশ্বের সবথেকে বড় কৃষি বিপর্যয় এবং দুর্ভিক্ষ ঘটাতে যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক আইএমএফও বেশিরভাগ সময় ডাটা দিয়ে কথা বলে কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই ভুল বলে। তবে ঠিক কোন ধরনের ডাটা দিতে বলছেন, তা বললে সুবিধা হতো। ডাটার পাশাপাশি পলিসি নিয়েও কথা বলা দরকার।
আর এইটা একটা লিখেছি, দেখতে পারেন
http://www.sachalayatan.com/faruk_wasif/15666


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রাগিব এর ছবি

বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমার ইদানিং মনে হয়, অর্থনীতি মানব সভ্যতার জন্য প্রচন্ড দরকারী একটা বিষয়, কিন্তু বাংলাদেশে এটা নিয়ে শিক্ষাদানের বেশি আগ্রহ দেখা যায় না। অথচ বাংলাদেশের জন্য হয়তোবা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের পাশাপাশি ভালো অর্থনীতিবিদদেরও বিশাল প্রয়োজন আছে।

আচ্ছা, একটা প্রশ্ন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং মোবাইল কোম্পানীগুলোর exponential growth, তার প্রভাব -- এইসবের উপরে কোনো একাডেমিক পর্যায়ের গবেষণা হয়েছে কি? নিদেন পক্ষে আপনি যে হিসাব গুলো করলেন, সেরকম কিছু? অর্থনীতির ছাত্রদের জন্য বেশ ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় হতে পারে এটা।

ধন্যবাদ।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

আলমগীর এর ছবি

আমাদের সময় যে ছেলটা অর্থনীতির প্রথম ছিলো, সে ক্যাডেটের সায়েন্স গ্রুপের, সিলেট বোর্ডে স্ট্যান্ড করা। আগে পরে আরো দু এক ব্যাচে এরকম নজির আছে।

দিগন্ত এর ছবি

ছোটো একটা পরিসংখ্যান - বাংলাদেশ সত্যি লোকসান করছে পরিষেবা খাতে। লোকসানের পরিমাণ ২০০৬-০৭ সালে ছিল ১২৬১ মিলিয়ন ডলার যা আগের বছরের ১০২৩ মিলিয়ন ডলারের চেয়ে ২০% মত বেশী।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অয়ন এর ছবি

গত কিছুদিন যাবত সবকিছুতেই আচরণগত অর্থনীতি দেখি। এই জিনিস বহুত মজার। তারেক জিয়া জেলে কেন, কারণ বাংলাদেশে গরম বেশী হো হো হো

বিদেশী বিনিয়োগরে দোষ দেয়ার কিছু পাই না। নেগোশিয়েশন বহুত বড় জিনিস। এই জিনিস না জানলে বিদেশীরা আইসা ন্যাংটা কইরা রাইখা যাবে, কিচ্ছু করার নাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।