বিদায়, সলঝেনিৎসিন...

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: সোম, ০৪/০৮/২০০৮ - ৬:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

autoএই মুহুর্তে বিবিসি নিউজের প্রথম পাতায় প্রথম আইটেমটি একজন লেখকের মৃত্যু সংবাদ! কে এই মানুষ? রাজা নন, রাজনীতিবিদ নন, প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী নন। আজকের দিনে একজন লেখকের মৃত্যুর খবর কিভাবে এত বড় সংবাদ হতে পারে?

*

মারা গেছেন যিনি, তাঁর নাম আলেক্সান্দার সলঝেনিৎসিন। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক। রুশ লেখকদের মধ্যে আজ পর্যন্ত পাঁচজন সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার জয় করেছেন। বুনিন, পাস্তের্নাক, ব্রডস্কি, শলোখভ এবং এই আলেক্সান্দার সলঝেনিৎসিন।

মূলত দুটো বই লিখে অমরত্ব লাভ করেন। কি লিখেছিলেন? চড়াই-উৎরাই, বেদনা-কষ্টে ক্লিষ্ট তার জীবন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছিলেন। বীরত্বের জন্যে পদকও জিতেছিলেন। কিন্তু স্টালিনের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লেখার জন্যে তার উপর নেমে আসে চরম বিপর্যয়।

সুদীর্ঘ বিশটি বছর তিনি অতিবাহিত করেন স্টালিনের নির্মম গুলাগ সিস্টেমের ভেতরে। গুলাগ - রক্ত হিম করা এক নাম। ঐতিহাসিকদের হিসাব মতে দেড় থেকে দুই কোটি মানুষের অন্তিম সমাধি। এই দানবের গ্রাসের ভিতরে নিপতিত হন সলঝেনিৎসিন। সাইবেরিয়া থেকে কাজাকিস্তান। জ়েল, শ্রম শিবির, নির্বাসন। বরফ আর ঠান্ডা - ঠান্ডা আর বরফ। ক্ষুধা, রোগ, মৃত্যু। লক্ষ কোটি মানুষের হিমেল বেওয়ারিশ মৃত্যু।

সেইসব অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে একটি বই লিখেন। মাত্র ১৬০ পাতার শীর্ণকায় একটি উপন্যাস। অথচ গ্রেনেডের মত বিকট শব্দে তার বিস্ফোরণ। ইভান দেনিসোভিচের জীবনে একটি দিন ১৯৬২ সালে প্রকাশ পায়। Totalitarianism নামের যে জ্যান্ত দুঃস্বপ্ন বিরাজমান ছিল, তার এক অমূল্য দলিল। ১৮ বছর বয়সে সেই বই পড়েছিলাম -- সলঝেনিৎসিনের ভাষায় সেই দোজখের বিবরণ মনের ভেতর আজ অব্দি গেঁথে আছে।

উইকি থেকে উদ্ধৃতি -

The story is set in a Soviet labor camp in the 1950s, and describes a single day of an ordinary prisoner, Ivan Denisovich Shukhov. Its publication was an extraordinary event in Soviet literary history—never before had an account of "Stalinist repression" been openly distributed. The editor of Novy Mir, Aleksandr Tvardovsky, wrote a short introduction for the issue, titled "Instead of a Foreword," to prepare the journal's readers for what they were about to experience.

*

সোভিয়েত রাষ্ট্রের কুদৃষ্টি তার উপর আরো প্রবলভাবে নিক্ষিপ্ত হয়। কেজিবির জুলুম চলে নানা ভাবে। তিনি তখন গোপনে ঝড়ের বেগে লেখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। লিখছেন তার সাহিত্য জীবনের বিশালতম সৃষ্টি, তার ম্যাগনাম ওপাস - গুলাগ দ্বীপপুঞ্জ (The Gulag Archipelago)

ইভান দেনিসোভিচ যতই ছোট, গুলাগ দ্বীপপুঞ্জ ততই বৃহদাকার। মোট সাত খন্ডে প্রায় দুই হাজার পাতার অনুসন্ধান-ধর্মী প্রামাণ্য বই। অনেকের মতে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নন-ফিকশন গ্রন্থ। আবারও উইকি থেকে -

The sheer volume of firsthand testimony and primary documentation that Solzhenitsyn managed to assemble in The Gulag Archipelago made all subsequent Soviet and KGB attempts to discredit the work useless. Much of the impact of the treatise stems from the closely detailed stories of interrogation routines, prison indignities and (especially in section 3) camp massacres and inhuman practices. There had been works about the Soviet prison/camp system before, and its existence was known to the Western public since the 1930s. However, never before had the wide reading public been brought face to face with the horrors of the Soviet system in this way.

*

ইতিহাসের চাকা সাহিত্যিকেরা ঘুরিয়ে দিতে পারেন কিনা, বলা শক্ত। "তরবারীর থেকে কলম শক্তিধর" - এমন কথাও আমরা অহরহ শুনে থাকি। তবে সত্যিই যদি এমন কোন লেখক থেকে থাকেন, যার কলম শুধু তরবারী কেন, ট্যাংক আর কামানের মতই পরাক্রমশালী ছিল, তাহলে তিনি সলঝেনিৎসিন। সোভিয়েত শাসন ব্যবস্থার যে তথাকথিত নৈতিক মহত্ব, সেই ভিত্তিটাকেই তিনি ঝাঁকিয়ে প্রবলভাবে কাঁপিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। শ্রেণী মুক্তির নাম করে বর্বর অত্যাচার, আর সমাজের নামে ভয়-ভীতি আর বিকৃতি - মহারাজ যে একেবারেই ন্যাংটো, সেই সত্যটা সলঝেনিৎসিনের মত আজান দিয়ে আর কেউ জানাতে পারেননি।

অন্যদের কথা ভোলা সম্ভব নয়। শালামভের সাইবেরিয়া-স্মৃতি - কোলিমার কাহিনী - তার মৃত্যুর পর তাকে অমরত্ম এনে দিয়েছে। চুকোভস্কায়া আর গিঞ্জবার্গ নামের দুই সাধারণ নারী রেখে গেছেন তাদের অসাধারণ জবানবন্দী। কিন্তু সলঝেনিৎসিন-এর অর্জন, সলঝেনিৎসিন-এর অবদান তাদের থেকেও ব্যাপক, তাদের থেকেও গভীর।

*

auto

১৯৭০ সালে তিনি নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। তার চার বছর পরে ১৯৭৪ সালে সলঝেনিৎসিনের রুশ নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যায়, এবং তাকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়। জোরপূর্বক নির্বাসন। প্রথমে জার্মানী, তারপরে সুইজারল্যান্ড হয়ে যুক্তরাষ্ট্র। ঠাঁই নেন বরফাচ্ছাদিত ভার্মোন্ট প্রদেশের এক নির্জন কোনে। হয়তো ফেলে আসা সাইবেরিয়ার তুষার-শুভ্র বিশালত্বই খুঁজছিলেন আবার। সুদীর্ঘ ১৮ বছর তিনি রাশিয়াতে ফিরতে পারেননি।

কিন্তু পাশ্চাত্য সমাজের বস্তুবাদী জীবনধারা আর মূল্যবোধের পচনও তিনি কখনো মেনে নিতে পারেননি। ১৯৯০ সালে সলঝেনিৎসিন তার রুশ নাগরিকত্ব ফিরে পান। আর ১৯৯৪ সালে অবশেষে তার প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমে ফিরে আসার সুযোগ হয় - পুরো বিশ্বের মিডিয়া তখন হুমড়ি খেয়ে পড়ে এই সংবাদটি কভার করার জন্যে। রুশ সাহিত্য সংস্কৃতিতে তার গগনচুম্বী অবস্থান, এমনকি তার চেহারা সুরত - বিরাট দাড়ি ছিল তার - মিডিয়া তাকে নতুন রাশিয়ার এক রকম অলি-পয়গম্বর হিসাবেই দেখতে চেয়েছিল। অনেকটা বলতে পারেন রুশ নেলসন ম্যান্ডেলা। কিন্তু ইয়েলৎসিন আর পুতিনের দ্রুত বদলে যাওয়া রাশিয়াতে তার কথা শোনার লোক তেমন অবশিষ্ট ছিল না। শেষ জীবনে এসে কেউ কেউ তার লেখাকে রুশ জাতীয়তাবাদ আর ইহুদী-বিদ্বেষে দুষ্ট বলেও অভিহিত করেন।

সে যাই হোক, অন্তত ইভান দেনিসোভিচ আর গুলাগ আর্কিপেলাগো-র জন্যেই সলঝেনিৎসিন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বিংশ শতাব্দীর ইতিহাস, কমিউনিজম, লেনিন-স্টালিনের রাশিয়া - এইসব বিষয়ে যতদিন মানুষের আগ্রহ-কৌতুহল থাকবে, ততদিন সলঝেনিৎসিনও হয়ে থাকবেন আমাদের জন্যে অবশ্যপাঠ্য।

মহান লেখকের প্রয়ানে জানাই বিনীত শ্রদ্ধা।

*

এবং আরো কিছু ভিডিও লিংক


মন্তব্য

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

সমাজতন্ত্রের নামে স্তালিনীয় অমানবিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চারকণ্ঠ আলেক্সান্দার সলঝেনিৎসিন ‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍লেখক হিসেবে ছিলেন মহান, বিন্দুমাত্র সংশয়ের অবকাশ নেই তাতে। সারাটি জীবন তিনি সেই সিস্টেমের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছেন। তবে এ-কথাও সত্য, জীবনসায়াহ্নে তাঁর বক্তব্য আর লেখাগুলো ছিলো উগ্র রুশ জাতীয়তাবাদ আর প্রবল ইহুদিবিদ্বেষক্লিষ্ট।

তবু, সুবিনয় ঠিকই লিখেছেন, "অন্তত ইভান দেনিসোভিচ আর গুলাগ আর্চিপেলাগোর জন্যেই সলঝেনিৎসিন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।"

দুর্দান্ত রচনা।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

আলেক্সজান্দার সলঝেনিৎসিন-এর প্রতি আমার শ্রদ্ধা।
ধন্যবাদ সুবিনয় মুস্তফী অসাধারণ এই রচনাটির জন্য।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

ধন্যবাদ সন্ন্যাসী ও রিটন ভাই,

এক বিচারে সলঝেনিৎসিন ভাগ্যবান ছিলেন কারন তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন, প্রায় ৯০ বছরের আয়ুষ্কাল পেয়েছিলেন। কিন্তু সবাই তার মত ভাগ্যবান হননি। গুলাগে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন আরো শত সহস্র লেখক, ঔপন্যাসিক, কবি, নাট্যকার। প্রখর মেধাসম্পন্ন বিজ্ঞানীরাও। এবং এদের অনেকেই আর কোনদিন ফিরে আসেননি।

আধুনিক রুশ সাহিত্যের স্তম্ভ হিসাবে বর্তমানে স্বীকৃত কয়েকজন লেখকের নাম বলা যায় যারা কমিউনিস্টদের নিপীড়নের কারনে প্রাণ হারান - কিংবদন্তীতুল্য ছোট গল্পকার আইজাক বাবেল, মহান কবি ওসিপ মান্ডেলস্টাম, আরেক কবি মারিনা ত্‌স্‌ভেতায়েভা, সুররিয়ালিস্ট কবি দানিল খার্মস। চারণ কবি পিলনিয়াক, থিয়েটার পরিচালক মায়ারহোল্ড-ও এই তালিকায় পরেন। ছোট বড় আরো অনেকে আছেন যারা পরোক্ষভাবে শিকার হন - মায়াকোভস্কি যিনি আত্মহত্যা করেছিলেন, জামিয়াতিন যিনি নির্বাসনে মৃত্যুবরণ করেন, আলেক্সান্দার ব্লক যাকে বলা হয় পুশকিনের পরে রুশ ভাষার সেরা লিরিক কবি। আমাদের যেমন বুদ্ধিজীবি শ্রেণীকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল, রুশদের বেলায়ও সেই ক্ষতি ছিল অপূরণীয়। বিশেষ দ্রষ্টব্য - Night of the Murdered Poets। না পড়লে বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন।

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

মূর্তালা রামাত এর ছবি

সলঝেনিৎসিন সম্পর্কে এতো কিছু জানতাম না । সুন্দর লেখার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।

মূর্তালা রামাত

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

কয়েকদিন আগেই তাকে নিয়ে দ্বিজেন শর্মার একটি লেখা পড়েছিলাম। আর আজকে শুনছি, তিনি আর নেই। যদিও তার কোনো লেখাই পড়িনি। খারাপ লাগছে খুব।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এই মুহুর্তে ব্যানার করা সম্ভব হলো না। কিন্তু সলঝেনিৎসিনের সম্মানে এটাকে স্টিকি করলাম।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

দিবাকর সরকার এর ছবি

লেখাটি খুবই ভালো লাগলো।

দিবাকর সরকার

কীর্তিনাশা এর ছবি

সলঝেনিৎসিনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

এনকিদু এর ছবি

মহারাজ যে একেবারেই ন্যাংটো

চলুক


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আধিপত্যবাদী ক্ষমতার বিপরীত কণ্ঠস্বরকে অভিবাদন।

আর সেভিয়েত ব্যবস্থা নিয়ে আপনার মন্তব্য কিছুটা সরলীকরণ মনে হলেও, এখানে কিছু বলবার নাই।
ধন্যবাদ।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

তথ্যসমৃদ্ধ মনোগ্রাহী পোস্টটির জন্য সুবিনয়কে অশেষ ধন্যবাদ।

সলঝেনিৎসিনকে নিয়ে পাশ্চাত্য মিডিয়ার অতিরিক্ত আগ্রহের কারণে কখনই তার সম্পর্কিত লেখা বা তার লেখা পড়বার আগ্রহ হয়নি। বিবিসি বা এ ধরণের মিডিয়ার প্রচারণাগুলোও একটু এড়িয়ে যাই।
ব্লগ বলেই বোধ হয় পড়ে ফেললাম এবং বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলাম।

নির্যাতনের বিরুদ্ধে সলঝেনিৎসিনের প্রতিবাদী কলমকে শ্রদ্ধা।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সত্তরের দশক শুরু হওয়ার কিছু আগে থেকেই বাংলাদেশে সমাজতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হচ্ছিলো। আমি উত্তরবঙ্গের একটি ছোটো শহরে বেড়ে উঠেছি, সেখানে বামপন্থীদের প্রতিপত্তি যথেষ্ট ছিলো। কৈশোর ও যৌবন শুরুর সময়ে তা আমাদের ভালোই প্রভাবিত করেছিলো।

৭০-এ সলঝেনিৎসিনের নোবেল বিজয়কে আমাদের কাছে পুঁজিবাদী বিশ্বের কুমতলবী আনুকূল্য বলে তুলে ধরা হয়েছিলো। ৭৪-এ যখন বয়স আরো চার বছর বেড়েছে, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমাজতান্ত্রিক দেশ হওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এবং আমরা একটি সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন চোখে ও হৃদয়ে নিয়ে ঘুরছি - এই সময় সলঝেনিৎসিনের সোভিয়েত নাগরিকত্ব বাতিল হলে আমাদের কাছে তা সমাজতন্ত্রের বিশ্বাসঘাতকের উপযুক্ত শাস্তি বলে মনে হয়। তাঁর রচনা পুঁজিবাদীদের দালালি বলে চিহ্নিত হতেও বিলম্ব ঘটে না।

এই দ্বিধা ও সংশয়ের কারণে সলঝেনিৎসিন সম্পর্কে খুব আগ্রহ তখন হয়নি, হওয়া সম্ভব ছিলো না। পরে, অনেক পরে, সলঝেনিৎসিন পড়তে গিয়েও ঐ সংশয়ের বাইরে যাওয়া দুরূহ মনে হয়েছে। তাঁকে খাটো করা নয়, বেড়ে ওঠার বয়সে আমার ঐ মানসিক গঠনই আসলে দায়ী। শেষ বিচারে মনে হয়, আমরা তো আসলে সময়েরই সন্তান। সলঝেনিৎসিনও ব্যতিক্রম নন।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আপনার আর শোমচৌয়ের মন্তব্যে কিছু মিল খুঁজে পেলাম। আসলে খুব বেশী কিছু বলার নেই এই ব্যাপারে - যা বলার তা বইয়ের পাতায় লেখা রয়েছে, আর কোটি মানুষের জীবনে ইতিমধ্যে ঘটে গেছে। সলঝেনিৎসিন শুধুমাত্র একজন স্বাক্ষী, যদিও সবচেয়ে জোরালো স্বাক্ষী। সেই সময়ের প্রামাণ্য দলিল দস্তাবেজ, স্মৃতিকথা, ইতিহাস আর বইপত্র দিয়ে লাইব্রেরীর পর লাইব্রেরী এদ্দিনে ভরে গেছে। গত ১৫-২০ বছরে রিসার্চও আরো বহুদূর এগিয়েছে।

এরপরেও তৃতীয় বিশ্বের অনেক বিপ্লবীদেরই এইসবে বিশ্বাস করতে ঘোর আপত্তি। তা হতেই পারে, বিশ্বাস অবিশ্বাস নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। যে যেটা ভেবে নিজেকে স্বান্ত্বনা দিতে চান, সে সেটা নিয়েই থাকবেন। অবশ্য এর পেছনে কারনও আছে বলে মনে হয়। সেই জমানার লক্ষ লক্ষ বুদ্ধিমান যুবক - সমগ্র তৃতীয় বিশ্বে - তাদের জীবনের আর তাদের সমাজের মডেল হিসাবে ধরে রেখেছিল সোভিয়েত রাষ্ট্রকে। যদিও কেউই কাছে থেকে কিছু দেখেনি। শুধু তত্ত্ব বই থেকে যা শিখেছে, তাই চরম সত্য বলে ধরে নিয়েছে। আর বাকি সব মিথ্যা, আর বাকি সবাই বুর্জোয়া দালাল। পরে গিয়ে তাদের স্বপ্নভঙ্গটা এতখানি নির্মমভাবেই হয়েছে, আর সোভিয়েত রাষ্ট্রের স্বরূপ এতটাই হিংস্র বলে প্রমাণিত হয়েছে, যে denial ছাড়া অনেকেরই আর কোন গত্যন্তর নেই। এই কারনে তাই এই বিষয়ে বিতন্ডায় না যাওয়াই শ্রেয়।
------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ভুল বোঝাবুঝি হলে দুঃখিত, সুবিনয়।

আমি কিন্তু কোনো বিতর্কের সূত্রপাত করতে চাইনি। তা মোটেও আমার উদ্দেশ্য ছিলো না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নও নয়। আমি শুধু একটা ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম যা সত্তরের দশকে খুব বাস্তব ছিলো এবং যা আমাদের জীবনে একটা বড়ো ছাপ রেখে গেছে।

কোনো রাজনৈতিক বিশ্বাসে আমার অবিচল আস্থা নেই, সুতরাং সলঝেনিৎসিন সম্পর্কে আমার কোনো বিরাগ কিন্তু নেই। যা বলতে চেয়েছি তা এই যে, সত্তরের দশকে বেড়ে ওঠা আমাদের এক ধরনের মানসিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়ে আছে এবং আমাদের কারো কারো তা থেকে পুরোপুরি উদ্ধার ঘটেনি। আমি সেই দলের এক প্রতিনিধি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

স্নিগ্ধা এর ছবি

সুবিনয় - প্রথমেই ধন্যবাদ চমৎকার পোস্টটির জন্য!
সলঝেনিৎসিনের সাথে আমার প্রথম পরিচয় 'ক্যান্সার ওয়ার্ড' এর মধ্য দিয়ে (এখন আর কিচ্ছু মনে নেই যদিও) - আর কিছু তাঁর পড়া হয়ে ওঠে নি।

একটু হয়তো অনধিকার চর্চা হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আপনার আর মুহাম্মদ জুবায়েরের কথোপকথনে রবাহুতের মত অংশ নিতে বাধ্য হচ্ছি। তার কারণটা অবশ্য নিতান্তই ব্যক্তিগত। ব্যক্তি হিসেবে আমি মার্ক্সবাদ কে 'তত্ত্ব' হিসেবে, এনালিটিক্যাল ফ্রেইমওয়ার্ক হিসেবে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তার মানে এই না যে, আমি মনে করি ঐ তত্ত্বই শেষ কথা। সলঝেনিৎসিন যা লিখে গেছেন, আর শুধু তিনিই বা কেন আরো হাজার হাজার সাক্ষ্য যারা দিয়ে গেছেন, তা সত্যি এবং তা ওই আমার 'শ্রদ্ধেয়' মার্ক্সবাদী তত্ত্বের অনুসারীদেরই কৃতকর্ম।

আমি মনে করি যে কোন কিছুকেই নিজের সুবিধামত - ক্ষমতা থাকলে - বাঁকানো সম্ভব। তা সে ধর্মই হোক আর মার্ক্সবাদই হোক। পূঁজিবাদকে নিয়ে এত যে সমালোচনা আর বিতর্ক, তার কারণ পৃথিবী জুড়ে পূঁজিবাদেরই রাজত্ব। আজকে যদি বেশীরভাগ সমাজব্যবস্থা সমাজতান্ত্রিক হতো, তাহলে সেটার আরো নতুন নতুন সব অপকীর্তি দেখার অবকাশ আমাদের ঘটতো। আর পূঁজিবাদ নিয়ে আমিও সমালোচনা করি, কিন্তু আমি সত্যি মনে করি এই 'বাদ' থেকেও পাওয়ার ভালো অনেক কিছু আছে। সবচাইতে প্রচলিত যে আর্গুমেন্ট - ইন্ডিভিজুয়াল ওনারশিপের ইন্সেনটিভ - আমি সেটাকে অস্বীকার করতে পারি না।

আজকের পৃথিবীতে মার্ক্সবাদকে অবসলিট বলে ফেলে না দিতে চাইলে, তাকে রিকনসেপচুয়ালাইয করতেই হবে - অতীতের সব কুকীর্তিগুলো সুদ্ধ। আর ক্যানাডাও তো পূঁজিবাদী - হোক ওয়েলফেয়ার স্টেট সিস্টেম - এমেরিকার চাইতে তো ভালো আছে।

আর সবচাইতে বড় কথা আমি নিজে এই পূঁজিবাদের সুবিধাগ্রহীতা! আমি এমেরিকায় বসে যে সুযোগ গুলো পাচ্ছি আর তা ভোগ (এবং উপভোগ) করছি সেটাকে অস্বীকার করবো কোন মুখে? বিশেষ করে রিসার্চের যে সুবিধা এখানে পাই, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য! বাংলাদেশের ওপর বই বাংলাদেশে পাই না, পাই এখানকার এমেরিকান লাইব্রেরিতে।

আমার মনে হয় মুহাম্মদ জুবায়ের কমিউনিজমকে ঠিক ডিফেন্ড করছিলেন না, বরং বলতে চেয়েছিলেন যে তাঁর মানসিকতা বেড়ে ওঠার সময় মার্ক্সবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিলো, সে প্রভাব আজিও কিছুটা বর্তমান। (মুজুদা, ঠিক বললাম কি?)

খামোখাই কেন এই অযাচিত অংশগ্রহণ? কারণ, গত কিছুদিন যাবৎ বিভিন্ন মন্তব্যে/ আলোচনায় আমার বক্তব্যে হয়তো এটা মনে হতে পারে যে আমি পূঁজিবাদকে ভীষণভাবে ঘৃণা করি বা মার্ক্সবাদকে পরম আরাধ্য বলে মনে করি। করি না। তাই, নিজের কাছেই নিজের অবস্থানটা পরিষ্কার করলাম মাত্র।

সুবিনয় এবং মুহাম্মদ জুবায়ের, আপনাদের অনুমতি ছাড়াই এই 'নাক গলানো'র জন্য আন্তরিক ক্ষমা চেয়ে রাখলাম হাসি

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

স্নিগ্ধা, আমার বলা-বক্তব্য বিষয়ে তোমার অনুধাবন ঠিক আছে। সচলের লেখক-পাঠকদের অধিকাংশ বয়সে নবীন এবং সত্তর দশকের বাস্তবতা তাঁদের অজানা। আমি সেই দশকের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে একটা আলাদা পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরতে চেয়েছিলাম।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুজিব মেহদী এর ছবি

সাহসী এই কলমযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা।
................................................................
জেতা মৎস্য গিলে বকে মনুষ্য খায় বাঘ-ভালুকে
রহস্য বোঝে না লোকে কেবল বলে জয়।
(দীন দ্বিজদাস)

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

মনজুরাউল এর ছবি

সলঝেনিত্ । এই আলোচনায় অনাবশ্যক ভাবে ঢুকে পড়লাম।

এ প্রসঙ্গে শোহেইল,জুবায়ের আর ফারুকের সাথে একমত। তবে পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়া হাইপ বা মিডিয়া ব্যুম নিয়ে কিছু কথা আছে।
সেলঝেনিত্ কে নিয়ে ওই মিডিয়াগুলো যা করেছে তা একটা প্রজেক্টের অধীনেই করেছে। সেই প্রজেক্ট হচ্ছে সমাজতন্ত্র, কমিউনিজমকে বিভত্ স ,কুত্ সিত-কদাকার ভাবে রিপ্রেজেন্ট করা। নিকট অতিতে বিবিসি'র চ্যানেল ফোর মাওসেতুংকে নিয়ে বিতর্কীত এক প্রগ্রাম প্রতি দিন দেখাত। ওই বিবিসি থেকেই 'উপহার' হিসেবে পাওয়া একটা ডকুমেন্টরি আমাদের 'প্রগতিশীল' চ্যানেল 'একুশে টেলিভিশন'জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের ভরাট গলায় বাংলা ডাব করিয়ে রোজ দেখাতো (চ্যানেলটি ব্যান হওয়ার আগে)। বিষয় কী?

লেনিনের বলশেভিক সৈন্যরা কী বিভত্স কায়দায় শেষ জার নিকোলাস এবং তার পরিবারের লোকদের হত্যা করেছিল, কী ভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে মারা গেছিল, কী ভাবে নিরীহ মানুষকে কচুকাটা করা হয়েছিল এই সব বয়ান। একটু গভীর ভাবে পরখ করতেই দেখা গেল কিছু সিনেমার ফুটেজ কম্পাইল করে পুরো ডকুটা কৌশল করে বানানো হয়েছে ! এরকম আরো ডজন ডজন এ্যাডাপ্টেশন তৈরি করেছে পশ্চিমা মিডিয়া। লাগাতার অর্ধশতাব্দী ধরে তারা নিরলস ভাবে এই কাজ করে যাচ্ছে। সলঝেনিত্ তাদের লিভিং লিজেন্ড হিসেবে রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

তার পরও মাত্র একটি কারণে তাকে এ্যাপ্রিশিয়েট করা যায়, সোভিয়েত অচলায়তনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ । ওই পর্যন্তই। তার বিদ্রোহ প্রকাশের ভঙ্গি বা লক্ষবস্তু নিয়েও সমস্যা আছে।

সুলেখার জন্য ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য ।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

তার পরও মাত্র একটি কারণে তাকে এ্যাপ্রিশিয়েট করা যায়, সোভিয়েত অচলায়তনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ । ওই পর্যন্তই। তার বিদ্রোহ প্রকাশের ভঙ্গি বা লক্ষবস্তু নিয়েও সমস্যা আছে।

ক্ষমতার সম্মুখে বিদ্রোহ মানুষকে মহান করে, কিন্তু সেই মহত্বকে আবার সেই বিদ্রোহকে অর্জনও করে নিতে হয়। সোলঝিনিতসিনের জীবনে এর অভাব ছিল বলা যায়।

বাবা অভিজাত ভূস্বামী কাম জারের বাহিনীর কর্মকর্তা, বিশ্বাসে নিজেও ছিলেন রুশ অর্থোডক্স চার্চের ঘোর সমর্থক। তাঁকে দেখে ভারতীয় বিপ্লবী এবং পরে ঋষি অরবিন্দের কথা মনে আসে। অরবিন্দ বিদ্রোহ করে জেলবাসী হন এবং জেলে ভগবান কৃষ্ণের দেখা পেয়ে বদলে যান ঋষিতে। অসামান্য প্রতিভাধর অরবিন্দকে তবু পরিত্যাগ করা যায় না। সোলজিনিতসিন ছিলেন রেড গার্ডের ক্যাপ্টেন, পরিণত হলেন জারপ্রেমী এবং কমিউনিস্ট বিদ্বেষীতে। স্ট্যালিন বিরোধীদের মধ্যে বুর্জোয়া যেমন ছিল তেমনি অনেক কমিউনিস্টও ছিল। উভয় তরফই সেখানে নির্যাতিত হয়েছিল। কিন্তু বিরোধিতার কারণ আমলে নিলে ব্যক্তির বিরোধিতার রাজনৈতিক তাতপর্যটি ধরা পড়ে। মতবাদের দিক থেকে সোলঝিনিতসিন বুর্জোয়া মানবতাবদীর চোখেও প্রতিক্রিয়াশীল গণ্য হন: তাঁর নাতসিদের প্রতি সহানুভূতি, উগ্র রুশ জাতগর্ব (শোভিনিজম), প্রকারান্তরে সার্বিয়ার মুসলিম গণহত্যাকারী ঘাতকদের সমর্থন এবং গোঁড়া ধর্মীয় মতবাদপুষ্ট চিন্তাধারার কারণে। ইহুদী বিদ্বেষের কথা তো সুবিনয় নিজেই বলেছেন। একই কথা কি টলস্টয় সম্পর্কে বলা যায়? টলস্টয় আধ্যাত্মবাদী ছিলেন কিন্তু ছিলেন মেহনতির মুক্তির সহযাত্রী এবং যাজকতন্ত্রের ঘোর বিরোধী। আর সাহিত্যকৃতির বিচারেও এ তুলনা অসম। নিজ দেশেও তিনি পরে জনপ্রিয়তা হারান এসব কারণে। তিনি নিজে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান করতেন। কিন্তু নিম্ন রেটিংয়ের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।

কেবল লেখার জন্য নয়, নাতসিদের পক্ষাবলম্বনকারী বিশ্বাসঘাতক রুশ জেনারেল ভ্লাসভ এর প্রতি সমর্থনের কারণেই তাঁকে গুলাগে পাঠানো হয়। তাঁর দৃষ্টিতে হিটলারের থেকে স্ট্যালিন খারাপ। অতএব সোভিয়েত ইউনিয়ন দখলকারী নাতসিদেরও তার ততটা ভয়ানক মনে হয়নি।

General Vlasov collaborated with the Nazis after having being captured? Solzhenitsyn found a way to explain and justify the treason. He wrote:

`Vlasov's Second Shock Army ... was 46 miles (70 kilometres) deep inside the German lines! And from then on, the reckless Stalinist Supreme Command could find neither men nor ammunition to reinforce even those troops .... The army was without food and, at the same time, Vlasov was refused permission to retreat ....

`Now this, of course, was treason to the Motherland! This, of course, was vicious, self-obsessed betrayal! But it was Stalin's .... It can include ignorance and carelessness in the preparations for war, confusion and cowardice at its very start, the meaningless sacrifice of armies and corps solely for the sake of saving one's own marshal's uniform. Indeed, what more bitter treason is there on the part of a Supreme Commander in Chief?'

Aleksandr I. Solzhenitsyn, The Gulag Archipelago, 1918--1956. An Experiment in Literary Investigation I--II (New York: Harper & Row, 1974), p. 253, note.

কিন্তু ইতিহাসের পরিহাস এই যে, তাঁর হাতেই উঠে এল এক মানবিক ট্র্যাজেডির ধারাভাষ্য।

২. ট্রটস্কি প্রমুখও কিন্তু স্ট্যালিনের ঘোর বিরোধী ছিলেন। কিন্তু তাঁরা বুর্জোয়া মিডিয়ার হাতিয়ার হতে দেননি নিজেদের। স্ট্যালিনের হাতে মারা যাবেন জেনেও ট্রটস্কি, শ্রমিক শ্রেণীর ভ্রুণরাষ্ট্র সোভিয়েতকে হিটলারের হাত থেকে রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন।

স্ট্যালিন এবং সোভিয়েত রাষ্ট্রের নিপীড়ক ভূমিকার সমালোচনা ছাড়া আজকে কমিউনিস্ট আন্দোলন নিজেকে শুদ্ধ করতে পারে না। কিন্তু তাঁকে নরঘাতক এবং অশুভ মূর্তিতে দেখতে চাওয়ার দৃষ্টির মধ্যে আমি বিদ্বেষই দেখতে পাই, ক্রিটিকাল পর্যালোচনা পাই না। যে দুই কোটি লোকের হত্যাকাণ্ডের কথা বলা হয়, তা বিশ্বাস্য নয়। এই দুই কোটিই আবার হিটলারের বাহিনীর হাতে রাশিয়ায় মারা যায়, এই দুই কোটিই অনাহারে মারা যায়। মানুষ মরেছে বিপুল হারে সত্য, কিন্তু সত্যকে ফেনিয়ে তুললে তা আখেরে বুমেরাং-ই হয়। এ দিক থেকে আমার অবস্থান স্নিগ্ধার অবস্থানের কাছাকাছি। কেবল কিঞ্চিত ‌ক্লাস-বায়াসড' (?) এই যা।

৩ . সুবিনয় লিখেছেন:

এরপরেও তৃতীয় বিশ্বের অনেক বিপ্লবীদেরই এইসবে বিশ্বাস করতে ঘোর আপত্তি। তা হতেই পারে, বিশ্বাস অবিশ্বাস নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। যে যেটা ভেবে নিজেকে স্বান্ত্বনা দিতে চান, সে সেটা নিয়েই থাকবেন। অবশ্য এর পেছনে কারনও আছে বলে মনে হয়। সেই জমানার লক্ষ লক্ষ বুদ্ধিমান যুবক - সমগ্র তৃতীয় বিশ্বে - তাদের জীবনের আর তাদের সমাজের মডেল হিসাবে ধরে রেখেছিল সোভিয়েত রাষ্ট্রকে। যদিও কেউই কাছে থেকে কিছু দেখেনি। শুধু তত্ত্ব বই থেকে যা শিখেছে, তাই চরম সত্য বলে ধরে নিয়েছে।

হ্যাঁ বিষয়টা যদি বিশ্বাস-অবিশ্বাসের হয় তাতে অবশ্যই আপত্তি রয়েছে, আমার মতো না বিপ্লবী না বুর্জোয়ারও। আসল বিপ্লবীরা তো আরো পারবেন না। কারণটা আমরা তৃতীয় দুনিয়ার বাস্তবতা এবং প্রথম দুনিয়ার নিপীড়িতদের চোখ দিয়েই বিশ্বকে দেখতে চাই বলে কি? সেখানে পুঁজিবাদ, ধনিকশ্রেণীর গণতন্ত্র, বাজারের লুণ্ঠন, দেশে দেশে আগ্রাসন, সভ্যতার বিমানবীকরণ ইত্যাদি দেখে যদি এই কথাগুলোকেই ঘুরিয়ে বলি:

প্রথম বিশ্বের অনেক স্বচ্ছল-সুবিধাভোগীরই এইসবে বিশ্বাস করতে ঘোর আপত্তি। তা হতেই পারে, বিশ্বাস অবিশ্বাস নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। যে যেটা ভেবে নিজেকে সান্তনা দিতে চান, সে সেটা নিয়েই থাকবেন। অবশ্য এর পেছনে কারনও আছে বলে মনে হয়। এই জমানার লক্ষ লক্ষ বুদ্ধিমান যুবক (যুবতী) - তৃতীয় বিশ্বে তাদের জনগণের অমানুষিক বাস্তবতা এড়িয়ে_ তাদের জীবনের আর তাদের সমাজের মডেল হিসাবে ধরে রেখেছিল পুজিঁবাদ আর কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রকে। যদিও তারা কাছে থেকে অনাচার দেখেছে কিন্তু সামান্যই শিখেছে। বাস্তবতা এড়িয়ে শোষকদের বিদ্যায়তনে শুধু তত্ত্ব ও বই থেকে যা শিখেছে, তাই চরম সত্য বলে ধরে নিয়েছে।

এরকম করে চাইলে বলা যায়। অথচ এসবের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। আমরা যারা নিজেদের কমিউনিস্ট ঐতিহ্যের ভেতরে রেখে তার অবদান মনে রেখেই ভুল ও বিপর্যয় থেকে শিখতে চাই; চাই নতুন যুগের জন্য প্রস্তুত হতে, চাই ব্যক্তিপূজাকে খারিজ করে মতাদর্শের নামে নতুন ধর্ম কায়েমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, জনগণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করতে। তারা কিন্তু সোভিয়েতকে বা মার্ক্সবাদকে ডিফেন্ড করার থেকে বর্তমান বাস্তবতাকে বোঝা ও পাল্টানোয় বেশি সময় দিতে চায়। এবং শিখতেও চাই সমালোচনা থেকে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিল গেটসীয় মিডিয়া আর কলোনিয়াল মানসিকতার বিবিসির মতোই তাঁরা আমাদের সামান্য দ্বিরুক্তিও সহ্য করেন না। কিন্তু সংগঠিত প্রতিরোধ করতে গেলে একটা আদর্শ লাগে, কর্মসূচি লাগে। মার্ক্সবাদ গোল্লায় যাক, সেই মতাদর্শ ও সংগঠিত আহ্বান তো আর কোথা থেকে আসছে না। তাই নিজেদের ভুলকে নিজেরাই সংশোধন করে কাজ করে যাওয়া ছাড়া উপায় কী?

আমি কি কোথাও বলেছি,

‌বাকি সব মিথ্যা, আর বাকি সবাই বুর্জোয়া দালাল।
? বলিনি। তাহলে কেন এমন আক্রান্ত বোধ করা! এক্ষণে তাই বলতে হচ্ছে, 'লূটেরাদের বিশ্বব্যবস্থার (বিশ্বের সাধারণ সম্পন্ন মানুষদের কথা বলা হচ্ছে না) মিথ্যা ও মানববিনাশী কাজকর্মের একটা যোগ্য সমালোচনা না করলে কীভাবে বুঝি যে, আপনি এসবের সমর্থক নন?

সোলঝিনিতসিনকে মৃত্যুকালে তাঁর প্রাপ্য সম্মান কিন্তু আমি নিঃশর্তেই দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মেঘলা আকাশের ছায়ায় তা আর বুঝি সম্ভব হয় না।
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

ফারুক ভাই, আশা করি আমার কোন কথায় অহেতুক আপনার বিরক্তি উৎপাদন করি নাই। আমি চেষ্টা করি ডিসকাশন যেন ব্যক্তি পর্যায় মোড় না নেয়। যাক, এই বিতর্কের শেষ নাই। ২০০৮ সালের বাংলাদেশে পুঁজি আর শ্রমের ব্যালেন্স যে নাই, এতটুকু ধ্রুব সত্য। কোথায় গিয়ে যে স্বার্থক ব্যালেন্স মিলবে, সেইটারই খোঁজে আছে সবাই।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

প্রিয় সুবিনয়দা, সত্যিকার অর্থে আমিও খুব সতর্ক ভাবে এড়িয়ে যাওয়ার কিংবা খোলাখূলি স্বীকার করায় আগ্রহী। আমার মন্তব্যে আমি যে অভিবাদন প্রয়াত লেখককে দিয়েছি, তা মন থেকেই দিয়েছি। বাকিটা মতের ও পদ্ধতির পার্থক্য। এ নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু আমার ধারা নির্বিচারে আক্রান্ত হলে, আমাকে তো ডিফেন্ড করতেই হয়। ওটুকু না করলে নিজের কাছে অপ্রিয় হই।

আর ব্যক্তি তো তার পরিপার্শ্ব তার বিশ্বাস-অবিশ্বাস, তার দেশ-কাল নিয়েই ব্যক্ত হয়। সেকারণে তৃতীয় বিশ্ব এবং যুবকদের বিষয়টাতেই কেবল আমার আপত্তি নয়, সমালোচনা ছিল।

এছাড়া পুরো লেখাটা উপভোগ্য এবং প্রয়োজনীয় ছিল।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

তানবীরা এর ছবি

আমারও বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো তার প্রতি

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

রায়হান রশিদ এর ছবি

সুবিনয় মুস্তফীকে ধন্যবাদ তথ্যবহুল এ লেখাটির জন্য। সলঝেনিৎসিনকে নিয়ে দেখেছি অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের কোন শেষ নেই। এক পক্ষ তাকে দেখেছে নিপীড়নি ব্যবস্থার বিরুদ্ধের লেখকের "কলম" হিসেবে, তেমনি আরেক পক্ষকে দেখেছি সবসময় সন্দেহ ছড়িয়ে যেতে তাঁর এবং তাঁর লেখনীর বিরুদ্ধে। সন্দেহ ছড়ানোর ধরণটাও খুব পুরনো। কখনো তা করা হয়েছে সোভিয়েত ব্যবস্থার সমালোচনাকে "সরলীকরণ" বলে প্রচারের মাধ্যমে, আবার কখনো তা করা হয়েছে পশ্চিমা পুঁজিবাদী মিডিয়ার "অপপ্রচার" বলে চালানোর চেষ্টা করে। তথ্যের এমন অবাধ প্রবাহের যুগে আশা করা যায় মানুষ অন্তত কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তা চেনার মত অবস্থানে রয়েছে আজ।
"মুক্তাঙ্গনঃনির্মাণ ব্লগে" কাছাকাছি কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ কয়েকদিন হল। পড়ে দেখতে পারেন: এখানে অথবা এখানে

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

প্রিয় রায়হান রশীদ,
আবডালের মার বেশি লাগে। আমারও লাগলো। আমার প্রথম মন্তব্যে প্রয়াত লেখকের প্রতি এ মন্তব্যটি কি আপনি খেয়াল করেছেন?

আধিপত্যবাদী ক্ষমতার বিপরীত কণ্ঠস্বরকে অভিবাদন।

বাকি যে আলোচনা হয়েছে তা ইতিহাস ও ব্যক্তির মূল্যায়ন সম্পর্কিত। সেখানে আমারও ভুল হতে পারে। কিন্তু শুনিয়ে শুনিয়ে বলবার ঢংয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে সেই পুরনো যুক্তিগুলো দেখে আত্মবিশ্বাসই বাড়লো আমার যে, বোধহয় ভুল হয়নি। দয়া করে, আড়ভাষে কথা না বলে, আমার ওপরের আলোচনাকে ধরে ধরে খণ্ডন করবেন? নইলে এসব বলে কী লাভ ভাই?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রায়হান রশিদ এর ছবি

ফারুক ওয়াসিফ,
আপনার উপরের মন্তব্যটা পড়লাম। বুঝতে পারছি কোনটাকে "আবডালের মার" বলেছেন। আপনাকে না ভাই, এক পুরনো বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে লিখেছি, যার সাথে বেশীর ভাগ সময়ই তর্ক করে কাটে। আপনাকে কোলাটেরল ড্যামেজের শিকার হতে দেখে দুঃখ প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে প্রিসিশন এ্যাটাক করার চেষ্টা করবো।

মনজুরাউল এর ছবি

আবার কখনো তা করা হয়েছে পশ্চিমা পুঁজিবাদী মিডিয়ার "অপপ্রচার" বলে চালানোর চেষ্টা করে। তথ্যের এমন অবাধ প্রবাহের যুগে আশা করা যায় মানুষ অন্তত কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তা চেনার মত অবস্থানে রয়েছে আজ।

ঠিক। বিলকুল ঠিক।তথ্যের এমন অবাধ প্রবাহের যুগে মানুষ কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যে তা চেনার মত অবস্থায় থাকার পরও বিশ্বজোড়া মানুষকে বিশ্বাস/মেনে নিতে হয়েছিল যে, সাদ্দামের হাতে 'মারাত্মক বিধ্বংশী মারনাস্ত্র ' আছে !

এখানে কোন সন্দেহটন্দেহ নেই। সেলঝেনিত্ সিন অনেক বড় মাপের লেখক ছিলেন তাতে কারো কোন সন্দেহ নেই , কিন্তু এই মাপের কোন নির্মাতা ছিলেন যে সোভিয়েতের নির্মানকেই অস্বীকার করতে পারেন। পশ্চিমা মিডিয়া তাকে ওই পর্যায়ের 'যুগোর্ত্তীর্ণ ব্যক্তিত্ব' হিসেবে হাজির করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে।

যার যেটুকু প্রাপ্য তাকে তা-ই দেওয়ায় সমস্যা নেই । সমস্যা তখনই, যখন সেই দেওয়ার মধ্যে একটা বিশেষ মতবাদকে মিথ্যামোড়কে খর্ব-হেয়-বাতিল করার ইন্ধন থাকে।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

রায়হান রশিদ এর ছবি

ইরাকের 'মারাত্মক বিধ্বংশী মারনাস্ত্র ' বিষয়ে আপনার বক্তব্যের সাথে দ্বিমত নেই।

সলঝেনিৎসিনের বিষয়ে যে কথাগুলো লিখলাম তার সূত্র কিন্তু বিবিসি বা পশ্চিমা মিডিয়া না। প্রাক্তন সোভিয়েতের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বহু মানুষের সাথেই তো আলাপ পরিচয় হল। হয়তো মনের টানেই সেখানকার মানুষ কাউকে পেলে আলাপ জমানোর চেষ্টা করি। সুতরাং আমার তথ্যের সূত্র হল মানুষ, মিডিয়া নয়। আর সে সব মানুষ বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন জেনারেশনের। আপনি হয়তো বলবেন এরা সবাই নতুন যুগে বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়ে, এরা তো শুধু মিথ্যাগুলোই শুনেছে। জানেন, আমিও তাই ভাবতাম একটা সময় পর্যন্ত। পরে কথা বলতে গিয়ে তাদের নিখাদ ভয় আর বিতৃষ্ণাটাও উপলদ্ধি করতে পেরেছি। বিশ্বাস করুন, একজনকেও ভিন্নমতের পাইনি আজ পর্যন্ত।

প্রথমটায় মানতে কষ্ট হোতো। পরে বুঝেছি বাংলাদেশে বসে এতদিন যা জেনেছি যেভাবে জেনেছি তা হয়তো পুরোপুরি সত্যি না। জানতে চান প্রাক্তন সোভিয়েতের এই মানুষগুলোর ভয় আর বিতৃষ্ণার উৎস কি? উৎস হল তাদের চার জেনারেশনের সম্মিলিত প্রজ্ঞা আর উপলদ্ধি। সন্তানরা শুনেছে তাদের বাবামার থেকে, তারা জেনেছে তাদের বাবামার থেকে, এভাবে যেতে থাকুন আরো পেছনে। ওদের কথা থেকে আমি অন্তত এভাবেই ব্যপারটা বুঝেছি। সুতরাং পরিচিত কিছু নেতার কথাকে আর কিছু বইয়ের পৃষ্ঠাকে যদি চার জেনারেশনের মানুষের সম্মিলিত প্রজ্ঞা আর রায়ের চেয়েও বড় করে দেখি, তাহলে আমার নিজের বোধেও মানুষ হিসেবে কোথায় জানি এক বিরাট সংকট তৈরী হয়। তত্ত্ব মানুষের জন্য, মানুষ তত্ত্বের জন্য না, সেভাবেই ভাবতে পছন্দ করি। বিতর্কের কিছু নেই ভাই এসব নিয়ে, করার যোগ্যতাও নেই।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

উৎস হল তাদের চার জেনারেশনের সম্মিলিত প্রজ্ঞা আর উপলদ্ধি।

দেখার এই ধরনটা কিন্তু মোটেই উপেক্ষণীয় নয়। তত্ত্ব দিয়ে এটা বোঝা যাবে না ঠিক।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।