ক্রিং ক্রিং টেলিফোন হ্যালো হ্যালো ...

শ্যাজা এর ছবি
লিখেছেন শ্যাজা (তারিখ: বিষ্যুদ, ১১/১০/২০০৭ - ৯:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ক্রিং ক্রিং বেজে ওঠে সেলফোন। ডাক আসে বহুদূরের সেই ছেলেবেলা থেকে। বিস্মৃতির ওপার থেকে। অচেনা কন্ঠ জানতে চায়, সামরানের সাথে কথা বলছি কি? আমি আনোয়ার! আনোয়ার? আমি চিনতে পারি না। আরে, মনে নেই, আমরা একসাথে মাঠে খেলতাম! আমি সিলেটের আনোয়ার!

আমি একছুট্টে চলে যাই ছেলেবেলায়, খুঁজতে থাকি চেনা মুখগুলো। বিস্মরণের গলিগুলোতেও ঘুরে আসি একপাক। আতিপাতি করে খুঁজি সব ঘিঞ্জি গলি। কিন্তু কোথাও আমি খুঁজে পাই না আনোয়ারকে।

আমি সত্যিই চিনতে পারি না। তবে একটা আবছা অবয়ব ফুটে ওঠে আর মুখ থেকে অজান্তেই বেরিয়ে যায়, আনোয়ার! রোগা ঢ্যাঙ্গা আর কালো? ওপাশ থেকে জোরালো হাসির শব্দ আসে, হ্যাঁ হ্যাঁ! সেই রোগা ঢ্যাঙ্গা কালো আনোয়ার! এই তো মনে আছে! ব্যস, ঐটুকুই! আর কিছু মনে পড়ে না। আইএসডি ফোন কানে নিয়ে বেশি চিন্তাও করা যায় না। ওদিকে ফোন হাতবদল হয়েছে বুঝতে পারি। এবারে নারীকন্ঠ ভেসে আসে। আমি আনোয়ারের মিসেস। আপনি তো সামরান। ওর ছেলেবেলার বন্ধু! আপনার কথা আমার সাহেবের কাছে এতো শুনেছি এতো শুনেছি যে আপনাকে কোনদিনও না দেখেও আপনাকে ভীষণ চেনা মনে হয় আর খুব আপন মনে হয়। আপনি ভালো আছেন তো?

আমার অবাক হওয়ার পালা তো কেবল শুরু! কি বলব না বলব ঠিক যেন ভেবে না পেয়েই বলি, ভালো আছি, আপনাকে তো চিনি না, আপনার নামও জানি না কিন্তু আপনি আমার কথা শুনেছেন, আর আপন বলে ভেবেছেন। কি বলব বুঝতে পারছি না! শুনলাম আমার নাকি একটা ছবিও আছে আনোয়ারের কাছে। সাদায় কালোয় ফুলছাপ ফ্রক পরা এক ছোট্ট মেয়ের ছবি। ওপাশের নারীকন্ঠ আবার জানতে চায়, আপনি এখন কেমন হয়ছেন দেখতে?

কেমন? যেদিক দিয়ে হেঁটে যাই, লাইন দিয়ে সব লাশ পড়ে হাসি । দুজনের সম্মিলিত হাসির শব্দে বুঝতে পারি, ওরা ফোন লাউডস্পিকারে রেখেছে! আনোয়ারের স্ত্রী বলে, আপনি কী এখনো আগের মতই অহংকারি? অহংকার? আমার? জবাব আসে, আপনি নাকি খুব অহংকারি ছিলেন। কাউরে পাত্তাই দিতেন না! আমি হেসে ফেলি। আর্জি আসে, ঢাকায় গেলে যেন একবার অবশ্যই অবশ্যই দেখা দেই। অনেকক্ষণ ধরে যে প্রশ্নটা ঠোঁটের ভেতরে আটকে ছিল, বেরিয়ে আসে, আমার ফোন নম্বর কোথায় পেলেন? ফোন নম্বর? চাইলে পাওয়া যায় না এমন কিছু কি এই দুনিয়ায় আছে? তুমি মনে রাখো নাই, ভুইলা গেসো, সেটা অন্য কথা!

সত্যিই লজ্জ্বিত হই। এমন এক বন্ধু, যে সেই ছোটবেলার ছবি এখনো গুছিয়ে রেখেছে, আমাকে মনে রেখেছে, আর এত বছর পরে খুঁজেও বের করেছে তার কথা একটুও মনে না পড়ার জন্যে লজ্জ্বিত হই। ঢাকায় গেলে দেখা করব কথা দিই। ওরা ফোন ছাড়ে আন্তরিকতার উত্তাপ ছড়িয়ে। ভালো থাকার শুভাকাঙ্খা উড়ে আসে যেন সেই ছেলেবেলা থেকে। আমার চোখ ভিজে আসে অজান্তেই!

নাহ। আনোয়ারের শুধু নামটুকু আর একটা আবছা অবয়ব ছাড়া আমার আর কিছুই এখনো মনে পড়ে না। কাল রাত থেকে খুঁজেই চলেছি আনোয়ারকে...


মন্তব্য

আরশাদ রহমান এর ছবি

পড়লাম! আমার ছোটবেলার এক বন্ধু আছে নাম আনোয়ার। ছোট বেলায় একটা গল্পের চরিত্র ছিলো আনোয়ার- আম চোর। তাই আনোয়ার কে চেনাতে আমরা বন্ধুরা বলি আম চোর আনোয়ার হাসি

সৌরভ এর ছবি

তোমার মাথায় একটা গুগল সার্চ দিয়ে দেখো।
নিশ্চয়ই রোদ জ্বলা দুপুরে তোমার স্কুলের আসা-যাওয়ার পথে দাড়িয়ে থাকতো কোন কিশোর। সেই জনই! দেঁতো হাসি



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

কনফুসিয়াস এর ছবি

সৌরভ রে ডিট্টো-
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

শ্যাজা এর ছবি

হাসি


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

মধুশ্রী এর ছবি

শ্যাজুদি
সেইরকম হাসি
মন-ছোঁয়া, সবুজ আর নরম লেখা।
একটুখানি মন-খারাপ-করা আর অনেকখানি ভালো-লাগা।

মধুশ্রী

শ্যাজা এর ছবি

থ্যাঙ্ক্যু ডেস- থুড়ি মধু হাসি


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এই ঝামেলা আমারো অনেক হয়। মাঝেমধ্যে মনে হয়, গুগুল যদি মাথার সাথে লাগিয়ে দেওয়া যেত! পরক্ষণেই মনে হয়, আমার এই কুচিন্তাময় মগজের গোপন কথা ফাঁস হলে মনুষ্য সমাজে টিকতে হবে না আর আমার!!

বিপ্লব রহমান এর ছবি

আহা রে, সোনালী বন্ধু রে!...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

শ্যাজা এর ছবি

হাসি


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।