একুশে বই মেলা বর্ধমান হাউজে না অন্য কোথাও ??

থার্ড আই এর ছবি
লিখেছেন থার্ড আই (তারিখ: শুক্র, ১৫/০২/২০০৮ - ৪:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গ্রন্থ মেলা ২০০৮
একুশের গ্রন্থ মেলার স্থান নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে নানা মহলে । দিন দিন বাড়ছে এর পরিধী এবং দর্শক। বর্ধমান হাউজের ছোট্র চত্বরটিতে এখন আর বই মেলাকে সামাল দেয়া যাচ্ছেনা। বাড়ছে লেখক, প্রকাশক, পাঠক এবং দর্শকও। বাড়ছেনা বাংলা একাডেমী চত্বরের স্থান। হিমশিম খাচ্ছেন একাডেমী কতৃপক্ষ। কোন কোন প্রকাশক বলছেন প্রকাশকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন মেলার আয়োজন কোথায় হবে। বাংল একাডেমী বলছে স্থানের অভাবে বাংলা একাডেমী স্টল বরাদ্ধ দেয়ার ব্যপারে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছেনা।

নানা মুনির নানান মত। বিডি নিউজ আটর্সের লেখাটা দেখে নিজের মন্তব্য না করে পারলামনা। আমার সাফ কথা,' যদি একুশের বই মেলা হতেই হয় তবে বাংলা একাডেমীতেই হতে হবে।'

এবিষয়ে আবদুল মান্নান সৈয়দ, আনিসুজ্জামান ও সৈয়দ শামসুল হকের সাথে আমি সম্পূণ এক মত। ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে ভেঙে খোলা ময়দানে মেলা করার কোন যুক্তি নেই। বধর্মান হাউস চত্বরে মেলা আর জাতীয় প্যারেড স্কোয়াডে মেলার পাথক্য অনেক। খোলা ময়দানে যদি মেলা করতেই হয়, তাহলে আর জাতীয় গ্রন্থ মেলার সাথে একুশে বই মেলার পাথর্ক্য থাকলো কোথায়?

বইমেলায় অনাকাঙ্খিত ভীড় এড়াতে টিকেটের ব্যবস্থা করা সম্পর্কেও মত দিয়েছেন কেউ কেউ, এটি কোন শুভ লক্ষণ হতে পারেনা। এমনিতেই প্রযুক্তির যুগে আমরা বই কিনে পড়া বাদ দিয়েছি, তার উপর যদি আবার টিকিট আরোপ করা হয় তাহলে আরো পাঠক হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। উসবটি অতিমাত্রায় যান্ত্রিক হয়ে যাবে, ধীরে ধীরে বানিজ্যিক রুপ নেবে। আর একজন বই কিনতে আসলে দশজন যদি ফাও আসে তাতে আপত্তির তো কিছু নাই ? পাঁচ সদস্যের একটি বাড়ীতে একখানা বই কেনা হলে সেই বই যদি পাচঁজনে পড়ে, তাদের পড়া শেষে যদি আরো প্রতিবেশীরা ধার নিয়ে পড়ে...ক্ষতিরতো কিছু নাই ?? মেলায় বেড়াতে এসে একজন বই কিনলে বাকী দশজনতো অন্তত মলাট টা নেড়ে চেড়ে দেখবেন, তাই নয় কি ??

আর স্থান সংকুলান না হলে বাংলা একাডেমীর আশে পাশে, সোহরাওয়াদী উদ্যাণ, দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসির পুরো সড়ক, কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরকে ও বিবেচনায় আনা যায়। এক্ষেত্রে পরিবেশবাদীদের দু্:খ পাবার কিছু নাই। চার দেয়ালের ভেরতের বই মেলার ভাবনা চিন্তা না করাই মঙ্গল।

প্রশ্ন উঠতে পারে বধর্মান হাউজের মূল্যবান স্থানটিতে কারা স্থান পাবে। একটি সহজ সমাধান হলো, প্রতি বছর বই মেলায় যে সকল প্রকাশকরা বেষ্ট সেলার হবেন, কিংবা বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে পুরস্কার প্রাপ্ত স্টলগুলো হতে ৫০ টি, নতুন প্রকাশক, নতুন সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী প্রকাশক কিংবা বাংলা একাডেমীর মত জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিবেচনায় এনে আরো ১০০ টি স্টলকে জায়গা থাকা সাপেক্ষে বাংলা একাডেমীর মূল চত্বরে স্থান করে দেয়া হলে, আমার মনে হয় এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।
তবে আমি কোন ভাবেই বাংলা একাডেমী চত্বর থেকে বই মেলা সরনোর পক্ষপাতি নই।

'প্রিয় সচল আপনার মন্তব্য কি?'


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আমি কোন ভাবেই বাংলা একাডেমী চত্বর থেকে বই মেলা সরনোর পক্ষপাতি নই।

থার্ড আই এর ছবি

সহমতের জন্য ধন্যবাদ।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মতে, প্রাধান্য দিতে হবে বইমেলাকে। আরও অনেক প্রকাশনী ও বইয়ের সমাহার, সাথে খাবারের ব্যবস্থা, চলচ্চিত্রের অন্তর্ভুক্তি এবং শিল্প-সাহিত্যের আরও কিছু অঙ্গনের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে একুশে বইমেলার উন্নয়ন ঘটতে পারে। সেজন্যে স্থায়ী কিছু কাঠামোরও দরকার আছে।

বাংলা একাডেমী চত্বরের আশপাশের এলাকা অন্তর্ভুক্ত করে এর সমাধান সম্ভব হলে সবচেয়ে ভাল হয়। কারণ সেক্ষেত্রে বইমেলার ঐতিহ্যের ভিত দৃঢ় থাকে। আর যদি সেভাবে না হয় এবং অন্য কোন সুবিধাজনক জায়গায় স্থানান্তরিত করলে সুবিধা হয় তাহলে অবশ্যই তা-ই করতে হবে। কারণ ঐতিহ্যের চেয়ে প্রগত অনেক অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। দুয়ের মিশেল হলে তো ভালই আর মিশেল না হলে প্রগতিই বিজয়ী হবে, এতোদিন হয়ে এসেছে।

-----------------
মুহাম্মদ

থার্ড আই এর ছবি

বইমেলার স্থান বাংলা একাডেমীতেও থাকবে আবার স্থান সংকুলান না হলে অনত্র সরিয়ে নিতে হবে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড হলে তো সমস্যা!
তবে আশেপাশের স্থান গুলো বাংলা একাডেমীকে দেয়ার প্রশ্ন আসলে অন্যপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হবে, কেননা এই এলাকার প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানই ঐতিহ্যের ধারক। আশেপাশের সড়কগুলো বন্ধ করে ষ্টল করা যেতে পারে। তারচেয়ে বরং মূল মেলা চত্বরে স্টলের সংখ্যা কমাতে হবে। নিয়ম নীতির মাধ্যমে এক সময় অধীক দর্শনার্থীর প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
--------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমি কোন ভাবেই বাংলা একাডেমী চত্বর থেকে বই মেলা সরনোর পক্ষপাতি নই।
আমিও



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

বিপ্লব রহমান এর ছবি

আমি হাসান আজিজুল হকের মতের সমর্থক। বাংলা একাডেমীর ছোট্ট পরিসর কোনোভাবেই আর বইমেলার জনসমুদ্রকে ধারণ করতে পারছে না। ...শেষ পর্যন্ত এটিই হচ্ছে নির্মম বাস্তবতা।

বই মেলা জাতীয় প্যারেড স্কোয়ার বা বাণিজ্য মেলার বিশাল মাঠে স্থানান্তর করা যেতে পারে।

এছাড়া মেলায় প্রবেশের জন্য টিকিটের ব্যবস্থা করা গেলে প্রাপ্ত অর্থ একাডেমী কর্তৃপক্ষ নতুন গবেষণায় কাজে লাগাতে পারবে। এরফলে মেলায় উটকো লোকের উৎপাতও খানিকটা কমবে। ধন্যবাদ।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

থার্ড আই এর ছবি

শুধু জনসমুদ্র ঠেকাতেই যদি মেলা স্থানান্তরের প্রস্তাব আসে তাহলে আমি বলবো একটা নিয়ম নীতি করতে হবে, এক লিফটে যদি আট জনের জায়গা থাকে সেখান যদি আপনি ১৬ জন চড়ে বসেন তাহলে লিফট না চলাটাই স্বাভাবিক। নিয়মনীতির মাধ্যমে একটা নিদিষ্ট সময়ে কত হাজার মানুষ মেলার চত্বরে থাকবেন সেটি নিয়ন্ত্রনের পথ খুঁজতে হবে। কিছু সংখ্যক দর্শনার্থী বের হলে আবার নতুন দর্শকরা ঢুকবেন। সবাই বিকাল বেলা বাদাম পেয়াজু খেতে মেলায় আসলে তো মেলা জনসমুদ্র হবেই !!

---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

বইমেলা বাংলা একাডেমি চত্বরেই হোক।
কেউ কেউ গোটা বাংলা একাডেমিকেই সরানোর যে প্রস্তাব করেছেন সেটার সাথেও আমি সুর মেলাই।

টিকেট ব্যবস্থার সাথে আমি পুরোপুরি না হলেও আংশিক একমত। পরীক্ষামূলকভাবে করে দেখা যেতে পারেই। বই অন্তঃপ্রান মানুষদের অভাব আছে বলে মনে হয় না। আর যদি ২ টি মাত্র টাকার বিষয় হয় তাহলে তো কথাই নেই।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

থার্ড আই এর ছবি

লুৎফুল আরেফীন লিখেছেন:
বইমেলা বাংলা একাডেমি চত্বরেই হোক।
কেউ কেউ গোটা বাংলা একাডেমিকেই সরানোর যে প্রস্তাব করেছেন সেটার সাথেও আমি সুর মেলাই।

বাংলা একাডেমী সরিয়ে ফেলার প্রস্তাবে তীব্র আপত্তি আমার।
আমি বুঝিনা, ঐতিহ্য ভাঙতে এতো উৎসাহ কেন আমাদের !!
ইউরোপে এক খন্ড ঐতিহ্য ধরে রাখতে মিলিয়ন- বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে, আর আমরা ....!
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

আরিফ জেবতিক এর ছবি

বইমেলাকে বাংলাএকাডেমীর পাশাপাশি আশেপাশে ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে । যদি একান্তই পুরোপুরি স্থানান্তর করতেই হয় ( জনসমুদ্র আসলেই ভয়াবহ পর্যায়ে গেছে । আজকের অবস্থা ছিল মিনিবাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে থাকার মতোই চিরেচ্যাপ্টা ) তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ একটি ভালো বিকল্প হতে পারে । বইমেলায় ভিড় কমাতে মেলার প্রতিদিনকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া জরুরী । এর সাথে মেলার কোন সম্পর্ক নেই , কয়েক হাজার লোক শুধু গান শুনতে বইমেলায় ভিড় করে , যা প্রকৃত গ্রন্থ প্রেমিকদের জন্য অসুবিধা সৃষ্ঠি করে ।

বইমেলা যদি বাংলা একাডেমীতেই রাখতে হয় , তাহলে মেলার ব্যাপ্তি তিনমাস করা উচিত । কমপক্ষে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত । তাহলে ভিড় অনেক কমে আসবে বলে আশা করি ।

থার্ড আই এর ছবি

আপনার যুক্তির সাথে অনেকাংশে আমি একমত। তবে মেলা মাঠ জনসমুদ্র হবার অন্যতম কারন হচ্ছে সকল দর্শনার্থীর পছন্দের সময় বিকেল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা। আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জম জমাট আয়োজনগুলোও আমার ধারনা সেই সময়ে হয় থাকে। আমি আগেই বলেছি, আমাদের মানষিকতা বদলাতে হবে। মাছের বাজারে যেতে হলেতো ঠিক ঠিক আমরা ভোর পাঁচার সময় সোয়ারী ঘাটে গিয়ে বসে থাকি, কিন্তু বই মেলায় কেন শুধু বিকেল বেলাই যেতে হবে??

বই মেলাতে প্রতি দিন যে সব নতুন বই প্রকাশ হচ্ছে , বা কোন বইয়ের কাটতি কি, নতুন বই গুলো সম্পর্কে লেখক ও পাঠকদের মূল্যায়ন কি, মেলার সমস্যা ও সম্ভাবনা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই ?? প্রকাশক, লেখক,পাঠকদের সমন্বয়ে এবং টিভি চ্যানেলগুলোর সহযোগিতায় মেলায় গ্রন্থালোচনা ভিত্তিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে বই মেলার মাধূর্য বাড়বে অনেকখানি।

---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।