আমার পাহাড় যাত্রা -০৪ [এক বিষণ্ণ সন্ধ্যায়]

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: বুধ, ১৪/০১/২০০৯ - ১২:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কাঞ্চনজংঘার ধাক্কা হজম করতে বেশ কিছুটা সময় লেগে গেল। যতোই ছবি তুলি না কেন, মনে হয় আরেকটা তুলি। কাঞ্চনজংঘার ব্যাপারে একটা তথ্য জানিয়ে রাখা যেতে পারে, কাঞ্চনজংঘা আর আমরা যেখানে গিয়েছি অর্থাৎ নাথুলা, সিকিমের ভিন্ন দুই অংশে পড়েছে। কাঞ্চনজংঘাতে এখনো পর্যন্ত সাধারণ ট্যুরিস্টদের যাওয়ার তেমন ব্যবস্থা নেই। একটাই আছে, হেলিকপ্টার। উড়ালপথে আপনাকে নিয়ে যাবে কাঞ্চনজংঘাতে। মিনিট ত্রিশেক ঘোরাঘুরি করে আবার ফিরে আসতে হবে। জনপ্রতি খরচা হবে দু'হাজার চারশ রুপী করে। আমরা অনেকজন ছিলাম, তার উপর সময়তেও টানাটানি। মনে মনে শুধু ভাবলাম, "আরেকবার আসতে পারলেই..."

গাড়িতে উঠে বসলাম আবার। এবার অল্পকিছু দূর যাওয়ার পরই সেই বহু আকাংখিত থুকলা। আমাদের সবারই জীবনে প্রথমবার "প্রাকৃতিকভাবে জমাট বাঁধা" বরফ দর্শন। এমনিতেই মিনিট দশেক আগের কাঞ্চনজংঘার ধাক্কা কাটেনি, তার উপর আবার থুকলার এই বরফ। ঘোর একটু কেটে যাওয়ার পর অবশ্য টের পেলাম, এই বরফ খুব উন্নত প্রজাতির না কারণ, সব জায়গায় সমানভাবে নেই - কোন কোন জায়গাতে পাথুরে মাটিও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু একটু পরই বোঝা গেল, সবজায়গাতে বরফ না থাকাতে রক্ষা ! আমি বরফ দেখে অতি উৎসাহী হয়ে, বরফের উপর দিয়েই পাহাড়ে উঠতে গিয়েছিলাম, অল্পের উপর একটা আছাড় খেয়ে ( এবং অবশ্যই উঠার পর দেখে নিয়েছি চারপাশে কেউ দেখে ফেললো কিনা ! ) বুঝে ফেলেছি, দূর থেকে দেখাই উত্তম। জীবনের প্রথম বরফ, কাজেই ঝটপট ফটোসেশনে নেমে গেলাম। বিভিন্ন ভংগিমায় অনেক কেরামতি করে সবার অনেক ছবি তুললাম।

ছবিঃ কিঞ্চিৎ বরফ

ছবিঃ পোজ দিবো কী ! এই পিছলা বরফের উপর দাঁড়াতেই খবর হয়ে যায়

এদিকে বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই একটা সমস্যা শুরু হয়ে গিয়েছে। একেতে আমার বাবার বেশ বয়স হয়েছে, তার উপর বাবা অ্যাজামার রোগী - বাবা মন্দিরের পর থেকেই আমার 'বাবার' মাথা ঘুরতে শুরু করেছে, তাই বাবা থুকলাতে আর গাড়ি থেকে নামেনি, গাড়িতে বসেই বরফ দেখেছে। শ্বাসকষ্টের এই সম্ভাবনার কথা অবশ্য আগেই শুনে এসেছিলাম। অল্প কিছুদিন আগেই আমার এক কাজিন সপরিবারে গ্যাংটক ঘুরে গিয়েছিলো ( হায়!, তখন কড়াকড়ি ছিলো না !)। ওরা গিয়েছিলো সিকিমের অন্যদিকে, যেদিকটায় ইউমথাং ভ্যালী। সেদিকটায় মোটামুটি শেষ যে স্পটে ট্যুরিস্টরা যেতে পারে বহু কষ্টে, তার নাম গুরুদংমার লেক। এই লেক পৃথিবীর অন্যতম উচ্চ হ্রদ, প্রায় ১৭,২০০ ফুট উপরে। যাই হোক, সে হ্রদে যেয়ে আমার সুস্থ, সবল এবং রীতিমত শক্তিমান ভাইও শ্বাসকষ্টে ভুগেছিলো প্রবলভাবে। আমরা তাই আগের থেকেই প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম, সাথে কর্পূর নিয়ে গিয়েছিলাম। শ্বাসকষ্টের মধ্যে কিছুটা কর্পূর শুঁকলে নিঃশ্বাস নেওয়া অধিকতর সহজ হয়। তাই বাবাকে বেশ কয়েকবার কর্পূর শোঁকালাম, আর দেরিও করলাম না।


ছবিঃ ১৪,০০০ ফুট উপরেও মানুষ মুক্তি দেয় নি ক্রিকেটকে !!

নিচে নামতে নামতে আরো বেশ কিছু স্পটে থামলাম,যেগুলিতে উঠার সময় থামি নি। তার মধ্যে রয়েছে আরেকটা বাবা মন্দির। আমি প্রথমে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম, সব জায়গাতে কেবল বাবা মন্দিরই কেন ! পরে অবশ্য কাহিনী জানা গেল। বাবা হরভজন সিং এখানেই মূলত দায়িত্ব পালন করতেন, এখানেই থাকতেন। এ জায়গাতে বেশ বড় একটা মন্দির, যার ভেতর সব ধরণের দেব-দেবী, শিখ গুরু নানক সহ অনেকেরই প্রতিকৃতি দেখলাম - যা বুঝলাম এই বাবা মন্দির আসলে সব ধর্মের সমন্বয়ে করা এক প্রার্থনা ক্ষেত্র। এ বাবা মন্দিরে দেখলাম পূজার পর অসাধারণ স্বাদের প্রসাদ দেয়। আমি একবার খাওয়ার পর লোভে পরে গেলাম। আবার যেয়ে বললাম, গাড়ির ভিতরে আমার "পিতাজি" অসুস্থ, উনার জন্য একটু প্রসাদ দিন। সানন্দে প্রসাদ আমার হাতে দিয়ে দিলো, আমি গাড়ির ভিতর আমার বাবাকে নামমাত্র দিয়ে বাকিটা আমার পেটে পাচার করে দিলাম।

ছবিঃ বাবা মন্দির -২ এর ভিতরের দেব-দেবতা এবং বাবা'র নিজের প্রতিকৃতি

ছবিঃ বাবা হরভজন সিং যেখানে ঘুমাতেন, তাঁর উর্দি

এই বাবা মন্দিরে আরেকটা মজার জিনিশ আছে, তার নাম লাকি কয়েন। ব্যাপারটা আর কিছুই না, একটা ছোট্ট চৌবাচ্চার মত গর্ত (বড়জোর দেড় ফুট বাই দেড় ফুট), সেটা ভর্তি জল। নিয়ম হচ্ছে নিজের থেকে কোন একটা পয়সা সেখানে ফেলতে হয়। সে'টা মোটামুটি অগভীর জলে তলিয়ে যাওয়ার পর, হাত ডুবিয়ে সে'টাকে খুঁজে বের করতে হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনি যে কয়েনটা ফেললেন, সে'টাকেই যে পাবেন এমন নিশ্চয়তা নেই, কারণ অনেকেই কয়েন ফেলে আর খুঁজে পান না। তাঁদের ফেলে যাওয়া সেই কয়েনগুলিও রয়ে যায় সেখানেই। শুরুতেই আমার সেই ভাই এক টাকার কয়েন ফেলে হাত ঢুকিয়ে তুলে আনলো পাঁচ টাকার কয়েন। এবার আমার পালা। আমিও ফেললাম এক টাকার কয়েন, হাত নিচু করে ডুবিয়ে দিলাম। হাতে একটা কয়েন এসে ঠেকলো, ধরতে যাওয়া মাত্র ফস্কে গেল। এবার তো আর খুঁজে পাই না, এদিকে সেই চৌবাচ্চার জল বরফের চেয়েও ঠাণ্ডা বললে কম বলা হয়। আবার দাঁতে দাঁত চেপে হাত ডুবালাম, এবার উঠে আসলো ঠিকই, একটা না দু' দু'টো কয়েন ! এক টাকা আর দু' টকার - আমার নীট লাভ দু'টাকা। নিয়ম হচ্ছে এই কয়েন খরচ করতে হয় না, কারণ এই কয়েন সৌভাগ্যের প্রতীক। মনে মনে ভাবলাম, সৌভাগ্যরে ! শেষকালে এসে তুই কয়েনে ঠেকলি !! এ'দিকে কোন অজ্ঞাত কারণে জানি না, সেই লাকি কয়েনের কূপের গর্তে বেজায় গন্ধ। সৌভাগ্যের লোভে পরে হাত তো দিয়েছি, কিন্তু এখন নিজের হাতের গন্ধে নিজেরই পালাতে ইচ্ছা করছে। কাজেই নিচে এসে, ঘষে ঘষে হাত ধুয়ে, তারপর আবার যাত্রা শুরু করলাম।

ছবিঃ বাবা হরভজন সিং-এর শয়নকক্ষের বাইরে, এই ভদ্রমহিলা অক্সিজেনের অভাবে অসুস্থ। এরই কিছুটা পাশে লাকি কয়েনের কূপ।

এবারও অল্পকিছু দূর গাড়ি চলার পরই থামতে হল। কারণ অসম্ভব সুন্দর একটা হ্রদ, যার আকৃতি দূর থেকে দেখে হাতির মত মনে হওয়াতে ডাকা হয় "এলিফ্যান্ট লেক" নামে। এই হ্রদের একটা ছবি তুলেই আবার চলা শুরু।

ছবিঃ হাতি'র আকৃতির এলিফ্যান্ট লেক

কিছুদূর যেতে আবার একটা লেক, এবার অবশ্য গাড়ি আর থামানো হল না। এই লেকের নাম ছিলো মেমেঞ্চো লেক। চলমান গাড়িতে বসে ছবি তোলার কারণে কিছুটা ঘোলাই আসলো ছবিটা।

ছবিঃ চলন্ত অবস্থায় তোলা ঝাপসা মেমেঞ্চো লেক

এরপর বেশ কিছুক্ষণ টানা গাড়ি চললো। আস্তে আস্তে কিছুটা নিচের দিকে নেমে আসছি, কাজেই মেঘের উপর থেকে ক্রমশ মেঘের ভিতর ঢুকে যাচ্ছি। এমন অবস্থাতেই আসলো, সত্যিকারের সৌন্দর্য , ছাঙ্গু লেক। এমনিতে বছরের এই সময়ে এই লেক সম্পূর্ণ জমে থাকার কথা, কিন্তু আমাদের ড্রাইভারের ভাষ্যমতে, আমাদের ভাগ্য অনেক ভালো (!!!) কারণ এখনো আবহাওয়া তেমন খারাপ হয় নি। ছাঙ্গু লেকের সামনেই প্রচুর চমড়ী গাই নিয়ে ঘুরছে গাইডরা। অনেকেই হয়ত জানেন আমার অত্যধিক তিব্বত প্রীতির কথা, আর সেই সূত্রেই চমড়ীর প্রতি গোপন টান। কিন্তু শুধু চমড়ির পিঠে বসে ছবি তুলতে জনপ্রতি বিশ রুপী, ত্রিশ ফুটের কম দূরত্ব ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে একশ' ষাট রুপী আর সবার উপরে চমড়ীর গায়ের ভূত পালানো গন্ধ - সবমিলিয়ে দূর থেকে ছবি তুলেই ক্ষান্ত দিলাম।

ছবিঃ অপূর্ব ছাঙ্গু লেক

ছবিঃ অপূর্ব ছাঙ্গু লেক

ছবিঃ চমড়ী গাই

আপনি যদি ধৈর্য্য ধরে আমার এই চারপর্ব ব্যাপী বকবকানি পড়ে থাকেন, তাহলে দেখবেন কোথাওই তেমন বড়সড় খাওয়ার বর্ণনা দেই নি কারণ, সারাদিন ঘুরেও এখন পর্যন্ত পেটে উল্লেখযোগ্য দানাপানি পড়েনি। কাজেই এবার মিশন খাওয়া দাওয়া।

ছাঙ্গু পার করে কিছুদূর যেতেই একটা লোকালয় রয়েছে, সেখানে একটা মার্কেট রয়েছে যেখানে মূলত সব চাইনিজ পণ্য বিক্রি করা হয়। সেই মার্কেটেই বেশ কিছু খাবারের দোকান হয়েছে, আর মার্কেটের সামনেই বিরাট গোল বসার জায়গা, যেখানে সবাই বসে খাচ্ছে। আমাদের সাথে ছিলো পাউরুটি, জেলি আর সিদ্ধ ডিম। পাউরুটিতে জেলি মাখিয়ে খেতে যেয়ে আবিষ্কার করলাম, জেলির সাথে ফ্রীতে প্রচুর পরিমান বালিও কিচ্‌ কিচ্‌ করছে পাউরুটির উপরে - কারণ আর কিছুই না, উদ্দাম বাতাস। কী মনে করে যেন, জনপ্রতি দু'টো করে ডিম ধরা হয়েছিলো। প্রায় কেউই সে'টা খায়নি, আর আমি নিজের দু'টা তো খেয়েইছি, সেই সাথে নষ্ট হবে ভেবে আরো একটা বেশি খেয়েছি। ডিম খেতে আমার মন্দ লাগে তা নয়, কিন্তু বিশ্বাস করুন, আজ এতদিন পরও লিখতে বসে এই কথা মনে করে বমি চলে আসছে !! এরপর আবার সেই মোমোও খেলাম কয়েকটা। বুঝতে পারছিলাম এই লাগামছাড়া খাওয়ার প্রতিশোধ পেট নিবে। সত্যি কথা বলতে কী, নিয়েছিলোও ঠিকই, ঐ রাতেই গ্যাংটকের হোটেলে আড়াইটার দিকে পেটে প্রবল মোচড় দেওয়া শুরু হল - সবই ঠিক ছিলো, শুধু গ্যাংটকের সেই তিন-চার ডিগ্রী তাপমাত্রার মধ্যে বাথরুমের গীজারটাই ঠিক ছিলো না।

যাই হোক, খাওয়া শেষ করে আবার যাত্রা শুরু করলাম। চলতে চলতে আবার সেই ১০,৪০০ ফুটের KYANGNOSLA । এখানে একটা ঝর্ণা ছিলো, যেটা যাওয়ার সময় দেখা হয় নি। এবার সেই ঝর্ণার সামনে গাড়ি থামানো হল। কিন্তু সারাদিনের ধকলে সবাই তখন মিইয়ে গিয়েছে, কাজেই শুধু আমি আর আমার বোনই গাড়ি থেকে নামলাম। মোটামুটি নিচে নেমে আসার কারনে ঠাণ্ডা অনেকটাই কম লাগছিলো, তাই আমি আর আমার বোন দু'জনেই ভারী সোয়েটারটা খুলে পাতলা একটা সোয়েটার পরেই বের হয়েছিলাম। এমনিতে ঝর্ণা খুবই সুন্দর, কিছু কাছে যেতেই সেখানকার হিমশীতল বাতাসের স্পর্শে ( আমার ধারণা শূন্যের কাছাকাছিই হবে) প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা - জান হাতে নিয়ে দৌড়ে গাড়িতে আসলাম।

ছবিঃ KYANGNOSLA ঝর্ণা

ছবিঃ KYANGNOSLA ঝর্ণা

এরপর গাড়ি মোটামুটি একভাবেই চলতে থাকলো, মাঝে শুধু আমাদের অতি মিশুক এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল ড্রাইভার, তার গার্লফ্রেন্ডকে গাড়িতে তুললো লিফট দেওয়ার জন্য। আবার সেই দুর্বোধ্য ভাষার কচকচানি, আর আমার সেই "ভালোমানুষী" স্পর্শজনিত সংকোচ। মোটামুটি যখন বিরক্তির চূড়ান্তে, তখনই গার্লফ্রেন্ডকে বাড়িতে নামিয়ে দিলো।

সন্ধ্যা সাতটার বেশ কিছুটা আগেই, গ্যাংটক টাউনে পৌছে গেলাম। সাতটার আগে এ ধরণের ভাড়ার গাড়ি মূল শহরে ঢুকতে পারে না, কাজেই শহরের বাইরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডেই ভাড়া মিটিয়ে নেমে গেলাম আমরা। আমি প্রস্তাব করলাম, আর কোন গাড়ী না নিয়ে, হেঁটেই হোটেলে যাই। এমনিতেই সারাদিন গাড়িতে ছিলাম, আর তার উপরে আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে না হাঁটলে কোন একটা জায়গা ঠিক মত চেনা যায় না, তার সৌন্দর্য ঠিক মতো উপভোগ করা যায় না। কাজেই পদব্রজে মিনিট বিশেক হেঁটেই সবাই মিলে হোটেলে পৌছালাম।

এর আগেরবারও দার্জিলিং এসে ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলাম, পাহাড় থেকে যখন নিচে নামতে থাকি, অস্বাভাবিক রকমের বিষণ্ণ লাগতে থাকে। কারণটা জানি না, এবারও ব্যতিক্রম হলো না, সবারই দেখলাম ক্লান্তির পাশাপাশি খারাপ লাগছে পাহাড় ছেড়ে নেমে আসার জন্য। এই বিষণ্ণতার পাশাপাশি আমার শুধু বার বার মনে হলো, এই পাহাড়ে হয়তো আর কোনদিনই আসা হবে না ! আর হয়তো দেখা হবে না আমার স্বপ্নের তিব্বতের এই সীমান্ত ! সব মিলিয়ে সারা দিনের উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা সবছাপিয়ে বেলা শেষের বিষণ্ণতাটাই চড়া সুরে মনে বাজতে থাকলো।

রুমে ঢোকার পরি বোঝা গেল ,সবাই-ই বেজায় রকমের ক্লান্ত। তবু এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠলো কালকের প্ল্যান কী ? আমি আর আমার বোন সমস্বরে জানালাম, দার্জিলিং! কিন্তু আমার স্থানীয় সেই ভাই খুব একটা উৎসাহ দিলেন না। কেন দিলেন না, সে'টা পরে বলছি। কিন্তু আমার আর আমার বোনের প্রবল চাপের মুখে সব প্রতিরোধ ব্যর্থ হয়ে গেলো। রাতেই একটা গাড়ী ঠিক করা হল যে আমাদের সিকিম থেকে দার্জিলিং নিয়ে যাবে, সেখানে ঘন্টা তিনেক থেকে, তারপর আমরা রওনা দিবো মালবাজারের দিকে কারণ পরশু দিন আমাদের কলকাতা ফেরার ট্রেনের টিকিট কাটা অগ্রীম।

রাতের বেলা ক্লান্ত শরীরে কোন মতে খাওয়া দাওয়া করেই, বিছানায় চলে এলাম। আজ টিভি না দেখে তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়লাম, কারণ আগামীকাল আমাদের গন্তব্য পাহাড়ের রানী, দার্জিলিং।

(চলবে)


পূর্বের পর্বসমূহঃ

আমার পাহাড় যাত্রা -০৩ [ভাষা হারানোর দিন]

আমার পাহাড় যাত্রা -০২ [একটি চমৎকার শহরে]

আমার পাহাড় যাত্রা-০১ [যত গণ্ডগোল গ্যাংটকেই]


মন্তব্য

ইমরুল কায়েস এর ছবি

বর্ণনা যথারীতি সুন্দর হৈছে , ছবিও সুন্দর ।
......................................................
কোকিলের ঘরে কাক হয়ে বাঁচি

সবজান্তা এর ছবি
তানিয়া এর ছবি

অনেক দিন পর জমজমাট একটা ভ্রমনকাহিনী পড়ছি চলুক চলুক
ধন্যবাদ সবজান্তা

সবজান্তা এর ছবি

ধন্যবাদ গৃহীত হলো, পালটা ধন্যবাদ আপনাকেও।


অলমিতি বিস্তারেণ

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি

জমজমাট ভ্রমন কাহিনী। ছবিগুলোও চমৎকার। ... দার্জিলিং নিয়ে লেখাটার অপেক্ষায় থাকলাম।

সবজান্তা এর ছবি

দেখি, নামিয়ে ফেলবো দ্রুতই।


অলমিতি বিস্তারেণ

হিমু এর ছবি

হাই অলটিচ্যুডে অনেক বড় পালোয়ানেরও সমস্যা হতে পারে।

চলুক।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সবজান্তা এর ছবি

এমনিতে পাহাড়ে সাড়ে চৌদ্দ হাজার ফীট যে উঠেছি, সমস্যা অনুভব করি নি।কিন্তু দ্বিতীয় বাবা মন্দিরে, বাবা'র থাকার ঘরটা পাহাড়ের গায়ে গোটা পনের সিড়ি বেয়ে উঠতে হয়। ওখানে আমাদের সবারই খুব কষ্ট হচ্ছিলো। তবে সবচেয়ে কম সময়ে রিকভার যাত্রীদের মধ্যে আমি ছিলাম। এই লেখার মধ্যে অসুস্থ যে মহিলার ছবি দিয়েছি, উনি এই সিড়ি ভেঙ্গে উঠতে যেয়েই অসুস্থ হয়েছিলেন।

আশা করি চলবে, আরো এক পর্ব।


অলমিতি বিস্তারেণ

দ্রোহী এর ছবি

সুন্দর ছবি ও বর্ণনা।

সবজান্তা এর ছবি

কত সুন্দর? আপনার এই মোঁচের চেয়েও ?


অলমিতি বিস্তারেণ

রানা মেহের এর ছবি

পাহাড়ে ঘুরছি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সবজান্তা এর ছবি

সাবধানে, ঠাণ্ডা লেগে যাবে চোখ টিপি


অলমিতি বিস্তারেণ

মুস্তাফিজ এর ছবি

হরভজনের উর্দি আর বিছানা নিয়ে মজার কথা শুনেছি।

হরভজন কে জীবিত ধরা হয়, আর তাই তার কাপড় চোপড়, বিছানা, সেন্ডেল, জুতা এসব সেনাবাহিনীর নিয়মানুযায়ী নিয়মিত পরিষ্কার/বদলানো হয়। হরভজনের ব্যাট্ম্যান ছিল সেই এসব করতো, আরো মজার কথা হরভজনের জন্য রক্ষিত বাথ্রুম/টয়লেট প্রতিদিন পরিষ্কার করা হয় যদিও কেউ ব্যবহার করেনা।

...........................
Every Picture Tells a Story

সবজান্তা এর ছবি

হ্যা, আসলেই তাই করা হয়।

ঐখানের লোকজন সব ভক্তিতে গদগদ। বাবা'র ঘরের ভিতরে একটা ভিজিটর কমেন্টের খাতা আছে। আমি কিছু লিখি নি, তবে মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। উনার ব্যাপারে সবার ভক্তি সীমাহীন।


অলমিতি বিস্তারেণ

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

সৈরম হইছে বর্ণনা ও ছবিগুলো। কিন্তু দুই নম্বর ছবিতে আমাদের হোৎকা-পোটকা সবজান্তারে এরকম বেঢপ দেখাচ্ছে ক্যান। দেঁতো হাসি

সবজান্তা এর ছবি

হই মিয়া ! আমি হোৎকা হইলাম কবে !

আসলে ভাই, কত কিছু যে পইরা গেছিলাম।

এই জ্যাকেট এক বড় ভাইয়ের থিকা ধার কইরা আনা, তাঁর বাপে বিদেশ থিকা আইনা দিছিলো। এইটার ভিতরে ফারের এমন আস্তরণ, যে বাংলাদেশে আজ অবধি পরতে পারে নাই। তো এই জ্যাকেটের তলে আমার নর্মাল সোয়েটার, তার নিচে শার্ট, তার নিচে গেঞ্জি !

আমি ভাই ঠাণ্ডায় কাবু !


অলমিতি বিস্তারেণ

কীর্তিনাশা এর ছবি

বড় লেখা। কিন্তু পড়তে গিয়ে মনেই হয়না বড়।
চলুক। ছবি লেখা দু'টাই চলুক! চলুক

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সবজান্তা এর ছবি

খাইছে, আপনার কথা শুইনা তো নিজেরে বড় লেখক মনে হইতেছে।


অলমিতি বিস্তারেণ

তারেক এর ছবি

ছবি দেখলাম খালি। পরে সময় করে পড়ে নেব একসাথে।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

সবজান্তা এর ছবি

হু পইড়ো পরে।

প্রিপারেশনের হাল কেমন ?


অলমিতি বিস্তারেণ

Sumy এর ছবি

বেড়াতে ভালো লাগছে

সবজান্তা এর ছবি

উহু, আগে পড়াশোনা, তারপর বেড়ানো চোখ টিপি


অলমিতি বিস্তারেণ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ছবি কথা বলে...।

সবজান্তা এর ছবি

শিমুল ভাই, এমন অপমানটাই করলেন ! শুধুই ছবি কথা বলে ? আর আমি যে গাদাগুচ্ছের টাইপ করলাম সে'গুলা কি বোবা ?


অলমিতি বিস্তারেণ

তীরন্দাজ এর ছবি

বাহ্ ! খুব সুন্দর বর্ণনা ও সুন্দর লেখা। এদিকে কখনোই যাওয়া হয়নি আমার।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সবজান্তা এর ছবি

সময় করে চলে যেতে পারেন, অদ্ভুত রকমের সুন্দর জায়গা !


অলমিতি বিস্তারেণ

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

সব সাধ কি এইসব ঘোলেই মিটিবে? মন খারাপ
লেক আর ঝর্নার ছবি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। লেখাও খুবই জীবন্ত। মাথার ভেতর ঢুকে কিলবিল করছে।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সবজান্তা এর ছবি

জীবন্ত লেখা মাথার মধ্যে ঢুকে কিলবিল করছে - কল্পনা করতে পারেন দৃশ্যটা ? দেঁতো হাসি


অলমিতি বিস্তারেণ

খেকশিয়াল এর ছবি

ফাটাফাটি লাগতাসে সিরিজটা আবার মনও খারাপ হইতাছে, আরেকবার তো যাইতেই হবে!

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

রণদীপম বসু এর ছবি

হুঁম, ভালো হচ্ছে..! ছবিগুলোও দারুণ..!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

খুবই উপভোগ্য। লেখা এবং ছবি। দারুন লাগছে। চলুক।

সবজান্তা এর ছবি
সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

অনেকেই হয়ত জানেন আমার অত্যধিক তিব্বত প্রীতির কথা...

তাহলে তো আপনার তিব্বতের পেস্ট, স্নো ও অন্যান্য প্রসাধনী ব্যবহার করার কথা। তা-ই করেন নাকি? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সবজান্তা এর ছবি

তিব্বতের আফটার শেভও মাখি চোখ টিপি


অলমিতি বিস্তারেণ

বিপ্রতীপ এর ছবি

লাইফে কিছুই দেখলাম না মন খারাপ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

সবজান্তা এর ছবি

মিয়া বইসা আছেন বরফের ফ্যাক্টরীতে, তবু কন কিছু দেখেন নাই ?

আপনার ওইখান থেকে নায়াগ্রা কতদূর ? বেশি দূর না হলে যাইতে পারেন চোখ টিপি


অলমিতি বিস্তারেণ

পাগলা নিলয় এর ছবি

সুন্দর।

সবজান্তা এর ছবি

ধন্যবাদ !

এতোদিন পর এই লেখা মাটি ফুঁড়ে কোথা থেকে উদয় হলো !!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।