প্রভু, বিশ্ব বিপদ হন্তা, তুমি দাঁড়াও রুধিয়া পন্থা

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০৫/২০০৯ - ৭:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই সুন্দর পৃথিবী টাকে কেন জানি খুব ভালবাসি, সবুজ ঘেরা বনানীর মধ্যে দিয়ে ছোট্ট নদীটার তীর দিয়ে যখন হেঁটে যাই মনে হয় আজীবন বেঁচে থাকি। অমরত্বের জন্য পিপাসু মানুষ নিজে বাঁচতে পারেনা অসীম সময় ধরে তাই রেখে যায় তার উত্তরাধিকার, সেই উত্তরাধিকার রেখে যায় তার পরের প্রজন্মকে। এইভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মানুষ তার বেঁচে থাকায় আশা মেটায়, অন্তত এই ভেবে মানুষ স্বস্তি পায় যে সে বেঁচে না থাকলেও তার রক্ত বেঁচে আছে, থাকবে এই পৃথিবীতে। নিজের রক্ত হেঁটে বেড়ায় পৃথিবীর উপরে আর তার তলে জড় কার্বন কনা হয়ে পড়ে থাকে মানুষ, জাতিস্বর হয়ে পূনর্জীবন পাবার আশায় দিন গুনে।

অথচ আমাদের সবার প্রিয় অসম্ভব সুন্দর এই পৃথিবীটা যদি একদিন ধ্বংস হয়ে যায়, কেমন লাগবে আমাদের? আমি জানি, যার শুরু আছে তার হয়ত একদিন শেষও হবে কিন্তু তাই বলে এইভাবে ? আজকে দেখলাম উত্তর কোরিয়া আবারো পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালালো। কিসের জন্য এই অস্ত্র ? নিজেদের জ্ঞান বিজ্ঞান দিয়ে নিজেদেরকে ধ্বংস করার এ কোন খেলায় মেতেছি আমরা ? কিসের এই প্রতিযোগীতা ? আমরা সাধারণ মানুষরাত দু’বেলে দু’মুঠো খেতে আর একটু শান্তিতে ঘুমোতে পারলে আর কিছু চাইনা। ক্ষমতাবানরা নিজেদের ক্ষমতার দাম্ভিকতা দেখাবে আর মারোনাস্ত্রের ভয়ে চুপসে যাবে সাধারণ মানুষ? একদিন আমি, আমরা চলে যাব, কিন্তু আমাদের সন্তানদের জন্য এই কোন পৃথিবী রেখে যাচ্ছি আমরা।

ক্ষুধিত শিশুর কান্না থেকে বোমার আওয়াজ অনেক বেশী। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের পারমানবিক বোমার বিস্ফোরন ঘটায় মানুষ আর শত সহস্র লক্ষ ক্ষুধার্ত শিশুর আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে বাতাসে ভেসে বেড়ায় ইউরেনিয়াম কনা, উপহাস করে, অট্টহাসি হেসে আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেয় আমরা কত বোকা। আমরা বিশ্বের শান্তির জন্য জাতিসঙ্ঘ বানিয়েছি, শান্তির জন্য বছর বছর নোবেল পুরষ্কার দিচ্ছি কিন্তু শান্তির দেবতারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে অনেক দূরে। এই আমরাই নিজেদের স্বার্থে মরুভূমির ধুলাতে মিশিয়ে দেই হাজারো মানুষের দেহ আবার কখনো নিজেদেরকে ধ্বংস করে শত সহস্র মানুষ মেরে পরকালের পথ পরিষ্কার করি। এই কোরিয়াতেই না খেয়ে মারা যায় অসংখ্য মানুষ অথচ তাদেরই রক্ত বেচা টাকা দিয়ে বোমার পরীক্ষা চালায় তাদেরই শাসকরা।

একজন মানুষ গড়পরতা কতদিন বাঁচে? উন্নত দেশে হয়ত ৭০-৮০, আর আমাদের মত অনুন্নত দেশে সেটা বোধকরি ৬০ এর কোঠায়। এই ক্ষুদ্র জীবনে আসলে আমরা কি চাই ? ক্ষমতা আর সাফল্যের পিছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে কখনোকি আমাদের মনে হয়না আসলে কিসের জন্য এতকিছু ? আমাদের কি একবারো মনে হয়না এই মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের বোমার টাকা দিয়ে কত অভুক্ত মানুষকে আমরা বাঁচাতে পারি ? আমরা কি দেখিনা একমুঠো অন্নের আশায় পেটের পাথর বেধে রাখছে শত সহস্র মানুষ, সন্তানের মুখে খাবার দিতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে অসহায় বাবা, এক ফোঁটা দুধের জন্য আঁতুড় ঘরে হাত পা ছুড়ছে অগণিত শিশু?

আমি কিছুই করতে পারিনা। আমি পারিনা এই অনাচার সহ্য করতে, আবার পারিনা দূর করতে। নিজেকে অসহায় আর অপরাধী মনে হয় সেজন্য মাঝে মাঝে। সেই কালিমা ঘোচাতে আস্তিক এই আমি শুধু পারি প্রার্থনা করতেঃ

তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে
তব পুণ্য কিরণ দিয়ে যাক মোর মোহ কালিমা ঘুচায়ে।
লক্ষ্য শূন্য লক্ষ বাসনা ছুটিছে গভীর আঁধারে,
জানিনা কখন ডুবে যাবে কোন্ অকুল গরল পাথারে,
প্রভু, বিশ্ব বিপদ হন্তা, তুমি দাঁড়াও রুধিয়া পন্থা
তব শ্রীচরণ তলে নিয়ে এসো মোর মর্ত বাসনা ঘুচায়ে।
আছ অনল অনিলে, চির নভোনীলে, ভূধর, সলিলে, গহনে
আছ বিটপীলতায়, জলদের গায়, শশী তারকায় তপনে।
আমি নয়নে বসন বাঁধিয়া, ব'সে আঁধারে মরি গো কাঁদিয়া
আমি দেখি নাই কিছু বুঝি নাই কিছু দাও হে দেখায়ে বুঝায়ে।


Get this widget | Track details | eSnips Social DNA


মন্তব্য

s-s এর ছবি

আছ অনল অনিলে, চির নভোনীলে, ভূধর, সলিলে, গহনে
আছ বিটপীলতায়, জলদের গায়, শশী তারকায় তপনে।

আসলেই কি আছেন কেউ ? পৃথিবীর এই অবস্থা দেখে সত্যিই মনে হয় কেউ নেই। গানটি আমার খুবই প্রিয়। নিরীশ্বরবাদী হলেও এই রকম আরো কিছু অতুলপ্রসাদ আর রজনীকান্তের গান বাণীবৈচিত্র্যের কারণে খুব মনে গেঁথে যায়।
পরমাণু বোমা টোমা মেরে সব উড়িয়ে দিক্, মাঝে মাঝে মনে হয় তাই ভালো, কী ভীষণ বিভীষণ চিন্তা!

সচল জাহিদ এর ছবি

খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে খেলিছ

অবশ্যই আছেন একজন এই বিশ্বাস নিয়েইত বেঁচে আছি, তা না হলে কার ভরসায় আশায় বুক বাধি বলুন।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

সেই কালিমা ঘোচাতে আস্তিক এই আমি শুধু পারি প্রার্থনা করতে...
ঠিক বলেছেন জাহিদ। আমাদের ক্ষমতা ওইটুকুই।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

রাগিব এর ছবি

পারমাণবিক বোমা বানাতে কি আর এখন মিলিয়ন ডলার লাগে? ৬৫ বছরের পুরানো প্রযুক্তি। অনেকেই বানাতে পারে (গোপনে বানিয়েও বসে আছে)।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

সচল জাহিদ এর ছবি

রাগিব পারমানবিক অস্ত্র বানাতে খরচের কিছু নমুনা দেখঃ

নমুনা ১

নমুনা ২

নমুনা ৩

নমুনা ৪

নমুনা ৫

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

রাগিব এর ছবি

এখানে ঠিক অংকটি জানা যাবে না। কারণ, সংজ্ঞাটি দেখো আগে

DEFINITION: Cost of Nuclear Weapons . This data set indicates how much money leaves the state in terms of residents' individual income taxes to pay for nuclear weapons (defined as 'atomic energy activities' in the National Defense Budget).

একটা অস্ত্রের খরচ কতো, তা কিন্তু এখানে নাই। বরং মার্কিন সামরিক পারমাণবিক অস্ত্রের মোট বাজেটের খরচের হিসাব।

--

মোট ৫৫ কেজি (নাকি পাউন্ড?) হলো ক্রিটিকাল মাস। ঐটা জোগাড় করা, আর তার পর অন্যান্য যন্ত্রপাতি বানানো -- এই হলো খরচ।
--

পারমাণবিক বোমার ব্যাপারে একটা কথা পড়েছিলাম, সত্তরের দশকে এক পদার্থবিদ্যার ছাত্র (মার্কিন বা ইংরেজ) এর ইচ্ছা হলো,
BSc থিসিস লিখবে এর নির্মাণ কৌশলের উপরে। বই পত্র ঘেঁটে লিখেও ফেললো, আর তার পর ওটা এমনই নিখুঁত হলো যে তার থিসিসটা Classified information হিসাবে গোপনীয় তথ্য চিহ্নিত হয়ে সীল করে দেয়া হয়েছিলো।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।