নির্ঝর মোটামুটি বইয়ের পোকা, আমরাও সানন্দে ওকে ওর পছন্দের বই কিনে দেই। ইদানিং অফিস সেরে বাসায় আসার পরে বাসায় খুব বেশি কিছু করার থাকেনা, ভাবলাম ওর বইগুলো পড়া শুরু করি। ওকেই জিজ্ঞেস করলাম,
-“কোন বইটা দিয়ে আমার পড়া শুরু করা উচিৎ?”
-“ফ্রিন্ডল পড়, নভেলটা দারুন, তোমার পছন্দ হবে”, নির্ঝরের ঝটপট উত্তর।
আমি পড়া শুরু করলাম। প্রথম চ্যাপটারটা পড়ে সেরকম কিছু মনে হলোনা, কিছুটা হলেও আগ্রহ কমে গেল। সেদিন নির্ঝর আমার পাশে শুয়ে বই পড়ছিল, আর আমি অনলাইনে দাবা খেলছিলাম। সে আমাকে জিজ্ঞেস করল,
-“তুমি কি ফ্রিন্ডল এর তিন নাম্বার চ্যাপ্টারটা পড়েছ? ঐটা আমার সবচেয়ে পছন্দের”
[justify]প্রায় প্রতি শুক্রবার বা শনিবার রাতে আমাদের বাসায় ফ্যামিলি মুভি দেখা হয়। সেরকম একটি রাতে আমরা তিনজন মিলে 'Little Red Wagon' মুভিটা দেখলাম। এক কথায় অসাধারণ একটি মুভি, সহজেই যা বাচ্চাদের মাথায় গেঁথে যায়। মুভির প্রধান চরিত্র একটি সাত বছরের ছেলে যে তার মা আর বোনের সাথে ফ্লোরিডার টেম্পা বে তে থাকে। সময়টা ২০০৪, হারিকেন চার্লি আঘাত হানে সেখানে। নিজের চোখে এই হারিকেনের ভয়াবহতা দেখে ছোট্ট জ্যাক (Zach) এগিয়ে আসে তার নিজের ছোট্ট লাল রঙের ওয়াগন নিয়ে। পড়শিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সে উৎবাস্তুদের সাহায্যের জন্য কাপড় চোপড়, পানি, কম্বল ইত্যাদি সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। ধীরে ধীরে সেই সংগ্রহ বাড়তে থাকে, এক এলাকা থেকে অন্য এলাকা থেকেও জ্যাক সংগ্রহ করতে থাকে সাহায্যের জন্য অনেক কিছু। সেই শুরু, জ্যাক এর পরে শুরু করে দুস্থ শিশুদের জন্য সাহায্য সংগ্রহে। তার সাথে এগিয়ে আসে তার মা, বোন, সমাজের অনেক মানুষ।
[justify]এবছরের এপ্রিলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের অর্থায়নে এশীয় পানি উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি (Asian Water Development Outlook) প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রকাশনায় বাংলাদেশ সহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পানিসম্পদ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ কিছু চিত্র উঠে এসেছে। পানিসম্পদ উন্নয়নের জাতীয় পর্যায়ের এই রূপ আসলে জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচক বা National Water Sequirity Index (NWSI) এর মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে। পুরো রিপোর্টটি এই লিঙ্ক থেকে পড়া যাবে। আমি এই লেখায় চেষ্টা করেছি এই রিপোর্টের আলোকে বাংলাদেশের জাতীয় পানি নিরাপত্তার একটি রূপ তুলে ধরতে। লেখাটি দুটি পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচকের মৌলিক তথ্য ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নির্ণয়ের সার্বিক ব্যবচ্ছেদ থাকবে। দ্বিতীয় পর্বে কি কি পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশ তার জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচকের উন্নয়ন ঘটাতে পারবে তা বিশ্লেষণের চেষ্টা থাকবে।
[justify] প্রথম পর্বে বলেছিলাম আমার র্যাগের দিনগুলোতে সবসময়ের সাথী সেই মেরুন রঙের ডায়েরীটার কথা। আমরা বুয়েটের একটি কালো অধ্যায়ে আমাদের আন্ডারগ্রেডের জীবন শেষ করছিলাম। আমাদের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিষ্টার শুরু হয়েছিল ২০০২ সালের এপ্রিলে আর শেষ হয়েছিল অক্টোবরে। শেষ বলতে বুঝাচ্ছি ক্লাস শেষ হওয়া। এর পরে পরীক্ষা, ফলাফল এবং হল ছাড়তে ছাড়তে ২০০৩ এর ফেব্রুয়ারী। ২০০২ সালের এপ্রিল আর অক্টোবরের মাঝে একটি দিন, ৮ জুন। দিনটি কখনই ভুলে যাবার নয় এই জীবদ্দশায়। সেদিন কি এক কারনে বুয়েটে ক্লাস হলোনা। আমরা বন্ধুরা মিলে রিকশা চেপে প্রথমে হাতিরপুলে বিগ বাইট ও পরে ইস্টার্ন প্লাজায় আড্ডা দিতে গিয়েছিলাম। ক্যাম্পাসে ফিরে এসে তিতুমীর হলে দোতালায় এক বন্ধুর রুমে টিভিকার্ড এর মাধ্যমে কম্পিউটারে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখছিলাম। হঠাৎ করে বেশ কয়েকটা কান ফাটানো শব্দ, আমাদের বুঝতে বাকী রইলনা ভয়াবহ কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। আমার সাথে ছিল বন্ধু ওয়াসিম। আমরা দুইজন হামাগুড়ি দিয়ে রুম থেকে বারান্দায় চলে আসলাম। এসে দেখি পুরো বারান্দায় সবাই ফ্লোরে শুয়ে রয়েছে। চলতে লাগল প্রচন্ড গুলির শব্দ। আমরা আরো নিরাপদে সরে যাবার জন্য আস্তে আস্তে গড়াগড়ি দিয়ে সিড়ি বেয়ে চার চলায় উঠে গেলাম। গুলির শব্দ থেমে গেলে হলের নিচে নেমে আসলাম। বের হয়ে শুনি ’৯৯ ব্যাচের সনির গুলিতে আহত হবার কথা। আমরা বন্ধুরা সবাই চলে গেলাম ঢাকা মেডিকেলে। সনি খুব বেশিক্ষণ বেঁচে থাকেনি। এই অরাজকতার দেশটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ও চলে গিয়েছিল না ফেরার দেশে।
[justify]দেশ ছাড়ার আগে এনটিভিতে একটি সিরিজ নাটক দেখতাম, আমাদের আনন্দবাড়ী। মন খারাপ করা একটা নাটক, তারপরেও দেখতাম। কিভাবে যৌথ পরিবার গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে সেই নিয়ে গল্প। নাটকটির শেষ পর্ব আরো মন খারাপ করা। সবাই একেক দিকে চলে যায়, যৌথ বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলা হয় নতুন কোন উঁচু এপার্টমেন্ট গড়ার জন্য। রাস্তা দিয়ে সেই বাড়ির মেয়েটি একা একা হাঁটতে হাঁটতে একরকম দম বন্ধকরা কষ্টকর অনুভূতি নিয়ে নাটকটি শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার আনন্দবাড়ী বলতে ছিল আমার হল, আমার ক্যাম্পাস। আমাদের আড্ডামুখর সেই সময়গুলি হারিয়ে গেছে, আমরা চলে গেছি একেক জন একেক দিকে। আমাদের আনন্দবাড়িটি অবশ্য ভেঙে ফেলা হয়নি, তবে সেখানে এসেছে নতুন মুখ।
[justify]প্রতি বছরের মত এবারও ২২ শে মার্চ বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে পালিত হবে। এবছরের পানি দিবসের স্লোগান হচ্ছে “Water, water everywhere, only if we share”, যার মূল কথা হচ্ছে একমাত্র সহযোগীতাই পারে বিপুল চাহিদার বিপরীতে পানির যোগানকে নিশ্চিত করতে। এর পাশাপাশি তাজিকিস্তান ও আরো কয়েকটি দেশের প্রস্তাব অনুযায়ী ২০১০ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের সভায় ২০১৩ সালকে ঘোষণা করা হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অফ ওয়াটার কোওপারেশন’ বা পানি নিয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগীতার বছর হিসেবে। একথা অনস্বীকার্য যে জলবায়ু পরিবর্তন ও দ্রুত নগরায়নের ফলে স্বাদু পানির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সে প্রেক্ষাপটে এবারের পানি দিবসের মূল উদ্দেশ্য আসলে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় পারস্পরিক সহযোগীতা বৃদ্ধি। বাংলাদেশের মত একটি দেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে সিহভাগ পানির উৎসই হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ, এই বছরের পানি দিবস তাই অধিক গুরুত্ত্ব বহন করে।
[justify]
সম্প্রতি ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফর করছেন। তার সফরে আবারো উঠে এসেছে তিস্তা চুক্তির প্রসংগ। শুধু তিস্তা নয়, গঙ্গা, বারাক, ব্রহ্মপুত্র, সারি, ফেনী সহ সব অভিন্ন নদ-নদীর ক্ষেত্রে উজানের দেশের যেকোন উন্নয়ন অবকাঠামোর পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়শঃই এই গবেষণায় মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে উপাত্ত। এমনকি আলোচিত টিপাইমুখ প্রকল্প বা ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে যেয়ে একমাত্র উপাত্তের অভাবেই তা বিসর্জন দিতে হয়েছে। অথচ আমাদের যুক্ত নদী কমিশন বাংলাদেশ ভারত অভিন্ন নদীগুলোর উপাত্তের একটি ভান্ডার হতে পারে। কিন্তু উপাত্ত যুক্ত নদী কমিশনের কাছে থাকলেই কি সেটা সবার কাছে উন্মুক্ত হবে? এই প্রসংগে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে এই লেখা। দেশের এই মূহুর্তে এই নিবন্ধ হাস্যকর মনে হতে পারে কারো কারো কাছে কিন্তু সিংহভাগ পাঠক লেখাটির গুরুত্ত্ব অনুধাবন করবেন আশা করি।